বিসিএস ভাইভা ও রিটেনে গুরুত্বপূর্ণ
.
প্যারিস জলবায়ু সম্মেলন ও বাংলাদেশ
.
.
২৩ ডিসেম্বর ২০১৫, প্রথম আলোর আয়োজনে ‘প্যারিস জলবায়ু সম্মেলন ও বাংলাদেশ’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত আলোচকদের বক্তব্য সংক্ষিপ্ত আকারে এই ক্রোড়পত্রে প্রকাশিত হলো।
আলোচনা
আব্দুল কাইয়ুম
কয়েক দিন আগেই প্যারিস জলবায়ু সম্মেলন শেষ হলো। ১৯৫টি দেশের প্রতিনিধি এ সম্মেলনে অংশ নিয়েছেন। যেকোনো বিচারেই এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্মেলন। এর আগে দুবার এ সম্মেলনে ছিলাম। সব সময় দেখেছি, ধনী-দরিদ্র দেশগুলোর মধ্যে একধরনের টানাপোড়েন থাকে। এবার পত্রপত্রিকা পড়ে মনে হয়েছে এ ধরনের সমস্যা খুব একটা হয়নি।
সবাই মোটামুটি একটা মতৈক্যে পৌঁছাতে পেরেছে। মনে হয়, সবাই বুঝেছে এ ছাড়া কোনো উপায় নেই। কারণ জলবায়ু পরিবর্তন কম-বেশি সবাইকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। জাতিসংঘের মহাসচিব যে বলেছেন ‘মনুমেন্টাল সাকসেস’, এ কথার একটা গুরুত্ব আছে।
আমরা সিডর, আইলা, বন্যা, ক্ষরায় প্রায়ই আক্রান্ত হচ্ছি। এ সম্মেলন থেকে কী পেলাম, সেটাও একটা গুরুত্বপূর্ণ দিক। এত বড় একটা সম্মেলন, দেশের মানুষও জানতে চায় আমাদের অবস্থা কী? আমরা কতটুকু অর্জন করলাম। এর মাধ্যমে কীভাবেই বা জলবায়ু মোকাবিলা করা সম্ভব ইত্যাদি। এখন আলোচনা করবেন ইফতেখার মাহমুদ।
.
ইফতেখার মাহমুদ
প্যারিস জলবায়ু সম্মেলনে প্রায় ১৫ দিন ধরে আলোচনা হয়েছে। অনেকে বলছেন প্যারিস চুক্তি হয়েছে। কিন্তু কোনো চুক্তি হয়েছে, আমি সেটা মনে করি না। তবে সবার মধ্যে একটা সমঝোতা হয়েছে। ১৯৫টি দেশ সম্মেলনে অংশগ্রহণ করে। প্রতিটি দেশের বিভিন্ন প্রকার ধ্যানধারণা, মত-পথ ছিল। সবাইকে মতৈক্যে আনা সত্যি একটা দুরূহ কাজ।
কয়েক শ পৃষ্ঠার প্রস্তাব ছিল। এই ১৫ দিনের আলোচনার সারসংক্ষেপকে কমিয়ে মাত্র ১২ পৃষ্ঠায় আনা হয়। কম-বেশি মত-দ্বিমত সবারই ছিল। তারপরও সবাই ১২ পৃষ্ঠার এ খসড়াকে মেনে নিয়েছে। এটাকে চুক্তি না বলে বলা যায়, একটা খসড়া সমঝোতা দলিল।
বাংলাদেশের দাবি ছিল বেশি অর্থ পাওয়ার। এই শতাব্দীতে যেন তাপমাত্রা না বাড়ে, তাপমাত্রার বৃদ্ধি যেন দেড় ডিগ্রিতে সীমাবদ্ধ থাকে। শিল্পোন্নত দেশের কার্বন নিঃসরণের ফলে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। সে জন্য আমরা ক্ষতিপূরণ চাই। এসব বিষয়ই আমাদের প্রতিনিধিরা তুলে ধরবেন।
কিন্তু আলোচনার টেবিলে অনেক ধরনের আলোচনা, কখনো সাংঘর্ষিক আলোচনাও হয়। ফলে প্রকৃত চিত্র তুলে আনা ছিল অনেক কঠিন। বাংলাদেশের সরকারি প্রতিনিধি, বিজ্ঞানী, নাগরিক সংগঠন বিভিন্ন পক্ষের মানুষের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রেখেছি। বিভিন্ন বিষয়ভিত্তিক দিক নিয়ে পাঠকদের জন্য ১৮টি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছি।
কোনো দেশ যেটি চাইবে তা-ই পাবে, এ ধরনের সম্মেলনে আসলে তা হয় না। কারণ কোনো রাষ্ট্র সরাসরি তার মতামত দিতে পারে না। বাংলাদেশ ছিল জি-৭৭ গ্রুপে। এ ছাড়া অন্যান্য গ্রুপের মধ্যে রয়েছে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর গ্রুপ, শিল্পোন্নত দেশগুলোর গ্রুপ, দ্বীপরাষ্ট্রের গ্রুপ ইত্যাদি।
বাংলাদেশ জি-৭৭ গ্রুপের মাধ্যমে মতামত তুলে ধরেছে। কোপেনহেগেনে আমাদের প্রধানমন্ত্রী বিশ্বের তাপমাত্রা যেন দেড় ডিগ্রির বেশি বৃদ্ধি না পায় সে প্রস্তাব দিয়েছিলেন। প্যারিস চুক্তিতে এটি বিভিন্নভাবে এসেছে। এটা আমাদের একটা সফলতা বলা যেতে পারে।
প্যারিস সমঝোতা নিয়ে আমাদের একটা বড় প্রশ্ন হলো, কার্বন নিঃসরণকারী রাষ্ট্রগুলো নিজে ক্ষতিপূরণের দায়িত্ব না নিয়ে সেটা দিয়েছে ইনস্যুরেন্স কোম্পানির হাতে। তথ্য-উপাত্তসহ ইনস্যুরেন্স কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায় করা আসলে কঠিন। আমাদের এ ক্ষেত্রে কতটুকু প্রস্তুতি আছে, কীভাবে এটি উপস্থাপন করব, বাংলাদেশের জন্য সেটিও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এখানে একটি বিষয় আছে যে প্রতি দেশ তার নিজ উদ্যোগে কার্বন নিঃসরণ কমাবে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান হলো নিজ উদ্যোগে ৫ শতাংশ আর সহায়তা পেলে ১৫ শতাংশ কার্বন নিঃসরণ কমাবে।
এই ১৫ শতাংশ পর্যন্ত কমানোর জন্য বাংলাদেশের প্রায় চার হাজার কোটি ডলার লাগবে। এ অর্থ কোথা থেকে কীভাবে আসবে, সেটা আরও একটি বড় প্রশ্ন। আমরা সম্মেলন শুরুর দিকে জানতে পারলাম গ্রিন ফান্ড নামের একটি তহবিল গঠন করা হয়েছে। এ তহবিলে জমা পড়েছে ১০ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার। এখান থেকে বাংলাদেশ ৪০ মিলিয়ন ডলারের মতো পাবে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে আবার কো-ফাইন্যান্সিং করতে হবে। বাংলাদেশ ক্লাইমেট ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড থেকে ঋণ নিয়েছে। বাংলাদেশের যেখানে এমনিতেই অর্থ পাওয়ার কথা সেখানে ঋণ নিচ্ছে। আমাদের রাষ্ট্রীয় নীতির সঙ্গে এটা যায় কি না, সেটাও একটি প্রশ্ন। আসলে আমাদের অনেক বিষয়ে অপেক্ষা করতে হবে কী হয় সেটা দেখার জন্য।
.
আহসান উদ্দিন আহমেদ
প্যারিস সম্মেলনে একটি সমঝোতাপত্র তৈরি হয়েছে। এটিকে একটি শব্দ দ্বারা প্রকাশ করা যায়, তা হলো তাসের ঘর। ঘরটি আছে আবার নেই।
১৯৯২ সালে জাতিসংঘের আওতায় জলবায়ু সনদ তৈরি হয়। বাংলাদেশসহ ১৯৫টি দেশ এতে স্বাক্ষর করে। এই সনদের কার্যক্রমকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য ১৯৯৭ সালে আরেকটা সনদ তৈরি হয়, একে কিয়োটো প্রটোকল বলে। এখানেও বাংলাদেশ অংশগ্রহণ করে। কিয়োটো প্রটোকলে পৃথিবীর জন্য কিছু কল্যাণকর বিষয় ছিল। কিন্তু সম্প্রতি প্যারিস সম্মেলনে যে সমঝোতা হলো এটা কিয়োটো প্রটোকলের থেকেও খারাপ।
প্যারিস চুক্তিতে বলা হয়েছে, এই শতাব্দীর মধ্যে তাপমাত্রা ১ দশমিক ৫ ডিগ্রির মধ্যে রাখার চেষ্টা করা হবে। কিন্তু এটার কোনো নিশ্চয়তা নেই। কিন্তু বিপন্নতার নিশ্চয়তা আছে। সারা বিশ্বে ২৯ গিগাটন কার্বন বায়ুমণ্ডলে ছড়িয়ে আছে। শিল্প বিপ্লবের পর থেকে ইতিমধ্যেই গড় তাপমাত্রা বেড়েছে দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এতেই বাংলাদেশে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে।
বিভিন্ন সময়ে দেশের পত্রপত্রিকায় বিষয়গুলো এসেছে। ২০৩০ সালের মধ্যে বায়ুমণ্ডলে কার্বনের পরিমাণ হবে ৬৯ গিগাটন। শিল্পোন্নত দেশগুলো কার্বন নিঃসরণের জন্য নিজেদের কাছে দায়বদ্ধ ছিল। এবার চুক্তির ৫০ ও ৫২ নম্বর অনুচ্ছেদের মাধ্যমে তারা দায়মুক্তি নিয়েছে।
বর্তমান ধারা চলতে থাকলে এই শতাব্দীর মধ্যে বিশ্বে ৩ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এটা যদি হয় তাহলে এই শতাব্দীর শেষের দিকে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের অসংখ্য মানুষের বসতি উচ্ছেদ হবে। পরে বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এ প্রক্রিয়া শুরু হবে। এর ফল আমাদের ভোগ করতে হবে। কারণ কার্বন নিঃসরণকারী দেশগুলো দায়িত্ব না নিয়ে আন্তর্জাতিক বিমা কোম্পানিগুলোকে অবাধে ব্যবসা করার সুযোগ করে দিয়েছে।
আইন করেই বলে দেওয়া হচ্ছে তিন বছর পর যে পর্যালোচনা হবে, সেখান থেকে যেকোেনা দেশ দায়মুক্তি নিয়ে চলে যেতে পারবে। এর অর্থ দাঁড়াল, শেষ পর্যন্ত কিছু পৃষ্ঠার কাগজ পেলাম। কিছু বিত্তশালী দেশ ক্ষতিগ্রস্ত দেশকে অতিরিক্ত অর্থ দেওয়ার কথা বলেছিল।
এবারের সমঝোতা ১৯৯২ সালের কাঠামো থেকে খারাপ। একটি প্রচলিত কথা আছে—আজ বাকি, কাল ফাঁকি। এই সমঝোতা এই বাগধারার মতো। এই সমঝোতা আমাদের ক্ষতিই নিশ্চিত করবে। তাহলে এর সঙ্গে আমরা থাকব কি না, সেটিও ভেবে দেখতে হবে।
এখানে ১০০ বিলিয়ন ডলারের একটা তহবিল আছে, কিছু অর্থ হয়তো আমরা পাব। কিন্তু প্রতি সপ্তাহে আমাদের দেশের মানুষ যে পরিমাণ রাজস্ব জমা দেন তার পরিমাণ প্রায় ৩০০ মিলিয়ন ডলার। প্রতিবছর আমাদের প্রায় ২২ শতাংশ রাজস্ব বাড়ছে।
প্রধানমন্ত্রী কিছুদিন আগে গার্ডিয়ান পত্রিকায় বলেছিলেন, আমরা কারও দিকে তাকিয়ে নেই। আমাদের হয়তো একাই চলতে হবে। তাই বলব যে, যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চলো রে।
.
রাশেদ চৌধুরী
জলবায়ু সম্মেলন অনেক দিন ধরে হচ্ছে, হয়তো ভবিষ্যতেও হবে। ছোট ও ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলো জলবায়ু সম্মেলনে যাতে অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে তাদের অবস্থান তুলে ধরতে পারে, সেটা নিয়ে কাজ করতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের তথ্য কীভাবে মানুষের কাছে পৌঁছানো যায়, সেটি গুরুত্বের সঙ্গে ভাবতে হবে, যাতে সাধারণ মানুষের একধরনের প্রস্তুতি থাকে।
আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কে দ্বীপদেশগুলোর জন্য বিভিন্ন তথ্য দেওয়া হয়। দ্বীপদেশগুলো এসব তথ্য ব্যবহার করে অনেক সুফল পায়। বাংলাদেশেও এটি অনুসরণ করা যায়।
ক্লাইমেট ভ্যারিয়েবিলিটি হলো আবহাওয়ার একটা স্বল্পমেয়াদি পরিবর্তন। আমাদের দেশে জলবায়ু পরিবর্তনের দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব নিয়ে বেশি ভাবা হয়। এটা নিয়ে অনেকে কাজও করেন। দুই বছর বা স্বল্পমেয়াদি যে পরিবর্তন, এটা তেমন গুরুত্ব পায় না। এটা নিয়ে কাজ করলে জলবায়ু পরিবর্তনের অনেক ক্ষতি খুব সহজে মোকাবিলা করা যায়।
এটা বাংলাদেশের আর্থসামাজিক অবস্থা পরিবর্তনে যথেষ্ট সহায়ক হয়। এমন একটি ক্লাইমেট সাইকেল আছে, যেটি ‘এনসো’ সাইকেল নামে পরিচিত। এর দুটো ফেজ আছে—একটি ‘এল নিনো’, অন্যটি ‘লা নিনা’। ২০১৫ সালে একটি শক্তিশালী এল নিনো প্যাসিফিক ওশানে তৈরি হয়েছে। ফলে ভবিষ্যতে কী হবে সে সম্পর্কে মোটামুটি ধারণা করা যায়।
এল নিনো, লা নিনার ওপর ভিত্তি করে ছয় থেকে নয় মাস আগে মোটামুটি একটা ধারণা তৈরি করা যায়। অর্থাৎ এর ওপর ভিত্তি করে ছয় বা নয় মাস আগে বাংলাদেশে খরা হবে না বন্যা হবে, সেটা মোটামুটি বোঝা যায়। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ।
এল নিনো, লা নিনার ওপর নির্ভর করে জাতীয় পর্যায়ে বড় রকমের সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়। ১৯৯৭ সাল বাংলাদেশের ইতিহাসে ছিল সবচেয়ে শুষ্ক বছর। ১৯৯৮ সাল ছিল বন্যাপ্রবণ বছর। প্রায় তিন মাস বন্যা ছিল। ১৯৯৭ সালকে আমরা বলি এল নিনো বছর। ১৯৯৮ সাল ছিল লা নিনা বছর।
১৯৭০ সালে প্রলয়ংকরী ঝড়ে প্রায় ১৫ লাখ মানুষ মারা যায়। এটা ছিল একটা লা নিনা বছর। ১৯৯১ সালের ঝড়ে প্রায় দেড় লাখ মানুষ মারা যায়, এটাও ছিল একটা লা নিনা বছর। ২০০৭ সালের সিডরে ১০ হাজার মানুষ মারা যায়, সেটাও ছিল একটা লা নিনা বছর।
১৯৭৫ সালের আগে দুই থেকে সাত বছর পরপর এল নিনো, লা নিনা হতো। এর মেয়াদ থাকত এক থেকে দুই বছর পর্যন্ত। কিন্তু ১৯৭৫ সালের পর থেকে দেখা যায় যে প্রায় প্রতিবছরই এল নিনো-লা নিনা হচ্ছে। অর্থাৎ জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে এর একটা সম্পর্ক আছে। এখানে একটা বিষয় লক্ষণীয়, যে বছর এল নিনো হয়, তার পরের বছর সাধারণত লা নিনা হয়। যেমন: ১৯৯৭ ও ১৯৯৮ সাল, ১৯৮৭ ও ১৯৮৮ সাল, ১৯৮২ ও ১৯৮৩ সালে একই প্রবণতা দেখা গেছে।
তাই এসব ক্ষেত্রে আমাদের নীতিনির্ধারকেরা যদি গুরুত্বের সঙ্গে প্রস্তুতি গ্রহণ করেন, তাহলে ক্ষতির পরিমাণ অনেকটা এড়ানো যায়।
.
রেজাউল করিম চৌধুরী
আমার বাড়ি কুতুবদিয়ায়। আমার বাবা তিনবার বাড়ি পরিবর্তন করেছেন। আমরা স্থায়ীভাবে ওই এলাকা ত্যাগ করেছি। ১৯৬৫ সালে এর আয়তন ছিল প্রায় ৭৫ বর্গকিলোমিটার। এখন প্রায় ২৫ বর্গকিলোমিটার আয়তনে এসে ঠেকেছে।
২০০৭ সাল থেকে জলবায়ুকে গভীরভাবে প্রত্যক্ষ করে আসছি। আমি ক্যান ও গ্লোবাল জাস্টিস—এ দুটি বৈশ্বিক শক্তিশালী সংস্থার সদস্য। জলবায়ু ইস্যুতে সরকারের সঙ্গে সব সময় আমাদের ভালো সম্পর্ক ছিল। কিন্তু বর্তমান সময়ে কিছুটা দূরত্ব তৈরি হয়েছে। বিভিন্নভাবে আমাদের এ মনোভাব ব্যক্ত করা হয়েছে।
জলবায়ু ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রীর ভাবনার সঙ্গে আমরা একমত। আমরা তাঁর নির্দেশনামতো কাজ করেছি। কোপেনহেগেনে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি দেড় ডিগ্রির মধ্যে রাখতে হবে। আমরা এটার সঙ্গে সম্পূর্ণ একমত। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশ কোনোভাবেই জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী না। তাই আমরা ঋণ নেব না, আমাদের অনুদান দিতে হবে। এর সঙ্গেও আমরা একমত।
প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘসহ সব ফোরামে বলেছেন, আমাদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। ২০৫০ সালের মধ্যে ৩০ থেকে ৫০ লাখ মানুষ উদ্বাস্তু হবে। এদের দায়িত্ব ধনী দেশগুলোর নিতে হবে। কারণ তাদের কার্বন নিঃসরণের ক্ষতি আমাদের বহন করতে হচ্ছে।
আমরা সবাই একমত যে ১৯৫১ সালের জেনেভা কনভেনশন পরিবর্তন করা উচিত। এবার প্যারিস সম্মেলনে চায়না ও বিশ্বকে যত খুশি তত কার্বন নিঃসরণের সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। তাপমাত্রা দেড় বা দুই ডিগ্রি বৃদ্ধিতে সীমাবদ্ধ রাখার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে ২০১৮ সালের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে। তবে অভিজ্ঞতা বলে, এসব প্রতিবেদনের কোনো সিদ্ধান্তই উন্নত বিশ্বগুলো রাখেনি।
কিয়োটো প্রটোকলেও ভালো ভালো সিদ্ধান্ত ছিল, কিন্তু কেউ কথা রাখেনি। এই চুক্তির ৫২ ধারা ছিল অপমানজনক। এখানে বলা হয়েছে, আমরা কোনো সময়ে আমাদের ক্ষতিপূরণ দাবি করতে পারব না। এর বিরুদ্ধে বাংলাদেশের সব প্রতিনিধি দাঁড়িয়ে গেলে একটা ভালো সিদ্ধান্ত আসতে পারত। এ কাজটি করা হয়নি।
ফোর্স মাইগ্রেন্টের বিষয়ে ভালো সিদ্ধান্ত হয়নি। এই সমঝোতাপত্রে অতিরিক্ত তহবিল বলে কিছু নেই। জলবায়ু কূটনীতি দিয়ে আমরা বিশ্বের সামনে আসতে পারতাম। আমাদের প্রধানমন্ত্রী এ সম্মেলনে উপস্থিত থাকতে পারতেন। ফিলিপিনোরা ক্লাইমেট কমিশন করে তাদের দেশের অনেক কাজ করেছে। তাদের এ কমিশন একটা আলোচিত বিষয় হয়েছে। আমরাও এমন একটি কমিশন করতে পারতাম।
ভারত ও পাকিস্তানে আবহাওয়া মন্ত্রণালয় আছে। ২০ থেকে ৩০ বছর পর আমাকে হয়তো কক্সবাজারে যেতে হবে না। আর হয়তো সূর্যোদয় দেখা হবে না। তাই এসব ফোরামে আমাদের উচ্চকণ্ঠ থাকবে, নেতৃত্ব থাকবে। রাজনৈতিকভাবে এ ইস্যুকে কীভাবে দেখা হচ্ছে, সেটা আমাদের ঠিক করতে হবে।
.
মির্জা শওকত
আমরা প্যারিস সম্মেলনকে আশাবাদের দিক থেকে দেখতে চাই। সমঝোতার এটি এত জটিল যে ভেতরে না থাকলে বোঝা যাবে না। এখানে উন্নত বিশ্বের পক্ষে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, স্বল্পোন্নত দেশগুলোর পক্ষে এলডিসি গ্রুপ, আফ্রিকান গ্রুপ সমঝোতায় অংশগ্রহণ করে।
কোনো একটি দেশের পক্ষে দর-কষাকষির সুযোগ খুব কম। জি-৭৭-এর মাধ্যমে আমাদের প্রস্তাব তুলে ধরা হয়। চায়না, ভারত ও আমেরিকা আগে কখনো এ চুক্তিতে সম্মত হতে চায়নি। তারা সেখান থেকে সরে প্যারিস সমঝোতার সঙ্গে একমত হয়েছে। তাই এটা একটা বড় ধরনের সফলতা।
ফ্রান্সের সমঝোতাকারীরা বিভিন্নভাবে সমঝোতার চেষ্টা করে গেছে। আমরা এটি নিয়ে দিনরাত কাজ করেছি। শেষ পর্যন্ত যে এটা হবে, সেটাও আমরা ভাবিনি।
এ সম্মেলন থেকে আমরা হয়তো ১০০ ভাগ পাইনি, কিন্তু বেশির ভাগ পেয়েছি। ১০০ বিলিয়ন ডলারের একটা অংশ ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলো পাচ্ছে, এটাও একটা অর্জন।
এ ক্ষেত্রে ফ্রান্স সরকারের ব্যাপক ভূমিকার প্রশংসা করতে হবে। বিভিন্ন দুর্বলতার জন্য কোপেনহেগেন ব্যর্থ হয়েছিল। প্যারিস সম্মেলনে সেগুলো দূর করা হয়েছে। দেড় ডিগ্রি, দুই ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার এটি প্যারিস সম্মেলনে ভালোভাবে আলোচনা হয়েছে।
২০১৫ সালের মধ্যে একটা সমঝোতায় পৌঁছানোর জন্য ডারবানে একটা ওয়ার্কিং গ্রুপ কাজ করেছিল। ২০১৫ সালের মধ্যে সেই সমঝোতায় পৌঁছানো গেল। বিভিন্ন দেশের সংসদে এটা রেটিফাই হবে। ২০২০ সাল থেকে এ সম্মেলনের প্রস্তাবগুলো কার্যকর হবে।
কীভাবে এ চুক্তি কার্যকর করা যাবে, সে বিষয়গুলো এখানে আছে। ২০২৩ সাল থেকে প্রথম স্টক টেকিং শুরু হবে। পাঁচ বছর পরপর এটা চলতে থাকবে। যাতে দুই ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা যায়।
তাৎক্ষণিক ক্ষতির মোকাবিলা করার জন্য লস অ্যান্ড ড্যামেজের এটি এসেছে। এখানে আমাদের চাওয়ার পুরোটা নেই। কিন্তু কিছু বিষয় আছে। বিপদকে দ্রুত চিহ্নিত করার বিষয় আছে। তাৎক্ষণিক প্রস্তুতির বিষয় আছে। আরও কিছু বিষয় আছে, যার মাধ্যমে আমরা উপকৃত হব।
যারা জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাস্তুচ্যুত হবে, তাদের জন্য এ সম্মেলন থেকে আমরা ভালো কিছু অর্জন করতে পারিনি। তবে একেবারে যে কিছু হয়নি, সেটাও না। আমি বলব যে এটা একটি ব্যালান্স সমঝোতা। ১০ থেকে ১২টি কপে অংশগ্রহণ করেছি। এর থেকে ভালো সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে মনে করি না।
.
আতিক রহমান
প্যারিসের সম্মেলন ছিল ২১তম কপ (কনফারেন্স অব পার্টি)। এর আগে ২০টি কপ হয়েছে। ১৯৮৯ সাল থেকে শুরু করে কপ এ পর্যন্ত এসেছে। আমি এ সম্মেলনে ছিলাম। কমপক্ষে ২০টি দেশের সমঝোতাকারী, এনজিও প্রতিনিধি, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কাজ করেছি। বিভিন্ন পক্ষের দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যে পার্থক্যও রয়েছে।
আজকের গোলটেবিল আলোচকদের মধ্যেও সে পার্থক্য লক্ষ করা গেছে। আবার প্রত্যেকের মতামতেরও গুরুত্ব রয়েছে। সম্মেলনে সবাই একমত না হওয়ার উপাদান অনেক ছিল। প্যারিস সম্মেলনের সবচেয়ে বড় সফলতা হলো ১৯৫টি দেশ একমত হয়েছে।
বড় নেতারা সাধারণত শেষের দিকে আসে। এ সম্মেলনে সবাই প্রথম থেকে ছিল। তারা পাঁচ থেকে সাত মিনিট কথা বলার সুযোগ পেয়েছে। তাদের উপলব্ধি হয়েছে একটা মতৈক্যে আসা উচিত।
আর্থিক দিক থেকে বলা হয়েছে, কমপক্ষে ১০০ বিলিয়ন ডলার হবে। কিন্তু এটা বাড়তে থাকবে। আমেরিকার প্রতিনিধিরা বলছে, তাদের ইচ্ছা থাকলেও অনেক কিছু করতে পারে না। তাদের রিপাবলিকান সিনেটরদের বোঝাতে হয়।
চীনের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ক্ষতিগ্রস্ত হয়, এমন কিছু তারা করবে না। কিন্তু চীন এখন কেন রাজি হয়েছে, কারণ চীনের নিজেরও শ্বাস নিতে হবে। সব জায়গায় জেতা যাবে না। এক জায়গায় জিতলে অন্য জায়গায় হারতে হবে।
এ সম্মেলনের একটা প্রধান উদ্দেশ্য ছিল সমঝোতায় আসা। শেষের দিকে জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন ও ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ওলাঁদ এসে তেমন একটা ইঙ্গিত দিলেন। শেষ পর্যন্ত এটা হয়েছে। সবাই একটা স্বস্তির নিশ্বাস নিতে পেরেছে।
এটি একটি জটিল প্রক্রিয়া। এর মধ্যে আবহাওয়ামণ্ডল আছে, সাগর-মহাসাগর আছে, বায়োডাইভারসিটি আছে, কমার্স আছে, আর্থিক বিষয় আছে। এমন অসংখ্য বিষয় নিয়ে একটি প্রক্রিয়া। এর সমাধান মোটেই কোনো সহজ কাজ না।
প্রতি বিষয়ের ছাড়পত্র পেতে আইনজীবীদের কাছে যেতে হয়। সবকিছু পেতে গেলে হয়তো কিছুই হতো না। এ সম্ভাবনাটা ছিল প্রবল। বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধি, এনজিওগুলোর প্রতিনিধি, সাংবাদিক, অন্যান্য গ্রুপ সবাই ভালো কাজ করেছে।
বাংলাদেশের প্রচেষ্টা অনেকের চোখে পড়েছে। এখন বাংলাদেশ কী করবে? পরিবেশ ও বন একটা ছোট মন্ত্রণালয়। কিন্তু জলবায়ু একটা বিশাল ব্যাপার। জলবায়ুর সঙ্গে অর্থ, ভূমি, বৈদেশিক, পানিসম্পদ, মৎস্য, কৃষি ইত্যাদি মন্ত্রণালয় জড়িত। শুধু পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের পক্ষে এত কিছু দেখা সম্ভব না। এখানে আলাদাভাবে জলবায়ু মন্ত্রণালয় বা একটি জলবায়ু কমিশন করতে হবে।
আজ একশ্রেণির শক্তিশালী মানুষ নদী, মাটি, গাছ, পাহাড়, ধ্বংস করছে। এ ক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা নিতে হবে। আমাদের কাজ হলো দ্রুত একটা কর্মপরিকল্পনা করা। জলবায়ু পরিবর্তনের সুযোগ ব্যবহার করে আমরা টেকসই উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যেতে পারি।
.
আইনুন নিশাত
এটা খুব সত্যি কথা, বিশ্বের তাপমাত্রা বৃদ্ধির জন্য যাদের দায় রয়েছে, তারা এখান থেকে দায়মুক্তির চেষ্টা করেছে। এটা ছিল পৃথিবীর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য সম্মেলন, যেখানে বিশ্বের ১৫৮ জন রাষ্ট্রপতি উপস্থিত ছিলেন। বারবার বলা হয়েছে, এতজন রাষ্ট্রপতি এক জায়গায় বিশ্বের আর কোথায় মিলিত হননি।
শিল্প বিপ্লবের পর থেকে তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১ দশমিক ৫ থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রাখার ব্যাপারে প্রায় সবাই একমত। এসব বিষয়ে অনেকে অনেক প্রস্তুতি নিয়ে কথা বলেছেন। যেমন: কিছু দ্বীপরাষ্ট্র, ল্যাটিন আমেরিকা কথা বললে সবাই চুপ থাকে। তারা অনেক প্রস্তুতি নিয়ে শক্তভাবে কথা বলেছে। তারা সব ধরনের কৌশল ও রাজনীতিতে আমাদের থেকে এগিয়ে আছে।
এ সম্মেলনে তরুণদের মতামত শোনা হয়েছে। প্যারিস সম্মেলনে যেটা হয়েছে, সেটা হলো জলবায়ু বিষয়ে পৃথিবীর একটা প্রস্তাব।
আমরা এটিকে প্রত্যাখ্যান করতে পারি, আবার গ্রহণও করতে পারি। এটি গ্রহণ করলে পার্লামেন্টে র্যাটিফাই করতে হবে। তারপর এপ্রিল ২০১৬ থেকে এপ্রিল ২০১৭-এর মধ্যে তাদের সঙ্গে যোগ দিতে হবে। জলবায়ু সমস্যা সমাধানের জন্য যেসব মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব আছে, তাদের সে দায়িত্ব ভালোভাবে পালন করতে হবে। ভারত, ফিলিপাইনসহ ২০ থেকে ২৫টা দেশ জলবায়ু সমস্যার বিষয়ে কমিটি করেছে। এ কমিটির প্রধান প্রেসিডেন্ট বা প্রধানমন্ত্রী। আমরা সে রকম একটা কমিটি করতে পারি।
আমাদের মন্ত্রণালয়গুলো নিজে নিজে কাজ করে। সবাই আবার করেও না। এখানে একটা সমন্বয় দরকার। একটা কর্মপরিকল্পনাকে কার্যকর করতে হলে কতকগুলো মন্ত্রণালয়ের ভূমিকা থাকে। ২০১১ সালে বাংলাদেশ ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী সিদ্ধান্ত দিয়েছেন, এখন থেকে নদীগুলো অববাহিকাভিত্তিক হবে। এ ক্ষেত্রে ভারত কাজ করছে। ভুটান-ভারত-বাংলাদেশ মিটিং হয়েছে, কার্যবিবরণী বের হয়নি। নেপাল, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে আলোচনা হচ্ছে না। জি-৭৭-এর মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রস্তাব তুলে ধরতে হয়। কিন্তু তারা কারও কথা খুব একটা শোনে না।
আমরা জি-৭৭ থেকে বেরিয়ে আসতে পারি। কিন্তু বেরিয়ে এসে কী করব, সেটা ভাবতে হবে। একা চলতে পারব না। অনেকগুলো পক্ষ এখানে কথা বলে। কোনো না কোনো পক্ষের মাধ্যমে আমাদের কথা বলতে হবে। এখানে প্রথমে কথা বলে জি-৭৭-এর চায়না, তারপর ইউরোপীয় ইউনিয়ন, এনভায়রনমেন্টাল ইন্টেগ্রিটি গ্রুপ, আমব্রেলা গ্রুপ।
এরপর জি-৭৭-এর পক্ষে কথা বলে এলডিসি গ্রুপ, স্মল আইল্যান্ড স্টেটস, রেইন ফরেস্ট গ্রুপ ইত্যাদি। বাংলাদেশ রেইন ফরেস্ট গ্রুপের সদস্য। কিন্তু কখনো কি কেউ এই গ্রুপের মিটিংয়ে অংশগ্রহণ করেছে?
জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষেত্রে টাকাপয়সার কথা উঠলেই পৃথিবী চারটি শব্দ ব্যবহার করে। এগুলো হলো অ্যাকাউন্টেবিলিটি, ট্রান্সপারেন্সি, পার্টনারশিপ, ইনক্লুসিভনেস। বেড়িবাঁধ তৈরির কথা বললে বলা হয় টাকা নেই। অথচ কোনো মন্ত্রণালয়ের কোনো সম্পদ ও দায়ের ব্যালেন্স শিট নেই। থাকলে দেখা যেত প্রতিবছরই অর্থ দেওয়া হয়। কিন্তু কাজের সময় অর্থ পাওয়া যায় না।
অংশগ্রহণকারী রাষ্ট্রগুলোর একমতের প্রতিফলন এই চুক্তি। এটা থেকে কীভাবে সর্বোচ্চ সুবিধা আদায় করা যায়, সে জন্য আমাদের কাজ করতে হবে।
কামাল উদ্দিন আহমেদ
কামাল উদ্দিন আহমেদ
এই সমঝোতা নিয়ে যাঁরা আশঙ্কা ব্যক্ত করেছেন এবং যাঁরা ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছেন আমি সবার সঙ্গে একমত। শতাব্দীর শেষ দিকে তাপমাত্রা ৩ দশমিক ২ ডিগ্রি বৃদ্ধি পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে আমাদের চ্যালেঞ্জগুলো হয়তো থেকেই যাবে।
কপ প্রেসিডেন্ট লোরা ফ্যাবিওর দিন-রাত অক্লান্ত পরিশ্রম ছিল এই সম্মেলন সফল করার জন্য। এই সম্মেলনের সফলতার জন্য তিনি বাংলাদেশসহ পৃথিবীর অনেক দেশে গিয়েছেন। কিয়োটো প্রটোকলে সবাই একমত হতে পারিনি। কিন্তু এ সম্মেলনে কাজটি হয়েছে।
এখানে মিটিগেশন, অ্যাডাপটেশন, লস অ্যান্ড ড্যামেজ আরও অনেক বিষয়ে একমত হওয়া মোটেই কোনো সহজ কাজ ছিল না। দেশের মধ্যে যাঁরা এটা নিয়ে কাজ করেন, জলবায়ুর বিষয়ে দীর্ঘ অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান আছে, এমন কিছু মানুষ নিয়ে আমরা একটি দল করে গিয়েছি। প্রতিদিন সেখানে সলাপরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
বেরিয়ে আসার কাজটি খুব সহজ। কিন্তু নিজেদের একটা অবস্থান তৈরি না করে বেরিয়ে আসা যায় না। আমরা সর্বতোভাবে চেষ্টা করেছি সব ক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা রাখার জন্য। সে জন্য মনে করি, এবার বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরতে পেরেছি।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটর, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, নরডিক দেশগুলোর প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন গ্রুপের সঙ্গে আলোচনা করেছি। আমাদের অবস্থান ভালোভাবে তুলে ধরেছি। সবাই আমাদের ভূমিকাকে প্রশংসা করেছে। কোথাও আমাদের তথ্য-উপাত্ত ও যুক্তিতর্কের কোনো সমস্যা ছিল না। ভবিষ্যতে বাংলাদেশ এ সম্মেলনে আরও জোরালো ভূমিকা রাখতে পারবে। হয়তো আলাদা বেরিয়েও আসতে পারবে। এ সম্মেলনে সবার সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করাটাই ছিল আমাদের জন্য সবচেয়ে যৌক্তিক। আমাদের অনেকগুলো মতামত এই চুক্তির মধ্যে আছে। এই সমঝোতার ধারা ৭ দশমিক ৭ থেকে ১১ পর্যন্ত অভিযোজন সহায়তার কথা বলা হয়েছে। এটা সম্পূর্ণ অনুদাননির্ভর। লস অ্যান্ড ড্যামেজসহ অন্যান্য বিষয়ের ক্ষেত্রে আমাদের হতাশ হওয়ার কিছু নেই
0 responses on "৩৮ তম বিসিএস প্রিলিমিনারি ও লিখিত পরীক্ষা প্রস্তুতি আন্তর্জাতিকে, পার্ট - ১"