Actors in the World
_____________________
____________________________________________
সিলেবাসঃ
Modern state, types of state, sovereignty, non-state actors, international institutions, relations between state and non-state actors
____________________________________________
international institutions:
——–
১। কমনওয়েলথ প্রতিষ্ঠার প্রেক্ষাপট কি? এর কার্যাবলি লিখুন? CIS কি?
উত্তরঃ কমনওয়েলথ অব নেশন্স বা কমনওয়েলথ এর সদস্য রাষ্ট্র সমূহ (ইংরেজী: Commonwealth of Nations) অতীতে ইংরেজ সাম্রাজ্যভুক্ত ছিল এমন স্বাধীন জাতিসমূহ নিয়ে গঠিত আন্তর্জাতিক সংস্থা। বর্তমানে এই সংস্থার সদস্য সংখ্যা ৫৩। এই সংস্থার সচিবালয় লন্ডনে অবস্থিত। ব্রিটেনই এর নেতৃত্ব দিয়ে থাকে। পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কমনওয়েলথ অব নেশন্স গঠিত হয়।
(সূত্রঃ উইকিপিডিয়া বাংলা)
২।
টীকা লিখুনঃ বিশ্বব্যাংক, AIIB, NDB, BRICS , OPEC.
______________
বিশ্বব্যাংক
______________
:: ১৯৪৪ সালের জুলাই (১-২২ তারিখ) মাসে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ হ্যাম্পশায়ারের ব্রেটন উডস নামক স্থানে জাতিসংঘ মুদ্রা ও অর্থ বিষয়ক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। আর সেই সম্মেলনে দুটি প্রতিষ্ঠান সৃষ্টি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়ঃ আইএমএফ আর পুনর্গঠন ও উন্নয়নের জন্য আন্তর্জাতিক ব্যাংক বা বিশ্বব্যাংক।
:: সদর দপ্তর – ওয়াশিংটন ডিসি
:: সদস্য সংখ্যা – ১৮৮ টি রাষ্ট্র
:: বাংলাদেশ সদস্যপদ পায় – ১৭ আগস্ট, ১৯৭২
:: বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের জনক – লর্ড কেইনস এবং হ্যারি ডেক্সটার হোয়াইট
:: বিশ্বব্যাংকের প্রথম প্রেসিডেন্ট – ইউগেন মেয়ার
:: বিশ্বব্যাংকের বর্তমান প্রেসিডেন্ট – জিম ইয়ং কিম (১২তম)
:: বিশ্বব্যাংকের সাহায্য পাওয়া প্রথম দেশ – ফ্রান্স (বিশ্বব্যাংকের প্রথম ঋণ গ্রহীতা)
:: ১৯৯১ সালে বিশ্বব্যাংক ঘোষণা করে যে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে কাঠ কাটা বা পরিবেশের ক্ষতি করে এমন স্থাপনা নির্মাণের জন্য সংস্থাটি কোন অর্থায়ন করবে না ।
:: বিশ্বব্যাংক গ্রুপকে বলা হয় – Five Institutions, One Group.
:: ব্রেটন উডস ইনস্টিটিউশন’ বলতে বুঝায় = ২ টি প্রতিষ্ঠানকে ।
১. WB (IBRD)
২. IMF
:: ৫ টি প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে বিশ্বব্যাংক গ্রুপ গঠিতঃ
১. IBRD (১৯৪৪)
২. IFC (১৯৫৬)
৩. IDA (১৯৬০)
৪. ICSID (১৯৬৬)
৫. MIGA (১৯৮৮)
:: IBRD:
– International Bank for Reconstruction and Development.
– প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৪৪ সালে।
– IBRD কার্যক্রম শুরু করে ১৯৪৬ সালের ২৭ শে নভেম্বর।
– বিশ্ব ব্যাংক বলতে বুঝায় – IBRD কে
– এটি মধ্যম আয়ের দেশ ও দরিদ্র দেশগুলোকে ঋণ ও আর্থিক সহায়তা দেয়।
:: IFC: International Finance Corporation
– প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৫৬ সালে।
– উন্নয়নশীল দেশের টেকসই উন্নয়নে ‘বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ বৃদ্বিতে’ কাজ করে।
– বেসরকারি খাতের প্রকল্পে অর্থায়ন করে।
– আন্তর্জাতিক ‘আর্থিক বাজার উন্নয়নে’ কাজ করে।
IDA: International Development Association
– প্রতিষ্ঠিত হয় – ১৯৬০
– soft loan window বলা হয় – IDA এর ঋণকে (কারণ সহজ শর্তে দীর্ঘমেয়াদী ঋণ দেয়)
:: ICSID: International Centre for Settlement of Investment Disputes.
– প্রতিষ্ঠিত হয় – ১৯৬৬
– সরকার এবং বিদেশী বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ‘বিনিয়োগ বিরোধ নিষ্পত্তি’ করতে কাজ করে।
:: M IGA: Multilateral Investment Guarantee Agency.
– প্রতিষ্ঠিত হয় – ১৯৮৮
– উদীয়মান অর্থনীতির দেশে ‘বৈদেশিক বিনিয়োগ’ (FDI) আকর্ষণ ও বিনিয়োগ বৃদ্বিতে কাজ করে।
__________ x_________
__________________
ব্রেটন উডস সংস্থাঃ
___________________
:: ১৯৪৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ হ্যাম্পশায়ার এর ব্রেটন উডস শহরে ব্রেটন উডস সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৪৪ সালের ১ থেকে ২২ জুলাই পর্যন্ত এ সম্মেলনে বিশ্বের ৪৪টি দেশের ৭৩০ জন প্রতিনিধি অংশ নেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর প্রেক্ষাপটে আন্তর্জাতিক মুদ্রা ব্যবস্থা গঠন, যুদ্ধোত্তর রাষ্ট্রসমূহের পুণর্গঠন ও উন্নয়ন সাধন এবং বাণিজ্য ব্যবস্থা সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়।
.
সম্মেলনে এ মর্মে প্রস্তাব গৃহীত হয় যে, উক্ত বিষয়গুলোর প্রয়োগকল্পে সঠিক কাঠামো নির্মাণের উদ্দেশ্যে ৩ টি আন্তর্জাতিক সংগঠন গঠন করা যুক্তিযুক্ত হবে। প্রস্তাবিত ৩ টি বহুজাতিক ব্যবস্থা নিম্নরূপঃ
– বিশ্বব্যাংক (IBRD),
– আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (IMF),
– আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সংগঠন (ITO) । এদের প্রধান কাজ হবে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের সমস্যা সমূহ পর্যবেক্ষণ ও সমাধানের উপায় বের করা।
.
:: ১৯৪৪-৪৫ সাল নাগাদ প্রথমে ২ টি সংগঠন (বিশ্বব্যাংক গ্রুপের IBRD এবং IMF) প্রতিষ্ঠা লাভ করে । কিন্তু তৃতীয়টি নিয়ে দেখা দেয় বিবাদ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং অন্যান্য কতিপয় রাষ্ট্র বাণিজ্য ব্যবস্থা তদারকির জন্য একটি পরিবর্তনশীল সংগঠন হিসাবে গ্যাটের জন্ম দেয় ১৯৪৭ সালে। ১৯৬৪ সালে জাতিসংঘ পর্ষদ প্রদত্ত বিকল্পের ভিত্তিভূমিতেই UNCTAD প্রতিষ্ঠা লাভ করেছিল, এবং এক সময় মনে হয়েছিল যে, ১৯৬৪ এর UNCTAD ১৯৪৭ এর গ্যাটের প্রতিস্থাপক হবে। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সর্বোতভাবে গ্যাটকে সমর্থন করায় গ্যাট পর্যায়ক্রমে শক্তিশালী হতে থাকে।
__________ x_________
__________________________________
IMF : International Monetary Fund
. __________________________________
:: গঠনের সিদ্বান্ত হয় – ১৯৪৪ (ব্রেটন উডস সম্মেলন)
:: প্রতিষ্ঠিত হয় – ১৯৪৫, ২৭ ডিসেম্বর
:: আর্থিক কার্যক্রম শুরু করে = ১৯৪৭ (১৬ তম বিসিএস)
:: সদস্য – ১৮৮ টি দেশ
:: ব্যবস্থাপনা পরিচালক – ক্রিস্টিনা লাদার্খ (ফ্রান্স)
:: এটি ‘মুদ্রার বিনিময় হার স্থিতিশীল’ রাখতে কাজ করে।
:: এটি ‘অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বৃদ্বিতে’ ও ‘বানিজ্য ঘাটতি’ শোধরাতে আর্থিক সহযোগিতায় দান করে।
:: এর রিজার্ভ সম্পদের একককে বলে – SDR (special drawing right)
:: ১৯৬৯ সালে SDR প্রবর্তন করা হয়।
The IMF uses a quota system and its unit of account is the SDR (special drawing right). The currency value of the SDR is determined by summing the values in U.S. dollars, based on market exchange rates, of a basket of major currencies (dollar, Euro, yen, and pound).
________________________________________
BIS : Bank for International Settlements
________________________________________
:: প্রতিষ্ঠিত হয় – ১৯৩০
:: সকল ‘কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ব্যাংক’ হলো – BIS
:: আর্থিক ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার সাধনার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকসমূহকে সহযোগিতা করে।
________________________
বিশ্ব বাণিজ্য সংগঠন (WTO)
________________________
:: এটি বিশ্বের বাণিজ্য সংক্রান্ত নীতি প্রবর্তন এবং সদস্য রাষ্ট্র বা পক্ষ সমূহের মধ্যকার মতপার্থক্য দূর করতে সাহায্য করে থাকে
:: প্রতিষ্ঠিত হয় – ১জানুযারী, ১৯৯৫ (প্রতিষ্ঠাকালীন উরুগুয়ে রাউন্ডেই সদস্য হয় – ১২৩)
:: বাংলাদেশের সদস্যপদ লাভ – ১০ জানুয়ারী, ১৯৯৫
:: ‘উরুগুয়ে রাউন্ড বাণিজ্য সমঝোতার’ মাধ্যমে বিশ্ব বাণিজ্য সংগঠন (WTO) গঠিত হয় ।
:: উরুগুয়ে রাউন্ডের সংলাপ হয়েছিল = ৮ বত্সর (১৯৮৬-৯৪)
লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যঃ
______________
:: বিশ্ব বাণিজ্যের প্রসার করা
:: মুক্ত বাণিজ্যের প্রসার করা
:: বাণিজ্যের অ- শুল্ক বাধা সমূহ দূর করা
:: বাণিজ্য আলোচনার ফোরাম হিসেবে বাণিজ্য বিরোধ নিষ্পত্তি করে।
:: সদর দপ্তর – জেনেভা, সুইজারল্যান্ড
:: দাপ্তরিক ভাষা – ৩ টি (ইংরেজী, ফ্রেঞ্চ, স্পেনিশ)
:: বর্তমানে মোট সদস্য – ১৬2 টি । উইকিতে ও তাদের ওয়েবে আছে ১৬২। সর্বশেষ সম্মেলনে আরো দুটি সদস্য যোগ হয় সে হিসবে ১৬৪
:: সর্বশেষ সদস্য – আফগানিস্তান।
:: WTO এর পুর্বসরি – GATT or GATT উত্তরাধিকারী WTO
:: GATT, WTO তে রূপান্তরিত হয় – ১৯৯৫ সালে
:: WTO এর সবোর্চ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্ত গ্রহনের দায়িত্ব মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনের (Council of Ministers) ওপর ন্যস্ত । মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলন (Council of Ministers) অন্তত দুবছরে একবার মিলিত হয়।
________
GATT
________
.
:: গ্যাট মূলত কোন বাণিজ্যিক সংগঠন নয়, এটা একটা বাণিজ্যিক চুক্তি।
:: ১৯৪৭ সালে জেনেভাতে GATT চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
:: উদ্দেশ্যঃ বিশ্বব্যাপী বাণিজ্য ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে নতুন কর্মসূচী প্রণয়ন করা এবং মুক্তবাজার অর্থনীতিকে গতিশীল করা।
_____________________________________
= = = GATT হতে WTO (একনজরে) = = =
_____________________________________
২য় বিশ্বযুদ্ব পরবর্তী সময়ে রাষ্ট্রসমূহের পারস্পরিক বাণিজ্যিক সম্পর্ক নির্ধারণের প্রয়োজন থেকেই GATT জন্মলাভ করে। গ্যাট চুক্তি স্বাক্ষরের পর থেকে চুক্তিটিকে একটি বহুপাক্ষিক বাণিজ্য সংস্থায় রূপান্তর করার প্রয়োজন দেখা দেয়। এ প্রয়োজনেই ১৯৪৭ সাল থেকে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত গ্যাটের কর্তৃত্বকে আরো শক্তিশালী ও সম্প্রসারিত করার লক্ষ্যে চুক্তিটির আলোচনার মাধ্যমে বিশ্ববাণিজ্য সংগঠন (WTO) গঠনের উদ্যোগ শুরু হয়। অবশেষে ১৯৮৬ সালে গ্যাটের উরুগুয়ে রাউন্ড আলোচনার মধ্য দিয়েই চুক্তিটি বিশ্ববাণিজ্য সংস্থায় রূপান্তর লাভ করে। ১৯৯৫ সালের ১ জানুয়ারী GATT আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যক্রম শুরু করে।
_________________________
= = = উরুগুয়ে রাউন্ড = = =
_________________________
:: ১৯৮৬ সালে উরুগুয়েতে ১০৭টি দেশের প্রতিনিধিদের নিয়ে ‘গ্যাট বৈঠক’ শুরূ হয়।
:: উরুগুয়ে রাউন্ডই ‘ডাংকেল প্রস্তাব’ গৃহীত হয়।
________________________
= = = ডাংকেল প্রস্তাব = = =
_________________________
:: ১৯৯৩ সালের ১৫ই ডিসেম্বর ‘ডাংকেল প্রস্তাব’ গৃহীত হয়।
:: এই ‘ডাংকেল প্রস্তাবের’ আওতায় ২০০৪ সালে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পে নির্ধারিত ‘কোটা প্রথা’ উঠে যায়।
_______
AIIB
_______
এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (এআইআইবি) চীনের প্রস্তাবিত একটি আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান। এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলে অবকাঠামো উন্নয়নে অর্থ সহায়তা করাই এই বহুজাতিক উন্নয়ন ব্যাংকের উদ্দেশ্য। এআইআইবিকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল, বিশ্ব ব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের বিকল্প মনে করা হচ্ছে কারন এআইআইবি-র দৃষ্টিতে তারা উন্নত দেশ মুলত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও জাপান দ্বারা প্রভাবিত।
এই নতুন ব্যাংকের মাধ্যমে চীন এশীয় অঞ্চলে বিনিয়োগের মাধ্যমে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করবে বলে মনে করা হয়। ২০১৪ সালের জুন মাসে চীন ব্যাংকটির মুলধন ৫০ বিলিয়ন ডলার থেকে ১০০ বিলিয়ন ডলারে বৃদ্ধির প্রস্তাব করে এবং ভারতকে যোগদানের আহবান জানায়।২৪ অক্টোবর, ২০১৪ সালে বেইজিং-এ সমঝোতা স্মারক সইয়ের মাধ্যমে ব্যাংকটির আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। ২১ টি দেশ চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। আগ্রহ প্রকাশ করলেও মার্কিন চাপে অস্ট্রেলিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়া চুক্তি স্বাক্ষর থেকে বিরত থেকেছে।
::গঠিত
১৬ জানুয়ারি ২০১৬ (ব্যবসা শুরু)
২৫ ডিসেম্বর ২০১৫ (চুক্তিবদ্ধ)
২৪ অক্টোবর ২০১৪ (বহুপাক্ষিক অন্তর্বর্তীকালীন সচিবালয়)
:: ধরণ – আঞ্চলিক সংস্থা
:: আইনি – অবস্থা চুক্তি
:: উদ্দেশ্য – মূলধন
:: সদর দপ্তর – বেইজিং, চীন
:: দাপ্তরিক ভাষা – ইংরেজী
:: মহাসচিব – Jin Liqun
:: প্রধান অঙ্গ বহুপাক্ষিক অন্তর্বর্তী সচিবালয় (সচিবালয়)
___________________x___________________
সামাদ ভায়ের পোস্ট হতে সংগৃহীত।
____________________________________________
৩.স্বল্পোনত রাষ্ট্রের বৈশিষ্ট্য কি কি? বাংলাদেশকে স্বল্পোনত রাষ্ট্র থেকে বের হতে হলে কি কি করতে ?
____________________________________________
১. স্বল্পোন্নত দেশ (LDC) কী? স্বল্পোন্নত দেশ কীভাবে নির্ধারণ করা হয়?
২. স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) এর সামগ্রিক অবস্থা মূলায়ন কর
৩. স্বল্পোন্নত দেশ/এলডিসি থেকে উন্নয়নশীল দেশে উঠে আসার জন্য জাতিসংঘের নির্ণায়কগুলো কী কী?
৪. এলডিসি গ্রুপ (LDC Group) কি? এর সদস্য সংখ্যা কত?
৫. বাংলাদেশ সম্প্রতি বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় (WTO) স্বল্পোন্নত দেশ বা এলডিসির সমন্বয়ক নির্বাচিত হয়েছে। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশ কীভাবে লাভবান হতে পারে? এলডিসির স্বার্থে বাংলাদেশ আর কী ভূমিকা পালন করতে পারে?
৬. এশিয়ার এলডিসি ও আফ্রিকার এলডিসির স্বার্থের মধ্যে কী পার্থক্য রয়েছে? এক্ষেত্রে বাংলাদেশ কীভাবে সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করবে?
৭. বাংলাদেশের এখনও এলডিসিতে থাকার কারণ কী? বাংলাদেশের এলডিসি থেকে বের হতে কত সময় লাগবে?
৮. বাংলাদেশের এলডিসি থেকে বেরিয়ে যাবার পক্ষে-বিপক্ষে কী যুক্তি রয়েছে? vvi
৯. এলডিসি থেকে বেরিয়ে আসার স্বপ্ন এবং আপনি কি মনে করেন মধ্যম আয়ের দেশ হলেই বাংলাদেশ এলডিসি থেকে বেরিয়ে আসবে ? vvi
১০. এলডিসিতে বাংলাদেশের অবস্থান, চ্যালেঞ্জ, করণীয় ও সুপারিশ সম্পর্কে আপনার মতামত পেশ কর vvi
.
.
:: সিলেবাস সম্পর্কিত বিষয় (Related Topics):
বাংলাদেশ বিষয়াবলি (সিলেবাস) :
Economy, Foreign Policy and External Relations of Bangladesh (Participation in International Organizations), International Economic Institutions, International Trade.
.
আন্তর্জার্তিক বিষয়াবলি (সিলেবাস) :
Participation in International Organizations, International Economic Institutions, International Economic Relations, International trade, WTO. Bangladesh in International Affairs (Major achievements, challenges, future directions)
Section C : Problem-solving (International Trade issue)
.
.
:: কেন প্রাসঙ্গিক ও গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু মনে হচ্ছে ??
১. এলডিসি থেকে উত্তরণে কাজ করার জন্য গত ২২ ডিসেম্বর ‘সমন্বয় ও পরিবীক্ষণ’ কমিটি গঠন করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এ ছাড়া সরকারের আরো ২৬টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সিনিয়র সচিব ও সচিবদের ওই কমিটির সদস্য রাখা হয়েছে।
.
২. বাংলাদেশ সম্প্রতি পঞ্চমবারের মতো বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় (ডব্লিউটিও) স্বল্পোন্নত দেশ বা এলডিসির সমন্বয়ক নির্বাচিত হয়েছে।
.
.
✏ ✏ ✏ ✏ ✏✏ ✏ ✏ ✏ ✏
উত্তর :: উত্তর :: উত্তর :: উত্তর :
✏ ✏ ✏ ✏ ✏✏ ✏ ✏ ✏ ✏
.
———
:: স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) :
———
১৯৭১ সাল থেকে জাতিসংঘ বিশ্বের স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে আলাদা তালিকায় রেখেছে। উন্নয়ন-প্রক্রিয়া কার্যত স্থবির, দারিদ্র্যহার কমানোর ক্ষেত্রে ব্যর্থতা, ঝুঁকির তীব্রতা বিবেচনায় এ তালিকা। আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, বিদেশি ঋণ ও অনুদান পাওয়ার ক্ষেত্রে বিভিন্ন সংগঠন ও উন্নত দেশগুলোর কাছ থেকে এ ধরনের দেশকে বিশেষ সুবিধা দেওয়ার নীতি ও সিদ্ধান্ত রয়েছে জাতিসংঘ, ডাব্লিউটিওসহ নানা আন্তর্জাতিক সংস্থায়। এসব দেশ নিয়ে জাতিসংঘের প্রতিষ্ঠান আঙ্কটাডের নেতৃত্বে ১৯৮১, ১৯৯০, ২০০১ ও ২০১১ সালে চারটি সম্মেলন হয়েছে। সর্বশেষ ইস্তাম্বুলে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে এলডিসির অভিধা থেকে বের হওয়ার জন্য কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নে ২০২০ সাল পর্যন্ত সময় পায় দেশগুলো।
.
বর্তমানে এলডিসিভুক্ত দেশ আছে ৪৮টি। ১৯৭১ সাল থেকে এ পর্যন্ত মাত্র চারটি দেশ এলডিসি থেকে বের হতে পেরেছে। দেশগুলো হলো বতসোয়ানা, কেপ ভারদে, মালদ্বীপ ও সামোয়া।
.
According to the United Nations,
A least developed country (LDC) is a country that, exhibits the lowest indicators of socioeconomic development, with the lowest Human Development Index ratings of all countries in the world.
.
–
:: স্বল্পোন্নত দেশ (LDC) কীভাবে নির্ধারণ করা হয়?
–
তিনটি সূচকের ওপর ভিত্তি করেই স্বল্পোন্নত দেশ নির্ধারণ করা হয়ঃ
১. মাথাপিছু আয়
২. মানবসম্পদ উন্নয়ন
৩. অর্থনীতির ভঙ্গুরতা
স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের পর্যায়ে পৌঁছাতে হলে এই দেশগুলোর মাথাপিছু আর্ন এক হাজার ১৯০ ডলার, মানবসম্পদ সূচক ৬৬ এবং অর্থনীতির ভঙ্গুরতা সূচক ৩২ হতে হবে।
.
–
:: স্বল্পোন্নত দেশ (LDC) এর সামগ্রিক অবস্থা মূলায়ন :
–
বিশ্বব্যাংকের এক হিসাব অনুযায়ী, ৪৮টি এলডিসির মধ্যে বিশ্বের ৮৫ কোটি মানুষের বসবাস। এর মধ্যে অর্ধেকেরই অবস্থান দারিদ্র্যসীমার নিচে। বৈশ্বিক মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ২ শতাংশ, পণ্য বাণিজ্যের ১ শতাংশ এবং সেবা বাণিজ্যের মাত্র দশমিক ৫ শতাংশের ভাগীদার এলডিসিভুক্ত দেশগুলো। ডব্লিউটিওর অধীনে বাণিজ্য স্বার্থসম্পর্কিত বাংলাদেশসহ যে ৩৪টি এলডিসি রয়েছে, এদের অবস্থা আরও খারাপ।
.
–
:: স্বল্পোন্নত দেশ (LDC) থেকে উন্নয়নশীল দেশে উঠে আসার জন্য জাতিসংঘের নির্ণায়কগুলো কী কী?
–
এলডিসি থেকে উন্নয়নশীল দেশে উঠে আসার ক্ষেত্রে জাতিসংঘের ৩ টি শর্ত রয়েছেঃ
.
১ম শর্তঃ
তিন বছরের গড় মোট দেশজ আয়ের (জিএনআই) ভিত্তিতে মাথাপিছু আর্ন কমপক্ষে ১১৯০ ডলার হতে হবে। তবে সর্বনিম্ন মাথাপিছু আয়ের এ অঙ্ক প্রতিবছরই বাড়ে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাব অনুযায়ী, বর্তমান মাথাপিছু আয়ের পরিমাণ ১০৪৪ ডলার।
.
২য় শর্তঃ
হলো-মানবসম্পদের উন্নয়ন। এ ক্ষেত্রে পুষ্টি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও বয়স্ক শিক্ষা ক্ষেত্রে উন্নয়নকে মূল্যায়ন করে জাতিসংঘ।
.
৩য় শর্তঃ
ভঙ্গুর অর্থনৈতিক অবস্থা দূর করা। এটি কৃষি উৎপাদন, পণ্য ও সেবা রপ্তানি, প্রচলিত অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ছাড়াও জিডিপিতে সম্পূর্ণ পণ্য উৎপাদন ও আধুনিক সেবার অংশীদারিত্ব এবং ছোট অর্থনীতির প্রতিবন্ধকতা দূর করার ওপর নির্ভর করবে।
.
–
:: অর্থাৎ এলডিসি দেশগুলো মূলত তিন ভাবে এখান থেকে বের হয়ঃ
–
প্রথমত, প্রাকৃতিক সম্পদের ব্যবহার করে, যেমন করেছে মালদ্বীপসহ দ্বীপরাষ্ট্রগুলো।
দ্বিতীয়ত, অর্থনীতিকে বহুমুখীকরণ করা (যেমন বিভিন্ন ধরনের শিল্প খাতকে সহায়তা দেওয়া, যেন তারাও ভূমিকা রাখতে পারে)।
তৃতীয়ত, অর্থনীতিকে বিশেষায়িত করা (যেমন কোনো ক্ষেত্রে একটি বিশেষ খাতকে ধরে এগিয়ে যাওয়া)।
.
–
:: এলডিসি গ্রুপ (LDC Group) কি?
এর সদস্য সংখ্যা কত?
–
বর্তমানে ৪৮টি স্বল্পোন্নত দেশের মধ্যে ৩৪টি বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (WTO) এর সদস্য। আর বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় (ডব্লিউটিওতে) এই ৩৪টি দেশের দল বা গ্রুপটিকেই “”এলডিসি গ্রুপ”” বলে।
.
বাংলাদেশের বিশ্ব বাণিজ্যে নিজেদের হিস্যা আদায়ের কৌশল নির্ধারণে ১৯৯৫ সালে ডব্লিউটিওর যাত্রা শুরুর পরপরই গঠিত হয় এ দল। ৪৮টি স্বল্পোন্নত দেশের মধ্যে ডব্লিউটিওর সদস্য ৩৪টি দেশই হলো এলডিসি গ্রুপের সদস্য। উল্লেখ্য যে, আরও ৮টি দেশ ডব্লিউটিওর সদস্য হওয়ার প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে।
.
–
:: বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় (ডব্লিউটিও) স্বল্পোন্নত দেশ বা এলডিসির সমন্বয়ক বাংলাদেশ :
–
বাংলাদেশ পঞ্চমবারের মতো বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় (ডব্লিউটিও) স্বল্পোন্নত দেশ বা এলডিসির সমন্বয়ক মনোনীত হয়েছে। সম্প্রতি এলডিসি গ্রুপের এক সভায় বাংলাদেশকে সমন্বয়কের দায়িত্ব দেওয়া হয়। ১৯ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার থেকে পরবর্তী ছয় মাস বাংলাদেশ এ দায়িত্ব পালন করবে। তবে মেয়াদ আরও ছয় মাস বাড়তে পারে। এর আগে বাংলাদেশ ১৯৯৬, ২০০৩, ২০০৬ এবং ২০১০ সালেও এলডিসির সমন্বয়ক ছিল। সমন্বয়ক ছাড়াও এলডিসিগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ সব সময়ই নেতৃত্বস্থানীয় ভূমিকা পালন করে আসছে।
.
ডব্লিউটিওতে এলডিসির সমন্বয়ক নির্বাচিত হয় যদিও দেশের নামের আদ্যক্ষরের ক্রম অনুযায়ী (অ্যালফাবেটিক্যালি), তবে সব এলডিসিরই ৩৪টি দেশের সমন্বয়ক হওয়ার সক্ষমতা নেই। ডব্লিউটিওতে ১২টি স্বল্পোন্নত দেশের কোনো অফিসই নেই। জেনেভাতে বাংলাদেশের যেমন একটি স্থায়ী মিশন রয়েছে, দেশেও রয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন একটি ডব্লিউটিও সেল। মোটকথা, এলডিসির মধ্যে বাংলাদেশের একটা শক্ত অবস্থান রয়েছে। তা ছাড়া শুরু থেকেই বাংলাদেশ ডব্লিউটিওকে গুরুত্ব দিয়ে আসছে। ১৯৯৫ সালে ১২২টি সদস্য নিয়ে সংস্থাটি যখন গঠিত হয়, তখন থেকেই বাংলাদেশ সদস্য। বহুপক্ষীয় বাণিজ্য ব্যবস্থার মধ্যে নিজের অবস্থানকে সুদৃঢ় করতে সীমিত সাধ্যের মধ্যেও চেষ্টা করছে বাংলাদেশ।
.
–
:: বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় (ডব্লিউটিও) এলডিসির সমন্বয়ক হিসেবে বাংলাদেশ কীভাবে লাভবান হতে পারে?
–
বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় (ডব্লিউটিও) এলডিসি গ্রুপের সমন্বয়ক হওয়ার বড় লাভ হচ্ছে উন্নত দেশগুলোর কাছে এলডিসির দাবি ও অধিকার আদায়ে নেতৃত্ব দেবে বাংলাদেশ। অর্থাৎ স্বল্পোন্নত ৪৮ দেশের স্বার্থ রক্ষায় কাজ করার সুযোগ তৈরি হলো বাংলাদেশর ।
.
বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন,
‘উন্নত দেশগুলোতে এলডিসির শুল্ক ও কোটামুক্ত পণ্য রপ্তানির দাবিতে বাংলাদেশ সব সময়ই উচ্চকণ্ঠ। আবারও সময়ন্বক হওয়ায় এ দায়িত্ব আরও বাড়ল।’
.
এলডিসির উন্নয়নে ডব্লিউটিওতে এমন কিছু গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক (গ্রিনরুম মিটিং) অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে, যেগুলোতে শুধু সমন্বয়ক দেশের প্রতিনিধিই উপস্থিত থাকতে পারে। বাংলাদেশের স্বার্থের বাইরে চলে যেতে পারে—এ রকম কোনো বিষয় কোনো বৈঠকে উপস্থাপিত হলে, বাংলাদেশ তখন তা নিয়ে কথা বলতে পারবে। শুধু শুল্ক ও কোটামুক্ত পণ্য রপ্তানি নয়, সেবা খাতে বাজার পেতেও নিজেদের অধিকার, সুযোগ ও স্বার্থের বিষয়ে জোরালো ভূমিকা রাখবে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের দৃঢ় অবস্থান ও সক্ষমতার কারণে এলডিসির অনেক সদস্যই আমাদের ঈর্ষার চোখে দেখে।
.
–
:: এলডিসির স্বার্থে বাংলাদেশ আর কী ভূমিকা পালন করতে পারে?
–
উন্নত দেশগুলো তাদের জাতীয় আয়ের শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ সহায়তা (এইড) হিসেবে দরিদ্র দেশগুলোকে দেওয়ার কথা। জাতিসংঘের কাছে তাদের স্বীকারোক্তি ছিল। অনেক দিন থেকেই আমরা বলছি, এ থেকে শূন্য দশমিক ২ শতাংশ যাতে এলডিসিগুলো পায়। নরওয়েসহ কোনো কোনো দেশ অবশ্য তা মানছে। এই বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ তার কণ্ঠস্বর আরও জোরালো করতে পারে।
.
–
:: এশিয়ার এলডিসি ও আফ্রিকার এলডিসির স্বার্থের মধ্যে কী পার্থক্য রয়েছে?
–
সমন্বিত অধিকার আদায়ের ব্যাপারে উন্নত দেশগুলোর সঙ্গে দর-কষাকষি চললেও এশিয়ার এলডিসি ও আফ্রিকার এলডিসিগুলোর মধ্যে সব সময়ই একটা প্রতিযোগিতা বা মতবিরোধ থাকে। মহাদেশভেদে স্বার্থের বিষয়গুলো ভিন্ন বলেই এ প্রতিযোগিতা। এশিয়ার এলডিসির প্রধান স্বার্থের জায়গা হলো যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শুল্ক ও কোটামুক্ত প্রবেশাধিকারসহ তৈরি পোশাকের রপ্তানি বৃদ্ধি।আর আফ্রিকার এলডিসির প্রধান স্বার্থ হলো কৃষি ও কৃষিজাত পণ্য রপ্তানিতে নিরঙ্কুশ ও শর্তমুক্ত প্রবেশাধিকার।
.
–
:: এক্ষেত্রে বাংলাদেশ কীভাবে সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করবে?
–
বাংলাদেশের ওপর সব এলডিসির একধরনের আস্থা রয়েছে। এর কারণ হচ্ছে—আমাদের রপ্তানি আয়, প্রবাসী আয় (রেমিট্যান্স) এবং মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) বাণিজ্যের অংশ। বাংলাদেশকে এসব দিক থেকে অন্য স্বল্পোন্নত দেশগুলো যথেষ্টই সমীহ করে। উন্নত দেশগুলোর কাছে বাংলাদেশের প্রধান চাওয়া হচ্ছে পণ্য বাণিজ্যে বিশেষ করে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে শুল্ক ও কোটামুক্ত প্রবেশাধিকার। আর আফ্রিকার এলডিসির অন্যতম চাওয়া হচ্ছে কৃষি। বাংলাদেশের প্রতি সবার এ রকম একটি আস্থা রয়েছে যে বাংলাদেশ দুইয়ের মধ্যে একটি সুষম ভাব নিয়ে আসতে সক্ষম। আর আফ্রিকার এলডিসিদের আমরা বলতে পারি যে আমাদের শিল্পে তোমরা সমর্থন দাও, তোমাদের কৃষিতেও আমরা তা দেব।
.
এলডিসির জন্য একটা বড় সম্ভাবনা হচ্ছে সেবা খাতের বাণিজ্যে ছাড় (সার্ভিস ওয়েভার)। অর্থাৎ এলডিসি থেকে উন্নত দেশগুলোতে বেশি হারে ও শিথিল শর্তে সেবা খাতের বাজার উন্মুক্ত হওয়া। আগামী জুলাইয়ের মধ্যে উন্নত দেশগুলো এ বিষয়ে তাদের প্রতিবন্ধকতার কথা ডব্লিউটিওকে জানাবে। একটা হিসাবে এসেছে, উন্নত দেশগুলো তাদের ৩ শতাংশ শ্রমবাজার উন্মুক্ত করলে এলডিসির জন্য ১৫ হাজার কোটি ডলারের বাজারের সুযোগ তৈরি হয়।
.
সেবা খাতের বাণিজ্যে ছাড় উন্নত দেশগুলো ১, ২ বা ৫ বছর পরেও যদি দেয়, সেই সুযোগটি কাজে লাগানোর জন্য আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে। বাজার উন্মুক্ত হলেই যাতে সুযোগটি নেওয়া যায়। এ ব্যাপারে গবেষণারও দরকার রয়েছে। কয়েকটি খাতকে অবশ্য এর মধ্যে চিহ্নিত করা হয়েছে। তবে আমাদের সবার আগে নজর দিতে হবে নার্সিং ও দক্ষ জনশক্তি—এ দুই খাতে। এর মধ্যে সনদটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। দেখা গেল, একজন নার্সিং পাস করলেন ঠিকই, কিন্তু তাঁর সনদ উন্নত দেশগুলো গ্রহণ করল না। সে জন্য এখন থেকেই সুষ্ঠু পরিকল্পনা করে এগোতে হবে, যাতে শিক্ষার মানটা ভালো হয়, উন্নত দেশের কাছাকাছি হয়।
.
–
:: বাংলাদেশের এখনও এলডিসিতে থাকার কারণ কী?
–
বাংলাদেশের এখনও এলডিসিতে থাকার বড় একটি কারণ হলো বিপুল জনসংখ্যা। ১৬ কোটি মানুষের এ দেশে মাথাপিছু আর্ন এখন ১৩১৬ ডলার। আয়তন বিবেচনায় জনসংখ্যা পাঁচ কোটি হলে মাথাপিছু আয়ের পরিমাণও দুই হাজার ডলার ছাড়িয়ে যেত। একই সঙ্গে মানবসম্পদ উন্নয়নের ক্ষেত্রেও অনেক অগ্রগতি হতো। ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার জন্য কাজ করছে। তাই স্বাভাবিকভাবেই এলডিসি অভিধা থেকে উত্তরণের জন্য আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।
.
–
:: বাংলাদেশের এলডিসি থেকে বের হতে কত সময় লাগবে?
–
এলডিসি থেকে বের হয়ে আসতে হলে তিনটি সূচকেই উন্নয়ন করতে হয়। এর মধ্যে টানা তিন বছরের মাথাপিছু গড় আয়ের পরিমাণ হতে হবে ৯৯২ মার্কিন ডলার। উচ্চ পর্যায়ে তা হতে হবে ১ হাজার ২৪২ ডলার। এভাবে পরপর দুই মেয়াদে অর্থাৎ ৬ বছর পর্যন্ত এই সক্ষমতা অর্জন করতে হয়। এরপর এক মেয়াদ অর্র্থাৎ ৩ বছর গ্রেস পিরিয়ড ধরা হয়। সবমিলিয়ে সক্ষমতা অর্জনের ৯ বছর পর কোনো দেশকে এলডিসি থেকে বাদ দেয়া হয়। কিন্তু ২০১৪ সালে বাংলাদেশের মাথাপিছু আর্ন দাঁড়িয়েছে ১১৯০ ডলার। মানবসম্পদ সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ৫৪ দশমিক ৭ এবং অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা সূচকে ৩২ দশমিক ৪। খুব দ্রুতগতিতে আগালেও ২০২৫ সালের আগে বাংলাদেশ এলডিসি থেকে বের হয়ে আসতে পারবে না। খুব দ্রুতগতিতে এগিয়ে দক্ষিণ কোরিয়া ২৬ বছরে এলডিসি থেকে বের হয়ে এসেছে।
.
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি):
বেসরকারি গবেষণা সংগঠন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) সংস্থাটির বিশেষ ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, ‘স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) কাতার থেকে আগামী এক দশকের মধ্যে বাংলাদেশের বের হওয়া অসম্ভব আগামীকালও যদি বাংলাদেশ এলডিসি থেকে বের হওয়ার শর্ত পূরণ করে, তাহলেও ছয় বছরের আগে এখান থেকে বের হতে পারবে না। কারণ তিন বছর করে ছয় বছর বাংলাদেশকে পর্যবেক্ষণে থাকতে হবে। এলডিসি দেশগুলোর অবস্থা তিন বছর পর পর মূল্যায়ন করা হয়। পরবর্তী মূল্যায়ন হবে ২০১৫ সালে। ওই বছরের তালিকায় বাংলাদেশ বিবেচনায় নেই। এর পরের তালিকায় (২০১৮ সাল) যদি থাকে, তাহলেও অন্তত এক দশকের আগে এলডিসি থেকে বের হতে পারছে না বাংলাদেশ।“
.
আংকটাডের প্রতিবেদন অনুযায়ী,
২০১৪ সালের হিসাবে বাংলাদেশের মাথাপিছু আর্ন ১১৯০ ডলার, মানবসম্পদ সূচক ৫৪ দশমিক ৭ এবং অর্থনীতির ভঙ্গুরতা সূচক ৩২ দশমিক ৪। প্রসঙ্গত, অন্য দুই সূচক বাড়লে তা ভালো। অন্যদিকে অর্থনীতির ভঙ্গুরতা সূচক কমলে তা ওই দেশের জন্য ভালো। আবার ২০১৫ সালে যে মূল্যায়ন হবে, তাতে এলডিসি থেকে বের হওয়ার ক্ষেত্রে অ্যাঙ্গোলা ও কিরিবাতিকে সম্ভাব্য দেশ মনে করা হচ্ছে।
.
আংকটাডের এলডিসি প্রতিবেদনটি বলছে,
বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ১৭ দশমিক ২ শতাংশ আসে কৃষি খাত থেকে। উৎপাদনশীল খাত থেকে ১৮ দশমিক ৫ শতাংশ এবং সেবা খাত থেকে আসে ৩২ শতাংশ। অথচ দেশের মোট কর্মসংস্থানের ৫৪ দশমিক ৪ শতাংশই হয়েছে কৃষি খাতে। আর শিল্পে কর্মসংস্থান হয়েছে ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ। কৃষি খাতে নিয়োজিতদের আর্ন যেমন কম, তেমনি উৎপাদনশীলতাও কম। এ খাত থেকে যত বেশি লোককে উৎপাদনশীল খাতে নেওয়া যাবে, তাদের উৎপাদন ও আর্ন তত বাড়বে।
.
–
:: বাংলাদেশের এলডিসি থেকে বেরিয়ে যাবার বিপক্ষে যুক্তি :
–
এলডিসি থেকে বেরিয়ে গেলে বাংলাদেশ যেসব সুবিধা হারাবে তা হলোঃ
১. জিএসপি সুবিধা হারানোর আশঙ্কা :
বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার (ডাব্লিউটিও) নীতি অনুযায়ী বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য সুবিধা-জিএসপি পেয়ে থাকে।এলডিসি পরিচয় ঘুচে গেলে জিএসপি সুবিধাসহ আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে অনেক সুযোগই হাতছাড়া হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বাংলাদেশের সামনে।
.
২. শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার-সুবিধা হারানোর আশঙ্কাঃ
ডব্লিউটিওর আওতায় স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে শতভাগ শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার-সুবিধা দিচ্ছে উন্নত দেশগুলো। একমাত্র যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশসহ কয়েকটি এলডিসিকে শতভাগ শুল্কমুক্ত সুবিধা দেয়নি। এলডিসি থেকে বেরিয়ে গেলে বাংলাদেশ শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার-সুবিধা হারাবে।
.
৩. বাংলাদেশের রপ্তানি কমবেঃ
ডব্লিউটিওর আওতায় আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে বাংলাদেশ কোনো রকম শুল্ক ছাড়াই নিজেদের পণ্য রপ্তানি করতে পারে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন, কানাডা, জাপানসহ বিভিন্ন উন্নত দেশে বাংলাদেশও এ ধরনের সুবিধা ভোগ করছে। উন্নয়নশীল দেশে রূপান্তর হলে এসব সুবিধা হারাবে বাংলাদেশ। এতে ওই সব দেশের আমদানিকারকদের বাড়তি শুল্ক দিয়ে বাংলাদেশের পণ্য কিনতে হবে। ফলে দেশগুলোর বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের দাম বাড়বে। এতে ওই সব দেশে বাংলাদেশি পণ্যের চাহিদা কমবে। ফলে বাংলাদেশের রপ্তানিও কমবে।
.
৪. ঋণের সুদের হার বাড়বেঃ
এলডিসির সদস্যগুলো উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে কম সুদে ঋণও পায়। এলডিসি থেকে বেরিয়ে গেলে বাণিজ্যিক সুদের হারে ঋণ নিতে হবে। কিন্তু এখনই অনেক ক্ষেত্রে বাণিজ্যিক হারে ঋণ নেওয়া হচ্ছে। আর কম সুদের ঋণ এলডিসি হিসেবে দেওয়া হয় না। দেওয়া হয় নিম্ন আয়ের দেশ হিসেবে। এখন আমরা যদি মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হই, তাহলেও কিন্তু সুদের হার বেড়ে যাবে।
.
তাই অর্থনৈতিক ভিত্তি মজবুত না করে উন্নয়নশীল দেশের পরিচিতি অর্জন করলে বাংলাদেশের লোকসান অনেক। তবে উন্নয়নের মাধ্যমে অগ্রগতি সাধন করার মাধ্যমে সত্যিকার অর্থে উন্নয়নশীল দেশে রূপান্তর হলে তখন এসব সুবিধা না থাকলেও কোনো সমস্যা হবে না। তবে বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রা এখনো সে অবস্থায় যায়নি।
.
–
:: বাংলাদেশের এলডিসি থেকে বেরিয়ে যাবার পক্ষে যুক্তিঃ
–
এলডিসি হিসেবে বাংলাদেশ অগ্রাধিকারমূলক বাজারসুবিধা পায়। তবে বিশ্বব্যাপী এখন শুল্ক কমছে। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) মাধ্যমে যেমন শুল্ক কমানো হয়, তেমনি দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তির মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের মধ্যকার শুল্কহার কমে যাচ্ছে। তাই অগ্রাধিকারমূলক বাজারসুবিধা এমনিতেই দিনে দিনে কমে যাচ্ছে। সামনের দিনগুলোতে আরও কমে যাবে। কিন্তু বাজারসুবিধা হারানোর ভয়ে এলডিসি হয়েই থাকা সুবিবেচিত নয়।
.
এলডিসি থেকে উত্তরণ হলে হয়তো বাংলাদেশের কিছু সুযোগ-সুবিধা থাকবে না। তবে সুযোগ-সুবিধার আশায় চিরদিন তো আর গরিব হয়ে থাকা যায় না। এলডিসি অভিধা থেকে উত্তরণ ঘটলেই যে জিএসপি সুবিধা থাকবে না, এমনটি নয়। কারণ, অনেক উন্নয়নশীল দেশও রপ্তানির ক্ষেত্রে এ সুবিধা ভোগ করছে।
.
এলডিসি হওয়ার কারণে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের সুনামহানি হচ্ছে। উন্নয়নশীল দেশে রূপান্তর হলে সুনামের পাশাপাশি বিনিয়োগ, বাণিজ্যে নতুন কিছু সুবিধাও পাওয়া যাবে। বাংলাদেশে বিনিয়োগ করার ক্ষেত্রে বিদেশিদের আস্থা বাড়বে। তাই যত ?