৩৮ তম বিসিএস প্রিলিমিনারি ও লিখিত পরীক্ষা প্রস্তুতি
.
TICFA চুক্তি
………
টিকফা শব্দটি নতুন। আগে এর নাম ছিল টিফা।‘টিফা’ চুক্তি হলো Trade and Investment Framework Agreements বা সংক্ষেপে TIFA, যেটিকে বাংলায় অনুবাদ করলে হয় — ‘বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সংক্রান্ত কাঠামোগত সমঝোতা’ চুক্তি। ‘টিফা’ চুক্তি নিয়ে কথাবার্তা হচ্ছে গত বারো বছর আগে থেকে। এই চুক্তির খসড়া প্রণয়নের কাজ শুরু হয় ২০০১ সালে। ১৩টি ধারা ও ৯টি প্রস্তাবনা সম্বলিত চুক্তিটির প্রথম খসড়া রচিত হয় ২০০২ সালে। পরে ২০০৪ সালে এবং তারও পরে আবার ২০০৫ সালে খসড়াটিকে সংশোধিত রূপ দেয়া হয়। দেশের বামপন্থি শক্তিসহ অন্যান্য নানা মহলের তীব্র প্রতিবাদের মুখে চুক্তিটি স্বাক্ষর করা এতদিন বন্ধ ছিল। চুক্তির খসড়া প্রণয়নের পর সে সম্পর্কে নানা মহল থেকে উত্থাপিত সমালোচনাগুলো সামাল দেয়ার প্রয়াসের অংশ হিসেবে এর নামকরণের সাথে Co-operation বা সহযোগিতা শব্দটি যোগ করে এটিকে এখন ‘টিকফা’ তথা TICFA বা Trade and Investment Co-operamework Agreement (‘বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতা সংক্রান্ত কাঠামোগত সমঝোতা’ চুক্তি) হিসাবে আখ্যায়িত করার হচ্ছে।
.
চুক্তিটি কেন?
.
আমেরিকার ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট পলিসি পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, মার্কিন কর্তৃপক্ষস্বীকার করছে তাঁদের বাণিজ্যে শ্রেষ্ঠত্ব ঝুঁকির মুখোমুখি। ২০০০-২০১১ পর্যন্ত আমেরিকার রপ্তানি আয়ের প্রবৃদ্ধি অন্যান্য অগ্রসর অর্থনীতির তুলনায় থমকে গেছে। ২০০২ সাল থেকেই আমেরিকার রপ্তানি আর্ন কে ছারিয়ে গেছে জার্মানি। রপ্তানি ভিত্তিক ট্রেডে গড় আর্ন বেশী, অ্যামেরিকান চাকুরির মাত্র ৭% রপ্তানি ভিত্তিক ট্রেডে ১৯৯৯ সাল থেকে এই হার আর বাড়েনি, অথচ সারা বিশ্বে অর্থনীতিতে এই সময়টাতেই বিপুল স্ফীতি ঘটেছে। অ্যামেরিকান আভ্যন্তরীণ চাকরির বাজার মুলত নন ট্রেড এবং সরকারি সেক্টরে। এই খাতগুলো ক্রমান্বয়ে ব্যয় সংকোচনের লক্ষ্য হওয়ায় অ্যামেরিকান দের ট্রেড সেক্টরে ব্যাপক সাফল্যের মাধ্যমে নাগরিকদের আর্ন বৃদ্ধিই অ্যামেরিকান বাণিজ্য নীতির মুল লক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।
.
২০১০ সালে সিনেট অব দ্যা ইউনিয়ন স্পিচ এ আগামী পাঁচ বছরে রপ্তানি আর্ন দ্বিগুণ করার লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণা করেন, তিনি আরো আক্রমণাত্মক ভাবে বাজার তৈরি করতে হবে যেন আমাদের মাটিতে আরো নতুন চাকরি তৈরি হয় আর নিশ্চিত করতে হবে আমাদের ট্রেডিং পার্টনাররা “প্লে বাই দ্যা রুলস”। কার রুলস? এই রুলস হচ্ছে আমেরিকার তৈরি রুলস। আর এই রুলস হচ্ছে টিকফা।
.
চুক্তিটি কার জন্য?
….
চুক্তিটি আমেরিকার সরকারের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের। এই চুক্তিটি যুক্তরাষ্ট্র করেছে অন্যান্য রাষ্ট্রের সঙ্গেও। চুক্তিটির ধারা উপধারা ও আমেরিকার তৈরি। আমেরিকা চুক্তি স্বাক্ষরের বিষয়ে নাছোড়বান্দা ছিল এবং তারা হাল ছেড়ে না দিয়ে বছরের পর বছর ধরে এজন্য সে বাংলাদেশের ওপর ক্রমাগত চাপ দিয়ে চলেছে। এর মাঝে এদেশে ও আমেরিকায় কয়েক দফা সরকার বদল হয়েছে। কিন্তু ‘টিফা’ চুক্তির বিষয়টি সব আমলেই যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ এজেন্ডা হয়ে থেকেছে। তারা এমনও বলেছে যে,‘টিফা’ চুক্তি স্বাক্ষর না করলে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সহযোগিতার ওপর তার নেতিবাচক প্রভাব পরবে। যেহেতু বাণিজ্য ও বিনিয়োগ উভয় ক্ষেত্রেই বাংলাদেশের তুলনায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রাধান্য ও আধিপত্য প্রশ্নাতীত এবং এই অসামঞ্জস্য পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা নেই,তাই ‘বাণিজ্য ও বিনিয়োগের’ স্বার্থ রক্ষার উদ্দেশ্যে করা চুক্তিটির দ্বারা প্রধানত যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক স্বার্থ সংরক্ষণের একতরফা সুবিধা প্রাপ্তির ব্যবস্থা করা হবে এই সমালোচনা নিরসনের জন্য ‘বাণিজ্য ও বিনিয়োগ’-এর সাথে ‘সহযোগিতা’ শব্দ যুক্ত করা হয়েছে। কিন্তু চুক্তিতে যে সব প্রস্তাবনা ও ধারা রয়েছে সেগুলোর জন্য চুক্তিটি অসম ও মার্কিন স্বার্থবাহী। উল্লেখ্য আমেরিকাও তাঁদের আভ্যন্তরীণ ডকুমেন্টে অস্বীকার করেনা যে এই চুক্তি তাঁদেরকেই উপকৃত করবে।
.
অ্যামেরিকান ট্রেড পলিসির লক্ষ্য হিসেবে ঘোষিত পদক্ষেপগুলোই টিকফার মুল বিষয়। অ্যামেরিকান ঘোষিত লক্ষ্য হচ্ছে, ১/ শুল্ক বাধা দূর করা, ২/ বিনিয়োগের সর্বোচ্চ সুরক্ষা ৩/ সরকারি ভর্তুকি বন্ধ করা ৪/ সরকারি ক্রয়ে অংশ নেয়া ৫/ পরিবেশ ও শ্রমের পরিবেশ উন্নত করা ৬/ মেধাসত্ত্ব কড়াকড়ি ভাবে আরোপ করা।
মুলত মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকার দরিদ্র ও সংঘাত ময় দেশগুলো, আসিয়ান দেশগুলো, সাবেক সোভিয়েত ব্লকের দেশগুলো, পাকিস্তান, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, আফগানিস্তান।