৩৮ তম বিসিএস প্রিলিমিনারি ও লিখিত পরীক্ষা প্রস্তুতি
. আন্তর্জাতিকে কাজে দেবে
.
পরমাণু অস্ত্র ও উষ্ণায়ন আজ বড় হুমকি
নোয়াম চমস্কি
…..
বিশ্বকে আজ কে শাসন করছে? (চমস্কির সর্বশেষ গ্রন্থের নাম ‘হু রুলস দ্য ওয়ার্ল্ড’) ‘ডেমোক্রেসি নাউ’-এর এই প্রশ্নের উত্তরে বলব : এই শাসনের ভার অনেকটাই আমাদের যুক্তরাষ্ট্রের ঘাড়ে। বিশ্বকে নেতৃত্বদানের সম্ভাবনা প্রতিটি জনগোষ্ঠীরই আছে, তবে সেই সক্ষমতার জন্য লড়াই করতে হয়; যদি তারা তা না করে, অর্থনৈতিক শক্তি, রাষ্ট্রীয় শক্তি শূন্যস্থানটি পূরণ করে ফেলে। বিশ্বের শাসনক্ষমতা যুক্তরাষ্ট্রের হাতে আসার পেছনে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ফলাফলের প্রভাব রয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যুক্তরাষ্ট্রের যে মাত্রার শক্তি ও সম্পদ ছিল, ইতিহাসে তার নজির নেই। কার্যত তখন বিশ্বের অর্ধেক সম্পদ ছিল যুক্তরাষ্ট্রের হাতে। তাদের হাতে গোলার্ধ, নিয়ন্ত্রণে দুটি মহাসাগর, মহাসাগরের দুই বিপরীত পাশও তারা নিয়ন্ত্রণ করে। সামরিক শক্তির বিচারে রীতিমতো অপ্রতিদ্বন্দ্বী। অন্যান্য শিল্পভিত্তিক সমাজ হয় ধ্বংসপ্রাপ্ত কিংবা দুর্বল হয়ে পড়েছে। আসলে বিশ্বযুদ্ধ মার্কিন অর্থনীতির জন্য শাপে বর হয়ে আসে। মহামন্দা মিইয়ে যায়। শিল্পোত্পাদন বেড়ে যায় চার গুণ। বিশ্বব্যবস্থার নেতৃত্ব হাতে তো আসবেই। তবে কিছুই স্থায়ী হয় না এবং এই আধিপত্যও দ্রুত ক্ষয়ে আসা শুরু হয়। এর পরও সাম্প্রতিক বছরগুলোর বড় পরিবর্তন সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্র এখন বিশ্বের চার ভাগের এক ভাগ সম্পদের মালিক। যুক্তরাষ্ট্র একমাত্র দেশ, যাদের শত শত, হতে পারে হাজার হাজার সামরিক ঘাঁটি বিশ্বে ছড়িয়ে আছে, দুনিয়াজোড়া তাদের সেনাবাহিনীর উপস্থিতি। সারা বিশ্বের সমান তারা একা ব্যয় করে সামরিক খাতে। প্রযুক্তিতে বহুদূর এগিয়ে।
.
হ্যাঁ, পরমাণু অস্ত্র ও জলবায়ু পরিবর্তন আমাদের এই বিশ্বের জন্য সবচেয়ে বড় দুই চ্যালেঞ্জ। সম্প্রতি সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও পরমাণু বিশেষজ্ঞ উইলিয়াম প্যারি হিসাব কষে দেখিয়েছেন, বিগত আশির দশকের চেয়েও পরমাণু যুদ্ধের আশঙ্কা এখন বেশি। রুশ সীমান্ত অস্থির এবং কাছেই মার্কিন সেনাবাহিনী চষে বেড়ায়। সেই সঙ্গে চীন, দক্ষিণ চীন সাগরেও উত্তেজনা বাড়ছে।
.
জলবায়ু উত্তপ্ত হয়ে যাওয়াও বড় হুমকি বিশ্বের। বলা যায়, সর্বত্র বরফের চাঁইগুলো গলছে। গ্লেসার জল হয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি চলছে চরম খরা কোথাও কোথাও। এই মুহূর্তে ভারতে ৩০ কোটি মানুষ খরার কারণে না খেয়ে মরতে বসেছে। হিমালয়ের বরফ গলে যাচ্ছে বলে ভূগর্ভস্থ পানিও আরো গভীরে চলে যাচ্ছে। এর ফলে দক্ষিণ এশিয়ার বিশাল অঞ্চলজুড়ে পানির সরবরাহ কমে যাবে। মানুষ যদি মনে করে এখন দেশান্তরি হওয়ার সমস্যা আছে, ভুল হবে। আরো খারাপ সময় আসছে। সমুদ্রের উচ্চতা বাড়ছে। এই শতাব্দীর শেষ নাগাদ কিংবা কারো মতে তারও আগে, এই বৃদ্ধি ছয় ফুট পর্যন্ত হতে পারে। তখন উপকূলীয় অঞ্চল শুধু নয়, সমতলের মানুষও, যেমন—বাংলাদেশের, বিপন্ন হওয়ার ঝুঁকিতে পড়বে।
.
যুক্তরাষ্ট্রের জন্য নির্বাচন অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ, তবে মূল বিষয় নয়। প্রধান বিষয় হচ্ছে সিদ্ধান্ত কী হবে, কোন আইন পাস হবে, তা নির্ধারণে কোন শক্তিগুলো—অভ্যন্তরীণ শক্তিগুলো চাপ দিচ্ছে, কাজ করছে সেসব। এখন একটিই শক্তি সর্বদা সেখানে সক্রিয় থাকছে : বেসরকারি পুঁজি, করপোরেট শক্তি। লবিবাজ, করপোরেট আইনবিদ—সবাই নির্বাচনে অর্থায়ন করছেন, তাঁরা সব সময়ই ছিলেন, থাকবেন। প্রশ্ন হচ্ছে, এর প্রতিপক্ষ কোনো শক্তি কি কখনো দাঁড়াবে? এমন শক্তি কি আসবে, যেটি জনপ্রিয় স্বার্থগুলোর প্রতিনিধিত্ব করবে, আত্মরক্ষায়ও কাজ করবে?
.
এখন নির্বাচনকে ব্যবহার করা যায় কিছু গোষ্ঠীকে একাট্টা করা ও উসকে দেওয়ার জন্য, যেসব গোষ্ঠী স্থায়ী শক্তি হিসেবে নির্ধারণ করে দেয় হোয়াইট হাউস ও কংগ্রেসে কী করা হবে। যেমন—রুজভেল্টের নিউ ডিল আইন পাস হতো না, যদি সশস্ত্র শ্রমিক তত্পরতা ও অন্যান্য রাজনৈতিক চাপ না থাকত। এসব ঘটনায় অনেক শিক্ষণীয় আছে।
.
প্রশ্ন হচ্ছে, নিজের প্রাইমারিতে আমি কার পক্ষে বোতাম চাপব? আমি পছন্দ করব বার্নি স্যান্ডারসকে। হিলারি ক্লিনটন যদি চূড়ান্ত মনোনয়ন পেয়ে যান এবং আমাকে হিলারি ও ট্রাম্পের মধ্যে একজনকে বাছাই করতে হয়, আমি ট্রাম্পের বিরুদ্ধে যাব। ভোটের হিসাবে বললে আমি দুর্গন্ধে দম বন্ধ করা অবস্থায় নিজের নাক চেপে ধরব এবং ডেমোক্র্যাটদের ভোট দেব। ভোটদানে বিরত থাকা কিংবা ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ভোট দেওয়া সে হবে আরো বেশি বিপজ্জনক।
.
হিলারির বদলে বার্নি স্যান্ডার্স প্রার্থী হয়ে আসতে পারেন কি না? আমি মনে করি, আসা সম্ভব। স্বীকার করা উচিত, স্যান্ডার্স ও ট্রাম্প—দুজনের ব্যাপারেই আমার হিসাব ভুল ছিল। আমার মনেই হয়নি, দুজনের কেউ পায়ের তলায় মাটি খুঁজে পাবেন। এই যে ট্রাম্প শ্বেতাঙ্গদের জয়গান গাইছেন, কোনো মুসলমান যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকতে পারবে না বলছেন, আমি বলব, এই প্রবণতা নতুন কিছু নয়।
.
দীর্ঘদিন ধরেই এখানে এমন পরিবেশ ছিল। ট্রাম্প শুধু প্রসঙ্গটি সবার সামনে নিয়ে এসেছেন। সম্ভবত ১৫ বছর আগে আমি আমার এক বইয়ে একটি নিবন্ধ থেকে উদ্ধৃতি দিয়েছিলাম। নিবন্ধটি পুরনো হলেও বারবার পড়ার মতো। লিখেছিলেন আধুনিক জার্মানির সেরা ঐতিহাসিকদের অন্যতম ফ্রিত্জ স্টার্ন। ছেপেছিল মূল ধারার সাময়িকী ‘ফরেন অ্যাফেয়ার্স’। শিরোনাম ছিল সম্ভবত ‘ডিসেন্ট ইনটু বারবারিজম’। নিবন্ধে বলা হয়, যে জার্মানি ১৯২০-এর দশকে পশ্চিমা সভ্যতার শীর্ষে ছিল এবং এক দশকের মধ্যে মানব ইতিহাসের নিরঙ্কুশ গভীরতায় স্থান করে নিয়েছিল, অচিরেই তার পতন হয় বর্বর যুগে। ফ্রিত্জ স্টার্ন বলেন, যে যুক্তরাষ্ট্র তাঁকে নািস জার্মানি থেকে উদ্ধার করেছিল, সেই দেশটি নিয়েও তাঁর মনে এমন ভয় কাজ করে। ফ্রিেজর উদ্বেগের জায়গাগুলো মার্কিন সমাজে গভীরভাবেই আছে।
.
ট্রাম্প শুধু বর্ণবাদ বা উগ্র জাতীয়তাবাদের কারণেই জনপ্রিয়তা পেয়েছেন, এমন নয়। তাঁকে এগিয়ে নিচ্ছে ভয়ের এক সংস্কৃতি। যুক্তরাষ্ট্র তার ইতিহাসের বেশির ভাগ সময় বিশ্বে সবচেয়ে বেশি আতঙ্কগ্রস্ত দেশগুলোর অন্যতম ছিল। এখানে যে অস্ত্রের সংস্কৃতি এত ভয়াবহ রকমের, তার অনেক কারণের এটিও একটি। আরো কারণ আছে। কিছু জায়গায় স্যান্ডার্সের সঙ্গেও ট্রাম্পের মিল দেখি আমি। যেমন—শ্বেতাঙ্গ শ্রমজীবী মানুষের মধ্যে দুজনের জনপ্রিয়তা। এর মধ্যে ট্রাম্প তাদের কাছে বেশি আকর্ষণীয় বিগত প্রজন্মের নব্য উদারপন্থীদের কারণে, যারা কোণঠাসা হয়ে পড়েছিল।
.
লেখক : বিশ্বখ্যাত মার্কিন ভাষাবিদ, দার্শনিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক। গত সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের ‘ডেমোক্রেসি নাউ’ চ্যানেলে উপস্থিত হয়ে সমসাময়িক বিশ্ব নিয়ে তিনি অ্যামি গুডম্যানের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন।
সাক্ষাত্কারের সংক্ষিপ্ত ভাষান্তর : গাউস রহমান পিয়াস
কালের কণ্ঠ, ১৯ মে, ২০১৬
0 responses on "৩৮ তম বিসিএস প্রিলিমিনারি ও লিখিত পরীক্ষা প্রস্তুতি আন্তর্জাতিকে, পার্ট - ৬০"