৩৮ তম বিসিএস প্রিলিমিনারি ও লিখিত পরীক্ষা প্রস্তুতি
ভূ-রাজনীতি
দক্ষিণ চীন সাগর
চীন সাগরে মার্কিন রণতরী
…….
দক্ষিণ চীন সাগরের বিতর্কিত দ্বীপ ফেইরি ক্রস রিফ। গত ১০ মে দ্বীপটির কাছে জলসীমায় প্রবেশ করে যুক্তরাষ্ট্রের রণতরী। মিসাইল সজ্জিত ছিল ইউএসএস উইলিয়াম পি লরেন্স নামের এই যুদ্ধজাহাজ। গত কয়েক মাসের মধ্যে তিনবার এই জলসীমায় প্রবেশ করল যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধজাহাজ। ৩০ জানুয়ারি ট্রিটন দ্বীপের ১২ নটিক্যাল মাইলের মধ্য দিয়ে অতিক্রম করে মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্রবাহী রণতরী ইউএসএস কার্টিস উইলবার। গত ২৭ অক্টোবর চীনের তৈরি কৃত্রিম দ্বীপের ১২ নটিক্যাল মাইলের মধ্য দিয়ে অতিক্রম করেছিল মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্রবাহী ইউএসএস লাসেন। মার্কিন রণতরী অতিক্রম করার সময় ধারেকাছেই ছিল চীনা সেনারা।
.
গুরুত্বপূর্ণ ওই এলাকাটির ওপর চীনের একচ্ছত্র মালিকানার দাবিকে চ্যালেঞ্জ জানাতেই যুক্তরাষ্ট্র সেখানে নিয়মিত টহল দিচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
.
টহলে ভীষণ ক্ষুব্ধ চীন। এ ঘটনাকে ‘অবৈধ’ এবং ‘আঞ্চলিক শান্তির জন্য অনিষ্টকর’ বলছে দেশটি। যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্কও করে দিয়েছে তারা। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র বলে আসছে, তাদের সেনাবাহিনী আন্তর্জাতিক আইন মেনে যেকোনো সময় আকাশ ও নৌ টহল পরিচালনা অব্যাহত রাখবে। দক্ষিণ চীন সাগরও ব্যতিক্রম হবে না।
.
যুক্তরাষ্ট্র-চীন বিরোধ
একক পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্র এবং ক্রমবিকাশমান বৃহৎ শক্তি চীনের মধ্যে প্রতিযোগিতার ক্ষেত্র বহুবিধ। উভয় দেশই বিশ্বরাজনীতি, বিশেষ করে এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে নিজেদের অবস্থান শক্ত করতে সক্রিয়।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের সম্পর্কের ভালো-মন্দের ওপর নির্ভর করবে অনেক কিছু। এই সময়ে পশ্চিমের সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্কের টানাপড়েন ও মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতির চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে যুক্তরাষ্ট্র ও চীন ইস্যু।
.
সম্পর্কের বিপজ্জনক মোড়
…….
চীন-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক বিপজ্জনক হয়ে উঠছে। দুই দেশের শক্তিশালী বিভিন্ন গোষ্ঠীও হাঁটতে চাইছে সংঘাতের পথেই। দেং জিয়াওপিংয়ের ‘সংহত ও বিচক্ষণ’ অবস্থান ছেড়ে সম্প্রসারণবাদী আকাঙ্ক্ষা দেখিয়ে আসছে চীনা গোষ্ঠীগুলো। অঞ্চলটিতে মার্কিন আধিপত্য প্রতিরোধের ঘোষণা দিয়েছে তারা। চীন মনে করে, তাদের বশে রাখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। চীনের এমন মনে করার যথেষ্ট কারণও আছে। যুক্তরাষ্ট্রের নানা কর্মকাণ্ডেও স্পষ্ট, তারা এশিয়ায় জোর আধিপত্য বজায় রাখতে চায়।
.
উত্তেজনার কেন্দ্রে দক্ষিণ চীন সাগর
…
খনিজ সম্পদসমৃদ্ধ দক্ষিণ চীন সাগর বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নৌ-বাণিজ্য পথ। এ সাগর দিয়ে প্রতিবছর পাঁচ ট্রিলিয়ন ডলারের বেশি মূল্যের পণ্য পরিবহন হয়ে থাকে, যেটি বিশ্বের মোট বাণিজ্যের চার ভাগের এক ভাগ। ভৌগোলিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ এই দক্ষিণ চীন সাগরের প্রায় পুরোটার ওপর মালিকানা দাবি করে আসছে পেইচিং। তাইওয়ান, ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন ও ব্রুনাইও সাগরটির কিছু কিছু অংশের ওপর দাবিতে অনড়। বিরোধপূর্ণ এই জলসীমার প্রশ্নে চীনের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। চীনের অভিযোগ, ওই অঞ্চলে সামরিক শক্তি প্রদর্শনের চেষ্টা করছে যুক্তরাষ্ট্র। এ কারণেই বিতর্কিত জলসীমা ও আকাশসীমায় দেখা যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের রণতরী ও যুদ্ধবিমান।
.
গত ১০ মে চীন হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধজাহাজের টহলের কারণে প্র.তিরক্ষাব্যবস্থা জোরদার করতে হচ্ছে তাদের।
.
চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক জাহাজ এবং যুদ্ধবিমানের আনাগোনার উদ্দেশ্য এ অঞ্চলে ঝামেলা তৈরি করা—এ এটি পরিষ্কার হয়ে গেছে।
.
পেন্টাগন মুখপাত্র ক্যাপ্টেন জেফ ডেভিসেরও বক্তব্য, অবাধে নৌ চলাচলের ওপর বাধা-নিষেধ আরোপের প্রচেষ্টাকে চ্যালেঞ্জ জানাতেই তাদের এ তত্পরতা।
.
এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের গুরুত্ব
..
ক্রমেই বাড়ছে চীনের অর্থনৈতিক ও সামরিক শক্তি। দেশটি তাদের প্রভাব বিস্তারেও মনোযোগী। সে কারণেই ভারত, জাপান, ভিয়েতনাম ও ফিলিপাইনের মতো দেশগুলোকেও প্রতিরক্ষার এটি ভাবাচ্ছে। বিগত বছরগুলোতে প্রতিরক্ষা খাতের বরাদ্দ হ্রাস করলেও এখন উল্টো পথে হাঁটছে জাপান। এই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের আগের অবস্থান নেই বললেই চলে। বিপরীতে চীনের দানবীয় উত্থানকে, বিশেষ করে অর্থনীতিতে, দেশটির নেতৃত্বের সাফল্য হিসেবেই দেখা হচ্ছে। শিগগিরই অর্থনীতিতে এক নম্বর জায়গাটি দখল করবে চীন—এমন আভাস স্পষ্ট। যুক্তরাষ্ট্রও বলেছে, একুশ শতকে বিশ্বের ‘কেন্দ্রস্থল’ হবে এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল।
………
প্রতিদ্বন্দ্বিতা নয়, দরকার সহযোগিতা
..
সব মার্কিন প্রেসিডেন্টই দেশ নিয়ে কথা বলতে গিয়ে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্বের কথা বলেন। চীনা নেতৃত্বও তাঁদের বাদ দিয়ে যে বিশ্বব্যবস্থা এগোবে না, তার ফিরিস্তি দেন। কিন্তু পরিবর্তিত বিশ্বব্যবস্থায় একক ‘শ্রেষ্ঠত্ব’ বা ‘আধিপত্য’ বজায় রাখা কতটা সম্ভব, তা নিয়ে সন্দিহান বিশ্লেষকরা। বরং সহযোগিতা ও সহমর্মিতার পথে হাঁটলে সার্বিক উন্নয়ন, সমৃদ্ধি ও স্থিতাবস্থা প্রতিষ্ঠা সম্ভব বলে তাঁদের মত। বিশ্লেষকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্র ও চীন পরস্পরকে প্রতিদ্বন্দ্বী না ভেবে বন্ধু বিবেচনা করলে দ্বিপক্ষীয়, আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক কঠিন সমস্যাগুলোর সুরাহা সহজ হবে। অগ্রগতি হবে বিশ্বশান্তি, অর্থনীতি, পরিবেশ ও জলবায়ু, সাইবার নিরাপত্তা প্রটোকল, সিটিবিটি (কম্প্রিহেনসিভ নিউক্লিয়ার টেস্ট ব্যান ট্রিটি), আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, পূর্ব এশিয়া সামিটসহ নানা বিষয়ে। বিশ্ব এখন যুক্তরাষ্ট্র-চীন সম্পর্কের দিকে তাকিয়ে।
হাসান ইমাম বাবু ১৮ মে, ২০১৬ , কালের কণ্ঠ
0 responses on "৩৮ তম বিসিএস প্রিলিমিনারি ও লিখিত পরীক্ষা প্রস্তুতি আন্তর্জাতিকে, পার্ট - ৫৯"