ভূ -রাজনীতি /অর্থনীতি
ইইউ-চীন সম্পর্কে টানাপড়েন
চীন ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) মধ্যকার সম্পর্কের মূল চালিকাশক্তি হলো অর্থনীতি ও বাণিজ্য। এই দুই গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য অংশীদারের সম্পর্কে সম্প্রতি বেশ টানাপড়েন সৃষ্টি হয়েছে। পেইচিং আর ব্রাসেলসের এই টানাপড়েন নিয়ে গণমাধ্যমগুলো বেশ সোচ্চার। চীন চাইছে, এ বছরের শেষ নাগাদ ইইউ বাজার অর্থনীতি হিসেবে তাদের স্বীকৃতি দিক। ২০০১ সালে বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার সঙ্গে পেইচিং যে চুক্তি সই করে, তাতে চীনকে এমন স্বীকৃতি দেওয়ার কথাই বলা হয়েছে। ইইউ চীনের প্রথম এবং চীন ইইউর দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার। নতুন শতাব্দীর গোড়া থেকেই পারস্পরিক এই নির্ভরশীলতা চলে আসছে, আর বর্তমানে তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। তবে বাজার অর্থনীতি মর্যাদা বা মার্কেট ইকোনমি স্টেটাস (এমইএস) প্রসঙ্গে স্পষ্টভাবে কোনো অবস্থান গ্রহণ থেকে বিরত রয়েছে ইইউ। এমইএস শুধু কারিগরিভাবে কার্যকর একটি ইস্যু নয়; বরং এর কৌশলগত কিছু সুবিধাও রয়েছে। বিদেশি পুঁজি আকর্ষণের জন্য চীন গত ১৫ বছরে ধারাবাহিকভাবে ব্যবস্থা নিয়েছে। চীনের ইতিবাচক ও ফলপ্রসূ বিদেশি পুঁজি ব্যবহারনীতি খুব স্পষ্ট। বিদেশি ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগ-পরিবেশ আরো সুবিন্যস্ত করেছে তারা। বিদেশি ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগসংক্রান্ত আইন ও বিধিমালা আরো সুসম্পন্ন, স্বচ্ছ ও নিয়মতান্ত্রিক করা হয়েছে। চীনের বাজার আরো উন্মুক্ত হয়েছে। বেড়েছে শিল্পের আনুষঙ্গিক সামর্থ্য। বিদেশি বিনিয়োগের অনুমোদনের আওতা ধাপে ধাপে কমে যাচ্ছে। জাতিসংঘ বাণিজ্য ও উন্নয়ন সম্মেলন (আঙ্কটাড) প্রকাশিত বিনিয়োগ-পূর্বাভাসে দেখা যায়, চীন বহুবার বহুজাতিক কম্পানির বিদেশে বিনিয়োগের প্রথম বিকল্প স্থান ছিল।
.
.
চীন ও ইইউর অর্থনৈতিক টানাপড়েন
’
চীনের সঙ্গে ইইউর সম্পর্কের সূচনা ১৯৭৫ সালে। ১৯৮৫ সালে তারা প্রথম বাণিজ্য ও সহযোগিতা চুক্তি সই করে। ২০০৭ সাল থেকেই এই চুক্তির আরো উন্নয়নকল্পে আলোচনা চলছে। পরিবেশ থেকে শিক্ষা পর্যন্ত ২৪টি বিশেষ ইস্যু সামনে রেখে এই আলোচনা করা হচ্ছে।
.
দুই অঞ্চলের মধ্যে বাণিজ্যে গতি আসে চীন বিশ্ববাণিজ্য সংস্থায় যোগ দেওয়ার পর। ২০০২ সালের পর চীন বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নয়নের পাশাপাশি বিদেশি বিনিয়োগের কাঠামো এবং আঞ্চলিক কাঠামো সুবিন্যস্ত করে। বিনিয়োগ করার জন্য বিদেশি ব্যবসায়ীদের উৎসাহিত করে। চীনে ইইউর বিনিয়োগের ক্ষেত্রও ধাপে ধাপে সম্প্রসারিত হয়েছে। যেমন তাদের বিনিয়োগ ক্ষেত্র গতানুগতিক যন্ত্র নির্মাণশিল্প থেকে সেবাশিল্প, শিল্পপ্রতিষ্ঠানের একীভূতীকরণ ও অধিগ্রহণ এবং ঝুঁকি বিনিয়োগসহ অন্যান্য খাতেও প্রসারিত হয়েছে।
;
তবে ইউরোপের আর্থিক সংকটের পর চীনে ইইউর বিনিয়োগের গতি মন্থর হয়ে আসে। মন্থর হওয়ার প্রধান কারণ, ইইউর আর্থিক প্রতিষ্ঠান। আর্থিক সংকটকালে চীন থেকে তাদের অর্থ প্রত্যাহার করার দরকার হয়। তবে ইউরো জোনের এই সংকটের সময়ও তাদের পাশেই ছিল চীন। ইইউভুক্ত দেশগুলোতেও সরাসরি বিনিয়োগ করেছে চীন। যেটি ইইউর জিডিপিকে সমৃদ্ধ করেছে। বিশেষ করে জার্মানি, ব্রিটেন ও নেদারল্যান্ডসের মতো দেশগুলোতে চীনের বাণিজ্য উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। তবে ২০০৮ সালের মন্দার ধাক্কা ইইউর অনেক দেশই বহন করতে পারেনি। তাদের সামাজিক নিরাপত্তার ওপর এর তীব্র ছাপ পড়ে, মধ্যবিত্ত শ্রেণির ভোগান্তি বাড়ে। ফলে অনেকটা বাধ্য হয়েই ইউরোপীয় দেশগুলোতে জনপ্রিয় কিছু ধারা রাজনীতির মধ্যে ঢুকে পড়ে। নিরপেক্ষভাবে ইউনিয়নের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের এটি গৌণ হয়ে পড়ে।
,
পাশাপাশি আরেকটি বিষয়ও নাটকীয়ভাবে সামনে আসে। ইইউ সহজ ও ব্যবহারোপযোগী প্রযুক্তি উদ্ভাবনে ব্যর্থ হচ্ছিল। সহজ ও সস্তা প্রযুক্তির এই বাজারটিই দখল করে চীন। ২০০১ সালে লিসবনে একটি চুক্তি সই হয়। তাতে ২০১০ সালের মধ্যে ইউরোপের উদ্ভাবনের দিকটি এগিয়ে নেওয়ার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু ২০০৯ সালে এসে ইইউ অনুধাবন করে, ওই লক্ষ্যে পৌঁছানো তাদের পক্ষে অসম্ভব লক্ষ্য অর্জনের এটি পিছিয়ে ২০২০ সালে নিয়ে যাওয়া হয়। অর্থাৎ এখন থেকে আরো চার বছর সময় পাচ্ছে তারা। তবে সুইডেন ছাড়া ইইউভুক্ত বেশির ভাগ দেশই সেই লক্ষ্য অর্জন থেকে অনেকটাই পিছিয়ে আছে। অনেকেই বলে থাকেন, চীনা প্রযুক্তির ইউরোপের বাজার দখলের কারণেই এই লক্ষ্য অর্জন তাদের কাছে এক প্রকার অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে।
.
চীনের সঙ্গে ভারসাম্য আনার চেষ্টা
.
এই অবস্থাটা ইউরোপের অনেক দেশের কাছেই গ্রহণযোগ্য নয়। ইউরোপের আর্থিক সংকটের কারণ খুঁজতে অনেকেই আগ্রহী নয়। একই সঙ্গে এর সমাধানের রাস্তাও তারা খুঁজে বের করতে চাইছেন না। ইউরোপের বহু আগ্রহী গ্রুপই এখন সমাধানের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। তারা বুঝতে চাইছে না যে খোদ যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি এবং একই সঙ্গে বিশ্ব অর্থনীতির যে মন্দাদশা, তারই ছাপ পড়েছে ইউরোপীয় অর্থনীতির ওপর। ইউরোপীয় কমিশন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ট্রান্সলান্টিক ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট পার্টনারশিপ নামে বিস্তৃত কলেবরের একটি বাণিজ্য ও বিনিয়োগের চুক্তি করেছে। এই চুক্তি কার্যকর হলে পশ্চিমা দেশগুলোতে চীনের বাণিজ্য কমবে। সে ক্ষেত্রে চীনকে তৃতীয় বাজারের খোঁজ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে আফ্রিকা ভালো বিকল্প হতে পারে। এই দিকটি নিয়ে এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছে চীন। –
=
কালের কণ্ঠ, ১৩ এপ্রিল।
0 responses on "৩৮ তম বিসিএস প্রিলিমিনারি ও লিখিত পরীক্ষা প্রস্তুতি আন্তর্জাতিকে, পার্ট - ৪৬"