৩৮ তম BCS প্রিলিমিনারি | কেন জাতিসংঘের নতুন করে উত্তর কোরিয়ায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে? জানতে পড়ুন্
.
জাতিসংঘের চলমান নিষেধাজ্ঞার তোয়াক্কা না করে নিজেদের শক্তি প্রদর্শন করতে ৬ জানুয়ারি চতুর্থবারের মতো পরমাণু বোমার পরীক্ষা ও ৭ ফেব্রুয়ারি রকেট পরীক্ষা চালায় উত্তর কোরিয়া। যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র দেশগুলোর অভিযোগ, রকেট উেক্ষপণে দেশটি নিষিদ্ধ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের প্রযুক্তি ব্যবহার করেছে। উত্তর কোরিয়ার দাবি, এটি ছিল শান্তিপূর্ণ কৃত্রিম উপগ্রহের উেক্ষপণ। এ ঘটনার জেরে উত্তর কোরিয়ার মিত্র চীনসহ নিরাপত্তা পরিষদের সব সদস্য রাষ্ট্র যুক্তরাষ্ট্র প্রস্তাবিত নিষেধাজ্ঞা প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেয়। ফলে ২ মার্চ দেশটির ওপর নতুন করে বেশ কিছু কঠোর অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক অবরোধসহ পঞ্চম দফায় নিষেধাজ্ঞা আরোপের অনুমোদন দেয় জাতিসংঘ।
=

===
যেভাবে নিষেধাজ্ঞা আসে

==
উত্তর কোরিয়া দূরপাল্লার রকেট উেক্ষপণের পর ফেব্রুয়ারিতে নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়ে একটি বিলে সইও করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। বিলটি যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসে বিনা বাধায় পাস হয়। তখন উত্তর কোরিয়া বলেছিল, কঠোর আন্তর্জাতিক চাপ সত্ত্বেও তারা পারমাণবিক কর্মসূচি বন্ধ করবে না। উত্তর কোরিয়ার আঞ্চলিক প্রতিবেশী ও দীর্ঘদিনের মিত্রশক্তি চীনও এসব ঘটনার তীব্র সমালোচনা করে। তবে এত দিন পর্যন্ত উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে কোনো ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিপক্ষে ছিল চীন। সেই অবস্থান থেকে সরে এসে নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি চুক্তিতে উপনীত হয় চীন। তারই পরিপ্রেক্ষিতে এবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে কঠোর নিষেধাজ্ঞা প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়। উত্থাপিত এই প্রস্তাবের আগে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে কয়েক দফা আলোচনা হয়। এর পরপরই সর্বসম্মতিতে কঠোর নিষেধাজ্ঞার একটি বিল পাস হলো জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে।

নিষেধাজ্ঞার আওতা
.

—–
নতুন এই কঠোর নিষেধাজ্ঞার ফলে উত্তর কোরিয়ায় কয়লা, লোহা, আকরিক, সোনা, বিমানের জ্বালানি, লোহা, টাইটেনিয়ান ও ভ্যানাডিয়াম আকরিক এবং এ ধরনের যেসব ধাতব পদার্থ মিসাইল তৈরিতে ও সামরিক শক্তি বৃদ্ধিতে কাজে লাগে, সেসব রপ্তানি করতে পারবে না কোনো দেশ। পরীক্ষা করে দেখা হবে দেশটির সব আমদানি ও রপ্তানিপণ্য। অস্ত্র নিষেধাজ্ঞার আওতায় ছোট ও হালকা অস্ত্রও কেউ রপ্তানি করতে পারবে না উত্তর কোরিয়ায়। কোনো জাহাজ বা উড়োজাহাজ ভাড়া দেওয়া যাবে না এবং এ-সংক্রান্ত চুক্তিও করা যাবে না। এ ছাড়া উত্তর কোরিয়ামুখী ও দেশটি থেকে বের হওয়া সব মালবাহী যানকে পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। পূর্ববর্তী নিষেধাজ্ঞায় দেশটির সন্দেহভাজন মালবাহী যানগুলোকেই শুধু পরীক্ষা করা হতো। নিষেধাজ্ঞায় সিরিয়া, ইরান ও ভিয়েতনামে নিযুক্ত উত্তর কোরিয়ার বাণিজ্যিক প্রতিনিধিসহ ১৬ জনকে নতুন করে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। পাশাপাশি এই তালিকায় রাখা হয়েছে উত্তর কোরিয়ার ১২টি প্রতিষ্ঠানকেও। খাদ্য ও ওষুধ ছাড়া উত্তর কোরিয়ার সশস্ত্রবাহিনীর কাজে লাগতে পারে, এমন যেকোনো পণ্য রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয়েছে। নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে দেশটিকে সামরিক ও পুলিশি সহায়তার ওপরও। এ ছাড়া বিদেশি কোনো ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের উত্তর কোরিয়ায় নতুন শাখা চালু ও সে দেশের কোনো ব্যাংকের বিদেশে শাখা উদ্বোধন নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
.
জাতিসংঘের এই নিষেধাজ্ঞা আরোপকে কঠোর, সমন্বিত ও যথাযথ বলে উল্লেখ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। নিষেধাজ্ঞাকে স্বাগত জানিয়ে তিনি বলেছেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় পিয়ংইয়ংকে একটি ছোট বার্তা দিতে চায়; সেটি হলো, তাদের এসব ভয়াবহ কর্মসূচি বাদ দিতে হবে। ভালো পথে আসতে হবে। দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট পার্ক গিউন হাই বলেছেন, নজিরবিহীন কঠোর এ পদক্ষেপ শেষ পর্যন্ত উত্তর কোরিয়াকে তার পরমাণু কর্মসূচি থেকে সরিয়ে আনবে। দেশটির মিত্র হিসেবে পরিচিত চীন বলেছে, এসব নিষেধাজ্ঞার কারণে উত্তর কোরিয়ার নাজুক অর্থনীতি আরো সংকুচিত হবে। তবে উত্তর কোরিয়া বলেছে, এসব নিষেধাজ্ঞা দেশটির সার্বভৌমত্বের প্রতি চরম অবমাননা ও মারাত্মক চ্যালেঞ্জ।

.
নিষেধাজ্ঞার ফলে যেটি হবে

২০০৬ সালে প্রথম পরমাণু পরীক্ষা চালায় উত্তর কোরিয়া। এ নিয়ে পঞ্চমবার জাতিসংঘ দেশটির ওপর অবরোধ আরোপ করল। বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, নতুন এই নিষেধাজ্ঞার ফলে এই অঞ্চলে নতুন করে উত্তেজনা বাড়বে। তাঁদের মতে, গত দুই দশকে ইরানসহ যেকোনো দেশের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা থেকেও জাতিসংঘের এই নিষেধাজ্ঞা অনেক কঠোর।
.
শুধু কয়লা রপ্তানি থেকে বছরে উত্তর কোরিয়ার আর্ন হয় ১০০ কোটি ডলার আর আকরিক লোহা থেকে আর্ন হয় ২০ কোটি ডলার। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, আয়ের প্রধান উৎস বিরল এসব খনিজ দ্রব্য রপ্তানি করতে না পারলে দেশটি চরম অর্থনৈতিক সংকটে পড়বে। নতুন এই নিষেধাজ্ঞার কারণে উত্তর কোরিয়া পরমাণু ও নিষিদ্ধ অন্যান্য অস্ত্র কর্মসূচির জন্য তহবিল জোগাড় করতে পারবে না। জাতিসংঘের কঠোর নিষেধাজ্ঞার কারণে পরমাণু কর্মসূচি সীমিত করে বিশ্বশক্তিগুলোর সঙ্গে আন্তর্জাতিক চুক্তি করতে বাধ্য হয়েছিল ইরান। ওই নিষেধাজ্ঞার কারণে ইরানের অর্থনীতিও প্রায় পঙ্গু হয়ে পড়েছিল।

.

আবারও ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা
.

=
জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ যখন নতুন করে এক দফা নিষেধাজ্ঞা জারি করে, তার ঠিক কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালায় উত্তর কোরিয়া। নির্দিষ্ট কোনো লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত না করলেও স্বল্পপাল্লার ছয়টি মিসাইল ১৫০ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে সমুদ্রে পড়ে। জাতিসংঘ ওই প্রস্তাব পাস করায় শক্তি প্রদর্শন করতে পিয়ংইয়ং এমন ঘটনা ঘটাল বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তাঁরা আরো বলছেন, অবরোধের প্রতি উপেক্ষা দেখানোই ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের লক্ষ্য। অনেকে সমালোচনা করে বলেছেন, উত্তর কোরিয়া তার জনগণের মৌলিক চাহিদা পূরণের চেয়ে পারমাণবিক আর ব্যালাস্টিক কার্যক্রমে বেশি আগ্রহী।
.
জাতিসংঘ জানিয়েছে, এই নিষেধাজ্ঞা মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টির জন্য দেওয়া হয়নি। উত্তর কোরিয়ায় মানবিক ত্রাণ সহায়তা অব্যাহত রাখা হবে। তবে অবরোধের পদক্ষেপ পুরোপুরি বাস্তবায়ন করছে কি না তা দেখতে বিশ্বে সবার চোখ এখন চীন ও রাশিয়ার দিকে। কেননা উত্তর কোরিয়ার মিত্র চীন ও রাশিয়া এই নিষেধাজ্ঞা কতটুকু মেনে চলবে—সেটাই এখন দেখার বিষয়।
,
সূত্র . কালের কণ্ঠ

 

মন্তব্য করুন

স্যার, কিভাবে আপনাকে সাহায্য করতে পারি?

Click one of our representatives below

Customer Support
Customer Support

Syeda Nusrat

I am online

I am offline

Technical Support
Technical Support

Ariful Islam Aquib

I am online

I am offline