৩৮ তম বিসিএস প্রিলিমিনারি ও লিখিত পরীক্ষা প্রস্তুতি আন্তর্জাতিকে, পার্ট – ৩৫

পানামা পেপারস কলেঙ্কারী সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পড়ুন

==লিখেছেন >> Hossain Muhammad Jony
পানামা পেপারস? মোস্যাক ফনসেকা কী, তাদের কাজের পরিসর, তারা কাদের কাদের আইনি সহায়তা দিয়ে থাকে, গ্রাহকদের কিভাবে তারা বিভিন্ন সেবা দিয়ে থাকেন, নথি ফাঁস হওয়ার পর তাদের প্রতিক্রিয়া কী সহ আরো অনেক কিছুই থাকবে এই লেখায় যেটি নিচে তুলে ধরা হলো।
:
#পানামা_পেপারসঃ গোপনীয়তা রক্ষাকারী হিসেবে স্বীকৃত পৃথিবীর অন্যতম প্রতিষ্ঠান মোস্যাক ফনসেকা, যেটি পানামার একটি আইনি প্রতিষ্ঠান, সেখান থেকেই সম্প্রতি ফাঁস হয়েছে ১১ মিলিয়ন নথিপত্র। ওই নথিপত্রগুলোকেই বলা হচ্ছে পানামা পেপারস।
:
#যে_কারণে_বলা_হচ্ছে_পানামা_পেপারসঃ এক কোটি ১৫ লাখ নথিতে চার দশকের তথ্য-উপাত্ত রয়েছে। এসব নথি ছিল মধ্য আমেরিকার দেশ পানামাভিত্তিক আইনি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান মোসাক ফনসেকার কাছে। আইসিআইজে জানিয়েছে, প্রতিষ্ঠানটি বিশ্বের ক্ষমতাধর রাষ্ট্রনেতা, ব্যবসায়ী ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের নামে গোপন কোম্পানি গঠনের ব্যাপারে সহায়তা করেছে। আইসিআইজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৫ সালে পরিচালিত নিরীক্ষায় (অডিট) দেখা গেছে, মোসাক ফনসেকা ১৪ হাজার ৮৬ কোম্পানির মধ্যে ২০৪টির প্রকৃত মালিকের পরিচয় জানত।
:
#স্পষ্টভাবে_বেআইনি_কিছু_কি_হয়েছেঃ নথিতে অবৈধ কোনো কিছুর ইঙ্গিত দেওয়া হয়নি। তবে গোপন কোম্পানি ও বিদেশি অ্যাকাউন্ট খোলা আর্থিক লেনদেন ও আসল মালিকদের পরিচয় গোপন রাখতে ব্যবহার হতে পারে।আইসিআইজের মতে, এসব ফাইলে যেসব মানুষ ও কোম্পানির নাম এসেছে, তারা সবাই মাদকপাচার ও সন্ত্রাসবাদের অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্রের কালো তালিকাভুক্ত।
:
#যাদের_নাম_আছে_এসব_নথিতে: নথিতে ১২ জন বর্তমান ও সাবেক বিশ্বনেতা, ‌১২৮ রাজনীতিক ও সরকারি কর্মকর্তার নাম রয়েছে। তাঁদের মধ্যে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের নাম না থাকলেও তাঁর ঘনিষ্ঠ ব্যক্তির নাম রয়েছে। ফিফার কর্মকর্তা, আইসল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী সিগমুনডুর ডেভিড গানলগসন, তাঁর স্ত্রীর বিরুদ্ধে কোম্পানির মালিকানা বিষয়ে গোপন করার অভিযোগ করা হয়েছে। এ ছাড়া আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট মৌরিসিও মাক্রি একটি কোম্পানির সঙ্গে জড়িত থাকার তথ্য গোপন করেছেন।
:
#আইসিআইজে_যেভাবে_সব_নথি_পেলঃ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্র নথিগুলো প্রথম জার্মানির পত্রিকা সিদৎস জাইতুংকে সরবরাহ করে এবং পত্রিকা পরে আইসিআইজের কাছে দেয়। অন্য সংবাদমাধ্যমগুলো, যেমন—বিবিসি, দ্য গার্ডিয়ান, ম্যাকক্ল্যাচি প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
:
#পানামা_পেপারস_কাহিনী_যেভাবে_তৈরি_হলোঃ পানামা পেপারসের তথ্য থেকে পাওয়া গেছে অর্থ তছরুপ, অস্ত্র চোরাচালান, কর ফাঁকি এবং অর্থ নিয়ে ধোঁকাবাজির পাহাড়সম তথ্য।
#পৃথিবীর প্রভাবশালী শতাধিক রাজনীতিবিদ রয়েছেন এই তালিকায়, এ ছাড়া রয়েছেন বিত্তশালী থেকে শুরু করে মিডিয়া সেলিব্রিটি, খেলার মাঠের তারকা। এই তথ্য যেমন চমকপ্রদ, এই তথ্যকে সংবাদে রূপদানের প্রক্রিয়াটিও নেহাত কম রোমাঞ্চকর নয়। এই গোপন প্রোজেক্টটিতে প্রায় দুই বছর ধরে কাজ করেছেন শত শত পোড় খাওয়া সাংবাদিক; যার সবকিছুই হয়েছে লোকচক্ষুর অন্তরালে।
#আইসিআইজের ফাঁস করে দেওয়া পানামা পেপারসের তথ্যের পরিমাণ অকল্পনীয়। প্রায় ৪০ বছরের হিসাব খতিয়ান কেবল ডকুমেন্ট ফাইলের ওজনেই পাক্কা দুই দশমিক ছয় টেরাবাইট! এই বিশাল তথ্য নিয়ে কাজ করা প্রতিবেদকদের জন্য ছিল প্রায় দুঃসাধ্য। পানামা পেপারসের তথ্য ২০১০ সালে উইকিলিকসের ফাঁস করা তথ্যের অনুপাতে (এক দশমিক ৭৩ গিগাবাইট) হাজারগুণে বেশি। সামগ্রিকভাবে, পানামা পেপারে এক কোটি ১৫ লাখ ফাইল রয়েছে—যার মধ্যে ৪৮ লাখ ই-মেইল, ১০ লাখ ছবি এবং ২১ লাখ পিডিএফ ফাইল।এই তথ্য নিয়ে কাজ করা হয়েছে খুবই উন্নতমানের প্রযুক্তির মাধ্যমে। এই কাজ শুরু হয়েছিল ২০১৪ সালে।
#ওয়্যারড রিপোর্টসের তথ্যমতে, এক ‘অজানা’ সূত্র ‘স্যুডয়েশ যেইটং’ নামের এক জার্মান পত্রিকার প্রতিবেদকের সঙ্গে বিশেষ প্রক্রিয়ায় আলাপ করে পুরো বিষয়ের আভাস দেন। এরপর এই ফাঁস হয়ে যাওয়া তথ্য নিয়ে কাজ করার জন্য ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজমের ডেভেলপাররা একটি বিশেষ সার্চ ইঞ্জিন তৈরি করেন। দুনিয়াজোড়া বিভিন্ন পার্টনার সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে এই সার্চ ইঞ্জিনের সাহায্যে তথ্যের আদান-প্রদান করেন। রিয়েল-টাইম চ্যাট সিস্টেমে সাংবাদিকদের নিজেদের মধ্যে আলাপ, ডকুমেন্টে উল্লেখিত নামের সঙ্গে অন্যান্য তথ্য মেলানো, আর আনকোরা তথ্যকে ডিজিটাল ফরম্যাটে রূপান্তরের ব্যবস্থাও করা হয়। ‘নুইক্স’ নামের একটি সফটওয়্যার কোম্পানি প্রাপ্ত বিশাল নথি প্রাথমিকভাবে সাজানোর দায়িত্ব পালন করে। পুরো এটিই ছিল একটি সম্মিলিত, দলীয় উদ্যোগ।
#প্রাথমিকভাবে জার্মান পত্রিকা ‘স্যুডয়েশ যেইটং’ ফাঁস হয়ে যাওয়া ডকুমেন্ট হাতে পায়। তবে পত্রিকাটি এই তথ্য একলা যাচাই করতে যায়নি। আইসিআইজের সঙ্গে কাজ করেছে তারা। একই সঙ্গে ফ্রান্সের ‘লো ম্যঁদ’, আর্জেন্টিনার ‘লা নাসিওন’, সুইজারল্যান্ডের ‘সোনটাগজযেইটং’ এবং যুক্তরাজ্যের ‘গার্ডিয়ান’ ও ‘বিবিসি’ এই প্রকল্প নিয়ে বিশেষভাবে কাজ করেছে; যার সঙ্গে জড়িয়ে ছিলেন প্রায় ৪০০ সাংবাদিক। যুক্তরাষ্ট্রের কিছু সংবাদ সংস্থাও কিছু অংশে এই প্রকল্পে কাজ করেছে। পানামা পেপারস যাচাই করেছে দুনিয়াজোড়া শতাধিক সংবাদ সংস্থা। যুক্তরাষ্ট্রেও এমন কাজের ছিটেফোঁটাও যাবে না, তা কি আর হয়? ম্যাকক্লাচিস শার্লট অবজার্ভার, মায়ামি হেরাল্ড এবং ইউনিভিশন এই প্রকল্পের কিছু অংশে কাজ করেছে। মজার বিষয় হলো—নিউইয়র্ক টাইমস, দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট, ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের মতো প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যমের প্রথম পাতায় স্থান পায়নি পানামা পেপারসের খবর!
#আইসিআইজে আপাতত পূর্ণাঙ্গ নথি প্রকাশ করবে না বলেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। উইকিলিকস যেমন তাদের পাওয়া সব তথ্য ওয়েবজগতে ফাঁস করে দিয়েছিল, যাতে তা সবাই দেখতে পায়, আইসিআইজে তেমনটি করতে যাচ্ছে না। আইসিআইজের পরিচালক জেরার্ড রাইল এক বিবৃতিতে বলেন, ‘আমরা উইকিলিকস নই। আমরা এটাই দেখাতে চাইছি যে সাংবাদিকতা দায়িত্ব নিয়ে করা যায়।’
:
#মোস্যাক_ফনসেকাঃ পানামাভিত্তিক ল’ ফার্ম ও কর্পোরেট সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান এটি। বার্ষিক ফির ভিত্তিতে এরা বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ‘সম্পদ ব্যবস্থাপনা’ এবং এ বিষয়ে আইনি সহায়তা দিয়ে থাকে। সদর দফতর পানামায় হলেও মোসাক ফনসেকার কাজ বিশ্বব্যাপী বিস্তৃত। ৪২টি দেশে ৬০০ কর্মী এর ওয়েবসাইট সচল রেখেছেন। বিশ্বব্যাপী এর শাখা সংগঠনগুলো স্বতন্ত্র ল’ ফার্ম হিসেবেও স্বনামে খ্যাত। মোসাক ফনসেকা ‘অফশোর’ সেবায় বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম প্রতিষ্ঠান, যারা তিন লাখেরও বেশি কোম্পানির হয়ে কাজ করে। অফশোরে বিপুল পরিমাণ অর্থ লেনদেনের মধ্য দিয়ে মোসাক ফনসেকা গুরুত্বপূর্ণ অনেক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কর ফাঁকিতে সহায়তা করেছে। অফশোর কোম্পানি খোলা বা এর মাধ্যমে ব্যবসা পুরোপুরি বৈধ হলেও মাদক ও অস্ত্র চোরাচালানি এবং মুদ্রা পাচারের মতো অবৈধ কর্মকাণ্ডের অর্থও ফনসেকার মাধ্যমে নিরাপত্তা পেয়েছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কাজটি হয়েছে শেল কোম্পানির মাধ্যমে। এসব কোম্পানির অধিকাংশই ‘ট্যাক্স হেভেন’ হিসেবে পরিচিত বিভিন্ন দ্বীপরাষ্ট্র নিবন্ধিত।
:
#শেল_কোম্পানি_কীঃ শেল কোম্পানি হচ্ছে একটি বৈধ ব্যবসার খোলস। মূল অর্থের মালিকের নাম গোপন রাখার পাশাপাশি ওই অর্থের ব্যবস্থাপনা করাই এ ধরনের কোম্পানির কাজ। সাধারণত আসল মালিকের নাম এসব কোম্পানির কোনো কাগজে থাকে না। শেয়ার মালিকদের মধ্যে থাকেন আইনজীবী ও অ্যাকাউন্টরা। কখনও কখনও মালিকের অফিসের অফিস সহকারীও এসব শেল কোম্পানির পরিচালক বনে যান। কাগজে-কলমে একটি ঠিকানা ছাড়া আর কিছুই থাকে না বলে অনেক সময় শেল কোম্পানিগুলো ‘লেটারবক্স’ কোম্পানি নামেও পরিচিত। মোসাক ফনসেকার মতো অফশোর সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো এ ধরনের শেল কোম্পানি খুলতে এবং ব্যবস্থাপনায় সহযোগিতা করে। কোনো একটি কোম্পানির নিয়ন্ত্রণ থাকে এর বেশির ভাগ শেয়ার মালিকের হাতে। শেল কোম্পানির ক্ষেত্রে সেই নিয়ন্ত্রকের ভূমিকায় থাকে অন্য কোনো কোম্পানি। ওই কোম্পানির প্রতিনিধি হিসেবে কোনো আইনজীবী হয়তো শেল কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদে এসেছেন, যদিও তিনি নিজে মালিক নন। সেই নিয়ন্ত্রক কোম্পানিও হয়তো এই শেল কোম্পানির মালিক নয়। তারা হয়তো অন্য কোনো কোম্পানির সম্পদ ব্যবস্থাপনার অংশ হিসেবে এই শেল কোম্পানিরও দেখভাল করছে।
:
#ট্যাক্স_হেভেনঃ ধরা যাক আপনি একটি শেল কোম্পানি খুলেছেন। এখন এই কোম্পানির মাধ্যমে ব্যবসা করতে আপনাকে নিয়ম অনুযায়ী নিবন্ধন করতে হবে। যেসব দেশে কর আইন কড়া, সেখানে আপনার শেল কোম্পানির জারিজুরি ফাঁস হতে সময় লাগবে না। এজন্য আপনাকে খুঁজে বের করতে হবে এমন একটি দেশ বা এলাকা, যেখানে কর দিতে হয় খুবই কম, সরকার আপনার টাকার উৎস জানতে চায় না, কোম্পানির আসল মালিক কে তা নিয়েও মাথা ঘামায় না, ব্যাংকের তথ্যের গোপনীয়তা রক্ষা করে উদারভাবে। ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ড, ম্যাকাও, বাহামা ও পানামার মতো দেশ ও দ্বীপরাষ্ট্রগুলো এ ধরনের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের স্বর্গরাজ্য। এ কারণে এসব অঞ্চলকে ‘ট্যাক্স হেভেন’ বলা হয়। এ রকম কোনো একটি করস্বর্গে নিবন্ধিত হয়ে গেলেই আপনার শেল কোম্পানি ব্যবসার জন্য প্রস্তুত হয়ে গেল। এরপর এই কোম্পানির কাগুজে ব্যবসায় অবৈধ উৎসের টাকা বৈধ হয়ে যাবে; তারপর চলে যাবে নিরাপদ কোনো অ্যাকাউন্টে। ওই টাকার মালিক আপনিই থাকবেন, এক্ষেত্রে আপনার সরকারের কাছে আপনাকে মোটা অংকের ট্যাক্স দিতে হবে না।
:
#চাহিবামাত্র_পাবে_বাহকঃ শেল কোম্পানি খুলে অফশোর লেনদেনে নাম লুকিয়ে মোটা অংকের অর্থ হাতবদল করার ক্ষেত্রে নিরাপত্তার বাড়তি একটি বলয় হল ‘বেয়ারার শেয়ার’ বা ‘বেয়ারার বন্ড’। টাকার ওপরে যেমন লেখা থাকে- ‘চাহিবামাত্র ইহার বাহককে দিতে বাধ্য থাকিবে’, বেয়ারার শেয়ারও তেমনই। অর্থাৎ যার পকেটে থাকবে, তিনিই এর মালিক। নিজের মর্জিমাফিক তিনি তা ভাঙাতে বা খরচ করতে পারবেন, কোনো ব্যাংকের লকারে বা আইনজীবীর ব্রিফকেসে রেখে দিতে পারবেন। মালিকের নাম কেউ জানবে না। পানামার কোনো ল’ ফার্মে যদি এই বন্ড রাখা হয়, তাহলে ওই বন্ড যে আদৌ আছে এবং তার মালিক যে আসলে আপনি- তা জানার সাধ্য কারও নেই।
:
#কালো_টাকা_সাদা_করাঃ ‘বেয়ারার শেয়ার ও বন্ড’র মাধ্যমেও এ প্রক্রিয়ায় বিপুল পরিমাণ অর্থ আদান-প্রদান করা যায়। যার মাধ্যমে সহজেই ‘কালো’ টাকাকে ‘সাদা’ করে ফেলা সম্ভব, যেটি দিয়ে পরে যে কোনো দেশে ‘বৈধ’ ব্যবসা করা যায়, কেনা যায় সম্পদ। অপরাধী ও করখেলাপিরা এই সুবিধা নিয়মিত ব্যবহার করে বলে যুক্তরাষ্ট্র সেই ১৯৮২ সালেই বেয়ারার বন্ড বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছে।
:
#মুদ্রা_পাচারঃ আইনের দৃষ্টিতে অবৈধ পথে অর্জিত কালোর ময়লা ধুয়ে ফর্সা করার একটি পর্যায় হল মানি লন্ডারিং, যার মাধ্যমে কোনো প্রশ্নের উদ্রেক না করেই ওই অর্থ ব্যবহার করা যায়। একজন চোরাকারবারি, একজন জালিয়াত বা একজন দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনীতিবিদের পকেটে মোটা অংকের কালো টাকা জমে যেটি তাকে ওই কায়দায় ফর্সা করে নিতে হয় আইনের হাত এড়িয়ে চলার জন্য। তিনি ওই টাকা মোসাক ফনসেকার মতো কৌশলী ও ‘বৈধ’ কোনো ল’ ফার্মের মাধ্যমে কোনো একটি করস্বর্গে পাঠিয়ে দিতে পারেন। সেখানে ওই টাকায় একটি শেল কোম্পানি খুলে ওই অর্থ বেয়ারার শেয়ার বা বন্ডে রূপান্তর করে নেয়া যেতে পারে।
:
#মোস্যাক_ফনসেকার_কর্মক্ষেত্রঃ বিশ্বের ৪২টির বেশি দেশে প্রতিষ্ঠানটির শাখা রয়েছে। এসব শাখায় কর্মরত আছেন ৬০০ কর্মী।
:
#ফাঁস_হওয়া_নথির_পরিমাণঃ সম্প্রতি মোস্যাক ফনসেকা’র এক কোটি ১০ লাখ গোপন নথি ফাঁস হওয়ার পর দুনিয়াজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। এসব নথিতে বেরিয়ে এসেছে বিশ্বের ধনী আর ক্ষমতাধর ব্যক্তিরা কিভাবে কর ফাঁকি দিয়ে গোপন সম্পদের পাহাড় গড়েছেন? কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে ঠিক কি পরিমাণ নথি ফাঁস করেছে প্রতিষ্ঠানটি? এক কথায় এর উত্তর অনেক। বিপুল পরিমাণ নথি ফাঁসের ঘটনা ঘটেছে। এমনকি এটা ২০১০ সালে উইকিলিকসের ফাঁস করা নথির চেয়েও বেশি। ২০১৩ সালে সাংবাদিকদের কাছে এডওয়ার্ড স্নোডেনের ফাঁস করা নথির চেয়েও এ সংখ্যা ঢের বেশি। মোস্যাক ফনসেকা’র অভ্যন্তরীণ ডাটাবেজ থেকে ফাঁস হয়েছে ১১ দশমিক ৫ মিলিয়ন নথি এবং ২ দশমিক ৬ টেরাবাইট তথ্য।
:
#ফাঁস__হওয়া_নথিতেঃ ফাঁস হওয়া নথিগুলোতে দেখা যাচ্ছে, কিভাবে গোপনীয়তার আড়ালে ল’ ফার্মটি বিশ্বনেতাদের অর্থপাচার, নিষেধাজ্ঞা এড়ানো এবং কর ফাঁকিতে সহযোগিতা করেছে। এতে আরও উঠে এসেছে, স্বৈরশাসকসহ বিশ্বের সাবেক ও বর্তমান ৭২ জন রাষ্ট্র বা সরকারপ্রধানের নিজেদের দেশ থেকে অর্থ লোপাটের ভয়াবহ চিত্র। তবে মোওস্যাক ফনসেকা বলছে, কোনও রকম প্রতিবন্ধকতা ছাড়াই তারা গত ৪০ বছর ধরে প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা করে আসছে।
:
#ফাঁস_হলো_যেভাবে_নথিগুলোঃ অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের সংগঠন আইসিআইজে’র ডিরেক্টর জেরার্ড রাইল বলেন, নথিগুলোতে প্রতিষ্ঠানটির গত ৪০ বছরের প্রাত্যাহিক কার্যক্রমের তথ্য স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে। যদি এগুলোর সত্যতা নিশ্চিত হয়, তবে তা পুরো দুনিয়াকে কাঁপিয়ে দেবে। তবে মূলতঃ হ্যাকিংয়ের মাধ্যমেই ফাঁস করা হয় পানামা পেপারস‍! অর্থনৈতিক ইস্যুতে আইনি পরামর্শদাতা প্রতিষ্ঠান মোস্যাক ফনসেকার ১১ মিলিয়ন নথি ফাঁসের পর এর একজন প্রতিষ্ঠাতা অংশীদার দাবি করেছেন, তারা হ্যাকিংয়ের শিকার। রামন ফনসেকা নামের ওই ব্যক্তির দাবি, প্রতিষ্ঠানের ভেতর থেকে তথ্য ফাঁস হয়নি; বিদেশের কোনও সার্ভার থেকে পানামাভিত্তিক এ প্রতিষ্ঠানের সার্ভার হ্যাক হয়েছে। এরইমধ্যে পানামার অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ে এ ব্যাপারে অভিযোগ দায়ের করেছে মোস্যাক ফনসেকা।
:
#যে_ধরনের_সহায়তা_দেয়_মোওস্যাক_ফনসেকাঃ গ্রাহক আকৃষ্ট করতে ব্যবসায়িক সহযোগীদের নিজেদের ব্র্যান্ড নাম ব্যবহারের সুযোগ দেয় মোওস্যাক ফনসেকা। এ প্রতিষ্ঠানটি সুইজারল্যান্ড, সাইপ্রাস, ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডসসহ বিভিন্ন স্থানে ট্যাক্স হ্যাভেন পরিচালনা করে। নিজ দেশের বাইরে অর্থ রাখার বিষয়ে দুনিয়াজুড়ে যেসব প্রতিষ্ঠান গ্রাহকদের সেবা প্রদান করে তার মধ্যে মোওস্যাক ফনসেকার অবস্থান চতুর্থ। তিন লক্ষাধিক কোম্পানির সঙ্গে তারা কাজ করে। যুক্তরাজ্যে তাদের বেশ মজবুত অবস্থান রয়েছে।
:
#মোওস্যাক_ফনসেকার_ভাষ্যঃ এই ডাটা ফাঁসের বিষয়ে বিশদ আলোচনায় যেতে আগ্রহী নয় মোস্যাক ফনসেকা। গ্রাহকের গোপনীয়তার রক্ষার দিকেই অধিক নজর তাদের। মোওস্যাক ফনসেকা বলছে, তারা মানি লন্ডারিং বিরোধী আইন মেনে চলেছেন। সেদিকে খেয়াল রেখেই তারা ক্লায়েন্টদের সেবা দিয়েছেন। নিজেদের সেবার যে কোনও ধরনের অপব্যবহার রোধে তারা সচেষ্ট ছিলেন।এছাড়াও সোমবার এক বিবৃতিতে প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, আমার ব্যবসা জনসাধারণ ভালো বোঝে না এবং দুর্ভাগ্যজনকভাবে এই ধারাবাহিক নথি প্রকাশের ফলে এ নিয়ে বিভ্রান্তি আরো বাড়বে। সত্য হলো, আমরা তথ্য ফাঁসের শিকার হয়েছি, অবৈধভাবে যেসব গুচ্ছ গুচ্ছ নথি হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে, তার মধ্যে আমরা বেআইনি কিছু করেছি বলে উল্লেখ নেই। এবং পানামায় ব্যবসা করে আমরা গত ৪০ বছরে যে সুনাম অর্জন করেছি, তা অক্ষুণ্ণ থাকবে।’ প্রতিষ্ঠানটির কো-ফাউন্ডার র‍্যামন ফনসেকা মোরা সিএনএনকে বলেন, ‘কেউই চান তাঁর সম্পত্তি হাতছাড়া হোক এবং দোষীদের বিচারে আনতে আমরা বদ্ধপরিকর।’
:
#তথ্য__ফাঁসের_প্রভাবঃ পানামা পেপারসে বিশ্বব্যাপী ক্ষমতাশালী ও ধনীদের অর্থ কেলেঙ্কারি ফাঁস হওয়ার পর বিশ্বজুড়ে এ নিয়ে তদন্তের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ফ্রান্স-অস্ট্রেলিয়া-নিউ জিল্যান্ড-অস্ট্রিয়া-সুইডেন-নেদারল্যান্ডসসহ বেশকিছু দেশ তাদের স্ব স্ব দেশের অভিযোগ ওঠা ধনী ও ক্ষমতাশালীদের ব্যাপারে তদন্তের কথা জানিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রও এটি খতিয়ে দেখার ঘোষণা দিয়েছে। তবে ভিন্ন প্রতিক্রিয়াও দেখা গেছে। ফাঁস হওয়া নথিতে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের অর্থ কেলেঙ্কারির তেমন কোনও তথ্য নেই উল্লেখ করে নথিগুলোকে ষড়যন্ত্র বলে আখ্যা দিয়েছে রাশিয়া। একইভাবে চীনের তরফে ফাঁস হওয়া নথিগুলোকে পশ্চিমা ষড়যন্ত্র আখ্যা দিয়ে স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে এ সংক্রান্ত খবর নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। ব্যক্তিগতভাবে অনেকেই তাদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তবে তদন্তের পাশাপাশি কারও কারও বিরুদ্ধে পদত্যাগের দাবিও উঠেছে। এরইমধ্যে আইসল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী সিগমুন্ডুর ডেভিড গুনলাগসন পদত্যাগ করেছেন।
:
#অভিযুক্তদের_প্রতিক্রিয়াঃ পুতিনের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেছে রাশিয়া। কর্তৃপক্ষএটাকে ‘মিথ্যার পরম্পরা’ বলে অভিহিত করেছে। ফুটবলের শীর্ষ সংগঠন ফিফার গভর্নিং বডি এটাকে ‘হাস্যকর’ বলেছে। আইসল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে বলা হয়েছে, তিনি কোনো কর সুবিধা নেননি এবং আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট মাক্রির মুখপাত্র বলেছেন, প্রেসিডেন্টের নামে কখনো কোনো প্রতিষ্ঠান ছিল না। তবে ব্রিটেন, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া ও মেক্সিকো সম্ভাব্য কর ফাঁকির তদন্ত করবে বলে জানিয়েছে।

মন্তব্য করুন

স্যার, কিভাবে আপনাকে সাহায্য করতে পারি?

Click one of our representatives below

Customer Support
Customer Support

Syeda Nusrat

I am online

I am offline

Technical Support
Technical Support

Ariful Islam Aquib

I am online

I am offline