📣চলছে প্রো-অফার!!! ইশিখন.কম দিচ্ছে সকল অনলাইন-অফলাইন কোর্সে সর্বোচ্চ ৬০% পর্যন্ত ছাড়! বিস্তারিত

Pay with:

৩৮ তম বিসিএস প্রিলিমিনারি ও লিখিত পরীক্ষা প্রস্তুতি আন্তর্জাতিকে, পার্ট – ৩২

৩৮ তম বিসিএস প্রিলিমিনারি ও লিখিত পরীক্ষা প্রস্তুতি

টীকা: পানামা পেপার্স কেলেঙ্গকারী
উত্তরে সহায়ক
এই মুহূর্তে সারা বিশ্বে অন্যতম আলোচিত একটি নাম মোসাক ফনসেকা। পানামার এই আইনি পরামর্শক প্রতিষ্ঠানটিকে ব্যবহার করে বড় বড় রাজনীতিবিদ, মাদক ব্যবসায়ী, রাজপরিবারের সদস্য, অভিনেতা-অভিনেত্রী পাচার করেছেন কাঁড়ি কাঁড়ি অর্থ। কর ফাঁকি দিয়ে কীভাবে এই অর্থ নিয়ে পাচার করা হয়েছে, তা নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অব ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টস (আইসিআইজে)।
আইসিআইজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অর্থ পাচারে সুইজারল্যান্ডের বহুজাতিক ব্যাংক ইউবিএস ও মোসাক ফনসেকা দীর্ঘদিন একে অপরের কৌশলগত অংশীদার হিসেবে কাজ করেছে। ইউবিএসের অনেক গ্রাহক আছেন, যাঁরা নিজেদের অর্থসম্পদ গোপন করে রাখার জন্য নিরাপদ প্রতিষ্ঠানের খোঁজ করতেন। কিছু গ্রাহকের এমন চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে ফনসেকার সঙ্গে কাজ শুরু করে ইউবিএস। ফনসেকার মূল কাজ ছিল ভুয়া (অফশোর শেল) কোম্পানি তৈরি করে কর ফাঁকি দেওয়া অর্থের পাচার নিশ্চিত করা।
আইসিআইজের ফাঁস করা এক ই-মেইল বার্তায় ইউবিএসের কর্মী প্যাট্রিক কুংয়ের বক্তব্য তুলে ধরে বলা হয়েছে, মোসাক ফনসেকা সুইজারল্যান্ডের অর্থ লেনদেনের নিয়ম ভঙ্গ করেছে। ফনসেকার নিয়ম ভেঙে কাজ করার এটি ই-মেইলের মাধ্যমে ব্যাংক কর্তৃপক্ষকেও জানানো হয়েছে। মোসাক ফনসেকার কর্মী ডিয়েটার বুকোলজ বলেন, ইউবিএস ব্যাংকের নামে খোলা বিভিন্ন হিসাবের প্রকৃত মালিক কে, এ বিষয়ে কোনো ধারণাই তাঁর নেই।
২০১০ সালে কর ফাঁকি ও অর্থ পাচারের সঙ্গে ইউবিএসের জড়িত থাকার অভিযোগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশাল অঙ্কের জরিমানা করে। এরপর ইউবিএস কর্তৃপক্ষএমন ব্যবসা আর না করার সিদ্ধান্ত নেয়।
অর্থ পাচারের বিষয়ে ইউবিএসের কঠোর অবস্থানে মোসাক ফনসেকা অসন্তুষ্ট হয়। দীর্ঘদিনের ব্যবসায়িক অংশীদার ইউবিএসের এমন পদক্ষেপে নিজেদের প্রতারিত ভাবতে শুরু করে মোসাক ফনসেকা। এ-সম্পর্কিত ফাঁস করা এক ই-মেইলে বলা হয়, সমস্যায় পড়ে ইউবিএসের কর্মকাণ্ড সম্পূর্ণ বদলে গেছে। মনে হচ্ছে, এ ধরনের কোনো কর্মকাণ্ডের সঙ্গে ইউবিএস কখনোই জড়িত ছিল না!
তবে ২০১০ সালেই এ বিষয়ে ইউবিএস ও মোসাক ফনসেকা একটি সমঝোতায় উপনীত হয়। সমঝোতা অনুযায়ী, ইউবিএসের সব ভুয়া কোম্পানির দায়িত্ব ফনসেকা নিজের কাঁধে নিয়ে নেয়। এ জন্য ইউবিএস গ্রাহকদের বিশেষ যত্ন নেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দেয় ফনসেকা। সাধারণত গ্রাহক ও লেনদেন করা অর্থ অপরাধমূলক কাজে ব্যবহার হয় না—এমন নিশ্চয়তা না নিয়ে কোনো ধরনের সেবা দেয় না মোসাক ফনসেকা। ইউবিএস গ্রাহকদের ক্ষেত্রে এ বিষয়ে ছাড় দেয় প্রতিষ্ঠানটি। ফনসেকা সরাসরি দায়িত্ব নেওয়ার ফলে শেল কোম্পানির মাধ্যমে অর্থ লেনদেন থেকে মুক্তি পায় ইউবিএস।
২০১০ ও ২০১১ সালের মধ্যে এইচএসবিসি, ক্রেডিট সুইসসহ বেশ কয়েকটি ব্যাংকের সঙ্গে এমন চুক্তি করে ফনসেকা। তথ্য যাচাই-বাছাই ছাড়াই ফনসেকা এমন সেবার নাম দেয় ‘ভিআইপি সার্ভিস’। ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডে অর্থ পাচার নিয়ে সমস্যা তৈরি হলে ফ্রান্সের সোসাইটি জেনারেল তাদের বিশেষ গ্রাহকদের পরিচয় প্রকাশ করতে অস্বীকৃতি জানালে সেটি মেনে নিয়েই সেবা দিতে থাকে ফনসেকা। সোসাইটি জেনারেলের হিসাবধারীদের পরিচয় আড়াল করতে মোসাক ফনসেকা উল্টো দুটো ভুয়া ফাউন্ডেশন তৈরি করে তাদের ওই সব অফশোর শেল কোম্পানির মালিক বানিয়ে দেয়।
আইসিআইজের হিসাব অনুযায়ী, সারা বিশ্বে ইউবিএসের মতো আরও ৫০০ ব্যাংক এভাবে গ্রাহকদের অর্থ পাচার করতে মোসাক ফনসেকার সঙ্গে মিলে ১৫ হাজার ৬০০ ভুয়া কোম্পানি খোলে। এসব হিসাবের অধিকাংশই খোলা হয় নব্বইয়ের দশকে।
ভুয়া বা অফশোর শেল কোম্পানি খোলার প্রক্রিয়াটিও বেশ মজার। যে দেশে অর্থ পাচার করা হয়, মূলত সে দেশের একজন নাগরিকের নামে একটি ভুয়া কোম্পানি গঠন করা হয়। এরপর যেসব ব্যক্তির অর্থ পাচার করা হবে, তাদের ওই কোম্পানির পরিচালক দেখানো হয়। এরপর ব্যবসায়িক লেনদেনের নামে অর্থ পাচার করে নির্ধারিত দেশে পাঠানো হয়। পানামা, ভার্জিন আইল্যান্ডের মতো দেশে অফশোর শেল কোম্পানি খোলার জন্য মোসাক ফনসেকার সঙ্গে অনেক ব্যক্তি কাজ করেন, যাঁরা নির্দিষ্ট অর্থের বিনিময়ে ওই কোম্পানিতে নিজের নাম ব্যবহারের অনুমতি দেন।
আইসিআইজের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বহুজাতিক ব্যাংক এইচএসবিসি ও এর অধীন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অর্থ পাচারের কাজে ব্যবহৃত হয় এমন হিসাব আছে ২ হাজার ৩০০, যেটি সব ব্যাংকের মধ্যে সর্বোচ্চ (যদিও এইচএসবিসি পানামা পেপারস ফাঁস হওয়ার পর তা অস্বীকার করেছে)। ১ হাজার ১০০ হিসাব নিয়ে এর পরের স্থানে আছে ইউবিএস। মোসাক ফনসেকার সঙ্গে এমন ব্যবসা করা অন্য ব্যাংকের মধ্যে আছে ক্রেডিট সুইস (১ হাজার ১০৫টি হিসাব), সোসাইটি জেনারেল (৯৭৯), দ্য রয়েল ব্যাংক অব কানাডা (৩৭৮) ও কমার্স ব্যাংক (৯২)।
কর ফাঁকি দিয়ে অর্থ পাচারের ঘটনায় ইউবিএসকে জরিমানা করার পর যুক্তরাষ্ট্র এটি নিয়ে আরও ব্যাপক তদন্ত চালায়। সেই তদন্তের ধারাবাহিকতায় ক্রেডিট সুইস ব্যাংককে ২৮০ কোটি জরিমানা দিতে হয়। এইচএসবিসিকে দিতে হয় ১৯০ কোটি ডলার। ওয়েগেলিন নামের সুইজারল্যান্ডের আরেকটি ব্যাংক ৫ কোটি ৮০ লাখ ডলার জরিমানা দেয়। এখন পর্যন্ত সুইজারল্যান্ডের ৮০টি ব্যাংক অর্থ পাচারের কারণে অভিযুক্ত হয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে বিশাল অঙ্কের জরিমানা দিয়েছে।
এসব অভিযোগের বিষয়ে বিভিন্ন ব্যাংক ও মোসাক ফনসেকার বক্তব্যও আইসিআইজের প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে। এ বিষয়ে ইউবিএস জানায়, ‘অর্থ পাচার রোধে ব্যাংকের প্রত্যেক গ্রাহক ও আমাদের সঙ্গে লেনদেনকারী অন্য ব্যাংক ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের পরিচয় নিশ্চিত হয়েই কাজ করা হয়।’
মোসাক ফনসেকার একজন মুখপাত্র আইসিআইজেকে জানান, নতুন ও পুরোনো সব গ্রাহকের বিষয়ে শতভাগ নিশ্চিত হয়েই তাঁরা সেবা দেন। প্রতিটি ক্ষেত্রে ‘গ্রাহককে জানা’-এর (কেওয়াইসি) আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুসরণ করা হয়।
আইসিআইজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিভিন্ন দেশের দুর্নীতিবাজ শাসক, প্রতারক, মাদক ব্যবসায়ীর মতো লোকেরা এমন হিসাব ব্যবহার করে অর্থ পাচার করেছেন। অর্থ পাচারকারী এমন ব্যক্তিত্বের তালিকায় আছেন সৌদি আরবের যুবরাজ মুহাম্মদ বিন নাইফ বিন আবদুল আজিজ আল সাউদ, ব্রাজিলের ধসে পড়া একটি ব্যাংকের অভিযুক্ত রবার্তো ভিদিয়েরা, সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের প্রতিনিধি রামি মাখলুফসহ আরও অনেকেই।
ফনসেকার তৈরি শেল কোম্পানি ও বহুজাতিক ব্যাংক মিলে এমন একটি ব্যবস্থা গড়ে তুলেছিল, যাতে বিভিন্ন দেশের সরকারের পক্ষে একটি কোম্পানির প্রকৃত মালিক কে, সেটা বের করা প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। অর্থ লেনদেনে বিভিন্ন দেশের আইনের ফাঁকফোকরও তারা কাজে লাগায়। আইনের কড়াকড়ির কারণে বিভিন্ন ব্যাংক সরাসরি এমন সেবা দেওয়া বন্ধ করলেও নানা মাধ্যম ব্যবহার করে এখনো এসব সেবা দিয়ে যাচ্ছে বলে আইসিআইজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে ব্যাংকের নিজস্ব কর্মীর হিসাব ব্যবহার করে অর্থ লেনদেনের প্রমাণ মেলার কথাও প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
আইসিআইজে অবলম্বনে

 

   
   

0 responses on "৩৮ তম বিসিএস প্রিলিমিনারি ও লিখিত পরীক্ষা প্রস্তুতি আন্তর্জাতিকে, পার্ট - ৩২"

Leave a Message

Address

151/7, level-4, Goodluck Center, (Opposite SIBL Foundation Hospital), Panthapath Signal, Green Road, Dhanmondi, Dhaka-1205.

Phone: 09639399399 / 01948858258


DMCA.com Protection Status

Certificate Code

সবশেষ ৫টি রিভিউ

eShikhon Community
top
© eShikhon.com 2015-2024. All Right Reserved