৩৮ তম বিসিএস লিখিত ও প্রিলিমিনারি পরীক্ষার প্রস্তুতি – আন্তর্জার্তিক বিষয়াবলি
সাখাওয়াত হোসেন বেলাল
=
৩৮ তম BCS প্রিলিমিনারি | সিলেবাসে উল্লিখিত Conceptual Issue র Power and Securityর উপর আলোচনা
===প্রশ্নসমূহ
===
১. শক্তির সংজ্ঞা দিন?
২. একটি জাতি শক্তিশালী হওয়ার জন্য কী কী উপাদান জরুরী-বর্ণনা কর ।
৩. শক্তিসাম্য কী? শক্তিসাম্যের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আলোচনা কর
৪. শক্তিসাম্য বজায় রাখার কৌশলসমূহ আলোচনা কর
৫. নিরস্ত্রীকরণের সংজ্ঞা দিন।
==
শক্তি ও নিরাপত্তা(Power and Security)
==
আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক অঙ্গনে শক্তি/ক্ষমতা একটি গুরুত্বপূর্ণ ও আলোচিত বিষয়। আন্তর্জাতিক রাজনীতির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো বিভিন্ন রাষ্ট্রের মধ্যে শক্তি বা ক্ষমতার প্রতিদ্বন্দ্বিতা। আন্তর্জাতিক রাজনীতির মুখ্য নির্ধারক হচ্ছে শক্তি। শক্তি অর্জনের মাধ্যমে যে কোনো রাষ্ট্র বর্তমানে বিশ্বরাজনীতির নিয়ন্ত্রকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে পারে। জাতীয় শক্তি রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার সাথে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। শক্তির মাপকাঠিতে জাতীয় ব্যবস্থাকে বিচার বিশ্লেষণ করা হয়।
==
শক্তির সংজ্ঞাঃ
==
বিভিন্ন সমাজবিজ্ঞানী ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানী বিভিন্নভাবে শক্তির সংজ্ঞা দিয়েছেন। যেমন-
অরগ্যানস্কি(Organski) এর মতে, “অন্যের আচরণ নিয়ন্ত্রণের সামর্থ্যই শক্তি বা ক্ষমতা” ।
পামার ও পারকিন্স এর মতে, “শক্তি বলতে এমন এক উপায়কে বুঝায়, যার দ্বারা কোনো কোনো রাষ্ট্র এর অভ্যন্তরীণ এবং বৈদেশিক নীতিকে কার্যে প্রয়োগ করে।”
ক্লেচার এর মতে, “কাউকে ভয় দেখিয়ে বা পুরস্কৃত করে কোনো কাজ করানো বা নিজের মতে আনার সামর্থ থাকাটাই হলো শক্তি।”
জর্জ সোয়ার্জেনবার্গার এর মতে, “শক্তি হলো একজনের ইচ্ছাকে অন্যের উপর জোর করে চাপিয়ে দেয়ার সামর্থ্য এবং যদি তারা সেতা মানতে না চায়, তখন তাদের উপর কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের সামর্থ্য। ”
==
একটি জাতি শক্তিশালী হওয়ার উপাদানঃ
==
আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশেষজ্ঞদের মতামতের উপর ভিত্তি করে একটি জাতির শক্তিশালী হওয়ার উপাদান্ বা কারণসমূহ উল্লেখ করা হলো—
১. ভৌগোলিক উপাদানঃ ভৌগোলিক উপাদান সমূহকে কয়েকটি অংশে বিভক্ত করা যায়।
:: আয়তন ও প্রকৃতি
:: অবস্থান
:: ভূ-প্রকৃতি
:: জলবায়ু ও আবহাওয়া
:: প্রতিবেশী
২. জনসংখ্যা
৩. প্রাকৃতিক সম্পদ
৪. অর্থনৈতিক বিকাশ
৫. রাজনৈতিক কাঠামো
৬. দক্ষ নেতৃত্ব
৭. কূটনীতি
৮. সামরিক উপাদান
৯. জাতীয় চরিত্র, নৈতিক বল ও আত্মবিশ্বাস
১০. আন্তর্জাতিক মর্যাদা
১১. উৎপাদন ক্ষমতা
১২. যাতায়াত
১৩. বৈজ্ঞানিক দক্ষতা
১৪. সরকারি সংগঠন ও প্রশাসন
১৫. শক্তিশালী গোয়েন্দা বিভাগ
১৬. শিল্পক্ষেত্রে দক্ষতা
শক্তিসাম্য(Balance of Power):
1648 সালে ওয়েস্টফেলিয়া চুক্তি স্বাক্ষরের পর যখন আধুনিক রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা গড়ে ওঠে, তখন থেকেই শক্তিসাম্যনীতি আন্তর্জাতিক সম্পর্কের একটি মূল বৈশিষ্ট্য হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। পরবর্তী দু’শতাব্দী যাবৎ এটা বিশ্বশান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখার ব্যপারে বিশিষ্ট্য ভূমিকা পালন করে।
শক্তিসাম্যের সংজ্ঞাঃ
শক্তিসাম্য হলো স্বাধীন রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে এমন এক ধরণের সাম্যাবস্থা যেখানে কোনো একক শক্তি অথবা কোনো শক্তির সমবায়কে এমন ক্ষমতাসম্পন্ন হতে না দেয়া যাতে অন্যদের নিরাপত্তার প্রতি হুমকি হয়ে দাড়াতে পারে। অধ্যাপক সোয়ার্জেনবার্গার এটাকে “সাম্যাবস্থা” অর্থাৎ আন্তর্জাতিক সম্পর্কে মোটামুটি “স্থায়িত্ব” বোঝাতে ব্যবহার করেছেন।
কুইন্সি রাইট এর মতে, “শক্তিসাম্য হলো এমন একটি ব্যবস্থা, যেটি প্রতিটি রাষ্ট্রের মধ্যে এমন এক বিশ্বাস সৃষ্টি করে যে, কোন রাষ্ট্র আগ্রাসী হয়ে উঠলে তাকে অপরাজেয় জোটের সম্মুখীন হতে হবে। ”
শক্তিসাম্যের সবচেয়ে সুন্দর সংজ্ঞা দিয়েছেন অধ্যাপক ফে(Sidney B. Fay) তাঁর মতে, “ শক্তিসাম্যের অর্থ হলো রাষ্ট্রীয় পরিবারের সদস্যদের মধ্যে শক্তির এমন একটি সঠিক সাম্যাবস্থা, যেটি যে- কোন একটিকে বাধা দেবে এমন অধিক শক্তিশালী হতে যাতে সে অপরের উপর তার ইচ্ছাকে চাপিয়ে দিতে না পারে।”
অষ্টাদশ ও উনবিংশ শতব্দীতে শক্তিসাম্য নীতি জনপ্রিয় ছিল । শক্তিসাম্যকে বিশ্বশান্তি ও নিরাপত্তা সৃষ্টিতে একটা অপরিহার্য উপাদান মনে করা হতো । কোন একটি রাষ্ট্র অধিক শক্তি সঞ্চয় করে ফেললে অন্য রাষ্ট্রগুলো নানা কৌশল অবলম্বন করে তার সমকক্ষ হওয়ার চেষ্টা করত । যার ফলে বাড়তি শক্তি সঞ্চয়কারী রাষ্ট্র শক্তিশালী হওয়ার ইচ্ছা ত্যাগ করতে বাধ্য হতো । এভাবেই শক্তিসাম্য শান্তি ও নিরাপত্তা স্থাপন করত । কিন্তু সোভিয়েত রাশিয়া ভাঙ্গার ফলে তা বিনষ্ট হয় ।
===
শক্তিসাম্যের বৈশিষ্ট্যঃ
===
আন্তর্জাতিক রাজনীতির ক্ষেত্রে শক্তিসাম্য ধারণাটি একটি অভিনব উদ্ভাবন বটে। শক্তিসাম্য তত্ত্বের অন্যতম বিশ্লেষক পামার ও পারকিন্স এর সাতটি বৈশিষ্ট্যের কথা উল্লেখ করেন। যথাঃ
১. শক্তিসাম্যের ধারণা সতত পরিবর্তনশীল।
২. শক্তিসাম্য কোন ঐশ্বরিক তত্ত্ব নয়
৩. গতিশীলতা রক্ষা
৪. বিশুদ্ধ শক্তিসাম্য সম্ভব নয়
৫. শক্তিসাম্যের অবস্থাকে বাস্তব ও ব্যক্তিকেন্দ্রিক উভয় দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যাখ্যা করা যায়।
৬. শক্তিসাম্য তত্ত্ব গণতন্ত্র কিংবা একনায়কতন্ত্র কোনক্ষেত্রেই প্রযোজ্য নয়।
৭. শক্তিসাম্য তত্ত্ব বৃহৎ শক্তিবর্গের ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ ।
শক্তিসাম্য বজায় রাখার কৌশল বা পদ্ধতিসমূহঃ
পামার ও পারকিন্স শক্তিসাম্য বজায় রাখার ক্ষেত্রে ছয়টি কৌশলের উল্লেখ করেন। তাঁদের মতে,
১. জোট ও মৈত্রীজোট
২. ক্ষতিপূরণ
৩. অস্ত্রীকরণ ও নিরস্ত্রীকরণ
৪. হস্তক্ষেপ ও হস্তক্ষেপ থেকে বিরতি
৫. বাফার স্টেট বা সঙ্ঘর্ষ নিবারক রাষ্ট্র
৬. বিভাজন ও শাসন (Divide and Rule)
=
নিরস্ত্রীকরণ(Disarmament):
=
সাধারণভাবে নিরস্ত্রীকরণ বলতে বোঝায়, মারণাস্ত্রের প্রতিযোগিতা বন্ধের জন্য কো নির্দিষ্ট ধরণের কিংবা সকল ধরণের অস্ত্রের পরিমাণ হ্রাস করা অথবা উৎপাদিত অস্ত্র ধ্বংস বা উৎপাদন বন্ধ করা।
আন্তর্জাতিকভাবে নিরস্ত্রীকরণ বলতে বোঝায়, রাষ্ট্রসমূহের নিজেদের মধ্যে আলোচনা সাপেক্ষে স্বেচ্ছায় অস্ত্র উৎপাদন হ্রাস করা।
মরগেনথুর মতে, “অস্ত্রের উৎপাদন বন্ধ করার উদ্যেশ্যে সমস্ত রকম অস্ত্র হ্রাস করা অথবা বর্জন করাকে নিরস্ত্রীকরণ বলে। ”
শ্লেচার বলেন, “ আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে নিরস্ত্রীকরণের মূল অর্থ একটুখানি ব্যাপক। যেমন- কোন রাষ্ট্র যদি স্বেচ্ছায় অস্ত্র উৎপাদন হ্রাস করে তাকেও নিরস্ত্রীকরণ বলা যাবে”
আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে দ্বীন বুঝার তাউফিক দান কর আমিন
0 responses on "৩৮ তম BCS প্রিলিমিনারি ও লিখিত পরীক্ষা"