মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কেন মধ্যপ্রাচ্যের দিকে লোভ করে, মার্কিন মধ্যপ্রাচ্য নীতি, রাশিয়া কেন সিরিয়াকে সমর্থন করে , আইএস, আরব বসন্ত কেন ? ইত্যাদি অনেক প্রশ্নের উত্তর পাবেন নিচের লেখায়।
.
সিরিয়া হতে রাশিয়ার সেনা প্রত্যাহার একটি পর্যালোচনা
.
সম্প্রতি সিরিয়া থেকে রাশিয়া তার সৈন্য প্রত্যাহার করতে শুরু করেছে। এখন প্রশ্নটা হচ্ছে কেন রাশিয়া সিরিয়া যুদ্ধে জড়িত হয়েছিল আর কেনইবা এখন তার সৈন্য দেশটি থেকে প্রত্যাহার করছে।
;
সিরিয়ার বর্তমান পরিস্থিতি মূলত তথাকথিত আরব-বসন্তের নগদ প্রতিফল। ২০১১ সালে আরব বসন্তের সময় মার্কিন নেতৃত্বে তুরস্ক ও সৌদি আরবের সহায়তায় অস্ত্র, প্রশিক্ষণ এবং অর্থ সহায়তা নিয়ে আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য তাঁর নিয়মিত সৈন্যবাহিনীর একটি উল্লেখযোগ্য অংশ ফ্রি সিরিয়ান আর্মি নাম ধারণ করে এবং তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে। ধারণা করা যায়, আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য যে মার্কিন পলিসি সাজানো হয়েছিল তার অনিবার্য প্রতিফল আজকের আইএস। পর্যালোচনায় দেখা যায় যে, আইএসের উত্থানের পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্রগুলো এ থেকে কেবল লাভবানই হয়েছে এবং হচ্ছে। যদিও মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে জনগণের জীবনমান ও নিরাপত্তার ভয়াবহ অবনতি ঘটিয়েছে আইএস। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ২০১৪ সালের শুরুতে যখন ইরাক-সিরিয়ায় আইএসের উত্থান, ঠিক তখন থেকেই বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমতে শুরু করে। কিন্তু হওয়ার কথা বিপরীত অর্থাত্ মধ্যপ্রাচ্যে সংকট বৃদ্ধির কারণে বিশ্ববাজারে তেলের দাম তো বাড়ার কথা! কিন্তু তা হয়নি কারণ হচ্ছে, মধ্যপ্রাচ্যে অব্যাহত সংকটের কারণে সেখানকার রাষ্ট্রগুলোর উত্পাদন ও বাণিজ্যিক ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। পরিস্থিতি সামলাতে অধিকাংশ দেশই তেল উত্পাদন বাড়িয়ে দিয়েছে এবং বাজারমূল্যের চেয়ে কম দামে তেল বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে। তা ছাড়া বিভিন্ন পক্ষের অধিকৃত এলাকা থেকে নির্বিঘ্নে তেল পাচারের অভিযোগও আছে। এসবই তেলের দাম কমাতে ভূমিকা রেখেছে। কিন্তু তেলের এই অব্যাহত দরপতনই রাশিয়ার জন্য বড় মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়ায়, কেননা রাশিয়া পৃথিবীর তৃতীয় বৃহত্ তেল উত্পাদনকারী রাষ্ট্র। ফলে, বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমে যাওয়ায় রাশিয়ার বৈদেশিক বাণিজ্য বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হয়। এবং এ যাত্রা অব্যাহত থাকলে রাশিয়া ছাড়া পশ্চিমা বিশ্ব ক্রমান্বয়ে লাভবান হবে কিন্তু রাশিয়া এক অভাবনীয় অর্থনৈতিক ক্ষতির মুখে পড়বে। তাই, অন্যের বেয়াড়া লাভের বিপরীতে নিজের অর্থনৈতিক ক্ষতি চেয়ে চেয়ে দেখার কোনো যৌক্তিক কারণ নেই। সুতরাং, মার্কিন-স্বার্থ সিদ্ধির সাজানো বাগানে রাশিয়া বুলডোজার চালাবে সেটাই স্বাভাবিক।
;
রাশিয়ার আরো একটি বড় স্বার্থ হচ্ছে অস্ত্র ব্যবসা। মধ্যপ্রাচ্যকেন্দ্রিক অস্থিতিশীলতার কারণে বিশ্বের সব রাষ্ট্র নিরাপত্তা খাতে ব্যয় বাড়িয়েছে। ফলে, অস্ত্র বিক্রি করে এর মাধ্যমেও মুনাফা করছে সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্রগুলো। এ কথা মোটামুটি প্রতিষ্ঠিত এবং সবার জ্ঞাত যে, মার্কিন অর্থনীতির একটি অন্যতম স্তম্ভ হচ্ছে সে দেশের ওয়ার ইন্ডাস্ট্রি। সুতরাং পৃথিবীর দেশে দেশে যুদ্ধ বাধিয়ে রাখার মধ্যেই মার্কিন অর্থনৈতিক স্বার্থ সংরক্ষিত এবং প্রবৃদ্ধি নিহিত। কেননা, একটা বুলেট খরচ হওয়া মানেই একটা বুলেটের চাহিদা তৈরি হওয়া। সে কারণেই অনেকে মার্কিন পররাষ্ট্রনীতিকে যুদ্ধবাজ পররাষ্ট্র নীতি বলে। তাই, আরব বসন্তের সূত্র ধরে লিবিয়ার গাদ্দাফিকে হত্যা, সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ বাধিয়ে রাখা, আইএসের উত্থান প্রভৃতি গোটা মধ্যপ্রাচ্যে একটা চরম নিরাপত্তাহীনতার পরিবেশ তৈরি করেছে। ফলে, সন্ত্রাসী হামলার আশঙ্কা বৃদ্ধি প্রযুক্তি ক্রয় ও গবেষণা খাতেও বিনিয়োগ বৃদ্ধি করেছে। এখানেও লাভবান হচ্ছে সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলো। গাছেরটাও পকেটে, গোড়ারটাও পকেটে! আরব বসন্তের নামে এবং স্বৈরাচারী সরকার উত্খাতের নামে মধ্যপ্রাচ্যে যে যুদ্ধ ও ধ্বংস সংঘটিত হয়েছিল, সেখান থেকেও লাভবান হয়েছে পশ্চিমা দেশগুলো, কেননা যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনের নামে পশ্চিমা কনস্ট্রাকশন ইন্ডাস্ট্রিগুলো দারুণ ব্যবসা করেছে মধ্যপ্রাচ্যে। এ সাম্রাজ্যবাদী ভাগবাটোয়ারায় যারা কিছুই পায়নি, তারাও পেয়েছে কম দামের তেল। ফলে, সিরিয়ায় সংকট জিইয়ে রাখা আর পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্রগুলোর অর্থনৈতিক মুনাফা-প্রবাহ নিশ্চিতকরণ সমার্থক। আর এ-ভাগবাটোয়ারার মার্কিন-চালে রাশিয়া ক্ষতিগ্রস্ত বলেই, নিজের ক্ষমতা দেখানো ছাড়া রাশিয়ার আর কোনো উপায় ছিল না। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, রাশিয়া হলো সিরিয়ার এখন পর্যন্ত একমাত্র আন্তর্জাতিক পরীক্ষিত বন্ধু, যারা সিরিয়ায় প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদকে সমর্থন করে যাচ্ছে। প্রেসিডেন্ট আসাদ সিরিয়ায় রাশিয়ার স্বার্থ রক্ষার জন্য এখন পর্যন্ত রাশিয়ার দৃষ্টিতে পরীক্ষিত নেতা। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে সিরিয়ার বিরুদ্ধে উত্থাপিত রেজুলেশনে ভেটো দিয়ে রাশিয়া তা পাশ করতে দেয় নাই। পাশাপাশি রাশিয়া এখনো আসাদ সরকারকে সব ধরনের অস্ত্র ও গোলাবারুদ সরবরাহ করে যাচ্ছে। এবং মধ্যপ্রাচ্যে রাশিয়ার স্বার্থ সংরক্ষণে সিরিয়া রাশিয়ার অন্যতম মিত্র। মূলত সিরিয়ার তারতাউস বন্দর হলো ভূমধ্যসাগরে রাশিয়ার প্রধান ঘাঁটি। এই বন্দর থেকেই রাশিয়া মধ্যপ্রাচ্যে সকল স্বার্থ নিয়ন্ত্রণ করে। ব্ল্যাক সিতে রাশিয়ান স্বার্থ দেখাশোনাও করা হয় সিরিয়ার এই তারতাউস বন্দরে স্থাপিত রাশিয়ান নৌবাহিনীর ফ্রিগেট থেকেই। ৩০ সেপ্টেম্বর রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সিরিয়ায় প্রসিডেন্ট বাশার আল আসাদের সকল বিরোধী পক্ষের বিরুদ্ধে আকাশ পথে হামলা করার ঘোষণা দেয়। রাশিয়ার প্রধান লক্ষ্য সিরিয়া ও ইরাকের অনেক অঞ্চল দখলে নেয়া ইসলামিক স্টেট (আইএস) হলেও আসাদের রিবেল গ্রুপ যেমন মার্কিন ও তাদের মিত্রদের সমর্থিত সিরিয়ার প্রধান বিরোধী দলও এখন রাশিয়ার আক্রমণের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে।
;
কিন্তু রাশিয়ার আধিপত্য বিস্তারের এ কৌশল যুক্তরাষ্ট্র যে বিনা চিন্তায় হজম করছে সেটা মনে করাও সমীচীন হবে না। আগে থেকেই মধ্যপ্রাচ্যে একটা সুবিধাজনক অবস্থান নেয়া যুক্তরাষ্ট্র তার মিত্রদের রাশিয়ার বিরুদ্ধে একজোট করছে। সৌদি, ইয়েমেন, কাতার, কুয়েত, বাহরাইন ও তুরস্কের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির মাধ্যমে রাশিয়াবিরোধী একটা শক্ত অবস্থান গ্রহণ করছে। ২০১০ সালে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে আরব বসন্তের নামে একে একে সরকার পতন শুরু হলে সেই ধাক্কা সিরিয়ায়ও লাগে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আরব লীগের অধিকাংশ দেশ সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের পদত্যাগ দাবি করে। আর তখন থেকেই আসাদকে ক্ষমতা থেকে হটানোকে কেন্দ্র করে শুরু হয় সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ। চার বছরে সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধে প্রায় দুই লাখ বিরোধী দলীয় নেতা-কর্মীকে প্রেসিডেন্ট আসাদ জেলখানায় বন্দী করেছেন, এমনটা যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের মিত্রদের দাবি। কিন্তু ২০১৪ সালের এপ্রিলের গণভোটে আসাদ পুনরায় নিজেকে জয়ী প্রেসিডেন্ট হিসেবে ঘোষণা করেন এবং ১৬ জুলাই প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ তৃতীয়বারের মত দেশটির প্রেসিডেন্ট হিসেবে ৭ বছরের মেয়াদকাল শুরু করেন। যুক্তরাষ্ট্র তার মিত্রদের নিয়ে জাতিসংঘে বাশার আল আসাদের বিরুদ্ধে সিরিয়ায় সংঘটিত গৃহযুদ্ধে আসাদকে একজন মানবতাবিরোধী অপরাধী ও যুদ্ধাপরাধী হিসেবে দায়ী করে আসছে। সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা এখন পর্যন্ত আসাদের প্রধান বিরোধী হিসেবে খ্যাত ন্যাশনাল কোয়ালিশন বা রিবেল গ্রুপকে অস্ত্র ও গোলাবারুদ দিয়ে সহায়তা করছে। ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে যুক্তরাষ্ট্র সিরিয়া ও ইরাকের দখলকৃত ইসলামিক স্টেট বা আইএস এবং অন্যান্য জিহাদীর বিরুদ্ধে স্থল ও বিমান হামলা করে আসছে। কিন্তু মার্কিন সহায়তা পুষ্ট এই রিবেল গ্রুপ আসাদের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত সরাসরি কোনো হামলায় তেমনভাবে জড়ায়নি। তারা কেবল ইসলামিক স্টেট ও জিহাদী গ্রুপদের বিরুদ্ধেই মূলত যুদ্ধ করছে। পাশাপাশি মার্কিন মিত্ররা এই যুদ্ধে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ নিয়ন্ত্রণের যুক্তিতে সিরিয়ার এই রিবেল গ্রুপকে অস্ত্র ও গোলাবারুদ দিয়ে সহায়তা করছে। যুক্তরাষ্ট্র প্রায় পাঁচ হাজার সিরিয়ান রিবেলকে সরাসরি প্রশিক্ষণ দিয়ে এই যুদ্ধ শুরু করে।
;
অন্যদিকে সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ শুরু হবার পর থেকে সৌদি আরব সিরিয়ার প্রসিডেন্ট বাশার আল আসাদকে ক্ষমতা থেকে অপসারণের সকল প্রচেষ্টায় শুরু থেকে অর্থ সহায়তা দিয়ে আসছে। আসাদের রিবেল গ্রুপের প্রধান অর্থদাতা হলো সৌদি আরব। ২০১৩ সালে আসাদ তার বিরোধীদের উপর রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করেছে এই যুক্তিতে সৌদি আরব সেখানে আসাদের রিবেলদের সঙ্গে সেনা মোতায়েন করে। পরে মার্কিন সমর্থনকে সহায়তা করতে ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধে লোক দেখানো যুদ্ধে জড়ায় সৌদি আরব। ধারণা করা হয়, আসাদ রিবেলদের একটি ক্ষুদ্র অংশ সৌদি সেনা। তাছাড়া জর্ডান, কুয়েত, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও তুরস্ক এই রিবেল গ্রুপকে অর্থ ও অস্ত্র সহায়তা করে থাকে। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেফ তাঈফ এর্দোগান ঘোষণা দিয়েছেন, সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে অন্তত সাড়ে তিন লাখ মানুষ মারা গেছে। যার জন্য দায়ী সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ। তাই তাকে ক্ষমতা থেকে অপসারণে তুরস্ক বিরোধীপক্ষকে সব ধরনের সহায়তা দিচ্ছে। সিরিয়ার আসাদ বিরোধীদের অন্তত দুই লাখ রিফিউজিকে তুরস্ক আশ্রয় দিয়েছে। তুরস্কের দক্ষিণ পাশের সীমান্ত সিরিয়ান উদ্বাস্তুদের জন্য অনেকটাই ওপেন। তুরস্ক যেসব সিরিয়ানদের আশ্রয় দিয়েছে তাদের ভেতর থেকে আবার বড় একটি অংশ ইসলামিক স্টেটে যোগ দিয়ে সিরিয়া ও ইরাকের দখলকৃত ইসলামিক স্টেটে চলে গেছে। যে কারণে ধারণা করা হয়, ইসলামিক স্টেটের সঙ্গে তুরস্কের একটা অলিখিত বোঝাপড়া রয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে যেসব জিহাদী ইসলামিক স্টেট বা আইএস-এ যোগ দিয়েছে, তাদের প্রায় সকলের ট্রানজিট হিসেবে কাজ করেছে তুরস্ক। ২০১৫ সালের জুলাই মাসে আইএস-এর বোমা হামলার পর তুরস্ক মার্কিন সমর্থিত আইএস বিরোধী বিমান হামলায় আনুষ্ঠানিকভাবে যোগদান করে। যুক্তরাষ্ট্র ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধে যেসব বিমান হামলা করেছে তার অধিকাংশের ঘাঁটি হলো সৌদি আরব ও তুরস্ক। তুরস্কে নিষিদ্ধ ঘোষিত তার্কিশ কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টি, সিরিয়ায় যাদের সমর্থিত সিরিয়ান কুর্দিশ পপুলার প্রোটেকশান ইউনিট বা ওয়াইপিজি, যাদেরকে আবার তুরস্ক, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন একটি সন্ত্রাসী জঙ্গি গোষ্ঠী হিসেবে বিবেচনা করে। আর সিরিয়ায় অবস্থিত এই সিরিয়ান কুর্দিশদের বিরুদ্ধে তুরস্ক সুযোগ পেলেই হামলা চালায়। যার সমর্থন দেয় তার মার্কিন ও অন্যান্য মিত্ররা। মধ্যপ্রাচ্যে সিরিয়ার অন্যতম বন্ধু হলো শিয়া নেতৃত্বাধীন ইরান। ইরান সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আসাদকে অস্ত্র ও গোলাবারুদ সহায়তার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাজারে তেল বিক্রি করার অন্যতম ঘাঁটি হিসেবে সুবিধা প্রদান করে। তাছাড়া আসাদের যুদ্ধনীতির অন্যতম উপদেষ্টা হলো ইরান। লেবাননের হিযবুল্লাহদের জন্য অস্ত্র ও গোলাবারুদ সরবরাহের অন্যতম ঘাঁটি হিসেবে ইরান সিরিয়াকে ব্যবহার করে। লেবাননের হিযবুল্লাহ গ্রুপ পশ্চিম সিরিয়ায় আসাদের অবস্থানকে আরো শক্তিশালী করতে এখন আসাদ রিবেল গ্রুপদের সঙ্গে যুদ্ধরত। আর এই লেবানিজ হিযবুল্লাহকে পুরো সমর্থন যোগায় ইরান। ইরাক ও ইরানের শিয়া সেনারা আবার সিরিয়ায় ইসলামিক স্টেট বা আইএস দখলকৃত অংশে যৌথভাবে আইএস-এর সঙ্গে যুদ্ধরত। জাতিসংঘ সিরিয়ায় যে সকল দলের অংশগ্রহণে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে আসাদকে ক্ষমতা থেকে অপসারণের প্রস্তাব করেছে, সেই প্রশ্নে ইরান শুরুতে রাজি থাকলেও (সিরিয়ায় সকল দলের অংশগ্রহণে নির্বাচনের পক্ষে ইরান) জাতিসংঘের সেই প্রস্তাব অকার্যকর হওয়ায়, এখন সেই প্রস্তাব থেকে পিছু হটেছে ইরান। ইরান আবার মধ্যপ্রাচ্যে রাশিয়ার অন্যতম মিত্র। আর তাই এখন দেখার বিষয় এই যে, সিরিয়া থেকে রাশিয়ার সৈন্য প্রত্যাহার দেশটিতে শান্তি আনয়নের ক্ষেত্রে কি ভূমিকা রাখতে যাচ্ছে।
;ড. মো. আব্দুল্লাহ হেল কাফী
লেখক :অধ্যাপক, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
সূত্র > ইত্তেফাক ২০মার্চ