৩৮ তম বিসিএস প্রিলিমিনারি ও লিখিত পরীক্ষা প্রস্তুতি আন্তর্জাতিকে, পার্ট – ২২

৩৮ তম বিসিএস লিখিত ও প্রিলিমিনারি পরীক্ষার প্রস্তুতি
.আন্তর্জাতিক >. অংশে Problem solving প্রশ্নের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আইএস সংক্রান্ত প্রশ্ন কিংবা অভিবাসী সংকট মোকাবেলা। নিচের কলাম থেকে অভিবাসী সংকট সংক্রান্ত অনেক তথ্য জানা যাবে।
.
.
আমরা অভিবাসনের যুগে প্রবেশ করেছি। জন্ম নেয়া দেশের বাইরে অবস্থানকারী সব মানুষ মিলে যদি একটি প্রজাতন্ত্র গঠন করে তাহলে জনসংখ্যার দিক থেকে সেটি হবে বিশ্বের পঞ্চম বৃহৎ রাষ্ট্র। ছিন্নমূলদের এই রাষ্ট্রের জনসংখ্যা দাঁড়াবে ২৪ কোটিরও বেশি।
অভিবাসীদের এই হার একটি দেশের রাজনীতিতে কী পরিবর্তন আনছে তা নিয়ে প্রচুর লেখালেখি হয়েছে। তবে এটির ভূরাজনীতিতে প্রভাব নিয়ে আলোচনা হয়নি খুব একটা। অভিবাসনের এই বিশাল ব্যাপ্তি এরই মধ্যে তিন ধরনের অভিবাসী পরাশক্তির জন্ম দিয়েছে। এগুলো হলোÑ নব্য ঔপনিবেশবাদী, ঐক্য সৃষ্টিকারী ও এই দু-এর মাঝামাঝি একটি গোষ্ঠী।
নব্য অভিবাসন সৃষ্টিকারীরা অষ্টদশ ও ঊনবিংশ শতাব্দীর কথা মনে করিয়ে দেয়। যখন ইউরোপ থেকে বসতি স্থাপনকারীরা নানা দেশে ছড়িয়ে পড়েছিল। সে সময় এটি যে শুধু তাদেরই লাভবান করেছে তা নয়, এর থেকে তাদের স্বদেশও উপকৃত হয়েছে। একইভাবে একবিংশ শতাব্দীতে যারা দেশ ছেড়েছেন তাদের কল্যাণেও সমৃদ্ধ হচ্ছে তাদের জন্মভূমি। বিশ্বদরবারে তাদের বাজার, প্রযুক্তি এবং রাজনীতিতে ভূমিকা ও কণ্ঠস্বর জোরালো হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সাংবাদিক হাওয়ার্ড ডাবিনটড ফ্রাঞ্জ জানান, আফ্রিকা কী করে ‘চীনের দ্বিতীয় আবাসে পরিণত হলো’। ১০ লাখেরও বেশি চীনা নাগরিক সাব-সাহারান আফ্রিকার খোলনলচে প্রায় পাল্টে ফেলেছে। চীনের মূল ভূখণ্ড ছেড়ে যাওয়া নাগরিকদের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। একই কথা প্রযোজ্য ফ্রান্সের েেত্রও। এসব প্রবাসী যখন চীনে ফিরবে নিশ্চিতভাবেই দেশটির সমতা বাড়বে। চীনে এদের ডাকা হয় ‘সমুদ্রের কচ্ছপ’ বলে। দেশে ফিরলে এরাই হবে প্রযুক্তি শিল্পের মুখ্য কারিগর।
প্রবাসী ভারতীয়ের সংখ্যা এখন দুই কোটি। এদের সাফল্য আকাশচুম্বী। যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালির প্রতি ১০টি কোম্পানির একটির মালিকানা এদেরই কারো হাতে। মাইক্রোসফটের বর্তমান প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ভারতীয় বংশোদ্ভূত। ইন্টেল পেন্টিয়াম প্রোসেসরের েেত্রও একই কথা প্রযোজ্য। মটোরোলার সাবেক প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা এবং সার্চ ইঞ্জিন গুগলেরও তাই।
এটা থেকে ভারত কী করে লাভবান হয়? শুরু করা যাক রেমিট্যান্স দিয়ে। প্রতি বছর ভারত সাত হাজার কোটি ডলার শুধু রেমিট্যান্স বাবদ আর্ন করে। বিশ্বে রেমিট্যান্স থেকে এটাই সর্বোচ্চ আয়। ভারতের জিডিপির ৪ শতাংশ আসে এই খাত থেকে। দেশটি শিা খাতে যে পরিমাণ খরচ করে তার চেয়েও এই আর্ন বেশি। যুক্তরাষ্ট্রে প্রবাসী ভারতীয়ের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে, যেটি যুক্তরাষ্ট্রের ভূরাজনীতির ওপর প্রভাব রাখছে। দু’টি বিষয়ের মধ্যে সম্পর্ক খুব সাধারণভাবে ব্যাখ্যা করা সহজ নয়। কিন্তু ২০০৮ সালে দু’টি দেশের মধ্যে যে পরমাণু চুক্তি সই হয় তাতেই এটি স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
সম্প্রতি অভিবাসীদের এই স্রোত এতটাই বেড়েছে যে, কোনো রাষ্ট্র না থাকার পরও তাদের পরাশক্তি হিসেবে অভিহিত করা যায়। ৩৫ লাখ কুর্দি এখন অভিবাসী হয়ে ইউরোপে অবস্থান করছেন। তারা দেশ ছাড়াই নিজেদের একটি জাতি হিসেবে দাবি করেন। এই মহাদেশের রাজনৈতিকভাবে সবচেয়ে সক্রিয় অভিবাসী তারা, যার একটি বড় অংশ দীর্ঘ দিন ধরেই সুইডেন ও জার্মানিতে বাস করে। আর এ কারণেই এ দেশ দু’টি মধ্যপ্রাচ্যে জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস)-এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কুর্দিদের সহায়তা দিতে বাধ্য হচ্ছে।
দ্বিতীয় ধরনের পরাশক্তি হলো, ঐক্য স্থাপনকারীরা। সারা বিশ্বের নানা দেশের মানুষকে মার্কিন নাগরিক বানিয়ে তাদের মাধ্যমে সর্বোচ্চ সুবিধা কী করে আদায় করে নেয়া যায় তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ যুক্তরাষ্ট্র। এই ঘটনা, এর প্রক্রিয়া লিখে লাইব্রেরির পর লাইব্রেরি ভরে ফেলা সম্ভব। একইভাবে অ্যাঙ্গোলা বা ব্রাজিলের মতো দেশগুলো মেধা পাচার রুখে দিয়ে তাদের সাবেক ঔপনিবেশিক শাসকদের (পর্তুগাল) বিপুল অভিবাসীকে গ্রহণ করে লাভবান হচ্ছে। তবে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার সবচেয়ে বড় নজির হয়তো আজকের ইসরাইল এবং জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস)।
ইসরাইল গঠনের মূলমন্ত্রই অভিবাসন। এ ক্ষেত্রে ইহুদি ধর্মাবলম্বীদের সব ধরনের সুবিধা দেয়া হয়, বিনা পয়সায় ওয়ান ওয়ে বিমানের টিকিট, ভাষা শেখার কাস এবং বাস্তবভিত্তিক সব ধরনের সহযোগিতা। আর এ কারণেই ১৯৪৮ সালে স্থাপিত হওয়ার পর থেকে আজ পর্যন্ত দেশটির জনসংখ্যা বেড়েছে নয় গুণ।
‘ইন স্টার্ট-আপ নেশন : দ্য স্টোরি অব ইসরাইল’স ইকোনমিক মিরাকেল’ শীর্ষক বইয়ের আমেরিকান সহলেখক এবং রাজনৈতিক উপদেষ্টা ড্যান সেনর একেবারে মৌলিক একটি প্রশ্ন তুলেছেন। ‘ইসরাইলের জনসংখ্যা ৭১ লাখ। বয়স মাত্র ৬০ বছর। জন্মের পর থেকেই চরম বৈরী প্রতিবেশী দেশে ঘেরা, যেখানে সব সময়ই যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করে। গোড়া থেকেই তারা জাপান, কানাডা, ভারত, কোরিয়া, চীন এবং যুক্তরাজ্যের মতো একেবারে স্থিতিশীল দেশের সাথে কোম্পানি গড়ে তোলে। এটা কী করে সম্ভব হলো? ’
আইএস নেতারা হয়তো এ তুলনায় বিরক্ত হবেন তবে তাদের বিশ্ব মানচিত্রে এই দ্রুত উত্থানের পেছনে ইসরাইলের কিছু শিক্ষাও রয়েছে। তথাকথিত ইসলামিক স্টেটকে আনুষ্ঠানিকভাবে কেউ স্বীকৃতি দেয়নি। তবে এ কথা সত্য যে, তাদের সংগঠনটিও অভিবাসনের ভিত্তিতেই গড়ে উঠেছে। সওফেন গ্রুপের দেয়া হিসাব মতে, সিরিয়া ও ইরাকে আইএস যে ভূখণ্ড নিয়ন্ত্রণ করছে সেখানে ৮৬টি দেশের প্রায় ৩০ হাজার মানুষ রয়েছে।
আর এই দুই দলের মাঝামাঝি অবস্থানে রয়েছে তৃতীয় শ্রেণীভুক্ত অভিবাসীরা। এর সবচেয়ে ভালো উদাহরণ হলো তুরস্ক। একসময় ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য পদই ছিল তাদের সবচেয়ে বড় চাওয়া। এখন ব্রাসেলসকেই (ইইউর রাজধানী) শর্ত দিয়ে বাঁধতে চাইছে তারা। সম্প্রতি ইউরোপীয় নেতৃবৃন্দের সাথে এক সম্মেলনের ফাঁস হয়ে যাওয়া নথিতে দেখা যায়, প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েব এরদোগান রীতিমতো হুমকি দিচ্ছেন যে, তার দাবি পূরণ করা না হলে বাসে করে গ্রিস ও বুলগেরিয়ায় শরণার্থী পাঠিয়ে দেবেন তিনি।
নাইজারও এ দলেই পড়ে। পশ্চিম আফ্রিকা থেকে অভিবাসীদের ইতালিতে যাওয়ার মূল ট্রানজিট এটি। আর এ কারণেই নাইজার খুব সহজেই ইইউর কাছ থেকে ৬৮ কোটি ডলার বাগিয়ে নিয়েছে। এ ক্ষেত্রে তারা অনুসরণ করেছে লিবিয়ার সাবেক নেতা মুয়াম্মার আল-গাদ্দাফির নীতি। তারই বিখ্যাত হুঁশিয়ারি ছিল, ইউরোপ ‘পিছিয়ে পড়বে’ যদি না তিনি কৃষ্ণাঙ্গ অভিবাসীদের ভূমধ্যসাগর অতিক্রম করতে বাধা না দেন।
বাণিজ্য বিশ্বায়নের প্রথম পর্যায়ের সুবিধাভোগী সফলদের যদি জি-সেভেন হিসেবে অভিহিত করা হয় তাহলে অভিবাসনের কারণে লাভবান চীন, ভারত, কুর্দিস্তান, ইসরাইল, আইএস, তুরস্ক এবং নাইজারের মতো দেশ, অঞ্চল ও সংগঠনকে এম-সেভেন হিসেবে অভিহিত করা যেতেই পারে।
পশ্চিমাদের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে অভিবাসীদের জন্য সীমান্ত সিল করে দেয়ার এটি। আর সেটা সম্ভব নয় বলেই এম-সেভেনের বিকাশ ও উন্নয়নে জি-সেভেনের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।
.
মার্ক লিওনার্দ
২৯ এপ্রিল ২০১৬(নয়া দিগন্ত)
ইউরোপীয় কাউন্সিলের পররাষ্ট্র সম্পর্কবিষয়ক পরিচালক মার্ক লিওনার্দ ইউরোপের এখনকার সবচেয়ে বড় সঙ্কট অভিবাসনকে গভীর থেকে পর্যবেক্ষণ করেছেন। অভিবাসনের যে বিরাট শক্তি তিনি সেটি তুলে এনেছেন এর মূল বিষয়গুলো অবলোকন করে। প্রজেক্ট সিন্ডিকেটে প্রকাশিত তার কলামটির অনুবাদ করেছেন
তানজিলা কাওকাব।

Leave a Reply

স্যার, কিভাবে আপনাকে সাহায্য করতে পারি?

Click one of our representatives below

Customer Support
Customer Support

Syeda Nusrat

I am online

I am offline

Technical Support
Technical Support

Ariful Islam Aquib

I am online

I am offline