৩৮ তম বিসিএস প্রিলিমিনারি ও লিখিত পরীক্ষা প্রস্তুতি আন্তর্জাতিকে,০৫ এপ্রিল, ২০১৬ , ইত্তেফাক
৩৮ তম বিসিএস প্রিলিমিনারি ও লিখিত পরীক্ষা প্রস্তুতি
——–
সার্কের সফলতা -ব্যর্থতা সম্পর্কে রিটেনে অনেকবার প্রশ্ন িএসেছে। নিচের লেখাটি পড়ুন অনেক কিছু জানতে পারবেন।
.
,
দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর মধ্যে আর্থ-সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক বোঝাপড়া বৃদ্ধির মাধ্যমে উত্কর্ষ সাধনের লক্ষ্য নিয়ে ১৯৮৫ সালে সাতটি দেশ নিয়ে গঠিত হয়েছিল দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা, সংক্ষেপে—সার্ক (SAARC)। প্রধানত, আঞ্চলিকভাবে গড়ে ওঠা এ ধরনের সংগঠনের প্রধান উদ্দেশ্যই থাকে পারস্পরিক স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয়ে একমত হয়ে সামগ্রিক সামাজিক, অর্থনৈতিক উন্নয়নে একে-অন্যকে সাহায্য করা।
.,
আঞ্চলিকতার ভিত্তিতে জন্ম হলেও এসব সংগঠন যে বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে কতটা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে তা আমরা বুঝতে পারি ইউরোপীয় ইউনিয়নের মতো অর্থনৈতিক জোটের দিকে তাকালে। আশির দশকে তত্কালীন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান যখন সার্ক গঠনে উদ্যোগ গ্রহণ করেন তখন এর লক্ষ্যই ছিল কল্যাণমূলক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা চালু করা, সদস্য দেশগুলোর মধ্যকার পরস্পর বিশ্বাস ও আস্থা অর্জনের মাধ্যমে আঞ্চলিক আর্থ-সমাাজিক উন্নয়ন সাধিত করা। কিন্তু ষোড়শ সার্ক সম্মেলনে সার্কের বর্তমান আটটি সদস্য ও নয়টি পর্যবেক্ষক দেশের প্রতিনিধিরা এ মর্মে স্বীকার করেছেন যে, দক্ষিণ এশীয় গুরুত্বপূর্ণ এ জোটটি প্রতিষ্ঠার তিন দশক পেরোলেও এখনও তেমন কার্যকর হয়ে উঠতে পারেনি।
.,,
দক্ষিণ এশীয় সার্কভুক্ত আটটি দেশ বিশ্ব আয়তনের মোট ৩ শতাংশ জায়গা দখল করে আছে, কিন্তু বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ২১ ভাগের বসবাসই এ অঞ্চলে। দারিদ্র্য, সন্ত্রাস আর দুর্যোগের ঝাপটায় বারংবার আক্রান্ত এ দেশগুলোর শতকরা ২২ ভাগ লোকই বাস করে দারিদ্র্যসীমার নীচে। মাথাপিছু আয়ে পিছিয়ে থাকা দেশগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় অঞ্চল এটি। জনসম্পদ আর প্রাকৃতিক প্রাচুর্যতায় ভরপুর দক্ষিণ এশিয়ায় সন্ত্রাসবাদ আর দরিদ্রতার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে যেখানে এ জোটের নেতৃত্বকে একত্রে এগিয়ে যাওয়া আবশ্যক ছিল সেখানে দক্ষিণ এশিয়ার ১৮০ কোটি মানুষের সার্বিক উন্নতিতে সার্ক পুরোপুরি কার্যকর হওয়া না হওয়ার প্রশ্নে বহুলাংশে জিম্মি হয়ে রয়েছে। সার্ক গঠনকালীন সময়ে দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের পটভূমি আর বর্তমান পটভূমি কোনোভাবে মিলবে না সত্যি, কিন্তু তারপরেও আর্থ সামাজিক ক্ষেত্রে এ অঞ্চলের উন্নয়নে সার্কের মাধ্যমে খুব কমই ঐকমত্য বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়েছে। ১৯৯৮ সালে সার্ক জোটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২০১০ সালের ভিশন প্রদান করা হয়েছিল এ অঞ্চলকে মুক্তবাণিজ্য এলাকায় পরিণত করা হবে। পুরো অঞ্চলকে একটি ইকোনমিক ইউনিয়নের আওতায় গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সে লক্ষ্যে এখনও পর্যন্ত খুব কমই অগ্রগতি সম্ভব হয়েছে। দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের দেশগুলো নিয়ে বাণিজ্য-জোট গঠন করা সম্ভব হলে এটা যে ইইউ জোটের ন্যায় বিশ্ববাণিজ্যে ফায়দা তুলতে সক্ষম হতো—তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
.,,
২০০৬ সালে মুক্তবাণিজ্য চুক্তি সম্পন্ন করেও সদস্য দেশগুলো বর্তমানে শতকরা ৫ শতাংশ বাণিজ্য পারস্পরিক ভাবে সম্পন্ন করে আসছে। শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার এখনও স্বপ্নই রয়ে গেছে। দেশগুলোর নাগরিকদের ভিসামুক্ত ভ্রমণের কোনো অধিকার প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়নি। প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে সাতটি দেশ থাকলেও ২০০৭ সালে সার্ক জোটে প্রবেশ করে আফগানিস্তান। তবে সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে ভারতই একা সার্কের আয়তনের ৭০ শতাংশ জায়গা ধরে অবস্থান করছে। ফলে অন্যান্য সদস্য দেশের মধ্যে একটা প্রবল ধারণা কাজ করে যে, ভারত এ জোটে একচেটিয়া প্রভাব বিস্তার করার চেষ্টা করে। যার কারণে বাকি দেশগুলোর মধ্যে ভারতের বিরুদ্ধে একজোট গড়ার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে বড় দুটি দেশ পাকিস্তান আর ভারতের মধ্যে জন্মগত দ্বন্দ্ব সার্ক অকার্যকর থাকার পেছনে অন্যতম কারণ বলে মনে করা হয়। এ অঞ্চলের অধিকাংশ দেশের মধ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে দ্বিপাক্ষিক সমস্যা বিদ্যমান রয়েছে। অথচ দ্বিপাক্ষিক কোনো সমস্যা সমাধানের জন্য সার্ক কখনই বড় কোনো ভূমিকা রাখতে পারেনি। এমনকি দ্বিপাক্ষিক কোনো আলোচনা, দাবি-দাওয়া কোনো কিছুই সার্কে আলোচিত হওয়ার সুযোগ নেই। দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর মধ্যে ঐক্যের জোট গঠনের প্রচেষ্টা শুরু হয়েছিল সেই ১৯৪৭ সালে, নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত এশিয়ান রিলেশন কনফারেন্সের মাধ্যমে। অবস্থানগত এবং কৌশলগত দিক বিবেচনায় সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে আছে বাংলাদেশ। বর্তমানে সার্কের কার্যকারিতা বাড়াতে এবং একে সার্থক করে তুলতে বাংলাদেশের কূটনৈতিক ও কৌশলগত অবস্থান আরও শক্তিশালী হওয়া প্রয়োজন।
.,
বর্তমান প্রতিযোগিতামূলক আন্তর্জাতিক বিশ্বে আঞ্চলিক জোটগুলোর গুরুত্ব দিনে দিনে বাড়ছে। প্রচুর জনসম্পদ আর প্রাকৃতিক প্রাচুর্যতার পরও দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর অভিন্ন এবং একক কিছু সমস্যার জন্য উন্নয়নশীল বিশ্ব থেকে এ অঞ্চলটি অনেক বেশি পিছিয়ে রয়েছে। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কিছু স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে এসে বৃহত্তর স্বার্থে দেশগুলো একমত হয়ে সার্ককে কার্যকর করতে এগিয়ে এলে এ অঞ্চলটিও একদিন পূর্ণবিকাশে প্রতিষ্ঠা লাভ করতে পারবে।
,
.
মো. রহমত উল্লাহ
নিউট্রিশন এন্ড ফুড সায়েন্স অনুষদ (দ্বিতীয় বর্ষ), পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
.
সূত্র >>> ০৫ এপ্রিল, ২০১৬ , ইত্তেফাক
0 responses on "৩৮ তম বিসিএস প্রিলিমিনারি ও লিখিত পরীক্ষা প্রস্তুতি আন্তর্জাতিকে,০৫ এপ্রিল, ২০১৬ , ইত্তেফাক"