৩৮ তম বিসিএস প্রিলিমিনারি ও লিখিত পরীক্ষা প্রস্তুতি
শরণার্থী সংকট ইস্যুটি মনে হচ্ছে খুব ইম্পর্ট্যান্ট । কি বলেন আপনারা ?
.চলুন এই বিষয়ে কিছু ইনফরমেশেন জেনে নিই
শরণার্থীদের নিয়ে টানা হ্যাঁচড়ার শেষ কোথায়
.
ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও তুরস্কের মধ্যে শরণার্থী ইস্যুতে একটি চুক্তি হয়েছে। সম্প্রতি ব্রাসেলসে চুক্তি স্বাক্ষরের দিনটিকে ‘ঐতিহাসিক’ মুহূর্ত হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী আহমেত দাভুতোগলু। তার কথায়, ‘আজ আমরা উপলব্ধি করতে পারছি যে, তুরস্ক ও ইইউর ভাগ্য অভিন্ন। তাদের সামনে চ্যালেঞ্জ অভিন্ন এবং ভবিষ্যত্ অভিন্ন।’ জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাই কমিশনার (ইউএনএইচসিআর) বলেছে চুক্তিটি কিভাবে বাস্তবায়ন হয় সেদিকে তারা বিশেষভাবে দৃষ্টি রাখবে। চুক্তির বিষয়বস্তু নিয়ে সংস্থাটি আগেই আপত্তি জানিয়েছিল।
.
শরণার্থী সংকট নিয়ে ইইউ নেতৃবৃন্দের সঙ্গে তুরস্কের সরকারের কয়েক সপ্তাহ ধরে আলোচনা চলে। শেষ পর্যন্ত দু’পক্ষ মতৈক্যে পৌঁছে। এই চুক্তির মূল প্রতিপাদ্য হলো ‘ওয়ান ইন ওয়ান আউট’ অর্থাত্ গ্রিস থেকে প্রতিজন শরণার্থী ফিরিয়ে আনার বিপরীতে তুরস্কে অবস্থানরত সমসংখ্যক সিরীয় শরণার্থীকে ইউরোপে পুনর্বাসন করা হবে। জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মারকেল বলেন, তুরস্ককে আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে শরণার্থীদের দেখভাল করতে হবে। তিনি প্রথম থেকেই বলে আসছিলেন যে, গ্রিস ও তুরস্কের মধ্যে শরণার্থী বিনিময় সংকট কাটাবে বলে তিনি মনে করেন না। অন্যদিকে দাভুতোগলু বলেছেন, তিনি শরণার্থী সংকটকে আর্থিক বিবেচনায় দেখবেন না। এ ক্ষেত্রে মানবিক বিবেচনা অগ্রাধিকার পাবে। ২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত তুরস্ক হয়ে প্রায় ১০ লাখ শরণার্থী ইউরোপে গেছে। আর এ বছর এ পর্যন্ত গেছে এক লাখের কিছু বেশি।
.
তুরস্ক ও ইইউ এখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী ইউরোপের সবচেয়ে কঠিন শরণার্থী সঙ্কটের মুখোমুখি হয়েছে। দাভুতোগলু সপ্তাহ খানেক আগে প্রস্তাব করেন যে, প্রতি একজন সিরীয় শরণার্থীকে ইউরোপে আশ্রয় দেয়ার বিনিময়ে তুরস্কও একজন শরণার্থীকে ফেরত নেবে। এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন বলেছেন, ‘অচিরেই এমন দিন আসছে যখন ইজিয়ান সাগর হয়ে গ্রিসে আসা সব শরণার্থীকে তুরস্কে ফেরত পাঠানো সম্ভব হবে। তিনি বলেন, এটি করা সম্ভব হলে অবৈধ পথে মানব পাচারকারীদের ব্যবসা বন্ধ করা সম্ভব হবে।’ এর আগে ইউরোপীয় কমিশনের প্রধান ডোনাল্ড টাস্ক গত সপ্তাহে বলেন, ‘অবৈধ পথে ইউরোপে প্রবেশের দিন শেষ হতে চলেছে’।
.
তুরস্ক থেকে বিপজ্জনক সমুদ্রযাত্রা শুরু করে গ্রিস ইউরোপ পৌঁছানোর যে একটি প্রবণতা শরণার্থীদের মধ্যে দেখা যাচ্ছে সেটি বন্ধ করতে ইউরোপীয় নেতৃবৃন্দ এখন বদ্ধপরিকর। বেশিরভাগ শরণার্থী আসছে সিরিয়া ও ইরাক থেকে। ক’দিন আগে ভূমধ্যসাগরে শরণার্থী বোঝাই একটি নৌকা উল্টে গিয়ে ২৫ অভিবাসন প্রার্থীর সলিল সমাধি ঘটে। এরই প্রেক্ষাপটে ইইউ নেতৃবৃন্দ সংকট সমাধানে বৈঠকে বসেন। তুরস্ক ইতোমধ্যেই ৩০ লাখ শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছে। গত এক বছর হাজার হাজার শরণার্থী সিরিয়া থেকে তুরস্ক হয়ে বিপদ সংকুল সমুদ্রপথ অতিক্রম করে মেসেডোনিয়া হয়ে গ্রিসে প্রবেশ করেছে, অনেকে প্রবেশের পথে সীমান্তে আটকা পড়েছে। জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মারকেল বলে এই চুক্তি শরণার্থী সমাধানের একটি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ। গ্রিসের পর্যটন দ্বীপ লেসবস, কিওস ও লেরোসে এখন শরণার্থীদের উপচেপড়া ভিড়। অস্ট্রিয়া, হাঙ্গেরি ও স্লোভাকিয়াসহ সেনজেনভুক্ত (ভিসা মুক্ত ইউরোপীয় এলাকা) ৮টি দেশ সীমান্তে কড়াকড়ি আরোপ করায় কয়েক হাজার শরণার্থী গ্রিসে আটকা পড়ে আছে।
..
তুরস্ক চেষ্টা করছে শরণার্থী সমস্যা সমাধানে ভূমিকা রেখে নিজের ইউরোপীয় সদস্য পদ লাভের পথ প্রশস্ত করা। তবে আঙ্কারা ইইউর কাছ থেকে এখনও পর্যন্ত কোনো আশাব্যঞ্জক প্রতিশ্রুতি পায়নি। ইইউ তুরস্কের জন্য যেসব প্রণোদনামূলক সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে সেগুলো তেমন উল্লেখযোগ্য কিছু নয়। তুরস্কের ইইউর সদস্যপদ অর্জনের বিষয়ে অগ্রগতিরও কোনো প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়নি। কেবল বলা হয়েছে, এটি নিয়ে যতশীঘ্র সম্ভব আলোচনা শুরু করা হবে। তাছাড়া চলতি বছর জুনের শেষ নাগাদ তুর্কী নাগরিকরা শেনজেন নামে পরিচিত ভিসামুক্ত ইউরোপ ভ্রমণের সুবিধা পাবে কি না সেটিও এই চুক্তিতে নিশ্চিত করা হয়নি। তাছাড়া তুর্কীদের ওই সুবিধা পেথে হলে ইইউর বেঁধে দেয়া ৭২টি শর্ত পূরণ করতে হবে। তুরস্ক গ্রিস থেকে সিরীয় শরণার্থীদের গ্রহণ করলে শরণার্থী পুনর্বাসন কর্মসূচিতে ইইউ আগে যেমন সহায়তার পরিমাণ দ্বিগুন করে ৬শ’কোটি ডলার দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল চুক্তিতে তারও কোনো উল্লেখ নেই। শুধু বলা হয়েছে, এটি নিয়ে আলোচনা করা হবে।
..
চুক্তির আইনগত ভিত্তি নিয়েও সংশয়ের নিরসন হয়নি। কোন্ আইন বলে তুরস্ক গ্রিস থেকে সিরীয় শরণার্থীদের ফেরত নেবে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন স্পেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। ইউএনএইচসিআর বলেছে শরণার্থীর ব্যক্তিগত মত না নিয়ে ঢালাওভাবে একদেশ থেকে আরেক দেশে ফেরত পাঠানো আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন। সংস্থার বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর যৌথ ব্যবস্থাপনায় এর সমাধান হওয়া উচিত ছিল। যুদ্ধক্ষেত্র ও নির্যাতন থেকে প্রাণভয়ে পালিয়ে আসা লোকজনকে জোর করে অন্য কোথাও ফেরত পাঠানো আইনসম্মত নয়। শরণার্থীদের সম্মিলিতভাবে বহিষ্কার করা ইউরোপী মানবাধিকার কনভেনশনের পরিপন্থি।’ এ কারণে চুক্তি হলেও আইনগত জটিলতায় থেমে যেতে. পারে এর বাস্তবায়ন।
.
ইউরোপীয় কমিশনের প্রধান জ্যঁ ক্লদ জাঙ্কার বলেছেন, শরণার্থীদের তুরস্কে ফেরত পাঠানো আইনত বৈধ এবং জেনেভা কনভেনশনের সঙ্গেও সঙ্গতিপূর্ণ। ইইউর অভিবাসন নীতি সম্পর্কিত ধারা উল্লেখ করে তিনি বলেন, কোনো দেশ শরণার্থীদের গ্রহণে অস্বীকৃতি জানাতে পারে যদি তাদের ফেরত পাঠানোর মতো নিরাপদ কোনো দেশ পাওয়া যায়। তিনি বলেন, গ্রিস তুরস্ককে নিরাপদ দেশ বিবেচনা করে বলে শরণার্থীদের সেদেশে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সেদিক থেকে ফেরত পাঠানোর নীতি বৈধ।
.
এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের ইউরোপ বিষয়ক পরিচালক জন ডালহুইসেন বলেন, ‘এটি সত্যিই খারাপ একটি দিন, খারাপ একটি সমঝোতা এদিন হলো।’ তিনি বলেন, ‘সমঝোতাটি যদি পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয় তবে তার অর্থ হবে ইউরোপে ঠিক তত সংখ্যক শরণার্থীই আশ্রয় পাবে যত সংখ্যক শরণার্থী নিজেদের জীবন ঝুঁকির মুখে ঠেলে দিতে রাজি হবে।
.
সূত্র >>>>>>>>>>>>ইত্তেফাক , ২৮মার্চ