৩৭তম বিসিএস #লিখিত_প্রস্তুতি
আন্তর্জাতিকঃ
আন্তর্জাতিকঃ
প্রশ্নঃ বর্তমান প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নে আপনি কতটা আশাবাদী।
অথবা
অং সান সু চির ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসির ক্ষমতা গ্রহণের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ – মিয়ানমারের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নে আপনার মূল্যায়ন ব্যাখ্যা করুণ।
উত্তরঃ
সম্পর্ক উন্নয়নের পদক্ষেপ
ইয়াঙ্গুনকে ঢাকার একগুচ্ছ প্রস্তাব
বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নে জোরালো পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। এরই মধ্যে একটি চুক্তি সই হয়েছে। একগুচ্ছ প্রস্তাব দিয়েছে ঢাকা। আলোচনা চলছে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে দেশটিতে গণতন্ত্র ফিরে আসায় এমন উদ্যোগ নিচ্ছে ঢাকা ও ইয়াঙ্গুন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, দীর্ঘ বছর দেশটি শাসন করেছে সামরিক জান্তা সরকার। আগামী মাসে ক্ষমতা নিতে যাচ্ছে অং সান সু চির ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি। গণতন্ত্রে উত্তরণের এ সময়টি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে বাংলাদেশ। আশা করা হচ্ছে, এর ফলে দেশটির সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক উন্নত হবে।
বাংলাদেশ এরই মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নয়নে অনেক প্রস্তাব দিয়েছে। প্রস্তাবগুলো হলো- সীমান্তবর্তী রাখাইন প্রদেশে গার্মেন্ট কারখানা স্থাপন; একই প্রদেশে উন্নয়নমূলক কাজ যেমন- স্কুল, হাসপাতাল, সড়ক ও ব্রিজ নির্মাণ; নিরাপত্তা পরিস্থিতি উন্নয়নে দুটি প্রস্তাব; বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মিয়ানমারের শিক্ষার্থীদের বৃত্তি প্রভৃতি। তাছাড়া জ্বালানি সহযোগিতার বিষয়েও বাংলাদেশ একটি প্রস্তাব দিয়েছে।
জানা যায়, রাখাইন প্রদেশে যে তৈরি পোশাক কারখানা নির্মাণের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে, সেখানে শুধু মিয়ানমারের নাগরিকরাই কাজ করবেন। এক্ষেত্রে একটি চুক্তি করার জন্য বাংলাদেশের পক্ষ থেকে মিয়ানমারকে আহ্বান জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, রাখাইন প্রদেশে বাংলাদেশী উদ্যোক্তারা তৈরি পোশাক কারখানায় বিনিয়োগ করবেন এবং মিয়ানমারের উদ্যোক্তারাও বাংলাদেশে বিনিয়োগ করবেন। এই প্রস্তাবটি সম্পর্কে মিয়ানমারের পক্ষ থেকে এখনও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
নিরাপত্তা সম্পর্কিত দুটি প্রস্তাবের একটিতে মিয়ানমার সম্মত হয়েছে। আরেকটি নিয়ে আলোচনা চলছে। বাংলাদেশের প্রস্তাব অনুযায়ী, দুই দেশের সীমান্তে একটি সীমান্ত লিয়াজোঁ অফিস স্থাপন করা হবে; যেখান থেকে উভয় দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী সীমান্ত ব্যবস্থাপনার এটি দেখবে এবং কোনো সমস্যা হলে তার সমাধান করবে। এর মাধ্যমে সীমান্তের সমস্যাগুলো সীমান্তেই মিটিয়ে ফেলা যাবে বলে আশাবাদী পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। তাছাড়া একটি সমন্বিত নিরাপত্তা চুক্তিও করার প্রস্তাব দিয়েছে ঢাকা। এ ব্যাপারে এরই মধ্যে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে ইয়াঙ্গুন।
জনগণের সঙ্গে জনগণের যোগাযোগ বাড়ানোর লক্ষ্যেও বাংলাদেশের পক্ষ থেকে একটি প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, মিয়ানমারের শিক্ষার্থীদের বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার ক্ষেত্রে বৃত্তি দেবে বাংলাদেশ। এ লক্ষ্যে খুব শিগগিরই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ইয়াঙ্গুন বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে একটি সমঝোতা স্মারক সই হতে পারে।
জ্বালানি সহযোগিতার ক্ষেত্রে মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে হাইড্রোইলেকট্রিসিটি ড্যাম প্রকল্প স্থাপন এবং সেখান থেকে বিদ্যুৎ কিনতে চায় বাংলাদেশ। রাজধানী ইয়াঙ্গুনের চেয়ে রাখাইন প্রদেশে এটি করলে মিয়ানমারের জন্য এটি অধিক লাভবান হবে বলে মনে করা হচ্ছে। বাংলাদেশের জন্যও ভালো হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলিমদের ফিরিয়ে নেয়ার বিষয়েও আলোচনা চলছে। মিয়ানমারের ওপর বাংলাদেশ থেকে তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নিতে আন্তর্জাতিক চাপ রয়েছে। দেশটির গণতান্ত্রিক সরকার এক্ষেত্রে ইতিবাচক সাড়া দেবে বলেই প্রত্যাশা ঢাকার।
জানতে চাইলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, আমরা আলোচনা করছি। আমরা আশা করছি, আগামী মাসে নতুন সরকার ক্ষমতা নিলে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের উন্নতি হবে।
৫০ বছরের বেশি সময় ধরে মিয়ানমারে ক্ষমতায় থাকা সামরিক জান্তা সরকার গত বছরের নভেম্বরে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে পরাজিত হয়। জয়ী হয় নোবেল বিজয়ী অং সান সু চির দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি। দলটি নিম্নকক্ষে ৪৪০ আসনের মধ্যে ২৫৫টিতে এবং উচ্চকক্ষে ২২৪ আসনের মধ্যে ১৩৫ আসনে বিজয়ী হয়। দেশটিতে নিম্নকক্ষে ১১০ আসন এবং উচ্চকক্ষে ৫৬ আসন সেনাবাহিনীর সদস্যদের জন্য সংরক্ষিত।
সূত্রঃ আলোকিত বাংলাদেশ,২৭/০২/২০১৬ ইং