৩৮ তম বিসিএস প্রিলিমিনারি ও লিখিত পরীক্ষা প্রস্তুতি আন্তর্জাতিকে, পার্ট – ৩

৩৮ তম বিসিএস প্রিলিমিনারি ও লিখিত পরীক্ষা প্রস্তুতি

—-
আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী

———-
কেন ইসলামিক স্টেট ‘র আবির্ভাব ঘটল? যুক্তরাষ্ট্রের আলকায়দার বিরুদ্ধে সংগ্রামের অনেক তথ্য পাবেন এই লেখায়

————
জঙ্গি তৎপরতা কি প্রতিরোধ্য এবং তা কিভাবে
এম আবদুল হাফিজ
লেখক : সাবেক মহাপরিচালক, বিআইআইএসএস

আন্তর্জাতিক আইন পরিপন্থী ইরাক যুদ্ধের ভয়াবহ বিষক্রিয়া শুধু ইরাক নয়, সারা বিশ্বই প্রত্যক্ষ করছে, লিবিয়া, সিরিয়া, ইয়েমেনসহ পশ্চিম এশিয়া ও উত্তর আফ্রিকার বিস্তীর্ণ ভূখণ্ডে ‘ইসলামিক স্টেট’ উগ্রবাদী গোষ্ঠীর অবয়বে। ওই ভূখণ্ডে বিরাজমান ভয়াবহতা উপলব্ধি করতে হলে জানা প্রয়োজন যে ত্রিপোলি, দামেস্ক ও সানায় এই মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো দূতাবাস নেই। অথচ ঘোরতম সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধের দিনগুলোতেও কাবুল বা বাগদাদে মার্কিন দূতাবাস বন্ধ হয়নি।

উল্লেখ্য যে মার্কিন দূতাবাস সুবিধাবঞ্চিত তিনটি দেশই অবস্থিত মার্কিন নেতৃত্বাধীন সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধে মার্কিনরা যাকে ফ্রন্ট লাইন ভাবে। ১০ বছর আগে এসব দেশে সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধ কিছু সাফল্য পেয়েছিল। কারণ লিবিয়া ও সিরিয়া ওই যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রকে সর্বাত্মক সহযোগিতা দিয়েছিল; অন্তত প্রতিপক্ষ সেনাদের আটকে ও নির্যাতনে। বস্তুত ত্রিপোলির আবু সালিম ও দামেস্কের ফালাস্তিন কারাগার কথিত সন্ত্রাসীদের গুলাগে পরিণত হয়েছিল কতটা গুয়ানতানামো বের আদলে।

পরবর্তী সময়ে ইয়েমেন কিন্তু বিগড়ে যায়, যদিও দেশটি একসময় আরব উপদ্বীপে আল-কায়েদার ঘাঁটিতে পরিণত হয়ে তা নিয়ে ব্যাপক উদ্বেগের জন্ম দেয়। আরব উপদ্বীপের আল-কায়েদা যোদ্ধারা ইয়েমেনে এসেই সমবেত হতো। তবে ২০০২ সাল নাগাদ ব্যাপক পুলিশি তল্লাশি এবং আল-কায়েদাবিরোধী সামরিক অপারেশনের মুখে আল-কায়েদা যোদ্ধারা প্রায় উৎখাত হয় ইয়েমেন থেকে। এর মাত্র এক বছর পর যুক্তরাষ্ট্র ইরাক আক্রমণ করে। মার্কিনদের এই আক্রমণের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক মহল ভালোমতো সোচ্চার থাকলেও জর্জ বুশের হোয়াইট হাউসে তা উপেক্ষিত হয়।

তৎকালীন মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট ডিক চেনি বুশ প্রশাসনকে বিশ্বাস করাতে সক্ষম হন যে ইরাকি প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনের বাথ পার্টি আল-কায়েদা জিহাদিদের সঙ্গে সম্পৃক্ত, যদিও সমাজতান্ত্রিক বাথ পার্টির দর্শনে ধর্ম নিছক গৌণ একটি উপাদান। তৎকালীন ইতিহাসও সাক্ষ্য বহন করে যে ইরাক সৌদিদের সঙ্গে আরব জাতীয়তাবাদের বন্ধনে আবদ্ধ হলেও এবং সৌদি আরবে আল-কায়েদা তৎপরতা থাকলেও- ইরাকে তাদের অনুপ্রবেশ বা ক্ষীণ তৎপরতাকেও এই স্বৈরশাসক তার কর্তৃত্বে হস্তক্ষেপের শামিল বলেই ভাবতেন। সুতরাং সহজেই অনুমেয় যে চেনি তাঁর সমগোত্রীয়দের এক প্রকার জুজুর ভয় দেখিয়ে তাদের সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করতে চেয়েছিলেন।

মার্কিনদের যুদ্ধজনিত তাণ্ডব-লুণ্ঠনের পর তাদের পরিত্যক্ত ইরাকে শিয়া নেতৃত্বে আবার পুরনো বিভাজনরেখাগুলো স্পষ্ট হয়ে উঠতে থাকল। সুন্নিসহ সাদ্দাম আমলের সুবিধাভোগীরা সাদ্দাম-উত্তর ইরাকে মেনে নিতে পারল না শিয়াদের নিরঙ্কুশ প্রাধান্য ও আধিপত্য, যদিও তারা নির্বাচনের মাধ্যমেই ক্ষমতাসীন হয়েছিল। ইত্যবসরে ইয়েমেনের কারা প্রাচীরের অন্তরালে সবার অলক্ষ্যে আল-কায়েদার পুনর্জন্ম ঘটেছে। যে সাদ্দাম তাঁর নিজস্ব মতাদর্শের বর্ম দিয়ে আল-কায়েদাকে ঠেকিয়ে রেখেছিলেন, তাঁরই দেশ এবার আল-কায়েদার ইয়েমেনি সংস্করণের মাধ্যমে জিহাদের দীক্ষা নেয়।

যুক্তরাষ্ট্রের ‘ওয়েস্ট পয়েন্ট’ভিত্তিক থিংকট্যাংকের ‘ইরাকে আল-কায়েদার বিদেশি যোদ্ধা’ শীর্ষক একটি গবেষণাপত্রের তথ্যানুযায়ী দেশটিতে (ইরাক) সর্বাধিকসংখ্যক বিদেশি যোদ্ধা এসেছে সৌদি আরব থেকে। অতঃপর তারা এসেছে লিবিয়া, সিরিয়া ও ইয়েমেন থেকে। ২০১১ সাল নাগাদ তাদের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের কথা। মাঘ্রিবে আল-কায়েদার নেতৃত্বে লিবিয়ার আনসারুল শরিয়া, আরব উপদ্বীপে আল-কায়েদা এবং সিরিয়ার জাবাত আল নুসরার- এরাই হবে পথিকৃৎ- ঠিক যেমন আফগান জিহাদিরা এর আগে তাদের অভিজ্ঞতা ও সাফল্যের ডালি খুলে দিয়েছিল। এরা সবাই এবার জিহাদি সবক হাসিলে সবচেয়ে অনকূল ময়দান ইরাককে বেছে নেবে।

মোটেই বিস্ময়কর নয় যে সাম্প্রতিক সময়ে সিনিয়র জাতিসংঘ কর্মকর্তারা ২০০৩ সালের ইরাকে মার্কিন আক্রমণ ও দখলকেই ‘ইসলামিক স্টেট’ সন্ত্রাসের সূচনালগ্ন বলে অভিহিত করছেন। কোফি আনান, যিনি তাঁর দায়িত্ব পালনকালে কদাচিৎ পশ্চিমা মৈত্রীর সমালোচনা করেছেন, তিনিও এখন ইরাক যুদ্ধের আন্তর্জাতিক আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিকতার কথা খোলাখুলিভাবেই আলোচনায় আনছেন। তবে এ কথা উল্লেখ করতেই হয় যে ২০০৩ সালে তিনি এ বিষয়ে নিশ্চুপ ছিলেন।

জাতিসংঘের একজন সিনিয়র কূটনীতিক আলজেরীয় বংশোদ্ভূত লাখদার ব্রাহিমি সম্প্রতি তাঁর স্বদেশেই এমন তথ্য দিয়ে এক ফিকরা সম্মেলনের কথা বলেছেন। অভিজ্ঞ কূটনীতিক ব্রাহিমি সিরিয়ায় জাতিসংঘ ও আরব লীগের দূত ছিলেন। তারও আগে আফগানিস্তান ও লেবাননে পরস্পরের প্রতিকূল গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে দূতিয়ালি করেছেন। তাঁর মূল্যায়নে মার্কিন নেতৃত্বাধীন ইরাক আক্রমণের পাপই ‘ইসলামিক স্টেট’ আবির্ভাবের মূল কারণ।

ইয়েমেনে এখন প্রবল হুথি বিদ্রোহীরা তাদের সমর্থনদাতা ইরানের মতোই আল-কায়েদাবিরোধী। কিন্তু তাদের প্রতিপক্ষ শক্তি দেশটিতে আল-কায়েদার তৎপরতাকে লালন করেছে। তবু যুক্তরাষ্ট্র তার মিত্র সৌদি আরবকে ইয়েমেনে হুথি উত্থান থেকে উদ্ধারকল্পে এগিয়ে এলে সেখানে একটি সমঝোতা বা নিষ্পত্তির সম্ভাবনা আছে। কিন্তু ‘ইসলামিক স্টেট’ সন্ত্রাসকবলিত সিরিয়ায় তারও কোনো আভাস নেই।

ইরাক যুদ্ধের ‘পাপে’ যে ‘ইসলামিক স্টেট’ ধ্বংসযজ্ঞের সূচনা, তার প্রতি পশ্চিমা মৈত্রী বা শক্তিপুঞ্জের প্রতিক্রিয়া কী? তা স্পষ্ট না হলেও অবশ্যই নতুন কিছু নয়। ‘ইসলামিক স্টেট’ ও পশ্চিমা কোয়ালিশন- উভয় পক্ষই নিজেদের মতো করে লড়ে যাচ্ছে। সিরিয়ায় ও ইরাকে যুদ্ধ চলছে, উভয় পক্ষই যার তীব্রতা বৃদ্ধির পক্ষপাতী। লিবিয়ায় ‘ইসলামিক স্টেট’কে ঠেকাতে ইতালীয় ও ফরাসিরা খোলাখুলিভাবে আরেক ন্যাটো হস্তক্ষেপের কথা বলছে। মার্কিনরা মিসরীয় হস্তক্ষেপ ও বোমাবর্ষণে অংশগ্রহণে খুশি। ইয়েমেনে মার্কিনরা আবার ড্রোন হামলার কথা ভাবছে। কিন্তু এসবে কি ‘আইএস’ বা অন্য জিহাদিরা দমবে? লাখদার ব্রাহিমি মনে করেন না যে আইএস তাতে দমবে। তাঁর মতে, একটাই পথ খোলা আছে, তা হলো অন্তত ইরাক, সিরিয়া ও লিবিয়ায় একটি রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নিষ্পত্তি। আরো দরকার হবে আঞ্চলিক ভিত্তিতে জিহাদকবলিত দেশগুলোর একটি মৈত্রীবন্ধন।

 

Leave a Reply

স্যার, কিভাবে আপনাকে সাহায্য করতে পারি?

Click one of our representatives below

Customer Support
Customer Support

Syeda Nusrat

I am online

I am offline

Technical Support
Technical Support

Ariful Islam Aquib

I am online

I am offline