৩৮ তম বিসিএস প্রিলিমিনারি ও লিখিত পরীক্ষা প্রস্তুতি
-আন্তর্জাতিক:
সিলেবাস টপিকস:Major Issues and Conflicts in the World:
the Syrian Crisis
.রিটেনে এবার সিরিয়ান ক্রাইসিস টা খুব গুরুত্বপূর্ণ
আমার এই পোস্টে পাবেন সিরিয়ান ক্রাইসিসে ক্ষয়ক্ষতি , শরণার্থী সংখ্যা সম্পর্কিত কিছু তথ্য ও যুদ্ধবিরতি হবে কিনা এই সম্পর্কে ধারণা ।
. /
সিরিয়ান ক্রাইসিসে ক্ষয়ক্ষতি , শরণার্থী সংখ্যা সম্পর্কিত কিছু তথ্য
———
ইরাক, সিরিয়া, লিবিয়া ও ইয়েমেনে যুদ্ধের কারণে মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার ৮ কোটি ৭০ লাখ মানুষ সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব মানুষের জীবন ব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙে গেছে। যুদ্ধের কারণে এসব দেশের মানুষের সাথে সাথে অর্থনীতি ও অবকাঠামো দীর্ঘ মেয়াদের জন্য ধ্বংস হয়েছে। সংঘাতপূর্ণ অবস্থায় এই মুহূূর্তে সিরিয়ায় ১ কোটি ৩৫ লাখ মানুষের জরুরি মানবিক সহায়তা প্রয়োজন।
.
সম্প্রতি ‘সিরিয়ান সেন্টার ফর পলিসি রিসার্চের (এসসিপিআর)’ এক প্রতিবেদনে সিরিয়ার গৃহযুদ্ধের ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে উঠে এসেছে আরো ভয়াবহ তথ্য। এতে বলা হয়েছে, সিরিয়ায় প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের বাহিনী ও বিদ্রোহীদের মধ্যে প্রায় পাঁচ বছরের এই গৃহযুদ্ধে প্রাণ হারিয়েছে ৪ লাখ ৭০ হাজার মানুষ। বাস্তুচ্যুত হয়েছে ৪৫ শতাংশ সিরীয়। যুদ্ধের বিভীষিকায় সিরিয়ার জাতীয় সম্পদ ও অবকাঠামো প্রায় পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিগত পাঁচ বছরে সিরিয়ার জনগণের সাড়ে ১১ শতাংশই নিহত বা আহত হয়েছে।
.
প্রতিবেদনে নির্দিষ্ট করে আহতদের সংখ্যা উল্লেখ করা হয়েছে। বলা হয়েছে ১৯ লাখ লোক সংঘাতে আহত হয়েছে। যুদ্ধ শুরুর আগে ২০১০ সালে সিরিয়ার মানুষের গড় আয়ু যেখানে ছিল ৭০ বছর, ২০১৫ সালে তা নেমে দাঁড়িয়েছে ৫৫ বছর ৪ মাসে। দেশটির অর্থনীতির সার্বিক ক্ষতির পরিমাণও নিতান্ত কম নয়, আনুমানিক ২৫ হাজার ৫০০ কোটি মার্কিন ডলার। নিহত সিরীয়দের ওই বিপুল সংখ্যা এমন এক সময়ে উদঘাটিত হলো, যখন দেশটির আলেপ্পোর পরিস্থিতি নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে আশঙ্কা বেড়েই চলেছে।
.
প্রতিদিনই হাজার হাজার মানুষ আলেপ্পো ছেড়ে শরণার্থী হচ্ছে। রুশ বিমান হামলা ও ইরানি মিলিশিয়াদের সহায়তায় আলেপ্পো অভিমুখে বাশার বাহিনীর অগ্রযাত্রার প্রেক্ষাপটে বৃহত্তম এই সিরীয় শহর একেবারে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। গত সপ্তাহে আন্তর্জাতিক রেডক্রস বলেছে, সিরিয়ার উত্তরে লড়াই তীদ্রতর হওয়ায় ৫০ হাজারের বেশি লোক নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে পালিয়ে গেছে। তাদের খাবার ও পানি দরকার। একই সঙ্গে আটকে পড়া মানুষের জন্য মানবিক সহায়তা জরুরি হয়ে পড়েছে। বাশার সরকার আলেপ্পোর বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত অংশের সঙ্গে সব ধরনের ত্রাণ সহায়তা সরবরাহের রাস্তা কেটে যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে। প্রচণ্ড ঠান্ডার মধ্যে খাদ্য, পানি ও আশ্রয়ের অভাবে খোলা আকাশের নিচে বাস করছে মানুষ। বলা হচ্ছে, আলেপ্পো এখন বাসিন্দাদের কাছে নরকে পরিণত হয়েছে।
.
আলেপ্পো প্রদেশে রাশিয়ার সহযোগিতায় চলতি মাসের শুরু থেকে নতুন করে ভয়াবহ সশস্ত্র হামলা শুরু হয়। দিনে চারবারের বেশি বোমা হামলা হয়। সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস বলছে, ১ ফেব্রুয়ারি থেকে আলেপ্পোতে বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে পরিচালিত অভিযানে ২৩ জন শিশুসহ ৫০৬ জন নিহত হয়েছে।
——-
#পররাষ্ট্র_ভাইভা
আপনি কি মনে করেন সিরিয়ায় যুদ্ধবিরতি হবে ?
উত্তরে সহায়ক
.
যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ার বর্তমান পরিস্থিতি সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রচেষ্টা চলছে। এখন সিরিয়ায় যুদ্ধের ক্ষেত্রে দুটি বড় পক্ষ হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া। যুক্তরাষ্ট্র চাই প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদকে হটিয়ে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে। অন্যদিকে আসাদের প্রতি সহমর্মী রাশিয়া। আসাদের অনুরোধে গত বছর থেকে ইসলামিক স্টেট ও অন্যান্য জিহাদি সংগঠনের বিরুদ্ধে সিরিয়ায় বোমা হামলা চালাচ্ছে রাশিয়া। পশ্চিমা দেশগুলোর অভিযোগ, সিরিয়ার নিরীহ লোকজনের ওপর হামলা চালাচ্ছে রাশিয়া।
.
সিরিয়ার এই বিভীষিকাময় পরিস্থিতিতে গত বৃহস্পতিবার জার্মানির মিউনিখে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি ও রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ বৈঠকে বসেন। দীর্ঘ বৈঠকের পর শুক্রবার জানানো হয়েছে, সিরিয়ায় যুদ্ধবিরতি কার্যকরের ব্যাপারে বিশ্বের প্রধান প্রভাবশালী দেশগুলো সম্মত হয়েছে। এক সপ্তাহের মধ্যে এই যুদ্ধবিরতি কার্যকর হতে পারে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন প্রভাবশালী দেশের নেতারা। সিরিয়ায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলে তা সত্যিকারের শান্তি আলোচনা ফের শুরুর ক্ষেত্রে একটি সেতুবন্ধ হিসেবে কাজ করতে পারে। বৈঠকের পর মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি বলেন, বিশ্বশক্তি এমন একটি পরিকল্পনার ব্যাপারে একমত হয়েছে, যেটি সিরিয়ার জনগণের দৈনন্দিন জীবন বদলে দিতে পারে। মানবিক উন্নয়ন ও বৈরিতার অবসান উভয় দিকে আমরা অগ্রগতি অর্জন করেছি বলে বিশ্বাস করি। সিরিয়ার বিবদমান পক্ষগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে যুদ্ধবিরতি কার্যকরের ব্যাপারে একটি টাস্ক ফোর্স কাজ করবে। ওই টাস্ক ফোর্সে নেতৃত্ব দেবে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া। যুদ্ধবিরতির পরিকল্পনাটি উচ্চাভিলাষী বলে স্বীকার করে নিয়েছেন কেরি। তিনি বলেন, প্রতিশ্রুতির প্রতি পক্ষগুলো সম্মান দেখায় কি না, সেটাই হবে সত্যিকারের পরীক্ষা। তবে এই যুদ্ধবিরতি ইসলামিক স্টেট (আইএস) এবং আল-নুসরা ফ্রন্টের জন্য কার্যকর হবে না।
.
এই ঘোষণার পর আবার নতুন করে বাশার আল আসাদ বলেছেন, পুরো সিরিয়া পুনর্দখল না করা পর্যন্ত তিনি যুদ্ধ চালিয়ে যাবেন। যদিও বার্তা সংগঠন এএফপিকে দেয়া একান্ত সাক্ষাত্কারে তিনি স্বীকার করেছেন, তার বিরোধীদের পুরোপুরি পরাস্ত করতে অনেক সময় লাগতে পারে। অন্যদিকে যুদ্ধবিরতির আহ্বানে সাড়া না দিয়ে লড়াই অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছে সিরিয়ার বিদ্রোহী গ্রুপগুলো। কারণ হিসেবে তারা বলছে, প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ সরকারের সমর্থনে রাশিয়া তাদের ওপর বোমাবর্ষণ বন্ধ করবে বলে বিদ্রোহীরা বিশ্বাস করে না। সেই সঙ্গে যুদ্ধবিরতির বিষয়ে বিশ্বের পরাশক্তিগুলোর করা চুক্তির বিষয়ে সংশয় রয়েছে বলে তারা জানিয়েছে। আর রাশিয়ার প্রধানমন্ত্রী দিমিত্রি মেদভেদেভ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, সৌদি আরব ও তার মিত্ররা সিরিয়ায় স্থল সেনা পাঠালে ‘নতুন বিশ্বযুদ্ধ’ শুরু হতে পারে। নতুন বিশ্বযুদ্ধ শুরু না করে সব শক্তির উচিত— সিরিয়া সংঘাত অবসানের জন্য আলোচনার টেবিলে বসা।
.
প্রায় পাঁচ বছর আগে সিরিয়ায় সংঘাত শুরুর পর আসাদকে উত্খাত করতে আমেরিকার নেতৃত্বে পশ্চিমা দেশগুলো অনেক চেষ্টা করেছে। কিন্তু সিরিয়ার যুদ্ধে আসাদের পক্ষে রাশিয়া সম্পৃক্ত হওয়ার পর পরিস্থিতি দ্রুত বদলাতে থাকে। এতদিন পরে যুদ্ধবিরতির বিষয়ে বৃহত্ শক্তিগুলো একমত হওয়ায় সেটি কতটা কার্যকর হবে তা দেখার অপেক্ষায় বিশ্ববাসী।
,
তথ্যসূত্র: ইত্তেফাক, ১৫ফেব্রুয়ারী , ২০১৬।