
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) বিগত ছয় বছরে কয়েক দফা আন্দোলনে শিক্ষা-গবেষণা ব্যাপকভাবে ব্যাহত হয়েছে। আগের দুই উপাচার্যের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে দীর্ঘদিন ক্লাস বর্জন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। এর ফলে প্রায় প্রতিটি বিভাগে চার মাস থেকে দেড় বছরের সেশনজটের সৃষ্টি হয়। শিক্ষক সমিতির নেতারা শিক্ষার্থীদের এই ক্ষতি পুষিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও তারা কথা রাখেননি। ফলে সেশনজটের জাঁতাকলে পিষে যাচ্ছে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন। তাছাড়া শিক্ষক সমিতির দাবির মুখে সপ্তাহে দুইদিন ছুটি ঘোষণার কারণে বাড়ছে সেশনজট। শিক্ষকদের এমন কর্মকাণ্ডে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীরা।
তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত কোর্সে অচলাবস্থা থাকলেও নয়টি বিভাগে সান্ধ্যকালীন কোর্সে নেই জট। এ সব কোর্স নির্বিঘ্নে পরিচালনা করতেই সপ্তাহে দুইদিন ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের।
অনুসন্ধানে জানা যায়, কলা ও মানবিক অনুষদের মধ্যে বাংলা বিভাগ ছাড়া অন্যান্য বিভাগে কমপক্ষে ৫ মাস থেকে ১১ মাসের সেশনজট রয়েছে। সমাজবিজ্ঞান অনুষদে বিভিন্ন বিভাগে রয়েছে ৫-৮ মাসের। জীববিজ্ঞান অনুষদ, গণিত ও পদার্থবিজ্ঞান বিষয়ক অনুষদের প্রতিটি বিভাগে রয়েছে ৪ থেকে ৯ মাসের সেশনজট। বিজনেস স্টাডিজ অনুষদের চারটি বিভাগেই রয়েছে ১ বছরের শেসনজট। এ ব্যাপারে মার্কেটিং বিভাগের ৪১ ব্যাচের শিক্ষার্থী মো. সুমন জানান, ২০১৫ সালে বিবিএ শেষ হলেও এমবিএর ক্লাস চলছে। ১ বছরের কোর্স শেষ হচ্ছে না ২ বছরেও। চলতি বছরের ২৬ মে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীর সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুকে কেন্দ্র করে আন্দোলনের ১৪ বিভাগের ১৯টি ব্যাচের পরীক্ষা স্থগিত হয়, যেটি সেশনজট আরও বাড়িয়ে দেয়। এর আগে ২০১২ সালের ৯ জানুয়ারি ইংরেজী বিভাগের শিক্ষার্থী জুবায়ের হত্যাকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শিক্ষক সমাজব্যানারে উপাচার্যবিরোধী আন্দোলনে নামেন শিক্ষকরা। এরপর থেকেই সেশনজট তীব্র হতে থাকে। ১৭ মে ভিসি শরীফ এনামুল কবির পদত্যাগ করেন। সে বছর ২০ মে অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব নিলে আবারও আন্দোলনে নামে জাবি শিক্ষক সমিতি। সে সময় টানা তিন মাস ক্লাস বর্জন করেন শিক্ষকরা। এ ছাড়া ২০১৪ সালে জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপি-জামায়াতের হরতাল-অবরোধও এ জন্য দায়ী।
তবে অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলাম উপাচার্য হওয়ার পর থেকে শান্ত রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু সেশনজট না কমার পেছনে শিক্ষকদের সেই ক্ষতি পুষিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি রক্ষা না করাকেই দায়ী করছেন সংশ্নিষ্টরা। সপ্তাহে দুদিন ছুটি ঘোষণার পর শিক্ষকরা কর্মঘণ্টা বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিলেও এখন পর্যন্ত তা বাস্তবায়ন হয়নি। দুপুর ১টার পর অধিকাংশ বিভাগে শিক্ষকদের পাওয়া যায় না।
ক্ষোভ প্রকাশ করে সাইদুল হক নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, আগের দুই উপাচার্যের বিরুদ্ধে আন্দোলনে শিক্ষকদের স্বার্থ উদ্ধার হয়েছে। কিন্তু সেশনজটে ১২ হাজার শিক্ষার্থীর জীবন থেকে ১ বছর করে চলে গেছে। অনেক দরিদ্র বাবা-মায়ের কষ্টে উপার্জিত টাকা ক্ষতি হয়েছে।
জানা যায়, নিয়ম অনুযায়ী পরীক্ষা শেষ হওয়ার তিন মাসের মধ্যে ফল ঘোষণা করার কথা। কিন্তু বেশিরভাগ বিভাগে ছয় মাস থেকে ১ বছর পর্যন্ত লেগে যায়। ফল ঘোষণা বিলম্বের বিষয়ে জানতে চাইলে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের দায়িত্বপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. অসিত বরণ পাল বলেন, শিক্ষকরা নির্ধারিত সময় পরীক্ষার খাতা মূল্যায়ন করে জমা না দেওয়ায় ফল প্রকাশে বিলম্ব হয়।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক আবুল হোসেন কথা বলতে অস্বীকৃতি জানান। শিক্ষার্থীদের ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার বিষয়ে শিক্ষক সমিতির তৎকালীন সভাপতি অধ্যাপক অজিত কুমার মজুমদার জানান, আমার সময় যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি। তবে সব শিক্ষক আন্তরিক না হলে সমস্যার সমাধান করা সম্ভব না।
শিক্ষক সমিতির বর্তমান সভাপতি অধ্যাপক ফরিদ আহমেদ বলেন, তখনকার সময়ে শিক্ষক সমিতির সভাপতির প্রতিশ্রুতি সম্বন্ধে বলতে পারব না।
আরো পড়ুন: