সারাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো উন্নয়নে মেগা প্রকল্প পেলো শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সম্প্রতি ৫টি প্রকল্পে পাঁচ হাজার নতুন শিক্ষালয়ের ভবন নির্মাণসহ আরো সাড়ে ৪ হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো উন্নয়নে ২৩ হাজার কোটি উন্নয়ন বরাদ্দ পেয়েছে। পুরো প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করবে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর (ইইডি)। সম্প্রতি তিন হাজার নতুন ভবন এবং ৩২৫০টি ভবন ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণের জন্য প্রায় ১৬ হাজার কোটি টাকার বরাদ্দ পেয়ে দুটি প্রকল্প জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) পাস হয়েছে। এছাড়াও ৩২৩টি সরকারি স্কুলের অবকাঠামো উন্নয়নে ৪ হাজার ৬শ কোটি টাকা এবং ২০০ সরকারি কলেজ উন্নয়নের জন্য ১৮০০ কোটি টাকা অর্থ ছাড়ের সরকারি অর্ডার (জিও) অপেক্ষায়। এসব প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে শিক্ষা প্রকৌশলে অবকাঠামো উন্নয়নে বিপ্লব হবে বল মনে করেন শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা।
তবে এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে স্বচ্ছতা ও কাজের মানের দিকে নজর দেয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ‘নির্বাচিত বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়সমূহের উন্নয়ন’ এবং ‘নির্বাচিত বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়সমূহের ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ’ দুটি প্রকল্প সম্প্রতি একনেক পাস হওয়ার পর সারা দেশে এমপিরা ভিড় জমাচ্ছেন ইইডিতে। দুটি প্রকল্প চলতি অর্থ বছর থেকে আগামী ২০২০ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়িত হবে। দুটি প্রকল্প থেকে প্রত্যেক সংসদ সদস্য ১০টি নতুন এবং ১০টি ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ ভবন নির্মাণের সুযাগ পাবে। আর মাদরাসা প্রকল্পটি অনুমোদন পেলে আরো ৫টি নতুন মাদরাসা ভবন নির্মাণের সুযোগ পাবে।
ইইডির সূত্রে জানা গেছে, একনেকে পাস হওয়ার সবচেয়ে বড় প্রকল্পের আওতায় সারা দেশে মাধ্যমিক স্তরের ৩০০০টি বেসরকারি স্কুলে অবকাঠামো উন্নয়ন হবে। এজন্য ১০ হাজার ৬৪৯টি কোটি বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এই প্রকল্পের আওতায় প্রত্যেক সংসদ সদস্য তার নির্বাচনী এলাকায় ১০টি নতুন ভবন পাবে। এ প্রকল্পের আওতায় ৭টি ক্যাটাগরিতে এই ৩০০০টি বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে নতুন একাডেমিক ভবন নির্মাণ ও আসবাবপত্র দেয়া হবে। প্রতিটি ভবনে টানা বারান্দা, ছেলে ও মেয়েদের জন্য পৃথক টয়লেট, সুপেয় পানি সরবরাহ, মেয়েদের জন্য পৃথক কমন রুম, শিক্ষকদের জন্য একটি কক্ষ, বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিক্ষার্থীদের জন্য আলাদা টয়লেট ও র্যাম্পের ব্যবস্থা থাকবে। শুধু ছেলেদের ও শুধু মেয়েদের স্কুলে ১টি করে টয়লেট ব্লক থাকবে। ঢালু ছাদ ও ছাদে টালির ব্যবস্থা থাকবে। গ্রামের বিদ্যালয়গুলো ৪তলা ফাউন্ডেশনে ৪তলা ভবন, হাওড়বিল ও উপকূলীয় এলাকায় নিচতলা ফাঁকা রেখে ৫ তলা ভিতবিশিষ্ট ৫তলা ভবন, শহর অঞ্চলের জন্য ৬ তলা ভিতবিশিষ্ট ৬তলা ভবন এবং নদী ভাঙন এলাকায় স্থানান্তর যোগ্য স্থাপনা (ট্রাস-টিন) নির্মাণ করা হবে।
প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, সারা দেশে চারতলা ভিত বিশিষ্ট চারতলা ভবন হবে ২১৫০টি, সিটি করপোরেশন এলাকায় ছয়তলা ভিতবিশিষ্ট ছয়তলা ভবন হবে ১০০টি, পাহাড়ি এলাকায় চারতলা ভিতবিশিষ্ট চারতলা ভবন হবে ৫০টি, উপকূলীয় এলাকায় নিচতলা ফাকা রেখে পাঁচতলা ভবন (নিচ তলায় ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র-কাম-শ্রেণিকক্ষ) হবে ১৫০টি এবং কাঠামোতে হাওড় এলাকায় পাঁচতলা ভবন হবে ৫০টি, লবণাক্ত এলাকায় চারতলা ভিত বিশিষ্ট ভবন হবে ১৭৫টি, নদী-ভাঙনকবলিত এলাকা স্থানান্তরযোগ্য সেমিপাকা স্ট্রাকচারে ২৫টি ভবণ নির্মাণ হবে। এসব ভবন নির্মাণ করতে ব্যয় হবে ১০ হাজার ৬৪৯ কোটি টাকা।
ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ প্রকল্পে ৫টি ক্যাটাগরিতে সারা দেশে আরো ৩২৫০টি বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বিদ্যমান একাডেমিক ভবনের ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ ও আসবাবপত্র কেনার জন্য ৫ হাজার ২৩৭ কোটি বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় প্রতিটি ভবনেই টানা বারান্দা থাকবে। দুই, তিন, চার, পাঁচ এবং ছয় তলা ফাউন্ডেশন দিয়ে একতলা ভবন নির্মাণ করা ভবনগুলোর বর্তমানে যত তলা ফাউন্ডেশন আছে তত তলা পর্যন্ত নির্মাণ করা হবে। এখানে শিক্ষার্থী ও ছাত্রীদের জন্য পৃথক টয়লেট ব্লক নির্মাণ স্যানিটেশন ব্যবস্থা, পানি সরবরাহ ও বৈদ্যুতিক কাজ এবং বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিক্ষার্থীদের র্যাম্প এর ব্যবস্থা থাকবে। এই প্রকল্পে প্রতি সংসদ সদস্য নির্বাচনী এলাকায় ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারের জন্য ১০টি করে স্কুলের ভবন পাবেন।
এছাড়াও প্রত্যেক সংসদ সদস্যের জন্য ৫টি করে নতুন মাদরাসা ভবন নির্মাণের জন্য একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এটি একনেকে পাস হওয়ার অপেক্ষায়। এই প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ ধরা হয়েছে ৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। সারা দেশে ৩২৩টি সরকারি স্কুলের জন্য ৪ হাজার ৬০০ এবং ২০০টি সরকারি কলেজের ভবনের অবকাঠামো নির্মাণের জন্য ১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। তবে সরকারি স্কুল এবং কলেজ প্রকল্প এসকেলেটর লাগানোর এটি প্রক্রিয়াধীন হওয়ার এই প্রকল্পের অর্থ ছাড়া হতে দেরি হচ্ছে।
এ ব্যাপারে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী দেওয়ান মো. হানযালা বলেন, সম্প্রতি একনেকে পাস হওয়ার দুটি প্রকল্প দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো রুল মডেল হয়ে থাকবে। স্বাধীনতা পর একসঙ্গে এত বড় প্রকল্প এটিই প্রথম। এছাড়াও শিক্ষায় চলমান প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন হলে শিক্ষার অবকাঠামোয় বিপ্লব ঘটবে। সারা দেশে ২৮ হাজারের বেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভবনের সমস্যা থাকবে না।
তিনি বলেন, এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে আগের চেয়ে এখন অনেক বেশি স্বচ্ছ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হবে। বিকেন্দ্রীকরণ করে এখন জেলা থেকে বিভিন্ন কাজের টেন্ডার দেয়া হয়। ফলে শিক্ষা ভবনে আগের মতো টেন্ডার নিয়ে মারামারি, কাড়াকাড়ি হয় না। মধ্যস্বত্বভোগীরা আর নেই। এই কাজকে এমপি, মন্ত্রীরা ভালো বলছে। পেনশন, গ্রাচুইটি, টেন্ডার সবকিছুই এখন অনলাইনের মাধ্যমে হচ্ছে। এতে একদিকে যেমন দুর্ভোগ কমছে। মধ্যস্বত্বভোগীদের/স্বচ্ছতা থাকছে। প্রধানমন্ত্রীর দিক নির্দেশনায় এগুলো করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
ইইডির তথ্যমতে, গত আট বছরে নান্দনিক ভবন নির্মাণ, আধুনিক ক্লাসরুমসহ অন্যান্য ভৌত অবকাঠামো নির্মাণে বিপ্লব সৃষ্টি করেছে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নির্মাণে এবার অগ্রাধিকার পাচ্ছে পিছিয়ে থাকা ও অনগ্রসর অঞ্চলও। এসব ভবনে থাকছে পরিবেশবান্ধব ও নান্দনিকতার ছোঁয়া। গত সাড়ে আট বছরে সারা দেশে স্কুল, কলেজ ও মাদরাসার ১০ হাজার ১১টি নতুন ভবন নির্মাণ করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর। আরো চলমান রয়েছে দুই হাজার ৪৮৮টি শিক্ষালয়ের ভবন নির্মাণের কাজ।
আরো পড়ুন:
0 responses on "শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো উন্নয়নে ২৩ হাজার কোটি টাকার মেগা প্রকল্প পেলো শিক্ষা মন্ত্রণালয়"