লিখিত প্রস্তুতি সম্ভাবনাময় প্রশ্নঃ সংবিধান
৩৮ তম বিসিএস প্রিলিমিনারি ও লিখিত পরীক্ষা প্রস্তুতি
————
সম্ভাবনাময় প্রশ্নঃ সংবিধান
বিগত পর্বে অনেক সম্ভাবনাময় প্রশ্ন নিয়ে আলোচনা করেছিলাম। তারই ধারাবাহিকতায় আজকের এই প্রশ্ন,যার উত্তরটি সংবিধানের অনুচ্ছেদ সহ একটা পূর্ণাঙ্গ নোট।
বাংলাদেশের সংবিধানে সাংবিধানিক সার্বভৌমত্ব নিশ্চিত হয়েছে কি না -তার যুক্তিসহ বিশ্লেষণ কর (সংবিধানের সংশ্লিষ্ট অনুচ্ছেদ উল্লেখপূর্বক) ।
“”সাংবিধানিক সার্বভৌমত্ব “” কথাটির অর্থ হল সংবিধান পার্লামেন্টের ঊর্ধ্বে স্থান পাবে এবং পার্লামেন্ট সাংবিধানিক সীমাবদ্ধতার মধ্যে থেকে কাজ করবে। যে সকল দেশের সংবিধান লিখিত ও দুষ্পরিবর্তনীয় সেসব দেশে সাংবিধানিক সার্বভৌমত্ব বিদ্যমান।
প্রফেসরস Hood Philips বলেন, “”To say that a constitution is supreme is to describe it’s relation to the lagislature’s power to alter the constitution is either limited or non -existent. “”
সাংবিধানিক সার্বভৌমত্বএর কিছু বৈশিষ্ট্যঃ
১) একটি লিখিত সংবিধান থাকতে হবে।
২) সংবিধানটিকে অবশ্যই দুষ্পরিবর্তনীয় হতে হবে।
৩) এই মর্মে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ বিধান থাকতে হবে যে, সংবিধান দেশের সর্বোচ্চ আইন এবং অন্য কোন আইন সংবিধানের পরিপন্থী হলে তা বাতিল বলে গণ্য হবে।
৪) পার্লামেন্ট সংবিধান কর্তৃক সৃষ্টি হবে এবং সাংবিধানিক সীমাবদ্ধতার মধ্য থেকে আইন প্রণয়ন ক্ষমতা প্রয়োগ করবে।
৫) সাংবিধানিক আইন ও সাধারণ আইনের মাঝে পার্থক্য থাকবে।
৬) একটি নিরপেক্ষ ও স্বাধীন কর্তৃপক্ষ(আদালত) থাকবে বা পার্লামেন্ট কর্তৃক আইনের বৈধতা যাচাই করবে।
বাংলাদেশ সংবিধানে সাংবিধানিক সার্বভৌমত্বঃ
১) বাংলাদেশ সংবিধান একটি লিখিত সংবিধান। ইহা ১৯৭২ সালের ১৬ডিসেম্বর কার্যকর হয়। এটিতে সরকারের ৩টি বিভাগের ক্ষমতা সীমাবদ্ধ করে দেয়া হয়েছে।
২) বাংলাদেশের সংবিধান একটি দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধান। কারণ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানেত ১৪২ নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ইহাতে কেবল সংসদের মোট দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যদের ভোটই সংশোধন করা যায়; কোন সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় সংশোধন করা যায় না।
আবার, কিছু কিছু ক্ষেত্রে (প্রস্তাবনা, ৮নং অনুচ্ছেদে বর্ণিত রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি, ৪৮ এবং ৫৬ নং অনুচ্ছেদে বর্ণিত সরকারের ধরন) সংবিধান সংশোধন করতে হলে সংসদের দুই -তৃতীয়াংশ ভোটে পাশ হওয়ার পরেও গণভোট দেয়ার বিধান আছে। সুতরাং সাংবিধানিক আইন ও সাধারন আইনের মাঝে পার্থক্য নিশ্চিত করা হয়েছে।
৩) বাংলাদেশ সংবিধান সংসদ নয়; সংবিধানে সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কারণ –
প্রথমত, সংবিধানের প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, “”…বাংলাদেশের জনগণের অভিপ্রায়ের অভিব্যক্তি স্বরুপ এই সংবিধানের প্রাধান্য অক্ষুন্ন রাখা এবং ইহার রক্ষন, সমর্থন ও নিরাপত্তাবিধান আমাদের পবিত্র দায়িত্ব। “”
দ্বিতীয়ত, ৭ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, “”প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ এবং জনগণের পক্ষে সে ক্ষমতার প্রয়োগ কেবল এই সংবিধানের অধীন ও কর্তৃত্বে কার্যকর হইবে। “”
তৃতীয়ত, ২৬ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, “”মৌলিক অধিকারের পরিপন্থি কোন আইন সংসদ তৈরি করতে পারবে না “”।
চতুর্থত, ৬৫নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, “”সংসদ সংবিধানের বিধানাবলী সাপেক্ষে আইন প্রণয়ন ক্ষমতা প্রয়োগ করবে। “”
সুতরাং দেখা যায়, পার্লামেন্টকে সংবিধানের অধীন করা হয়েছে।
৪) সংবিধানের ৯৪ ও ৯৫ নং অনুচ্ছেদে নিরপেক্ষ বিচার বিভাগ প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে এবং ১০২ নং অনুচ্ছেদে বিচার বিভাগকে সরকারি যেকোন কাজ বা সংসদ প্রণীত যে কোন আইনের বৈধতা বিচার করার ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। এর প্রকৃত উদাহরন হল ৮ম সংশোধনী মামলার রায়।
সুতনাং উপরের আলোচনা থেকে এটাই প্রমাণিত যে, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানে সাংবিধানিক সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।