লিখিত প্রস্তুতি :: বাংলা (গ্রন্থ সমালোচনা)

লিখিত প্রস্তুতি :: বাংলা (গ্রন্থ সমালোচনা)

ভাষা আন্দোলন ভিত্তিক বইয়ের গ্রন্থ সমালোচনা –
✎✎✎✎ বাজারের অনেক গাইডে সম্ভবত নেই !!
একুশে ফেব্রুয়ারি
জহির রায়হান
অনুপম প্রকাশনী
বায়ান্নের ভাষা আন্দোলনের পটভূমিতে রচিত উপন্যাস। তবে আয়তনের স্বল্পতার কারণে এটিকে উপন্যাস না বলে উপন্যাসিকা বলা যেতে পারে। বড় গল্প বলাটা হবে অধিকতর শ্রেয়। তবে উপন্যাস, উপন্যাসিকা বা বড় গল্প যে নামেই এটিকে ডাকা হোক না কেন, একটা কথা মানতেই হবে যে জহির রায়হানের এই ‘একুশে ফেব্রুয়ারি’ নিঃসন্দেহে বায়ান্নের ভাষা আন্দোলন ও একুশে ফেব্রুয়ারির সেই রক্তঝরা দিনের ঘটনাকে উপজীব্য করে লেখা বাংলা সাহিত্যের অন্যতম সেরা রচনা।
.
শুধু সেরাই নয়, এ বিষয়ের একেবারে প্রথম দিককার রচনাও বটে। পরবর্তিকালে এবং সাম্প্রতিক ও বর্তমান সময়ে সংস্লিষ্ট বিষয়ের ওপর অনেক লেখা হচ্ছে। কবিতা, উপন্যাস, গল্প, ছড়া ইত্যাদি। সেগুলোর অনেকগুলো আবার পরিধিতে বিশালাকার। বিপুল গবেষণালব্ধ তথ্যের সন্নিবেশন ঘটছে সেগুলোতে। একুশে ফেব্রুয়ারি ও তার আগে পরের ঘটনাপ্রবাহের পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনা স্থান পাচ্ছে। কিন্তু জহির রায়হানের ‘একুশে ফেব্রুয়ারি’তে তার কিছুই নেই। নিজের টিপিক্যাল স্টাইলে রচিত একটি রচনা এটি, যেখানে খুব সাদামাটা ভাষায়, সহজ সরলভাবে শুধু কয়েকজন মানুষের কথা বলা হয়েছে। সেসব মানুষের সামগ্রিক চরিত্র নিয়েও অবশ্য বিন্দুমাত্র ঘাঁটাঘাঁটি করেন নি লেখক।
.
স্রেফ একুশে ফেব্রুয়ারির আগের প্রহর ও একুশে ফেব্রুয়ারির দিনটায় কয়েকজন মানুষ ঐ বিশেষ দিনটি নিয়ে কি ভাবছিল, কি কি করছিল, দেশের ক্রান্তিকালে তাদের মনে কি ঝড় চলছিল, ব্যক্তি জীবন ও জাতীয় জীবনের দ্বন্দ্ব তাদের মনে কিরকম দোলাচলের সৃষ্টি করছিল তা কোন অলংকার ছাড়াই তুলে ধরেছেন লেখক।
প্রয়োজনে সেই মানুষগুলোর ব্যক্তিগত জীবনকে একটু একটু করে ছুঁয়ে গেছেন তিনি।
.
ঐ মানুষগুলোর ব্যক্তি সত্ত্বার সাথে একুশে ফেব্রুয়ারির চলমান পরিস্থিতি ঠিক কিভাবে একই সাথে প্রবাহিত হচ্ছিল, আর কিভাবে তাদের জীবনের প্রেক্ষাপট ও সামগ্রিক জীবন এই দুই-ই এক মোহনায় এসে মিলল, কিভাবে নিজেদের অজান্তেই তারা এক অমোঘ লড়াইয়ের সাথে জড়িয়ে পড়ে প্রাণ বিসর্জন দিল – সেসব কথার সাবলীল ধারাবর্ণনা স্থান পেয়েছে এই রচনায়। একুশের চেতনাকে পুঁজি করে, কাব্যধর্মী এক অসামান্য শৈল্পিক দৃষ্টিকোণ থেকে শুরু ও শেষ হওয়া এই রচনা পাঠকের চোখের সামনে একুশে ফেব্রুয়ারির চিত্রকে অতি বাস্তবরূপে হাজির করবে।
.
লেখক, চলচ্চিত্রকার, বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণকারী জহির রায়হানের পরিকল্পিত সিনেমার চিত্রনাট্য অবলম্বনে লেখা চিত্রকাহিনী ‘একুশে ফেব্রুয়ারী’র ভূমিকায় লেখক-সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির লিখেছেন-
.
বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের সম্পর্কে সাধারণভাবে একটি ধারণা রয়েছে এটি বুঝি নিছক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের আন্দোলন। বদরুদ্দীন উমর যদি তিনটি বিশাল খন্ডে ভাষা আন্দোলনের প্রকৃত ইতিহাস (পূর্ববাংলার ভাষা আন্দোলন ও তৎকালীন রাজনীতি) না লিখতেন আমাদের পক্ষে জানা সম্ভব হতো না সেই সময়কার আর্থসামাজিক-রাজনৈতিক অবস্থা বা ভাষা আন্দোলনে শ্রমিক-কৃষকসহ সাধারণ মানুষের সমর্থন ও অংশগ্রগণের এটি। জহির রায়হানের ‘একুশে ফেব্রুয়ারী’ লেখা হয়েছে এই ইতিহাস রচনার আগে। কৃষক-শ্রমিকসহ সাধারণ মানুষের আবেগ ও অংশগ্রহণের এটি তাঁর এই লেখায় রয়েছে। যেহেতু এটি মূল চিত্রনাট্য নয়, সেজন্য বিস্তারিতভাবে না এলেও কৃষকের প্রতিনিধি গফুর এবং শ্রমিকের প্রতিনিধি সেলিম কাহিনীর শুরুতে কৌতূহলী বহিরাগত হলেও তাদের পরিণতি ছাত্রদের দ্বারা সূচীত এই আন্দোলনে ভিন্ন মাত্রা সংযোজন করে। এটি সম্ভব হয়েছে জহির রায়হানের রাজনৈতিক অঙ্গীকারের কারণে। একুশে ফেব্রুয়ারীর কাহিনী রাজনীতিকে অবলম্বন করে গড়ে উঠলেও জহির রায়হানের অপরাপর গল্প উপন্যাসের মতো মানবিক উপাদান ও হার্দিক সম্পর্ক এতে অনুপস্থিত নয়। ফলে রাজনৈতিক হওয়া সত্ত্বেও এটি তত্ত্বগন্ধী বা শ্লোগানাক্রান্ত নয়। বর্ণনায় বরং কাব্যিক ব্যাঞ্জনা রয়েছে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত।

 

Leave a Reply

স্যার, কিভাবে আপনাকে সাহায্য করতে পারি?

Click one of our representatives below

Customer Support
Customer Support

Syeda Nusrat

I am online

I am offline

Technical Support
Technical Support

Ariful Islam Aquib

I am online

I am offline