লিখিত প্রস্তুতি :: আন্তর্জার্তিক বিষয়াবলি – ২

:: প্রিলি প্রশ্ন: স্নায়ুযুদ্ধোত্তর ‘সভ্যতার সংঘাত’ মতবাদটি কে প্রকাশ করেন?
ক) হেনরি কিসিঞ্জার
খ) প্রেসিডেন্ট বুশ
গ) স্যামুয়েল হানটিংটন
ঘ) জন মেজর
উত্তর: গ) স্যামুয়েল হানটিংটন
.
:: স্যামুয়েল পি. হান্টিংটন:: ‘সভ্যতার সংঘাত’ মতবাদদের প্রবক্তা
স্যামুয়েল পি. হান্টিংটন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একজন প্রসিদ্ধ রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক। তিনি নব্বইয়ের দশকে ‘সভ্যতার সংঘাত’ (clash of civilizations) তত্বের জন্ম দেন, যেটি পরবর্তীতে সেপ্টেম্বর ১১-র সন্ত্রাসী হামলার পর তাকে ব্যাপক পরিচিতি এনে দেয়।
.
শীতল যুদ্ধোত্তর বিশ্বের প্রখ্যাত রাস্ট্রবিজ্ঞানী স্যামুয়েল পি হান্টিংটন যে নতুন সংঘাতের তত্ত্ব প্রতিষ্ঠিত করেন, তাকেই তিনি ‘দ্য ক্ল্যাশ অব সিভিলাইজেশনস’ বা ‘সভ্যতার সংঘাত’ বলে অভিহিত করেছেন। হান্টিংটনের মতে, এই সভ্যতার সংকট আদর্শভিত্তিক নয়, ধর্মীয়ও নয়। প্রধানত সাংস্কৃতিক। তবে হান্টিংটনের এই তত্ত্ব বিস্তারিত পড়লে মনে হয়, তিনি এই সংস্কৃতির সংজ্ঞাকে দু’ভাবে দেখেছেন: ধর্মভিত্তিক সংস্কৃতি এবং অঞ্চলভিত্তিক সংস্কৃতি। যে আদর্শিক সংঘাতের কথা তিনি আগামীতে নাকচ করে দিয়েছেন, সেটি হচ্ছে ধনতন্ত্র বনাম সমাজতন্ত্র বা কমিউনিজমের সংগ্রাম।
.
তাই হান্টিংটনের তত্ত্বে শীতল যুদ্ধের সময়কার প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় বিশ্বের অবসান ঘটেছে; এখন মূলত পশ্চিম বিশ্বের সঙ্গে বিভিন্ন সভ্যতার সংঘর্ষ হচ্ছে। তিনি অবশ্য তার এই তত্ত্বের সম্প্রসারণে মনে করেন যে, সাংস্কৃতিক এই সংঘাতের ভিত্তি কোথাও ধর্ম, কোথাও অঞ্চল। বলাবাহুল্য, হান্টিংটন সংস্কৃতি ও ধর্মের মধ্যে যে একটি সরলরৈখিক সমীকরণ সাধন করেন, সেটি সাধারণভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের দিকে দৃস্টি ফেরালে দেখা যাবে, পাকিস্তানিরা এই যে ধর্ম ও সংস্কৃতির মধ্যে একটি সামগ্রিক সম্পর্ক নির্ণয় করার চেস্টা করেছিল, একাত্তরে বাঙালিরা সেই সম্পর্ককে প্রত্যাখ্যান করেছে একটি যুদ্ধের মাধ্যমে। সংস্কৃতির ওপর ধর্মীয় বিশ্বাসের একটি প্রভাব নিশ্চয়ই আছে; কিন্তু সেই প্রভাব এতখানি সামগ্রিক নিশ্চয়ই নয় যেটি ভাষা, শিল্প ও সঙ্গীত এবং প্রাত্যাহিক জীবনায়নে বড় ধরনের ছাপ ফেলতে পারে। হান্টিংটন অবশ্য বলতেই পারেন, একাত্তরের যুদ্ধ তো শীতল যুদ্ধের সময়কার ঘটনা। এখন সেই পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটেছে।

———
.
:: :: হান্টিংটনের ‘ক্ল্যাশ অফ সিভিলাইজেশনস’ বই থেকে ::::
.
:: হান্টিংটন তাঁর বইয়ে ৭ টি সভ্যতার উল্লেখ করেছেন–
সিনিক সভ্যতা (সিনিক সভ্যতা বলতে চীন ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া বোঝায়)
জাপানি,
হিন্দু,
ইসলামী,
পাশ্চাত্য,
ল্যাটিন আমেরিকা ,
আফ্রিকা।
.
:: প্রতিদ্বন্দ্বী সভ্যতাসমূহ :
প্রফেসর হান্টিংটন ইসলাম ও সিনিক সভ্যতাকে পাশ্চাত্যের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী সভ্যতা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। তাঁর মতে এ দুই সভ্যতা ছাড়া অন্যগুলো পাশ্চাত্য সভ্যতার মধ্যে বিলীন/একীভূত হয়ে যাচ্ছে।
সিনিক সভ্যতা বলতে চীন ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার (কোরিয়া, ভিয়েতনাম) জনগণের সভ্যতা বা সাধারণ সংস্কৃতি বোঝায়।
.
:: যেকোন সভ্যতাই নিজেদের শ্রেষ্ঠ হিসেবে বিবেচনা করে :
প্রত্যেক সভ্যতাই নিজেকে পৃথিবীর ‘সভ্যতার কেন্দ্র’ বলে মনে করে থাকে এবং তারা সেভাবেই তাদের সভ্যতার ইতিহাস লিখে থাকে। একথাটি সম্ভবত অন্যান্য সভ্যতার চেয়ে পশ্চিমা/পাশ্চাত্য সভ্যতার জন্য অধিকতর সত্য।
.
:: আধুনিকীকরণের জন্য কি পাশ্চাত্যকরণ অপরিহার্য ?
মোস্তফা কামাল আতাতুর্ক মনে করতেন আধুনিকীকরণ ও পাশ্চাত্যকরণ ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তবে সত্য হলো আধুনিকীকরণ সম্ভব এবং কাংখিতও বটে, তবে এজন্যে পাশ্চাত্যকরণের প্রয়োজন নেই।
.
:: হান্টিংটনের বইয়ে বাংলাদেশ :
দক্ষিণ এশিয়ার প্রসংগে বলতে গিয়ে তিনি এক জায়গায় উল্লেখ করেছেন– পাকিস্তান, বাংলাদেশ এমনকি শ্রীলংকা কোনক্রমেই ভারতকে নির্দেশদাতা দেশ হিসেবে দক্ষিণ এশিয়ায় মেনে নেবে না।
.
:: ইসলাম ও পাশ্চাত্যের সম্পর্ক ও দ্বন্দ্ব :
হান্টিংটন ইসলামের পুনর্জাগরণের ক্ষেত্রে মুসলমান যুবসমাজের ভূমিকা অনন্য বলে রায় দিয়েছেন।
এছাড়া বার্নাড লুইয়ের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন – “” প্রায় এক হাজার বৎসরকাল অর্থাৎ মুসলমানদের পদার্পণ থেকে তুর্কিদের দ্বারা ভিয়েনা জয় পর্যন্ত ইউরোপ সর্বক্ষণের জন্য মুসলমানদের ভয়ে ভীত থাকত। ইসলাম হলো একমাত্র সভ্যতা যেটি পাশ্চাত্যের টিকে থাকাকে অন্তত দু’বার সন্দেহের আবর্তে নিক্ষেপ করেছিলো।
.
এ দ্বন্দ্বের কারণ সম্ভবত দুটো ধর্মের বৈশিষ্ট্যের ভেতর লুকায়িত আছে। মুসলমানরা বিশ্বাস করে যে, ইসলাম হলো একটি পূর্ণাংগ জীবনব্যবস্থা এবং ধর্ম ও রাজনীতি পরস্পর অবিচ্ছিন্ন। অন্যদিকে পশ্চিমা খ্রিস্টধর্মের ধারণা হচ্ছে “”ঈশ্বর”” এবং “”সীজারের”” মধ্যে পার্থক্য করা। অর্থাৎ ধর্ম ও রাজনীতি আলাদা।
.
লেনিনের মতে রাজনীতির কেন্দ্রীয় ইস্যু হলো ইসলামের সংগে পাশ্চাত্যের প্রতিযোগিতা। লেনিন আরো বলেন, দুটি সভ্যতার মধ্যে কোন্টি সত্য আর কোন্টি মিথ্যা সে প্রশ্ন উত্তাপন করা নিরর্থক। যতদিন পর্যন্ত ইসলাম ইসলাম হিসেবে টিকে থাকবে (থাকবে বলেই মনে হয়) এবং পশ্চিমাবিশ্ব ‘পশ্চিমা’ হয়ে টিকে থাকবে, ততদিন এ দুটি বৃহৎ সভ্যতার মধ্যে সম্পর্ক বিগত ১৪শত বছর যেভাবে চলে এসেছে সেভাবেই বজায় থাকবে।
.
:: NB :: নিচের ছবিতে লাইনের ঘনত্বের মাধ্যমে সভ্যতাসমূহের সংঘাতপূর্ণ সম্পর্ক ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। লাইন যত বেশী ঘন বা মোটা তত বেশী সংঘাতপ্রবণ। কম সংঘাতপূর্ণ সম্পর্কের ক্ষেত্রে ঘনত্বও কম।
.
হান্টিংটনের বই থেকে আমাদের যে শিক্ষা নিতে পারি _ আমরা আধুনিক হবো, কিন্তু পাশ্চাত্যকে অন্ধভাবে অনুকরণ করবো না। নিজেদের সংস্কৃতি বাঁচিয়ে রেখে যেটি কিছু কল্যাণকর তাই গ্রহণ করব।

Leave a Reply

স্যার, কিভাবে আপনাকে সাহায্য করতে পারি?

Click one of our representatives below

Customer Support
Customer Support

Syeda Nusrat

I am online

I am offline

Technical Support
Technical Support

Ariful Islam Aquib

I am online

I am offline