লিখিত প্রস্তুতি :: বাংলাদেশ + আন্তর্জার্তিক বিষয়াবলি
:: সম্ভাব্য প্রশ্ন :
১। জিএসপি সুবিধা কি? জিএসপি সুবিধা ফিরে পাবার জন্য সরকারের গৃহীত কর্মসূচী ও অগ্রগতি আলোচনা কর
২। জিএসপি সুবিধা ফিরে পেতে করণীয় কী করণীয় বলে আপনি মনে করেন ? (৩৫ তম বিসিএস)
৩। টিকফা কী ? টিকফা চুক্তিটি কেন হলো? টিকফা চূক্তিতে কী আছে ?
৪। জিএসপি সুবিধা না পেলে টিকফা অর্থহীন – কীভাবে? জিএসপি সুবিধার পাবার প্রশ্নের সাথে টিকফা চুক্তি কিভাবে যুক্ত ?
৫। টিকফা : সমস্যা ও সম্ভাবনা, করনীয় কী – আলোচনা কর
৬। টিকফা চুক্তি ও জিএসপি ইস্যুতে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট সম্পর্ক মূল্যায়ন কর
(NB: ৩৫ তম বিসিএস এ এসেছে, আবারও আসতে পারে)
.
:: লিখিতর সিলেবাস সম্পর্কিত বিষয় (Related Topics) :
বাংলাদেশ বিষয়াবলি = Economy, Foreign Policy and External Relations (Economic Diplomacy, International Trade).
.
আন্তর্জার্তিক বিষয়াবলি = International Economic Relations (International trade, Free trade, FDI), Foreign Relations of Major Powers – USA.
আন্তর্জার্তিক বিষয়াবলি = Section C: Problem-solving (Trade)
..


:: জিএসপি


বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা’র (ডব্লিউটিও) সদস্যভুক্ত অনুন্নত বা এলডিসি দেশসমূহ বিশ্ব বাণিজ্যের ক্ষেত্রে কিছু সুবিধা পেয়ে থাকে। এর অন্যতম একটি সুবিধা হলো – অগ্রাধিকারমূলক বিশেষ বাণিজ্য সুবিধা বা জেনারালাইজড সিস্টেম অব প্রেফারেন্স (জিএসপি) সুবিধা। মূলত শ্রমিক শ্রেণীর স্বার্থ রক্ষার শর্তে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও EU উন্নয়নশীল দেশগুলো থেকে আমদানিকৃত পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকারের ব্যাপারে অগ্রাধিকার বা জিএসপি সুবিধা প্রদান করে থাকে।
..
১৯৭৬ সালে জিএসপি সুবিধা চালু হওয়ার পর থেকেই বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে এই সুবিধা পেয়ে আসছে। তবে বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাক খাত এই সুবিধার আওতাভুক্ত নয়। দোহা নীতি অনুসারে যুক্তরাষ্ট্র স্বল্পোন্নত দেশগুলোর ৯৭ শতাংশ পণ্যের ক্ষেত্রে তাদের বাজারে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার দেয়ার কথা। বাংলাদেশের ৯৭ শতাংশ পণ্যের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র এই সুবিধা দিয়েই রেখেছে। তবে যেসব পণ্য তাতে অন্তর্ভুক্ত আছে তার অধিকাংশই বাংলাদেশ রপ্তানি করে না।জিএসপি সুবিধা পায় এমন সব পণ্যের মধ্যে রয়েছে তামাকজাত দ্রব্য, প্ল্যাস্টিক, সিরামিকের তৈজসপত্র এবং খেলাধুলোর সামগ্রী। পোশাক খাত জিএসপি সুবিধার আওতায় না থাকায় বিশেষ এই কর সুবিধা প্রত্যাহারে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের রপ্তানি তেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেনা।
..
:: জিএসপি সুবিধা স্থগিত :
শ্রমিকদের অধিকার সুরক্ষায় ব্যর্থ হওয়ার অভিযোগ তুলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ২০১৩ সালের জুন মাসে বাংলাদেশের জিএসপি সুবিধা স্থগিত করেন। স্থগিত হওয়ার পর থেকেই বাংলাদেশ জিএসপি সুবিধা পুনর্বহালের লক্ষ্যে বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও তা ফলপ্রসূ হয়নি। সম্প্রতি ওয়াশিংটনে যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য প্রতিনিধির (ইউএসটিআর) নেতৃত্বে বাংলাদেশের জন্য জিএসপি ইস্যুর পর্যালোচনায় বাংলাদেশে গার্মেন্ট কারখানা ভবন ও অগ্নিনিরাপত্তার ক্ষেত্রে অগ্রগতি হয়েছে বলে স্বীকার করা হলেও জিএসপি পুনর্বহাল করার আগে এক্ষেত্রে আরও অনেক কিছু করা প্রয়োজন বলে অভিমত ব্যক্ত করা হয়েছে।
..
:: জিএসপি সুবিধা স্থগিত হওয়ায় প্রভাব :
একক দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি পণ্য রপ্তানি করে। তবে পোশাক খাত জিএসপি সুবিধার আওতায় না থাকায় বিশেষ এই কর সুবিধা প্রত্যাহারে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের রপ্তানি তেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেনা। যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের মোট রপ্তানির মাত্র এক শতাংশ জিএসপির আওতাভূক্ত। কিন্তু বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের আশঙ্কা ইউরোপীয় ইউনিয়ন যদি যুক্তরাষ্ট্রকে অনুসরণ করে জিএসপি সুবিধা আটকে দেয়, তাহলে ইউরোপের বাজারে পোশাক রপ্তানি হুমকিতে পড়বে।
.
এ খাতে জিএসপি বাতিল হলে আর্থিক দিকের চেয়ে বাংলাদেশের ইমেজ ক্ষুণ্ণ হবে বেশি। এদিকে তৈরি পোশাক শিল্পে জিএসপি সুবিধা পেতে কারখানাগুলোয় কমপ্লায়েন্টের বিষয়ে সার্বক্ষণিক নজরদারি রাখা হচ্ছে। বিজিএমইএ এর সূত্র মতে, দেশের বেশিরভাগ গার্মেন্ট কারখানাতেই কমপ্লায়েন্ট বাস্তবায়ন হচ্ছে। বিকল্প সিঁড়ি, শিশু শ্রমিক নিষিদ্ধ, নূন্যতম ওয়েজ বাস্তবায়ন, শ্রমিকদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা সুরক্ষার জন্য কাজ করা হচ্ছে। তবে কমপ্লায়েন্ট নিশ্চিত করার বিষয়ে উদ্যোগ থাকলেও জিএসপি সুবিধা পাওয়া রাজনৈতিক বিষয় বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
..
যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে জিএসপি সুবিধা পাওয়ার এটি বাংলাদেশের জন্য যে একটি স্পর্শকাতর বিষয়- তা বলার অপেক্ষা রাখে না। যুক্তরাষ্ট্রের এ জিএসপি সুবিধা বাতিলের নেতিবাচক প্রভাব দেশের অন্যান্য ক্ষেত্রে পড়াটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। ফলে শুধু আমাদের তৈরি পোশাক শিল্পই হুমকির মুখে পড়বে না, একই সঙ্গে ব্যাংক, বীমা ও নৌপরিবহন খাতও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এর পাশাপাশি এখানে কর্মরত হাজার হাজার শ্রমিকও নিঃসন্দেহে বিপদগ্রস্ত হবে। কাজেই জিএসপি সুবিধা পুনর্বহালের এটি হেলাফেলার দৃষ্টিতে দেখার অবকাশ নেই। দেশের মোট রফতানি আয়ের অন্যূন ৮০ শতাংশ আসে তৈরি পোশাক খাত থেকে। দেশের রফতানিমুখী শিল্প-কারখানাগুলো তীব্র প্রতিযোগিতার সম্মুখীন- এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। এ প্রতিযোগিতা মোকাবেলায় সহায়ক নীতিমালা ও বিভিন্ন প্রণোদনামূলক কর্মসূচি গ্রহণ করার পাশাপাশি জিএসপি সুবিধা পুনর্বহালের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে- এটাই প্রত্যাশা।
.


:: জিএসপি সুবিধা স্থগিত (আপডেট)


২০১৩ সালের ২৪ জুন জিএসপি সুবিধা স্থগিত করার পর তা পুনর্বহালের জন্য যে ১৬টি শর্ত দেওয়া হয়েছিল তার দুই-তিনটি বাদে সবগুলোই পালন করা হয়েছে। বাকি দুই-তিনটিও পঞ্চাশ শতাংশের মতো পরিপালন করা হয়েছে। এরপরও ননকমপ্লায়েন্স কারখানাকে কমপ্লায়েন্স করার জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছে। অথচ বিজিএমইএ এবং বিকেএমইএর সদস্যভুক্ত প্রায় সব কারখানাই কমপ্লায়েন্স। এমনকি ইউএসটিআর, আইএলওসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থার প্রতিনিধিরা পরিদর্শন করে যেসব কারখানাকে ত্রুটিপূর্ণ ঘোষণা করেছেন সেগুলো তাৎক্ষণিকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া সংশোধিত শ্রম আইনে ইপিজেডের ভিতরের কারখানার শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার দেওয়া হয়েছে।
..
——–.

———
:: দুই শর্তে আটকে আছে জিএসপি


শ্রমিক নেতা আমিনুল হত্যাকাণ্ডের বিচার এবং পোশাক কারখানার জন্য ২০০ পরিদর্শক নিয়োগ- এই দুই শর্তেই আটকে আছে জিএসপি পুনর্বহালের সিদ্ধান্ত। সরকার বলছে, শর্ত দুটি বাস্তবায়ন করা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। এর বাইরে দেওয়া ১৪টি শর্তই প্রায় শতভাগ বাস্তবায়ন করা হয়েছে। বাস্তবায়িত উল্লেখযোগ্য শর্তগুলো হচ্ছে- শ্রম আইন সংশোধন, শ্রমিকদের কাজের পরিবেশ উন্নয়ন, শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত, অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা শক্তিশালীকরণ, শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়নের অনুমতি ইত্যাদি। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সূত্রগুলো বলছে, খুব শিগগিরই মার্কিন বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের অগ্রাধিকার প্রবেশ জেনারালাইজড সিস্টেম অব প্রিফারেন্স (জিএসপি) সুবিধার জট খোলার কোনো সম্ভাবনা নেই। জিএসপি স্থগিত হওয়ার দেড় বছর অতিবাহিত হলেও তা পুনর্বহালে সম্মত হয়নি মার্কিন সরকার। ১৬টি শর্তের প্রায় সবগুলো বাস্তবায়নের পরও জিএসপি পুনর্বহাল না করা মার্কিন সরকারের একটা রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। তবে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে জিএসপি সুবিধার জন্য মার্কিন সরকারকে আর অনুরোধ করা হবে না। সরকার মনে করে জিএসপি স্থগিতের পরও বাংলাদেশের রপ্তানি আর্ন কোনো অংশে কমেনি। বরং বিশ্বের অন্য দেশের বাজারে বেড়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তৈরি পোশাক খাতের কোনো পণ্যের ওপর জিএসপি সুবিধা দিত না। ফলে এটার প্রয়োজনও নেই।
..


:: জিএসপি ফিরে পেতে শ্রমিক অধিকার বাড়াতে হবে


যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য বিভাগ জানিয়ে দিয়েছে জিএসপির পুনর্বহাল চাইলে বাংলাদেশকে শ্রমিকের অধিকার এবং নিরাপত্তা বাড়াতে হবে।রানা প্লাজা ধসের পর এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে দুহাজারেরও বেশি পোশাক কারখানার নিরাপত্তা ব্যবস্থা পরিদর্শন করা হয়েছে। বেশ কিছু কারখানা নিরাপত্তা ঝুঁকির কারণে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু মার্কিন বাণিজ্য বিভাগ বলছে, জিএসপি পুনর্বহালের আগে আরো কয়েকশ কারখানায় নিরাপত্তা পরিদর্শন সম্পন্ন করতে হবে।
..


:: জিএসপি পেতে আরও অগ্রগতি লাগবে: যুক্তরাষ্ট্র


রয়টার্স / বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য সুবিধা ফিরে পেতে শ্রমিক অধিকার রক্ষায় বাংলাদেশকে আরো অগ্রগতি অর্জন করতে হবে বলে দেশটির বাণিজ্য প্রতিনিধির দপ্তর থেকে বলা হয়েছে। এ বিষয়ে পর্যালোচনার পর যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে শুক্রবার এ বক্তব্য আসে বলে বার্তা সংগঠন রয়টার্সের এক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। পর্যালোচনায় বাংলাদেশে কারখানার কর্মপরিবেশ এবং শ্রমিক অধিকার রক্ষায় অগ্রগতির কথা বলা হয়েছে।
.
মার্কিন কর্মকর্তাদের পর্যালোচনায় গতবছর বাংলাদেশের দুই হাজারেরও বেশি পোশাক কারখানার নিরাপত্তা পরিস্থিতি পরিদর্শনের এটি উঠে এসেছে। এরপরেও এখনও অনেক কারখানা পরিদর্শনের বাইরে রয়েছে। “শ্রমিকদের অধিকার নিশ্চিত করতে প্রচেষ্টা জোরদার এবং শ্রমিক অধিকার কর্মীদের নির্যাতন ও তাদের প্রতি সহিংসতার খবরের বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নিতেও আমরা সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি,” বলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি মাইকেল ফ্রোম্যান। ওয়াশিংটন জানায়, কারখানাগুলোর কর্ম পরিবেশের উন্নতি এবং শ্রমিকদের সংগঠন করার সুযোগসহ ১৬টি শর্ত পূরণ হলে তাহলেই এ সুবিধা ফেরত দেয়া হবে।
..
এরপর থেকে সরকারও পোশাকখাতের নিরাপত্তা, শ্রমিক অধিকার সুরক্ষা ও তাদের জীবনমানের উন্নয়নে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়। কারখানাগুলোর উন্নত কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করতে সেখানে চালানো হয় যৌথ পরিদর্শন। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে জিএসপি সুবিধায় বাংলাদেশ যে পণ্য বিক্রি করত, তা দেশের ৫০০ কোটি ডলারের রপ্তানির ১ শতাংশের মতো। বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাক এই সুবিধা পায় না।
..


:: জিএসপি সুবিধা না পেলে টিকফা অর্থহীন : বাণিজ্যমন্ত্রী


বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, টিকফা (ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট কো-অপারেশন ফ্রেমওয়ার্ক) চুক্তি করলেও বাংলাদেশের পণ্য যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে অগ্রাধিকারমূলক প্রবেশাধিকার সুবিধা (জিএসপি) পাচ্ছে না। এ সুবিধা না পেলে টিকফা চুক্তি অর্থহীন হয়ে পড়বে। জিএসপি ফিরিয়ে দিতে যুক্তরাষ্ট্রকে পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানান তিনি।
..
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, বিশ্ব বাণিজ্য সংগঠন (ডব্লিউটিও) কাজ শুরু করার পর স্বল্পোন্নত দেশগুলোর (এলডিসি) জন্য উন্নত দেশের বাজারে ডিউটি ফ্রি ও কোটা ফ্রি সুবিধা দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। এর ধারাবাহিকতায় কানাডাসহ বিভিন্ন উন্নত দেশ এ সুবিধা দিয়েছে। আমেরিকা এখন পর্যন্ত দেয়নি। অপরদিকে আমেরিকার বাজারে আমাদের পণ্যে উচ্চ শুল্ক রয়েছে। এদিকে আমরা আমেরিকার সঙ্গে টিকফা চুক্তিও করলাম। এরপরও জিএসপি না পেলে টিকফা অর্থহীন হয়ে পড়বে। তাই বাংলাদেশের পণ্য প্রবেশে জিএসপি সুবিধা ফিরিয়ে দেয়ার এটি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা উচিত যুক্তরাষ্ট্রের।
..
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, আমেরিকা আমাদের রপ্তানির প্রধান বাজার। বিশেষ করে পোশাক খাতের জন্য এ বাজার খুব গুরুত্বপূর্ণ। তবে অতি সমপ্রতি আমেরিকার বাজারে আমাদের রপ্তানির প্রবৃদ্ধি কমে যাচ্ছে। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে জিএসপি সুবিধা স্থগিত করা হয়েছে। অন্য দেশগুলো আমেরিকার বাজারে যে কম শুল্কের সুবিধা পায় তাও পাচ্ছি না। ফলে আমাদের পণ্য অতিরিক্ত প্রতিযোগিতার মুখে পড়ছে।
..
মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে এ সুবিধা দাবি করে আসছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ব্যবসায়িক সহযোগিতা বৃদ্ধির জন্য বাংলাদেশ টিকফা স্বাক্ষর করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন পর্যন্ত বাংলাদেশকে ডিউটি ফ্রি এবং কোটা ফ্রি সুবিধা প্রদান করেনি। গত ২০১৩-২০১৪ অর্থবছরে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করেছে ৫,৫৮৩.৬২ মিলিয়ন ডলার একই সময়ে আমদানি করেছে ৮০১.১০ ডলার। সে হিসেবে বাংলাদেশ ৪,৭৮২.৫২ ডলার বেশি রপ্তানি করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উল্লিখিত ব্যবসায়িক সহযোগিতা বাংলাদেশকে প্রদান করলে সেখানে রপ্তানি আরও বাড়বে। তাছাড়া কমপ্লায়েন্স ইস্যুর কারণেও কিছু প্রতিষ্ঠান চাহিদা অনুযায়ী রপ্তানি করতে পারেনি। এত কিছুর পরও ২০১৪-১৫ অর্থবছরে দেশের রপ্তানি আর্ন ৩৩ বিলিয়ন ডলারের বেশি হবে। আর স্বাধীনতার গোল্ডেন জুবিলীতে বাংলাদেশের রপ্তানি ৫০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে।
..


:: জিএসপি নয় সুপার জিএসপি চাই : আরএমজি


তৈরি পোশাক খাতের পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে শুধু জিএসপি নয়, সুপার জিএসপি সুবিধা আদায়ের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে তৈরি পোশাক খাতের সংগঠন আরএমজি (রেডি মেইড গার্মেন্টস) ক্লাব। সরকারের উদ্দেশে বক্তারা বলেন, উন্নত দেশগুলোর সঙ্গে শুধু জিএসপির সুবিধার জন্য লবিং না করে সুপার জিএসপি সুবিধা আদায়ের জন্য জোর প্রচেষ্টা চালানো উচিত। কারণ এখন আমরা জিএসপি নয় সুপার জিএসটির দাবি জানাচ্ছি। আরএমজির ক্লাবের সমন্বয়ক সুলতানা বেগম বলেন, বাংলাদেশের তৈরি পোশাক সারা বিশ্বে সমাদৃত। অথচ পোশাক রফতানির ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশ কয়েকটি দেশ বাংলাদেশের জিএসপি সুবিধা তুলে নিয়েছে। যেটি অত্যন্ত দুঃখজনক। অবিলম্বে অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্সের কার্যক্রম বন্ধের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্স শ্রমিক ও কারখানার নিরাপত্তার নামে কারখানা বন্ধ করে হাজার হাজার শ্রমিককে বেকার করেছে। এমনকি বন্ধ হয়ে যাওয়া কারখানাগুলো শ্রম আইন অনুযায়ী শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ দিচ্ছে না।
..


:: জিএসপি সুবিধা ফিরে পেতে করণীয়


বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার পরিবেশ তৈরিতে সরকারকেই মুখ্য ভূমিকা পালন করতে হবে। আইনের শাসন, দুর্নীতি দমন, লাল ফিতার দৌরাত্ম্য এবং রাজনৈতিক অস্থিরতার হুমকি কমাতে পারলে বিনিয়োগ-সহায়ক পরিবেশ তৈরি হবে। এছাড়া, তৈরী পোশাক কারখানাগুলোর কর্মপরিবেশ উন্নত করে শ্রমিকদের অধিকার নিশ্চিত করতে সরকারকে প্রধান ভূমিকা রাখতে হবে। তাহলেই বাংলাদেশের রপ্তানি বাড়বে। ব্র্যান্ড বাংলাদেশ বিশ্বের সবচেয়ে চাহিদাসম্পন্ন ব্র্যান্ড। এর মান বজায় রেখে বিশ্বের বাজার ধরতে হবে।
..


:: টিকফা কী ?


টিকফা শব্দটি নতুন। আগে এর নাম ছিল টিফা।‘টিফা’ চুক্তি হলো Trade and Investment Framework Agreements বা সংক্ষেপে TIFA, যেটিকে বাংলায় অনুবাদ করলে হয় — ‘বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সংক্রান্ত কাঠামোগত সমঝোতা’ চুক্তি। ‘টিফা’ চুক্তি নিয়ে কথাবার্তা হচ্ছে গত বারো বছর আগে থেকে। এই চুক্তির খসড়া প্রণয়নের কাজ শুরু হয় ২০০১ সালে। ১৩টি ধারা ও ৯টি প্রস্তাবনা সম্বলিত চুক্তিটির প্রথম খসড়া রচিত হয় ২০০২ সালে। পরে ২০০৪ সালে এবং তারও পরে আবার ২০০৫ সালে খসড়াটিকে সংশোধিত রূপ দেয়া হয়। দেশের বামপন্থি শক্তিসহ অন্যান্য নানা মহলের তীব্র প্রতিবাদের মুখে চুক্তিটি স্বাক্ষর করা এতদিন বন্ধ ছিল। চুক্তির খসড়া প্রণয়নের পর সে সম্পর্কে নানা মহল থেকে উত্থাপিত সমালোচনাগুলো সামাল দেয়ার প্রয়াসের অংশ হিসেবে এর নামকরণের সাথে Co-operation বা সহযোগিতা শব্দটি যোগ করে এটিকে এখন ‘টিকফা’ তথা TICFA বা Trade and Investment Co-operamework Agreement (‘বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতা সংক্রান্ত কাঠামোগত সমঝোতা’ চুক্তি) হিসাবে আখ্যায়িত করার হচ্ছে।
..


:: টিকফা চুক্তিটি কেন ?


উভয় দেশের মধ্যে বন্ধুত্বের বন্ধন দৃঢ়, বাণিজ্য বৃদ্ধি এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক শক্তিশালী করার উদ্দেশ্যেই টিকফা হচ্ছে। বিশ্বের কোনো দেশের সঙ্গেই তা করতে তো বাধা থাকার কথা নয়, নেইও। তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাধা থাকবে কেন। টিকফা চুক্তি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য বৃদ্ধি ও আস্থার সম্পর্ক গড়ে তুলতে সহায়তা করবে এবং বাংলাদেশে বিনিয়োগ বৃদ্ধির পরিবেশ সৃষ্টি করবে। ইতোমধ্যে ৯২টি দেশ ও আঞ্চলিক জোটের সঙ্গে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ চুক্তি স্বাক্ষর করেছে যুক্তরাষ্ট্র। পুরোপুরি মুক্তবাজার অর্থনীতির দিকে ধাবিত হচ্ছে স্বাক্ষরিত দেশগুলো।
..
—–.

————
:: টিকফা চূক্তিতে কী আছে ?


১) উভয় পক্ষের সেবা বাণিজ্যের ক্ষেত্রে অশুল্ক বাধা দূর করা, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) আওতায় মেধাস্বত্ব আইন বাস্তবায়ন, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) মূলনীতি অনুসরণ করে উভয় দেশেরই শ্রম অধিকার বাস্তবায়ন করা এবং পরিবেশের সুরক্ষা ও সংরক্ষণ করতে পরিবেশ আইন মেনে চলা।
২) জাতিসংঘের সদস্য হিসেবে উভয় পক্ষই জাতিসংঘের দুর্নীতিবিরোধী কনভেনশনের প্রতি আনুগত্য দেখাবে। বিশেষ করে কনভেনশনের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্পর্কিত ধারাগুলো বাধ্যতামূলকভাবে অনুসরণ করতে হবে।
৩) দেশীয় ও বৈদেশিক উভয় ক্ষেত্রেই বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ বৃদ্ধির পরিবেশ তৈরি করা হবে, যাতে প্রবৃদ্ধি বাড়ে ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয় এবং তথ্য প্রযুক্তি খাতের বিকাশের পাশাপাশি অর্থনৈতিক উন্নয়নও ত্বরান্বিত হয়।
৪) বাণিজ্য ও বিনিয়োগের জন্য উভয় দেশের মধ্যে একটি উদার ও অনুধাবনযোগ্য পরিবেশ তৈরির কথা বলা হয়েছে। এর ফলে সম্প্রসারিত বাণিজ্য ও বিনিয়োগ হবে এবং এ থেকে লাভবান হবে উভয় দেশ। বাণিজ্য ও বিনিয়োগের পথে বর্তমানে যেসব প্রতিবন্ধকতা এবং রক্ষণশীল উপাদান রয়েছে, সেগুলো কমিয়ে আনা হবে।
৫) চুক্তির ৭ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, এক দেশ আরেক দেশকে লিখিত নোটিশ দিয়ে চুক্তি বাতিল করতে পারবে যে কোন সময়। অর্থাৎ যে পক্ষ চুক্তি বাতিলের নোটিশ দেবে, সেই পক্ষ যদি তা প্রত্যাহার না করে নেয়, তাহলে ১৮০ দিনের মধ্যে চুক্তিটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল হয়ে যাবে।
..


:: আর কোন কোন দেশের সাথে টিকফা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে কী ?


মুলত মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকার দরিদ্র ও সংঘাত ময় দেশগুলো, আসিয়ান দেশগুলো, সাবেক সোভিয়েত ব্লকের দেশগুলো, পাকিস্তান, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, আফগানিস্তান।
..


:: জি এস পি সুবিধার পাবার প্রশ্নের সাথে কি টিকফা চুক্তি যুক্ত ?


টিকফার সাথে জি এস পি সুবিধার কোন সম্পর্ক নেই। দোহা নীতি অনুসারে আমেরিকা স্বল্পোন্নত দেশগুলোর ৯৭% পণ্যের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার দেয়ার কথা যেটাকে সাধারণভাবে জি এস পি সুবিধা বলা হয়। উল্লেখ্য বাংলাদেশের জন্য সমস্ত জি এস পি সুবিধা আপাতত স্থগিত আছে। আমেরিকা ঠিকই বাংলাদেশের ৯৭% পণ্যের ক্ষেত্রে এই সুবিধা দিয়েছিল তবে তাতে ঐসব পণ্য অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিলো যার রপ্তানির পরিমান খুবই কম এবং বাংলাদেশের রপ্তানি সক্ষমতা সামান্য। বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাককে সবসময়েই এর বাইরে রাখা হয়েছে। যেই সব পণ্য জি এস পি সুবিধার আওতায় ছিল সেই সব পণ্যের জন্য জি এস পি সুবিধা থাকা আর না সমান কথা। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের যে গার্মেন্টস পণ্য রফতানি হয় তার ওপর উচ্চহারে শুল্ক বসিয়ে রেখেছে তারা। যুক্তরাষ্ট্রের গড় আমদানি শুল্ক হার শতকরা ১ ভাগের মতো। কিন্তু বাংলাদেশের গার্মেন্টসের ওপর শুল্কহার শতকরা গড়ে ১৫ ভাগ। এই শুল্কহার আন্তর্জাতিক বিধিরও পরিপন্থী। এই শুল্ক এমনিতেই বাতিল হওয়া দরকার। এবছরও বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রকে শুল্কবাবদ প্রদান করেছে প্রায় ৫৬০০ কোটি টাকা। এটা যুক্তরাষ্ট্র থেকে যে ঋণ অনুদান নানাভাবে বাংলাদেশে আসে আসে তার ৬ গুণেরও বেশি। অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে নয়,বাংলাদেশই যুক্তরাষ্ট্রকে অর্থের যোগান দিচ্ছে।
..


:: বাণিজ্য শুল্ক


বাংলাদেশের রাজস্ব আয়ের একটি বড় অংশ আসে বাণিজ্য শুল্ক থেকে। তাই শুল্কমুক্ত বাজার করা হলে দেশের রাজস্ব আয়ের ওপর প্রভাব পড়তে পারে। এজন্য রাজস্ব আয়ের ভিন্ন খাতের উপর জোর দিতে হবে। ১৯৯০ সাল থেকে বাংলাদেশে বাণিজ্য উদারীকরণ বাড়ানোর ফলে আমদানি ও রফতানি উভয়ই বেড়েছে। রফতানি পণ্য ও রফতানির বাজারে কিছুটা বৈচিত্র্য এসেছে। তবে এর মাধ্যমে বাণিজ্য ঘাটতি কমেনি। সমালোচকদের মতে, এই চুক্তিতে উদার বাণিজ্য নীতি, মুক্তবাজার অর্থনীতি এবং মেধাস্বত্ব আইনের বাস্তবায়নের মাধ্যমে উন্নয়নশীল দেশের অর্থনীতিকে নিয়ন্ত্রণের রূপরেখা তুলে ধরা হয়েছে। বাণিজ্য থেকে পাওয়া করের ওপর বাংলাদেশ অতিমাত্রায় নির্ভরশীল। দেশের করের প্রায় ২৪ শতাংশ আসে বাণিজ্য কর থেকে। অন্যান্য দেশে এ হার অনেক কম। তাই শুল্কমুক্ত বাণিজ্য চুক্তির আগে বিকল্প আর্ন বাড়াতে হবে এবং দেশীয় শিল্পের সক্ষমতাও বাড়ানো প্রয়োজন।
..


:: টিকফা: সমস্যা ও সম্ভাবনা


টিকফা চুক্তি স্বাক্ষরিত হলে দেশে মার্কিনি বিনিয়োগ বাড়বে, এটা সত্য কথা। এতে করে আমাদের বাজার ও সেবা খাত উন্মুক্ত হয়ে যাবে মার্কিন বিনিয়োগকারীদের জন্য। ব্যাপক প্রাইভেটাইজেশন ঘটবে, তাতে করে ক্ষতিগ্রস্ত হবে ব্যক্তিগত খাত। টিকফা চুক্তির (প্রস্তাবিত) ৫ ও ১৯ ধারা মতে উভয় দেশ (বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র) বাণিজ্যে বেশ নমনীয় নীতি গ্রহণ করবে এবং ব্যাপক বিনিয়োগের পথ প্রশস্ত করবে। ৮ নম্বর ধারায় ব্যাপক ব্যক্তিগত খাত প্রসারের কথা বলা হয়েছে। এই ধারায় একটি বাণিজ্য ও বিনিয়োগে কমিশন গঠন করার কথাও আছে। এদের কাজ হবে ব্যক্তিগত খাত কিভাবে আরো বিকশিত করা যায়, সে ব্যাপারে উভয় সরকারকে উপদেশ দেওয়া। ৯ নম্বর ধারায় বলা আছে, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে বিনিয়োগ করবে, কিন্তু উৎপাদন খাতে জড়াবে না। অর্থাৎ কোনো পণ্য উৎপাদন করবে না। যুক্তরাষ্ট্রের কম্পানিগুলো বিনিয়োগ করবে বিশেষ করে সেবা খাতে এবং এসব কম্পানিকে ট্যাক্স সুবিধা দিতে হবে। আইনে যদি কোনো প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়, তাহলে বাংলাদেশকে সেই আইন সংশোধন করতে হবে। ফলে স্থানীয় উদ্যোক্তারা মার খাবে। তারা প্রতিযোগিতায় টিকতে পারবে না। চুক্তির ফলে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের কম্পানিগুলোকে নিরাপত্তা দিতে বাধ্য থাকবে। জ্বালানি, গ্যাস, বিদ্যুৎ, বন্দর ব্যবহার, টেলি কমিউনিকেশন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ খাতে বিনিয়োগ বেড়ে যাওয়ায় এসব খাতে সরকারি বিনিয়োগ কমে যাবে। ফলে সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। শিক্ষা খাতে সরকারি বিনিয়োগ কমে গেলে, শিক্ষা খাত পণ্যে পরিণত হবে। উচ্চ শিক্ষা ব্যয়বহুল হয়ে যাবে। এতে করে শিক্ষাক্ষেত্রে এক ধরনের বৈষম্য তৈরি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। স্বাস্থ্য খাতে খরচ বেড়ে যাবে। এসব সেবামূলক খাত থেকে সাধারণ মানুষ যে ‘সেবা’ পেত, তা ধীরে ধীরে সংকুচিত হয়ে আসবে। বিদ্যুৎ, জ্বালানির দাম বেড়ে যাবে। তবে সবচেয়ে ঝুঁকির মুখে থাকবে কৃষি ও আইটি সেক্টর। কৃষিতে সরকার যে ভর্তুকি দেয়, তা আর দিতে পারবে না। বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার দোহা চুক্তিতে বলা হয়েছিল, স্বল্পোন্নত দেশগুলো কৃষিতে ৫ ভাগের বেশি ভর্তুকি দিতে পারবে না। টিকফা চুক্তির ১৮ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, কৃষিতে ভর্তুকির পরিমাণ কমাতে হবে। মজার বিষয় হলো, যুক্তরাষ্ট্র নিজে কৃষিতে ভর্তুকি দেয় ৯ শতাংশ। এখন বাংলাদেশে কৃষি সেক্টরে ভর্তুকি কমানো হলে কৃষিতে মারাত্মক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হবে। কৃষক উৎপাদনে উৎসাহ হারিয়ে ফেলবে। ফলে কৃষি উৎপাদন, বিশেষ করে চাল উৎপাদন হ্রাস পাবে। বাংলাদেশকে এখন চাল আমদানি করতে হয় না। কিন্তু উৎপাদন হ্রাস পেলে মার্কিন কৃষি পণ্যের এক বিশাল বাজার তৈরি হবে বাংলাদেশে। বলা হচ্ছে টিকফা চুক্তি হলে বাংলাদেশের রপ্তানি বাড়বে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে রপ্তানি বৃদ্ধি পাওয়ার আদৌ কোনো সম্ভাবনা নেই। কেননা, অত্যন্ত উচ্চ কর দিয়ে (১৫ দশমিক ৩ ভাগ) বাংলাদেশ তার রপ্তানি বাজার সম্প্রসারিত করেছে। অথচ চীনের মতো বড় অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানিতে বাংলাদেশের চেয়ে কম কর দেয় (মাত্র শতকরা ৩ শতাংশ)। অথচ চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো টিকফা চুক্তিও নেই। বাংলাদেশ বড় সমস্যায় পড়বে মেধাস্বত্ব আইন নিয়ে। বাংলাদেশের ওষুধশিল্প উন্নয়নশীল দেশে নাম করলেও টিকফা চুক্তির পর এই শিল্প এক ধরনের ঝুঁকির মুখে থাকবে। কেননা, ওষুধ কম্পানিগুলো প্যাটেন্ট কিনে কাঁচামাল আমদানি করে সস্তায় ওষুধ তৈরি করে। বিশ্বের ৬০টি দেশে এই ওষুধ রপ্তানি হয়। তখন এই টিকফা চুক্তির ফলে বাংলাদেশের ওষুধ কম্পানিগুলোর প্যাটেন্ট ক্রয় বন্ধ হয়ে যেতে পারে। যদিও ২০১৬ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের জন্য এই সুযোগটি রয়েছে। বাংলাদেশকে ভবিষ্যতে অতিরিক্ত মূল্য দিয়ে মার্কিন কম্পানির লাইসেন্স কিনতে হবে। ওই লাইসেন্স দিয়ে ওষুধ তৈরি করতে হবে। ফলে জীবন রক্ষাকারী ওষুধের দাম বেড়ে যাবে।
.


:: টিকফা চূক্তি : করনীয় কী


জাতীয় স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিয়ে কোনো চুক্তি হলে তা দেশের জন্য বয়ে আনে সর্বনাশের বার্তা। তাই টিকফার ফলে দেশীয় শিল্পের বিকাশের সম্ভাবনা যেন ধ্বংস না হয় সেদিকে সচেতন দৃষ্টি প্রয়োজন। যে কোন চুক্তি স্বাক্ষর হওয়া মানেই সেটা সাথে সাথে বাস্তবায়িত হওয়া নয়। চুক্তি স্বাক্ষরের পরে সেটা স্ব স্ব দেশে প্রয়োজনীয় আইন সংশোধনের মধ্য দিয়ে জেতে হয়। জাতীয়ভাবে চাপ সৃষ্টি করতে পারলে বাংলাদেশে আইন সংশোধনের বিরুদ্ধে তীব্র জনমত তৈরি করা সম্ভব। টিকফার আর্টিকেল সেভেন অনুসারে ১৮০ দিনের লিখিত নোটিশ দিয়ে বাংলাদেশ এই চুক্তি বাতিল করে দিতে পারে। তবে অ্যামেরিকার সাথে হওয়া চুক্তি বাতিল করবার মতো নৈতিক অবস্থান, রাজনৈতিক সদিচ্ছা এবং শক্ত মেরুদণ্ড নেতৃত্বের থাকতে হবে। তবে শেষ বিচারে জনমতের তীব্র উত্তাপ যে কোন গণ বিরোধী ও রাষ্ট্র বিরোধী চুক্তির প্রধান রক্ষা কবচ।
.
.

===
উত্স ও তথ্যসূত্র :
BBC বাংলা ওয়েবসাইট
রয়টার্স ওয়েব
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
পত্রিকার রিপোর্ট এবং আর্টিকেল থেকে সংগৃহীত ও সম্পাদিত
.
শুধু BCS: Our Goal [Largest …] গ্রুপ
BCS Written Campaigner গ্রুপ
এবং Zakir’s BCS specials পেজটির মেম্বারদের জন্য
কার্টেসি ছাড়া অন্য কোন গ্রুপ বা পেজে পোস্ট করা সম্পূর্ণ নিষেধ।
অন্যের বা বান্দার হক নষ্ট করলে আল্লাহ কখনও ক্ষমা করেনা !
.
যে মানুষের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেনা, সে আল্লাহরও কৃতজ্ঞ হয় না। [ আবু দাউদ ]
যে তার ভাইয়ের প্রয়োজন পূরণ করে, আল্লাহ তার প্রয়োজন পূরণ করেন। [ সহীহ বুখারী ]
আল্লাহ ততোক্ষণ বান্দাহর সাহায্য করেন, যতোক্ষণ সে তার ভাইয়ের সাহায্য করে। [ সহীহ মুসলিম ]
“”To accomplish great things, we must not only act, but also dream; not only plan, but also believe.”” – Anatole France

Leave a Reply

স্যার, কিভাবে আপনাকে সাহায্য করতে পারি?

Click one of our representatives below

Customer Support
Customer Support

Syeda Nusrat

I am online

I am offline

Technical Support
Technical Support

Ariful Islam Aquib

I am online

I am offline