লিখিত প্রস্তুতি :: আন্তর্জার্তিক বিষয়াবলি – ৪

সম্ভাব্য প্রশ্ন: (বড়/সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও টিকা)
১। ন্যাম এর উদ্যোগ, প্রতিষ্ঠা ও পেক্ষাপট (বান্দুং সম্মেলন, বেলগ্রেড সম্মেলন) উল্লেখ কর
২। ন্যামের ‘পঞ্চশীল নীতি’ ও প্রবক্তা – সম্পর্কে আলোচনা কর
৩। ন্যাম এর মূলনীতি ও কার্যপ্রণালী বর্ণনা কর
৪। ন্যামের প্রতিষ্ঠাতা পাঁচ বিশ্ব রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে লিখুন।
৫। ন্যাম এর অন্যান্য খুঁটিনাটি তথ্য সম্পর্কে …
.
.
NAM (Non-Aligned Movement)
ন্যাম (জোট নিরপেক্ষ আন্দোলন)
৩য় বিশ্বের দেশসমূহের প্রথম সংগঠন …….
.
.
:: ন্যাম – খুঁটিনাটি তথ্য :
’NAM’ শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেন = ১৯৫৩ সালে ভি কে কৃষ্ণ মেনন, জাতিসংঘে। মেননের বন্ধু জওহরলাল নেহরু ১৯৫৪ সালে ’জোট নিরপেক্ষ’ শব্দটি আবারো ব্যবহার করেন ।
পঞ্চশীল নীতির প্রবক্তা = ভারতের জওহরলাল নেহরু এবং চিনা প্রধানমন্ত্রী চৌ-এন-লাই
ন্যামের কো-অরডিনেটিং বুরো = নিউইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র।
১ম মহাসচিব = মার্শাল টিটো (যুগোস্লোভিয়া)
বর্তমান মহাসচিব = হাসান রুহানি (ইরান)
বর্তমান চেয়ারম্যান = ইরান (সংস্থাটির চেয়ারম্যান সর্বদাই দেশ থাকে, ব্যাক্তি নয়)
বর্তমান সদস্য সংখ্যা = ১২০।
সর্বশেষ সদস্য – আজারবাইজান ও ফিজি।
সর্বশেষ সম্মেলন = ২০১২ সালে ইরানের তেহরানে অনুষ্ঠিত হয়। (১৭ তম)
পরবর্তী সম্মেলন = ২০১৬ সালে ভেনিজুয়েলায় অনুষ্ঠিত হবে।
সিদ্বান্ত গ্রহণ প্রকিয়া = সদস্য রাষ্ট্রের সরকার প্রধানদের ন্যাম সম্মেলনে অংশগ্রহনের মধ্য দিয়ে সকল সিদ্বান্ত গ্রহণ করা হয়।
(By a conference of Heads of State or Government of Non-Aligned Countries)
.
:: বান্দুং সম্মেলন, ১৯৫৫ (উদ্যোগ, প্রতিষ্ঠা ও পেক্ষাপট)
১৯৫৫ সালের এপ্রিলে ইন্দোনেশিয়ার বান্দুং- অনুষ্ঠিত য়ে-বান্দুং কনফারেন্স ছিল ন্যামের ইতিহাসে প্রথম গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। ন্যামের প্রথম সম্মেলনে ২৫ টি দেশ অংশ গ্রহন করে। ন্যাম আসলে নিজস্ব অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক আইডেনটিটি’র অন্বেষার বার্তা শোনায়।
.
এই কনফারেন্সেই ইন্দোনেশিয়ার প্রথম প্রেসিডেন্ট আহমেদ সুকর্ন বলেন,
”অনেক প্রজন্ম ধরেই আমরা পৃথিবীতে ছিলাম বাকহীন। সেই মানুষগুলো, যারা অশেষ দারিদ্র্য ও অবমাননার মধ্যে রয়েছে, তাদের জন্য যারা সিদ্ধান্তগুলো নেয় তাতে তাদেরই স্বার্থ প্রাধান্য পায়”।
.
:: বেলগ্রেড সম্মেলন, ১৯৬১ (উদ্যোগ, প্রতিষ্ঠা ও পেক্ষাপট)
কাগজে কলমে ’জোট নিরপেক্ষের’ জন্মসাল সেপ্টেম্বর,১৯৬১ সাল, স্থান যুগোস্লাভিয়ার বেলগ্রেড; এবং পোশাকী নাম ’জোট নিরপেক্ষ আন্দোলন’ ওরফে ন্যাম অর্জন করে আরো পরে, ১৯৬৪ সালে -মিসরের কায়রোতে অনুষ্ঠিত ৪৭ টি রাষ্ট্রীয় প্রধানদের অংশগ্রহণে পঞ্চম সম্মেলনের সময়ে।
.
:: ন্যামের প্রতিষ্ঠাতা : পাঁচ বিশ্ব রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব
ইন্দোনেশিয়ার প্রথম প্রেসিডেন্ট আহমেদ সুকর্ন, ভারতের প্রথম প্রধাণমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু, যুগোস্লাভিয়ার প্রেসিডেন্ট জোসেফ মার্শাল টিটো, মিসরের দ্বিতীয় প্রেসিডেন্ট জামাল আব্দুল নাসের ও ঘানার প্রেসিডেন্ট ডঃ কোয়ামে নক্রুমা। পাঁচ দেশের এই পাঁচ নেতার সক্রিয় কর্মোদ্যোগ ”পাঁচের উদ্যোগ” নামে পরিচিতি পায়। ন্যাম এশিয়া, আফ্রিকা ও ল্যাটিন আমেরিকার উন্নয়নশীল দেশগুলোর গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা মঞ্চে পরিণত হয়। আকারের দিক দিয়ে বর্তমানে ন্যাম, জাতিসংঘের পরেই, দ্বিতীয় বৃহত্তম আন্তর্জাতিক সংস্থা। ন্যামের কাঠামোগত গঠণ এমন যে নিউইয়র্কে অস্থায়ী ঠিকানা ছাড়া কোন স্থায়ী কার্যালয় এর নেই। অর্থাৎ কাঠামোগতভাবে অত্যন্ত ঢিলেঢালা সংগঠন একটি।
.
:: পঞ্চশীল নীতি :
১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দে উদ্ভাবিত এই পঞ্চশীল নীতিই হল জোট নিরপেক্ষ নীতির মূলকথা। ভারতের জওহরলাল নেহরু এবং চিনা প্রধানমন্ত্রী চৌ-এন-লাই ছিলেন এই নীতির অন্যতম প্রবক্তা । ভারতের জোটনিরপেক্ষ বিদেশনীতি পঞ্চশীলের উপর স্থাপিত ।
.
পঞ্চশীল নীতি গুলো হল :
(ক) প্রতিটি স্বাধীন দেশের ভৌগোলিক অখন্ডতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি পারস্পরিক শ্রদ্ধাশীল হওয়া,
(খ) দ্বন্দ্ব-সংঘাত পরিত্যাগ বা অনাক্রমণ নীতি গ্রহণ করা,
(গ) অন্য কোনো রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ থেকে বিরত থাকা,
(ঘ) পারস্পরিক সাম্য ও সহযোগিতা বৃদ্ধি করা এবং
(ঙ) শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান ও শান্তিপূর্ণ উপায়ে সকল সমস্যার সমাধান করা ।
.
এশিয়া ও আফ্রিকার দেশগুলি এবং ইউরোপীয় রাষ্ট্র যুগশ্লাভিয়াও নির্জোট আন্দোলনে সামিল হন । স্টালিনের সঙ্গে মতভেদের ফলে যুগশ্লাভিয়ার প্রেসিডেন্ট মার্শাল টিটো কমিউনিস্ট ব্লক থেকে বেরিয়ে এসে পশ্চিমি শক্তিগোষ্ঠীর সঙ্গে না গিয়ে জওহরলাল নেহরুর নেতৃত্বে পরিচালিত জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনে যোগদান করেন । তাঁর আমন্ত্রণে জওহরলাল নেহরু ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দের জুলাই মাসে যুগশ্লাভিয়া যান এবং ওই বছরের ডিসেম্বর মাসে মার্শাল টিটো ভারত সফরে আসেন । ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দের ২২ শে ডিসেম্বর প্রচারিত এক যৌথ ঘোষণায় উভয় নেতা জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের প্রতি নিজেদের গভীর আস্থার কথা বর্ণনা করেন । ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দে ভারত-তিব্বত চুক্তির পর তিব্বত ভারতের পঞ্চশীল নীতি মেনে নিয়েছিল ।
.
:: ১৯৫৪ সালের ২৯ এপ্রিল “”শান্তিপুর্ণ সহাবস্থানের পঞ্চশীল নীতি”” এর জন্ম :
“”পরস্পরের ভূভাগ এবং সার্বভৌমত্ব সম্মান করা, পরস্পরকে আগ্রাসন না করা, পারস্পরিক অভ্যন্তরীণ ব্যাপারাদিতে হস্তক্ষেপ না করা, সমতা ও পারস্পরিক উপকারিতা এবং শান্তিপূর্ণসহাবস্থান করা”” এই পাঁচটি মৌলিক নীতি চল্লিশাধিক বছরের আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে আধুনিক আন্তর্জাতিক সম্পর্ক পরিচালনার ব্যাপারে বিশ্বব্যাপী গ্রহণযোগ্য মৌলিক নীতিতে পরিণত হয়েছে।
.
১৯৫৪ সালের ২৯ এপ্রিল স্বাক্ষরিত “”চীনের তিব্বতী অঞ্চল এবং ভারতের মধ্যকার বাণিজ্য ও পরিবহন সংক্রান্ত চীন-ভারত চুক্তি””তে প্রথমে “”শান্তিপুর্ণ সহাবস্থানের পঞ্চশীল নীতি”” আনুষ্ঠানিকভাবে উত্থাপিত হয়েছে। ১৯৫৫ সালের এপ্রিলে চীনের প্রধানমন্ত্রী চৌ আন লাই ইন্দোনেশিয়ার বান্দুংয়ে অনুষ্ঠিত ২৯টি দেশের অংশগ্রহনে এশিয়া-আফ্রিকা সম্মেলন অর্থাত্ বান্দুং সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন। সম্মেলনের চূড়ান্ত ইস্তাহারে উত্থাপিত আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ১০টি মৌলিক নীতির মধ্যে পঞ্চশীল নীতির সমস্ত বিষয়বস্তু অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
.
চীন হচ্ছে “”শান্তিপুর্ণ সহাবস্থানের পঞ্চশীল নীতির”” উদ্যোক্তা অন্যতম, এবং এর বিশ্বস্ত অনুসরণকারী। “”শান্তিপুর্ণ সহাবস্থানের পঞ্চশীল নীতি”” চীনের পররাষ্ট্র ব্যাপারাদির মৌলিক নীতি হিসেবে সংবিধানে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। চীন আর এক শতাধিক দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার দলিলে এই পাঁচটি মৌলিক নীতি স্বীকার করা হয়েছে। বাস্তব অনুশীলন থেকে প্রমাণিত হয়েছে যে, “”শান্তিপুর্ণ সহাবস্থানের পঞ্চশীল নীতি”” হচ্ছে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের মূল নীতি।

Leave a Reply

স্যার, কিভাবে আপনাকে সাহায্য করতে পারি?

Click one of our representatives below

Customer Support
Customer Support

Syeda Nusrat

I am online

I am offline

Technical Support
Technical Support

Ariful Islam Aquib

I am online

I am offline