আসলে স্টাডি রুমে শুধু গাদা গাদা বই নয়। এখানে রাখতে পারেন বসে বা শুয়ে বই পড়ার জন্য প্রয়োজনীয় আসবাব
প্রিয় পাঠক গতকাল আমরা পড়ার পরিবেশের অন্যতম অনুষঙ্গ ‘পড়ার টেবিল’ নিয়ে আলোচনা করেছিলাম। আজকের আলোচনার বিষয় হলো পড়ার পরিবেশের আরেকটি গুরুত্বপূণর্ অনুষঙ্গ ‘পড়ার ঘর’। বসার ঘর বা শোবার ঘরের পরিপাটি নিয়ে কতোই না চিন্তা, কতো না আয়োজন। কোনো দ্বিধা ছাড়াই খরচও করি বেশ। কোন আসবাব কোথায় থাকবে, তার রঙ কি হবে, ঘরে কি কি থাকলে উন্নত রুচির প্রকাশ পাবে তা নিয়ে ভাবনার শেষ নেই। তবে বাড়ির অন্যান্য ঘরের চেয়েও বেশি গুরুত্ব দেয়া উচিত্ পড়ার ঘরকে। আপনার পড়ার প্রতি একান্ত মনোনিবেশ করার জন্য প্রয়োজন শান্ত মনোরম পরিবেশ।
আসলে স্টাডি রুমে শুধু গাদা গাদা বই নয়। এখানে রাখতে পারেন বসে বা শুয়ে বই পড়ার জন্য প্রয়োজনীয় আসবাব। স্টাডি রুমের প্রথম শর্ত হচ্ছে রুমটি হতে হবে নীরব, অতিরিক্ত শব্দ থেকে মুক্ত। পড়ার সময় আর যাই হোক, কোনো হইচই কোলাহল পছন্দ নয় কারও। আরেকটি কথা, পড়ার ঘরে পর্যাপ্ত আলো থাকতে হবে। এই আলো প্রাকৃতিক হলে ভালো। সেক্ষেত্রে পড়ার টেবিলটি জানালার সাইডে রাখতে পারেন। না হলেও ক্ষতি নেই। মনে রাখবেন পড়া হচ্ছে আনন্দের বিষয়। আর আনন্দ নিয়ে আপনি তখনই পড়তে পারবেন যখন বসার জায়গাটি হবে আরামদায়ক। সেক্ষেত্রে স্টাডি রুমের চেয়ার নির্বাচনের সময় স্টাইলের চেয়ে আরামকে প্রাধান্য দিন। এমন চেয়ার নির্বাচন কর যেটি আরামদায়ক ও স্বস্তিকর। কেননা, বই পড়ার সময় কয়েক ঘণ্টা কোথা দিয়ে উড়ে যায় তা কেউই বলতে পারে না। আবার কেউ কেউ তো রাত-দিন এক করে বই পড়েন। টেবিল-চেয়ারের পাশাপাশি ঘরে ড্রয়ারওয়ালা ডেস্ক রাখতে পারেন। এতে মূল্যবান ফাইল বা কাগজপত্র রাখতে পারবেন। সেক্ষেত্রে কাঠের বা প্লাইউডের টেবিল বা ডেস্ক রাখতে পারেন।
অনেকে স্টাডি রুমে পেপার বা ম্যাগাজিন পড়তে ভালোবাসে। সেক্ষেত্রে ফ্লোরে কাঠ, বাঁশ, বেত বা রট আয়রনের ম্যাগাজিন রেক রাখতে পারেন। বাজারে এখন বিভিন্ন ডিজাইন ও দামের ম্যাগাজিন রেক পাওয়া যায়।
বুকসেলফ : স্টাডি রুমের প্রধান অনুষঙ্গ হলো বই ও বইয়ের সেলফ। স্টাডি রুম আর বই থাকবে না তা কি হয়। ঘরভর্তি বই থাকবে তাহলেই না মজা। যে ডিজাইনেরই সেলফ বানান না কেন, তা যেন সহজে পরিষ্কার করা যায় সেদিকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে। কারণ সেলফ পরিষ্কার না থাকলে পোকা-মাকড় তাতে বাসা বানাবে আর পরোক্ষভাবে ক্ষতি হবে বইয়ের। আরেকটি বিষয়, যাদের ঘরে ছোট শিশু আছে, যারা স্টাডি রুমে ঢুকতে পারে এমন বাসায় বুক সেলফ একটু উঁচুতে হওয়াই ভালো। যাতে তা শিশুদের নাগালের বাইরে থাকে।
আলমারিতে পোকার আক্রমণ রুখতে কালোজিরার ছোট ছোট পুঁটলি করে তাকের এককোণে রেখে দিন। এতে বই ভালো থাকবে। বইয়ের তাক কখনও ভেজা কাপড় দিয়ে মুছবেন না। এতে বইয়ে ভেজা ভাব চলে আসতে পারে আর বই দ্রুত নষ্ট হয়ে যাবে। অনেকেই আছেন যারা পোকার হাত থেকে রক্ষা করতে বই রোদে দেন। এটা কখনও করা যাবে না। কারণ এতে বইয়ের পাতা নষ্ট হয়ে যাবে। তাছাড়া ছাপার জন্য এক ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয়, যেটি রোদের তাপে বিবর্ণ হয়ে যাবে। বই পড়ার সময় পাতা মুড়ে রাখা অনেকের অভ্যাস। আসলে এটাকে অভ্যাস না বলে বদঅভ্যাস বলাই ভালো। পাতা মুড়ে রাখলে বই নষ্ট হয়। তাছাড়া বইয়ের ভাজে ফুল, পাপড়ি, লতা এসব রাখা উচিত নয়। এতে বই নষ্ট হয়ে যায়। খাবার সময় বই সামনে রাখবেন না। হঠাত্ করে ঝোল বা খাবার পড়ে বই নষ্ট হতে পারে। খেতে খেতেও বই পড়া ঠিক নয়। এতে পাতায় তেল যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। বই এমনভাবে রাখুন যাতে বাতাস লাগতে পারে।
স্টাডি রুম, এর আসবাব আর বই যাই বলুন না কেন, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতাই বড় কথা। ঘর ছোট হোক বা বড়, আসবাব থাকুক বা না-ই থাকুক, ঘর থাকবে চকচকে।
0 responses on "যেভাবে পড়ার ঘরটি সাজালে সবচেয়ে বেশি মনোযোগ দিতে পারবেন পড়ার মধ্যে"