ভূ-রাজনীতি : দক্ষিণ চীন সাগর নিয়ে সমস্যা

৩৮ তম বিসিএস প্রিলিমিনারি ও লিখিত পরীক্ষা প্রস্তুতি
. ভূ-রাজনীতি : দক্ষিণ চীন সাগর নিয়ে সমস্যা

………
বেনজির অভিযানে দিল্লি, দঃ চীন সাগরে ঢুকল চার ভারতীয় যুদ্ধজাহাজ

===
ভারসাম্যের নীতি আর বোধ হয় নয়। চিনকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ ছোড়ার পথেই এগোল ভারত। ভারতীয় নৌসেনার চারটি যুদ্ধজাহাজ ঢুকে পড়ল দক্ষিণ চিন সাগরে। শনিবার এই ভারতীয় যুদ্ধজাহাজগুলি ওই অঞ্চলে ঢুকেছে। দক্ষিণ চিন সাগরে টহল দেওয়া শুধু নয়, তাকে ঘিরে থাকা বিভিন্ন দেশের বন্দরে গিয়ে নোঙরও করবে ভারতীয় নৌসেনা।
১৮ মে ভারতীয় নৌসেনার এই চার রণতরী রওনা হয় দক্ষিণ চিন সাগরের দিকে। গাইডেড মিসাইল স্টেল্থ ফ্রিগেট অর্থাৎ ক্ষেপণাস্ত্র নিয়ে গোপনে আক্রমণ চালাতে সক্ষম দু’টি যুদ্ধজাহাজ আইএনএস সাতপুরা এবং আইএনএস সহ্যাদ্রিকে পাঠানো হয়েছে। সঙ্গে রয়েছে গাইডেড মিসাইল করভেট গোত্রের বড় যুদ্ধজাহাজ আইএনএস কির্চও। এই তিন জাহাজকে সব রকমের সহায়তা দেওয়ার জন্য গিয়েছে অত্যাধুনিক ফ্লিট সাপোর্ট শিপ আইএনএস শক্তি। নৌসেনা জানিয়েছে, দক্ষিণ চিন সাগর এবং উত্তর-পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরের বিভিন্ন অংশে টহল দেওয়া এবং নজরদারি চালানোর জন্যই পাঠানো হয়েছে এই নৌবহর। প্রতিরক্ষা মন্ত্রক এই অভিযানকে ‘অপারেশনাল ডেপ্লয়মেন্ট’ বা ‘কার্যকরী মোতায়েন’ আখ্যা দিয়েছে। অর্থাৎ নৌসেনা বুঝিয়ে দিয়েছে দক্ষিণ চিন সাগরে এখন নৌবাহর মোতায়েন করার দরকার রয়েছে বলেই চারটি যুদ্ধজাহাজকে পাঠানো হয়েছে। এর আগেও ভারতীয় রণতরী দক্ষিণ চিন সাগরে ঢুকেছে। কিন্তু নৌসেনা বার বারই জানিয়েছে, সেগুলি রুটি যাতায়াত। এই প্রথম ভারতীয় নৌসেনা অনেক ভারী শব্দ ব্যবহার করল। জানাল, দক্ষিণ চিন সাগর এবং উত্তর-পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগারে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য মোতায়েন করা হচ্ছে ভারতীয় নৌবহর।
চিনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য যে ভারত নৌবহর পাঠায়নি, সে বিষয়ে প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের প্রায় সকলেই একমত। কিন্তু ভারত যে নৌবহর পাঠিয়েছে, তাতে পুরোদস্তুর যুদ্ধের প্রস্তুতিই রয়েছে। এর অর্থ কী? ওয়াকিবহাল মহল বলছে, এটা চিনের জন্য কঠোর বার্তা। পুরোদস্তুর রণসাজে সজ্জিত ভারতীয় নৌবহর দক্ষিণ চিন সাগরে দাপিয়ে বেড়াবে এবং আড়াই মাস ধরে ওই সমুদ্রের আশেপাশে বিভিন্ন বন্দরে নোঙর করবে— এটা চিনা আগ্রাসনকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ ছোড়া ছাড়া আর কিছুই নয়।
চিন কিছু দিন আগে থেকে দাবি করতে শুরু করেছে, দক্ষিণ চিন সাগরের সিংহভাগই তাদের নিজস্ব জলসীমা। দখলদারি সুনিশ্চিত করতে দক্ষিণ চিন সাগরের বিভিন্ন অংশে চিন কৃত্রিম দ্বীপও বানিয়েছে। কিন্তু আমেরিকা-সহ বিভিন্ন দেশ চিনের এই আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সরব। দক্ষিণ চিন সাগরএত দিন ধরে আন্তর্জাতিক জলপথ হিসেবেই স্বীকৃত। সেই অঞ্চলকে আচমকা চিন নিজেদের এলাকা বলে দাবি করলেই যে তা মেনে নেওয়া হবে না, সে বার্তা চিনকে দিয়ে দিয়েছে আমেরিকা। তা নিয়ে মার্কিন-চিন হুঁশিয়ারি-পাল্টা হুঁশিয়ারি সমানেই চলছে।
দক্ষিণ চিন সাগরে চিনা আধিপত্য খর্ব করতে ওই সমুদ্রের চার পাশে অবস্থিত বিভিন্ন দেশ, যেমন জাপান, ফিলিপিন্স, ভিয়েতনাম, দক্ষিণ কোরিয়া, মালয়েশিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ অনেক বাড়িয়েছে আমেরিকা। কিন্তু দক্ষিণ চিন সাগর তথা ভারত মহাসাগরীয় অংঞ্চলে চিনকে বাদ দিলে সবচেয়ে বড় শক্তি যে দেশ, সেই ভারতকে বাদ দিয়ে এশিয়ার জলভাগে চিনকে জব্দ করা সম্ভব নয়, তাও আমেরিকা জানে। তাই ভারতকে বার বার যৌথ নৌ-টহলদারির জন্য আহ্বান জানাচ্ছিল আমেরিকা। যৌথ টহলদারিতে গিয়ে চিনের সঙ্গে সরাসরি সঙ্ঘাতের পথ বেছে নেওয়া উচিত হবে কি না, তা নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে ভারত সরকার কিছুটা ইতস্তত করছিল। কিন্তু ভারতীয় নৌসেনার ইস্টার্ন কম্যান্ড চারটি বিশাল যুদ্ধজাহাজকে দক্ষিণ চিন সাগরে মোতায়েন করার জন্য যখনই পাঠিয়েছে, তখনই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে চিনকে এ বার সরাসরিই চ্যালেঞ্জ ছুড়ছে ভারত। অর্থাৎ ওয়াশিংটনের ডাকে সাড়া দিয়ে এ বার দক্ষিণ চিন সাগরে চিনা আগ্রাসন আটকাতে সরাসরিই মাঠে নেমে পড়ল নয়াদিল্লি।
আড়াই মাসের জন্য অভিযানে পাঠানো হয়েছে ভারতের এই নৌবহরকে। প্রথমে ভিয়েতনামে নোঙর করছে ভারতের এই চারটি যুদ্ধজাহাজ। তার পর যাবে ফিলিপিন্স। সেখান থেকে ভারতীয় নৌবহর পৌঁছবে জাপানের সাসেবো। সেখান থেকে দক্ষিণ কোরিয়ার বুসান এবং রাশিয়ার ভ্লাদিভস্তক। সব শেষে ফেরার পথে মালয়েশিয়ার পোর্ট ক্ল্যাঙ। অর্থাৎ চিনা সাগরের সব দিকেই এক বার করে নোঙর করবে ভারতীয় নৌসেনা। প্রত্যেকটি বন্দরে চার দিন করে থাকবে।
ভারতীয় নৌসেনার এই দুঃসাহসিক চ্যালেঞ্জের কোনও প্রতিক্রিয়া এখনও জানায়নি বেজিং। তবে চিনা নৌসেনাও পাল্টা পদক্ষেপ নিতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
.
সূত্র : আনন্দ বাজার পত্রিকা

 

Leave a Reply

স্যার, কিভাবে আপনাকে সাহায্য করতে পারি?

Click one of our representatives below

Customer Support
Customer Support

Syeda Nusrat

I am online

I am offline

Technical Support
Technical Support

Ariful Islam Aquib

I am online

I am offline