“বিসিএস মৌখিক পরীক্ষা প্রস্তুতিঃ
—–
লিখেছেন::::::স ম আজহারুল ইসলাম (সনেট)
৩৪ তম বিসিএস এ এডমিন বিষয়ে সুপারশিতকৃত::::
নিজের অভিজ্ঞতার আলোকে এবং পূর্ববর্তী ক্যাডার দের সাথে কথা বলে, বই পত্র ঘেটে যেটুকু জ্ঞান লাভ করেছি তার আলোকে কিছু দিক নির্দেশনা দেবার চেষ্টা করি ।
১) প্রথমত আপনি কি সাধারণ ক্যাডার এর জন্য টিকেছেন নাকি টেকনিক্যাল এর জন্য নাকি উভয়ের জন্যই ? আপনার রোলের সিরিয়াল কত ?
– সাধারণত বিসিএস এ প্রথমে ইন্টারভিউ শুরু হয় সাধারণ ক্যাডার যাদের তাদের, এরপর উভয় ক্যাডারদের এবং সবশেষে টেকনিক্যাল ক্যাডার হিসেবে চান্স পেয়েছেন যারা তাদের টা সবার শেষে …
মানে ধরেন ৬ হাজার জন যদি লিখিত তে উত্তীর্ন হয়ে থাকেন তাদের মাঝে যদি জেনারেল ৩ হাজার , বোথ ২ হাজার, টেকনিক্যাল ১ হাজার জন হয়ে থাকে তাহলে আগে হবে প্রথম ৩ হাজার জনের (রোলের সিরিয়াল অনুযায়ী), এরপর ২ হাজার জনের , এরপর ১ হাজার জনের ।
এবং এখানে আপনি লিখিত তে কত ভাল করেছেন সে অনুযায়ী ডাকবে না, পিএসসি সাধারণত ১৫-২০ দিন পর পর ২ সপ্তাহের একটা লিস্ট দেয়, প্রতিদিন গড়ে ১৫০-১৮০ জনের ভাইভা হয় ।
এখন আপনি হিসাব করে নিন আপনার রোল লিখিত উত্তীর্নের তালিকায় কত নম্বরে এবং তা থেকে আইডিয়া করে নিন আনুমানিক কবে নাগাদ আপনার ইন্টারভিউ পড়তে পারে ।
ঘাবড়াবেন না, পিএসসি তালিকা দেবার পর অন্তত ৭-১০ দিন পরে আপনার ডাক পড়বে, যত আগে/পিছেই আপনার ক্রম হোক না কেন …
২) আপনাকে প্রস্তুতি নেবার সময় দুইটা জিনিস মাথায় রাখতে হবেঃ
# আপনি কোন ক্যাডার ফার্স্ট-সেকেন্ড-থার্ড চয়েসে রেখেছেন
# আপনি কী জেনারেল/টেকনিক্যাল নাকি বোথ ক্যাডারে টিকেছেন ?
সাধারণত আপনি যদি প্রথমে যে চয়েস গুলো দিয়েছেন আপনার ভাইভা বোর্ডে প্রশ্ন হবে ,আপ্নাকে প্রশ্নকর্তা গণ তার আলোকেই জাজ করতে ট্রাই করবে । তাই যে বিষয়ে প্রথম চয়েস দিয়েছেন সেটার আলোকে খুব ভাল করে প্রস্তুতি নেন …
৩) রিডিং ম্যাটেরিয়ালস কী কী লাগবে ?
– ধরে নিলাম আপনার প্রথম চয়েস বিসিএস এডমিন । আপনার সেজন্য মিনিমাম ৩টা জিনিস কালেকশনে রাখা উচিতঃ
· বাংলাদেশ ও মুক্তিযুদ্ধের আদ্যোপান্তের উপরে একটা বইঃ
(নীলক্ষেতে অনেক রাইটারের বই পাওয়া যায়, অনেক প্রকাশনেরও, বিসিএস এর বই পত্র রাখে এমন যেকোন দোকানেই আপনি পাবেন)
এই বইগুলোতে মোটামুটি ৪৭ থেকে ৭১ এর ঘটনাপ্রবাহ, উল্লেখযোগ্য দিন তারিখ আন্দোলন, নেতাগণের অবদান, মুক্তিযুদ্ধের প্রতি বাইরের বিশ্বের অবস্থান ও তখন কার কী ভূমিকা ছিল এসব নিয়ে বিস্তারিত পাবেন, বংগবন্ধুর জীবনী, জাতীয় চার নেতার জীবনী ও ইনাদের ভূমিকা , মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর সমূহ, সেক্টর কমান্ডার এই তথ্যগুলো এসব বইতে সুন্দরভাবে সাজানো পাবেন ।
· ভাইভার জন্য ডাইজেস্টঃ
প্রফেসর্স/ওরাকল/কনফিডেন্স/এসিউরেন্স সহ অনেক গুলো প্রকাশনীই বের করে । আমার টা ছিল প্রফেসর্স (তাই বলে আমি এটাই কিনতে বলব না , আপনার যেটা ভাল লাগে কিনবেন) । এখানে আপনি সব গুলো ক্যাডারের জন্যই যেটি যা পড়তে হবে তার আইডিয়া পাবেন, অনেক সত্যিকারের ভাইবা র উদাহরণ দেয়া আছে ক্যাডার ভিত্তিক । যে যে সাধারণ প্রশ্নগুলো সব ক্যাডার চয়েসের ক্যান্ডিডেট কেই করতে পারে এখানে তা পাবেন ।
এখানে বলে রাখি, আপনি যেই ক্যাডারেই যান না কেন, আপনাকে বাংলাদেশ বিষয়ে খুব ভাল আইডিয়া থাকতে হবে সেটা প্রশাসনিক হোক, মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক হোক, প্রাকৃতিক কিংবা খনিজ সম্পদ বিষয়ক ই হোক।আরও আপনাকে জানা থাকা লাগবে আপনার নিজ জেলা, বিভাগের ব্যাপারে ।
আপনার জেলা ধরেন সিরাজগঞ্জ, আপনার প্রথম চয়েস এডমিন, আপনাকে ধরে বসতে পারে আপনার জেলার এখন ডিসি কে ?কিংবা আপনি পুলিশ ক্যাডার দিয়েছেন প্রথমে, আপনার জেলার পুলিশ সুপারের নাম জানতে চাইতে পারে … সেই জেলায় কয়টি থানা, কয়টি উপজেলা, আয়তন , উল্লেখযোগ্য নদ নদী এসব নিয়েও প্রশ্ন আসতে পারে …
[একটা ছোট অভিজ্ঞতা শেয়ার করি, আমার দেশের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়, ৩৪ এর ভাইবা দেবার আগে শুনি কয়েকজন কে সেই জেলার সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নিয়ে জিজ্ঞাসা করেছে । একজনের বাড়ি বরিশালে হওয়ায় তাকে বলেছে, “ আপনি জীবনানন্দ দাসের একটা কবিতা শোনান তো” …উনার প্রথম চয়েস কিন্তু ছিল ফরেন ই ( বোঝেন তাহলে, আপনাকে Out of nowhere type যেকোন কিছু জিজ্ঞাসা করে বিপদে ফেলে দিতে চাইবে কিন্তু)
আমি আফসোস করেছি, জীবনানন্দ দাস ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কবি কেন হলেন না ?
যাহোক, ভাইবার আগের রাতে আমি তাই আমার এলাকার চেনাজানা কবি, আল মাহমুদের ‘তিতাস’ এর কিছু লাইন মুখস্ত করে যাই 😛 যাকগে আমাকে কোন কবিতা আবৃত্তি করতে হয় নি পরে ।]
· আপনার প্রথম যে চয়েস তার উপরে বইঃ
আপনি ফরেন/ইকোনমি/সমবায়/পুলিশ/এডমিন যে বিষয়কেই প্রথম চয়েস হিসেবে দেন না কেন, ওরাকল পাবলিকেশন্সে ক্যাডার ভিত্তিক বই পাওয়া যায় (আরও অন্য প্রকাশনীগুলোর ও থাকার কথা)।
আপনি অবশ্যই এটি সংগ্রহ করবেন । এখান থেকে ভাল ধারণা নিতে পারবেন আপনি যেটাকে ফার্স্ট চয়েস দিয়েছেন তার জন্য কী কী পড়তে হবে, আপনাকে কী কী ভাবে ধরতে পারে প্রশ্ন । আপনি নিজেও বুঝতে পারবেন আসলে আপনাকে কী কী অতিরিক্ত জানা লাগবে, কীসের উপরে জোর দিতে হবে ।
এছাড়াঃ
এই ম্যাটেরিয়াল গুলো ছাড়াও আরও যারা এডভান্স তাদের জন্য যার যার ক্যাডার ভিত্তিক আরও কিছু ইলিমেন্ট সংগ্রহ করতে পারেন, যেমন ফরেন এফেয়ার্স ফার্স্ট চয়েস যারা দিয়েছেন, তারা MP3 র আন্তর্জাতিক বিষয়াবলির বই টা কিনতে পারেন, মার্কেট থেকে একটা গ্লোব বা অন্তত দেয়ালে টানানোর বিশ্ব মানচিত্র এবং বাংলাদেশের প্রশাসনিক মানচিত্র কিনবেন ।
যারা পুলিশ ফার্স্ট চয়েস দিয়েছেন তারা পেনাল কোডের উপর কিছু পাঠ্য বই আছে, নীলক্ষেতে খুজলে পেতে পারেন, সেটা কিনতে পারেন । ইকোনমিক চয়েস ওয়ালারা অবশ্যই বিগত বছরের অর্থনৈতিক সমীক্ষা টি সংগ্রহ করবেন। নীলক্ষেতে গত বছরের সালতামামি পাওয়া যাবে কারেন্ট এফেয়ার্সের, সেটা কিনে রাখবেন ।
প্রশাসন ক্যাডারের লোকজন লোকপ্রশাসনের উপরে অনার্সের খুব এলিমেন্টারি লেভেলের কিছু বই কিনতে পারেন যাতে করে কিছু সংজ্ঞা ও প্রশাসনিক কাঠামোর বিভিন্ন স্তরের সম্পর্ক ও ধারণা পেতে পারেন ।
ছোট্ট একটা সংবিধানের বই কিনতে পারেন, কিছু গুরুত্বপুর্ণ ধারা ও অনুচ্ছেদ যাতে শিখে নিতে পারেন ।
আর সবার জন্য কমন হল প্রতি মাসের কারেন্ট এফেয়ার্স টা পড়া, সাথে দৈনিক পত্রিকা পড়বেন । সম্ভব হলে রোজ বাংলা ইংরেজী দুটোই, যদি বা রোজ দুটাই সম্ভব না হয় (অনলাইনে পড়তে পারেন)অন্তত সপ্তাহে একদিন ডেইলি স্টার/ ইন্ডেপেন্ডেন্ট পড়তে পারেন …
যারা প্রথম চয়েস ফরেন এফেয়ার্স দিয়েছেন তারা ডায়েরি মেইন্টেইন কর, সাম্প্রতিক সময়ের যেকোন বড় দুর্যোগ, যুদ্ধ, সন্ধি চুক্তি, বড় উপলক্ষ্য, কোন সামিট এসবের ব্যাপারে নোট করে রাখুন ।
আর হ্যা, সব সময় ই বলে এসেছি, বিসিএস এর পড়াশোনা র কোন বাধাধরা সীমা পরিসীমা নেই, এখানে আপনাকে কত খানি পড়তে হবে তার চেয়েও গুরুত্বপুর্ণ কতখানি ছাড়তে হবে, কারণ আপনি যেটি জানছেন তা তো মাথায় রাখা চাই তাই না ?
আর যেটি জানছেন তাকে ভাইভা বোর্ড পর্যন্ত নিয়ে যাবার চর্চার উপায় হল আলোচনা করা, ২-৩ জন মিলে অনলাইনে হোক, ফোনে হোক আর কোন মুখমুখি আড্ডায় হোক আলোচনা কর, নিজেদের ডায়েরি শেয়ার কর, নোট করে রেখেছেন যেটি তাকে একত্রিত কর ।
ইংরেজীতে কথা বলার অভ্যাস গড়ে তুলুন (এটার উপর ভাইবা তে আপনার সফলতার হার ৬০% নির্ভর করে, মনে রাখবেন, এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব)। আপনার চেহারা সালমান খান/ হৃত্বিকের মতন না হোক, আপনার বাচন ভংগিতে সৌন্দর্য থাকুক, কথা বা উচ্চারণে কোন জড়তা কোন আঞ্চলিক টান কিংবা কোন বিশেষ শব্দ/ বর্ণ উচ্চারণে দুর্বলতা থাকলে এই সময় টা তে কাটিয়ে উঠুন । আর এসবের জন্য আপনাকে পড়লেই হবে না দরজা জানালা আটকে, আলোচনা কর । দরকারে ইউটিউবে খুব ভাল কোন বক্তার চোখ মুখের অভিব্যক্তি দেখুন, ইন্তারভিউ এর বডি ল্যাঙ্গুয়েজ গুলো অনুসরণ করতে ট্রাই কর । আপনার মুখে অযাচিত গাম্ভীর্য কিংবা ভয়ার্ত ভাব দূর কর, আবার একেবারে ড্যাম কেয়ার টাইপ ঔদ্ধত্যও আনবেন না , পরিমিত আত্মবিশ্বাসী হিসেবে উপস্থাপন কর নিজেকে ।
মনে রাখবেন , এখানের এই ২০০ মার্ক্স আপনার জ্ঞান যাচাই এর জন্য না, আপনার স্মার্টনেস, আপনার কনফিডেন্স, আপনি কতটা সুন্দর সিচুয়েশন হ্যান্ডেল করতে পারেন, কতটা সুন্দর করে নিজের জানা কিঙ্গাব অজানাটাকেই উপস্থাপন করতে পারেন সেটার পরীক্ষা, ট্রাস্ট মি ।
এসব নিয়েই আরো আলোচনা হবে, আপাতত রিডিং ম্যাটেরিয়াল গুলো কালেক্ট করে আসুন পড়তে বসা যাক”
0 responses on "বিসিএস মৌখিক পরীক্ষা প্রস্তুতি"