“৩৮ তম বিসিএস ভাইভা প্রস্তুতি! ” (Short tips for viva!)
মোহাম্মদ মঈনুল ইসলাম
সহকারি কমিশনার (কর)
৩৩ তম বি সি এস
.
৩৫ তম বি সি এস লিখিত পরীক্ষা যারা কষ্ট করে শেষ করেছেন তাদের জানাই অভিনন্দন। আশা করছি আপনারা সবাই ভাল লেখার চেষ্টা করেছেন। অনেকেই হয়ত বেশ ভাল লিখেছেন, আর কেউ কেউ অন্তত চেষ্টা তো করেছেন। এবার লিখিত পরীক্ষার কথা ভুলে যান , ভাবুন ভাইভা নিয়ে । যেটি হবার তা তো হয়েই গেছে, এবার ভাইভায় কিছু মার্কস বাড়াতে পারলে মন্দ কি? যদিও আমার এই ছোট্ট জীবনের অভিজ্ঞতায় বলে যে, ভাইভাতে ভাগ্য কিন্তু একটি বিরাট ফ্যাক্টর ।বলতে পারেন প্রভাবক, বা নিয়ামক বা সহায়ক বা আর বেশি কিছু । অনেকেই আছেন যারা ভাগ্যে তেমন একটা বিশ্বাস করেন না,তাদের আমি বিশ্বাস করতে বলছিও না। সবার মতামতকেই আমি সম্মান করি। কিন্তু যারা ভাগ্যে বিশ্বাস করেন আমার মত, তারা অবশ্যই আল্লাহ্ পাক/ স্রষ্টা কে ডাকবেন যিনি এই বিশ্ব বিধাতা, যিনি সব কিছুর মালিক। ভাগ্য যদি আপনার অনুকুল এ থাকে তাহলে কঠিন বা স্পর্শকাতর(sensitive) বোর্ড এ পরেও কিন্তু আপনি ক্যাডার হতে পারেন। অতএব , চেষ্টার ত্রুটি করবেন না। চেষ্টার মালিক আপনি, সাধ্যমত চেষ্টা নিন, বাকিটা আল্লাহ্ ভরসা। আমার ক্ষুদ্র অভিজ্ঞতা থেকে (যেহেতু আমি মাত্র একটি বি সি এস ভাইভা ফেইস করলাম, ৩৩ তম) কিছু পরামর্শ শেয়ার করছি, উপকৃত হলে বাধিত হব-
১। আমি পারবো (try to think, be confident), আমার দ্বারা সম্ভব (yes I can, I can do it,
I can make it.)এইটুকু ভাবার চেষ্টা নিন (ভাবুন যে আপনার চাইতেও কম পরে,কম পেরে কিন্তু ক্যাডার হয়েছেন ,অতএব উনি যদি পারেন, আমি কেন পারবো না।
২। আমি কার বোর্ড এ / আমার ভাগ্যে কার বোর্ড , এইগুলি না ভাবাই ভালো। কারণ আপনি জানেন না যে কার বোর্ড আপনার জন্য ভালো,হতে পারে খুব কঠিন কোন বোর্ড এ পরেও আপনি ক্যাডার, আর কেউ সহজ কোন বোর্ড এ পরেও ক্যাডার হতে পারল না(which one is better? No one knows what is going to happen! So, be smart, confident, fear free, just go for it)
৩। বিগত ৩-৪ টি ( যেমন ৩০, ৩১ , ৩৩ ,৩৪ তম)বি সি এস এর ভাইভায় করা প্রশ্নগুলি সংগ্রহ কর( কার বোর্ড- এ কি ধরনের প্রশ্ন জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, তা আলাদা কর)। just collect, separate, isolate, organize/ re-arrange, then find best answers and memorize. Just commit some specific questions.
৪। বেসিক কিছু প্রশ্নের উত্তর জানতে ভুলবেন না (আপনি যে বোর্ড ই ফেইস করেন না কেন) যেমন-
নিজ নাম?, কেন?, অর্থ? নিজের সম্পর্কে ? (বাংলায় এবং ইংরেজীতে),নিজ জেলা সম্পর্কে, প্রথম পছন্দ( 1st cadre choice), দ্বিতীয় পছন্দ (2nd choice) কি ? কেন?(বাংলায় এবং ইংরেজীতে) আপনার সাবজেক্ট এর সাথে মিল আছে? মিল না থাকলে কেন দিয়েছেন? কিভাবে দেশকে সাহায্য করবেন? দেশ কিভাবে আপনার দ্বারা উপকৃত হবে? ইত্যাদি (বিভিন্ন গাইড বই এ বিস্তারিত দেয়া আছে,আর না বলি)
৫। মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে ভালোভাবে না জেনে ভাইভা বোর্ড এ না যাওয়াই ভালো। আপনারা সবাই আশা করছি কম বেশি মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে বেশ ভালই জানেন( প্রিলি,লিখিত এর সময় পড়েছেন), তারপরেও একটু ঝালিয়ে নিন। ভাইভার পড়াটা একটু আলাদা (যেমন- আপনার জেলা কত নং সেক্টর এ ছিল? কমান্ডার ? এরিয়া? কবে স্বাধীন? মুজিবনগর সরকার এর আদ্যোপান্ত ইত্যাদি)। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আপনাকে প্রশ্ন করা হতেই পারে, সম্ভাবনা ৯০-৯৫ ভাগ ( মুক্তিযোদ্ধার সন্তান না হলেও) । কারণ? যেহেতু মুক্তিযুদ্ধ না হলে আমরা এই স্বাধীন দেশ, আমাদের প্রিয় বাংলাদেশ পেতাম না, হতে পারতাম না বি সি এস ক্যাডার কর্মকর্তা( এতোটা সম্মানিত কেউ), দেশকে প্রতিনিধিত্ব করবার সুযোগ হয়তো কোনদিনই হতো না, হতো না দেশকে নিজ হাতে গড়বার , বিশ্বের বুকে মাথা তুলে দাড় করবার সুযোগ, সেইজন্য মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে প্রশ্ন আসবে এটাই স্বাভাবিক। তাই, আমাদের খুব গভীরভাবে , নিবিড়ভাবে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে জানতে হবে,পড়তে হবে। আর যারা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান/নাতি-নাত্নি তাদের জন্য ভাইভায় মুক্তিযুদ্ধ কেন্দ্রিক প্রশ্ন আসবার সম্ভাবনা ১০০০ ভাগ! অর্থাৎ তাদেরকে প্রশ্ন করা হবেই; দেখা হতে পারে, আপনারা মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে উদাসীন কিনা, মুক্তিযোদ্ধাদের আসলেই মন থেকে শ্রদ্ধা করেন কিনা ইত্যাদি( যেমন – বাবা কত নং সেক্টর এ ছিলেন? সীমানা? কমান্ডার ? মুক্তিযুদ্ধের কাহিনী (বাবার মুখে শোনা ) ? স্বাধীনতার ঘোষণা ?মুজিবনগর? ইত্যাদি।)
৬। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সম্পর্কে ( যতটুকু গভীরভাবে জানা যায়, বিস্তারিত ভাবে)
৭। যে প্রশ্নই পড়ুন বা শিখুন না কেন চেষ্টা করবেন বাংলায় এবং ইংরেজীতে ( উভয়ই) শিখতে। কারণ, আপনি জানেন না যে প্রশ্ন বাংলায় হবে নাকি ইংরেজীতে।
৮। ভাইভার জন্য কিছু বই কিনতে পারেন। বাজারে অনেক ভালো বই পাবেন। কয়েকটা যাচাই করলে নিজেই বুঝতে পারবেন যে কোনটা বেশি ভালো।
৯। অতএব, ঠাণ্ডা মাথায় যতটুকু পারুন, পড়ুন । মাথা সবসময় ঠাণ্ডা রাখুন। বেশি তথ্য জেনে না মনে রাখার চেয়ে কম তথ্য জেনে মনে রাখা ভালো। মনে রাখবেন, ভাইভা তে কেউই সব প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে না( সধারনত), সুতরাং আপনি সব পারবেন, এটা ভুলেও ভাববেন না, আর উত্তর জানা থাকলেও দেখবেন অই সময় মনে আসছে না! পি এস সির সম্মানিত স্যার রাও জানেন যে কেউই সব জান্তা নয়, আপনি সব পারবেন, এটা উনারাও আশা করেন না।কিন্তু কিছু প্রশ্ন উনারা চাহিবেন যে অবশ্যই আপনি পারুন, পারতে আপনাকে হবেই( উনারা চাইছেন যে আপনি এটার উত্তর সঠিক দিন)। না পারলে, উনারা নম্বর অবশ্যই কম দিতে পারেন। অতএব, শুভ কামনা রইল আপনাদের জন্য । ভালো ভাইভা দিন। নিজকে যোগ্য করে গড়ে তুলুন।বি সি এস ক্যাডার কর্মকর্তা হয়ে দেশের জন্য, জাতির জন্য অবদান রাখুন, এই কামনায়। good luck…