নবায়নযোগ্য শক্তির সামাজিক প্রভাব ও সুবিধা : আমাদের সামাজিক জীবনে নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহারের সুদূর প্রসারী প্রভাব রয়েছে। আমাদের দেশে চাহিদার তুলনায় প্রাকৃতিক শক্তি যেমন কয়লা, খনিজ তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুদ অতি নগণ্য। তাই আমাদের শক্তির প্রয়োজন মেটাতে অমূল্য বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় করে বিদেশ থেকে খনিজ তেল, কয়লা আমদানি করতে হয়। কিন্তু আমাদের দেশে যে সকল নবায়নযোগ্য শক্তির উৎস রয়েছে সেগুলো বিশেষ করে বায়োগ্যাস উৎপাদন ও ব্যবহারে পল্লী অঞ্চলের মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে পারলে সহজেই আমাদের পল্লী অঞ্চলের চেহারা বদলে দেওয়া সম্ভব হবে। বায়ুকল ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদনের দিকেও আমরা নজর দিতে পারি। গবেষণার মাধ্যমে সৌরশক্তির ব্যবহার সুলভ করতে পারলে আমাদের শক্তির যাবতীয় প্রয়োজন অফুরন্ত এ উৎস থেকে মেটানো সম্ভব হবে। নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহারের প্রধান সুবিধাই হচ্ছে-এ উৎস শেষ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা নেই। তাছাড়া পরিবেশ দূষণের হাত থেকে দেশকে বাচানো সম্ভব হবে।
শক্তির রূপান্তর
Transformation of energy
শক্তি অহরহ একরূপ থেকে অন্যরূপে রূপান্তরিত হচ্ছে। এ মহাবিশ্বে নানা ঘটনা প্রবাহ চলছে শক্তির রূপান্তর আছে বলে। শক্তি একরূপ থেকে একাধিকরূপে রূপান্তরিত হলেও মহাবিশ্বের মোট শক্তি ভাণ্ডারে কোনো পরিবর্তন হচ্ছে না।মানুষ, কম্পিউটার কিংবা কোনো যন্ত্রকে কোনো কাজ করতে হলে কিংবা কোনো প্রক্রিয়া বা পরিবর্তন সাধন করতে হলে শক্তির রূপান্তরের প্রয়োজন হয়। একরূপের শক্তিকে অন্য রূপের শক্তি উৎপাদনে ব্যবহার করা যেতে পারে। প্রকৃতপক্ষে, একরূপের শক্তি সারাক্ষণই অন্যান্যরূপের শক্তিতে পরিবর্তিত হচ্ছে। এটিই শক্তির রূপান্তর হিসেবে পরিচিত। যখন কেউ গিটার বাজায় তখন কী হয়? শিল্পীর হাতের আঙুলের পেশি শক্তি কম্পমান তারে যান্ত্রিক শক্তিতে রূপান্তরিত হয়ে যেটি সুমধুর মিউজিকরূপে শব্দ শক্তিতে রূপান্তরিত হয়ে আমাদের কানে প্রবেশ করে। যখন কাঠ বা খড়ি পোড়ানো হয়, তখন রাসায়নিক শক্তি মুক্ত হয় এবং তা তাপ ও আলোক শক্তিতে রূপান্তরিত হয়। একটি তড়িৎ কোষের
অভ্যন্তরে রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটে এবং এই সকল বিক্রিয়ার রাসায়নিক শক্তি তড়িৎ শক্তিতে রূপান্তরিত হয় যেটি নানাবিধ কাজে ব্যবহৃত হয়। একরূপের নির্দিষ্ট পরিমাণ শক্তি অন্যরূপে রূপান্তরিত করলে কতটুকু শক্তি পাওয়া যাবে? শক্তির নিত্যতা বা সংরক্ষণশীলতা নীতি থেকে তা জানা যায়। শক্তি যখন একরূপ থেকে অন্যরূপে পরিবর্তিত হয় তখন শক্তির কোনো ক্ষয় হয় না। এক বস্তু যে পরিমাণ শক্তি হারায় অন্য বস্তু ঠিক সেই পরিমাণ শক্তি লাভ করে। প্রকৃতপক্ষে আমরা নতুন কোনো শক্তি সৃষ্টি করতে পারি না বা শক্তি ধ্বংসও করতে পারি না। অর্থাৎ বিশ্বের সামগ্রিক শক্তি ভাণ্ডারের কোনো তারতম্য ঘটে না। এ বিশ্ব সৃষ্টির প্রম মুহূর্তে যে পরিমাণ শক্তি ছিল আজও মহাবিশ্বে সেই পরিমাণ শক্তি বর্তমান। এটাই শক্তির অবিনশ্বরতা বা নিত্যতা বা সংরক্ষণশীলতা।
শক্তির সংরক্ষণশীলতা নীতি : শক্তির সৃষ্টি বা বিনাশ নেই, শক্তি কেবল একরূপ থেকে অন্য এক বা একাধিকরূপে পরিবর্তিত হতে পারে। মহাবিশ্বের মোট শক্তির পরিমাণ নির্দিষ্ট ও অপরিবর্তনীয়।
শক্তির রূপান্তর : আমরা আগেই বিভিনড়ব প্রকার শক্তির কথা বলেছি সেগুলো সকলেই পরস্পরের সাথে সম্পর্কিত। অর্থাৎকোনো একটা থেকে অন্যটাতে পরিবর্তন সম্ভব। এ পরিবর্তনকে শক্তির রূপান্তর বলে। আসলে প্রায় প্রত্যেক প্রাকৃতিক ঘটনাকেই শক্তির রূপান্তর হিসেবে ধরা যেতে পারে। নিচে শক্তির রূপান্তরের কয়েকটি উদাহরণ দেওয়া হলো :
১। যান্ত্রিক শক্তির রূপান্তর : হাতে হাত ঘষলে তাপ উৎপন্ন হয়। এক্ষেত্রে যান্ত্রিক শক্তি তাপ শক্তিতে রূপান্তরিত হয়। কলমের খালি মুখে ফুঁ দিলে যান্ত্রিক শক্তি শব্দ শক্তিতে রূপান্তরিত হয়। পানি যখন পাহাড় পর্বতের উপরে থাকে তখন তাতে বিভব শক্তি সঞ্চিত থাকে। এই পানি যখন ঝরনা বা নদীরূপে উপর থেকে নিচে নেমে আসে তখন বিভব শক্তি গতিশক্তিতে পরিণত হয়। এই পানি প্রবাহের সাহায্যে চাকা ঘুরিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়। এভাবে যান্ত্রিক শক্তি তড়িৎ শক্তিতে রূপান্তরিত হয়।
২। তাপ শক্তির রূপান্তর : বাষ্পীয় ইঞ্জিনে তাপের সাহায্যে বাষ্প উৎপন্ন করে রেলগাড়ি ইত্যাদি চালানো হয়। এখানে তাপ শক্তি যান্ত্রিক শক্তিতে রূপান্তরিত হচ্ছে। বাল্বের ফিলামেন্টের মধ্য দিয়ে তড়িৎ প্রবাহের ফলে তাপ শক্তি আলোক শক্তিতে রূপান্তরিত হয়। দুটি ভিন্ন ধাতব পদার্থের সংযোগস্থলে তাপ প্রয়োগ করলে তাপ তড়িৎ শক্তিতে রূপান্তরিত হয়।
৩। আলোক শক্তির রূপান্তর : হারিকেনের চিমনিতে হাত দিলে গরম অনুভূত হয়। এখানে আলোক শক্তি তাপ শক্তিতে রূপান্তরিত হচ্ছে। ফটো-ভোলটাইক কোষের উপর আলোর ক্রিয়ায় আলোক শক্তি তড়িৎ শক্তিতে রূপান্তরিত হয়। ফটোগ্রাফিক কাগজের উপর আলোর ক্রিয়ায় ফলে আলোক শক্তি রাসায়নিক শক্তিতে রূপান্তরিত হয়।
৪। রাসায়নিক শক্তির রূপান্তর : খাদ্য এবং জ্বালানি যেমন তেল, গ্যাস, কয়লা ও কাঠ হচ্ছে রাসায়নিক শক্তির আধার। রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে খাদ্যের শক্তি আমাদের দেহে মুক্ত হয় এবং অন্য শক্তিতে রূপান্তরিত হওয়ার সময় আমরা দরকারী কাজ করতে পারি। ইঞ্জিনে বা বয়লারে যখন জ্বালানি পোড়ানো হয় তখন শক্তির রূপান্তর ঘটায়। তড়িৎ কোষ ও ব্যাটারিতে রাসায়নিক শক্তি তড়িৎ শক্তিতে রূপান্তরিত হয়। তড়িৎ শক্তি আবার বাতির ফিলামেন্টে আলোক শক্তি ও তাপ শক্তিতে রূপান্তরিত হয়।
৫। তড়িৎ শক্তির রূপান্তর : বৈদ্যুতিক মোটরে তড়িৎ শক্তি যান্ত্রিক শক্তিতে রূপান্তরিত হয়। বৈদ্যুতিক ইস্ত্রি, হিটার ইত্যাদিতে তড়িৎ শক্তি তাপ শক্তিতে রূপান্তরিত হয়। বৈদ্যুতিক বাল্বে তড়িৎ শক্তি আলোক শক্তিতে রূপান্তরিত হয়। টেলিফোন ও রেডিওর গ্রাহক যন্ত্রে তড়িৎ শক্তি শব্দ শক্তিতে রূপান্তরিত হয়। সঞ্চয়ক কোষে তড়িৎ শক্তি রাসায়নিক শক্তিতে রূপান্তরিত হয়। তাড়িতচুম্বকে তড়িৎ শক্তি চৌম্বক শক্তিতে রূপান্তরিত হয়।
৬। নিউক্লীয় শক্তির রূপান্তর : নিউক্লীয় সাবমেরিনে নিউক্লীয় শক্তিকে যান্ত্রিক শক্তিতে রূপান্তরিত করা হয়। নিউক্লীয় বোমার ধ্বংস লীলা নিউক্লীয় শক্তির রূপান্তর ভিনড়ব আর কিছুই নয়। নিউক্লীয় চুল্লীতে নিউক্লীয় শক্তি অন্যান্য শক্তি বিশেষ করে তড়িৎ শক্তিতে রুপান্তরিত হয়ে আজকাল শক্তির চাহিদা অনেকাংশেই পূরণ করে থাকে। বৈদ্যুতিক পাওয়ার স্টেশন থেকে বুঝা যায় শক্তি কীভাবে একরূপ থেকে অন্যরূপে রূপান্তর হয়ে আমরা বাড়ি ঘরে আলো ও তাপ শক্তি পাই। পাওয়ার স্টেশনে কয়লা ও প্রাকৃতিক গ্যাস পুড়িয়ে রাসায়নিক শক্তি থেকে তাপ শক্তি পাওয়া যায়। টার্বাইনের সাহায্যে তাপ শক্তিকে যান্ত্রিক শক্তিতে রূপান্তরিত করা হয় যেটি বৈদ্যুতিক জেনারেটরের কুণ্ডলীকে ঘুরায়। এতে তড়িৎ শক্তি উৎপন্ন হয়। বাড়ি ঘরে, কল কারখানায় বৈদ্যুতিক বাতি ও হিটার তড়িৎ শক্তিকে আলো ও তাপ শক্তিতে রূপান্তরিত করে।
এই লেকচারের পরের পেইজে যেতে নিচের …. তে ক্লিক কর।
পরের পাতাসমুহ >>
0 responses on "বিসিএস প্রিলিমিনারি সাধারণ বিজ্ঞান শক্তির উৎস ও ব্যবহার"