সৌরশক্তিকে শীতের দেশে ঘরবাড়ি গরম করার কাজে ব্যবহার করা হয়। শস্য, মাছ, সবজি শুকানোর কাজে সৌরশক্তি ব্যবহৃত হয়। মাছ শুকিয়ে শুঁটকি তৈরি করে তা বহুদিন সংরক্ষণ করা যায়। সৌরশক্তির আরো উদাহরণ হচ্ছে- সোলার ওয়াটার হিটার, সোলার কুকার ইত্যাদি।
আধুনিক কৌশল ব্যবহার করে তৈরি হয়েছে সৌরকোষ। সৌরকোষের বৈশিষ্ট্য হলো এর উপর সূর্যের আলো পড়লে এ থেকে সরাসরি তড়িৎ পাওয়া যায়। সৌরকোষের নানা রকম ব্যবহার রয়েছে।
১-কৃত্রিম উপগ্রহে তড়িৎ শক্তি সরবরাহের জন্য এ কোষ ব্যবহৃত হয়। এ জন্য কৃত্রিম উপগ্রহ বহুদিন ধরে তার কক্ষপথে ঘুরতে পারে।
২-বিভিন্ন ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি যেমন পকেট ক্যালকুলেটর, পকেট রেডিও, ইলেকট্রনিক ঘড়ি সৌরশক্তির সাহায্যে চালানো হচ্ছে।
৩-বর্তমানে আমাদের দেশেও সৌরশক্তির সাহায্যে অনেক গ্রামে, বাসা-বাড়ি বা অফিসে বিদ্যুৎ শক্তি উৎপাদন করে বিদ্যুতের চাহিদা মেটানো হচ্ছে।
সৌরশক্তি ব্যবহারের সুবিধা হলো এ শক্তি ব্যবহারে পরিবেশ দূষণের সম্ভাবনা কম। এ শক্তি ব্যবহারে বিপদের আশঙ্কা নেই বললেই চলে। সৌরশক্তির সহসা নিঃশেষ হয়ে যাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। এ শক্তির তাই প্রচলিত শক্তি উৎস জীবাশ্ম জ্বালানির বিকল্প হিসেবে ব্যবহারের সম্ভাবনা খুব বেশি।
জলবিদ্যুৎ (যান্ত্রিক শক্তির রূপান্তর): পানি নবায়নযোগ্য শক্তির অন্যতম উৎস। পানির স্রোত ও জোয়ার-ভাটাকে ব্যবহার করে শক্তি উৎপাদন করা যায়। প্রবাহিত পানির স্রোতে বিভিন্ন ধরনের শক্তি আছে যেমন গতিশক্তি ও বিভব শক্তি। পানির প্রবাহ বা স্রোতকে কাজে লাগিয়ে যে তড়িৎ বা বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয় তাকে বলা হয় জলবিদ্যু। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের জলবিদুৎ প্রকল্পে জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য বিভব শক্তি ব্যবহার করা হয়। প্রবাহিত পানির স্রোতকে ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রক্রিয়াটি সহজ। পানির স্রোতের সাহায্যে একটি টার্বাইন ঘোরানো হয়। এই টার্বাইনের ঘূর্ণন থেকেই এখানে যান্ত্রিক শক্তি ও চৌম্বকশক্তির সমন্বয় ঘটানো হয়।
প্রবাহিত পানির স্রোত থেকে যান্ত্রিক শক্তি সংগ্রহ করে চৌম্বক শক্তির সমন্বয়ে তড়িৎ উৎপাদন করা হয় বলে এ ধরণের তড়িতের নাম জলবিদ্যুৎ। আমাদের দেশে কাপ্তাই বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রে পানির বিভব শক্তিকে ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়। নদী বা সমুদ্রের পানির জোয়ার-ভাটার শক্তিকে ব্যবহারের প্রচেষ্টা মানুষ বহুদিন থেকে চালিয়ে যাচ্ছে। জোয়ার-ভাটার শক্তিকে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন যন্ত্র চালনার ব্যাপারটি অনেকদিন আগেই উদ্ভাবিত হয়েছে। ফ্রান্সে জোয়ার-ভাটার শক্তির সাহায্যে তড়িৎ শক্তি প্রকল্প সফলতার সাথে কাজ করছে। বর্তমানে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে জোয়ার-ভাটার শক্তিকে কাজে লাগিয়ে তড়িৎ উৎপাদনের চেষ্টা চলছে।
বায়ু শক্তি : পৃথিবী পৃষ্ঠের তাপমাত্রার পার্থক্যের কারণে বায়ু প্রবাহিত হয়। বায়ু প্রবাহজনিত গতিশক্তিকে আমরা যান্ত্রিক বা তড়িৎ শক্তিতে রূপান্তরিত করতে পারি। শক্তি রূপান্তরের এরূপ যন্ত্রকে বায়ুকল বলে।বায়ু প্রবাহকে কাজে লাগিয়ে প্রাচীনকালের মানুষেরা কুয়া থেকে পানি তোলা, জাহাজ চালানো ইত্যাদি কাজ সম্পাদন করতো। নৌকায় পাল তুলে আজও বায়ু শক্তিকে কাজে লাগানো হয়। বর্তমানে প্রযুক্তি ব্যবহার করে বায়ুকল কাজে লাগিয়ে তড়িৎ উৎপাদন করা হচ্ছে।
ভূ-তাপীয় শক্তি : ভূ-অভ্যন্তরের তাপকে শক্তির উৎস হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। ভূ-অভ্যন্তরের গভীরে তাপের পরিমাণ এত বেশি যে তা শীলাখণ্ডকে গলিয়ে ফেলতে পারে। এ গলিত শীলাকে ম্যাগমা বলে। ভূতাত্ত্বিক পরিবর্তনের ফলে কখনো কখনো এই ম্যাগমা উপরের দিকে উঠে আসে যেটি ভূপৃষ্ঠের খানিক নিচে জমা হয়। এ সকল জায়গা হট স্পট (hot spot) নামে পরিচিত। ভূ-গর্ভস্থ পানি এ হট স্পটের সংস্পর্শে এসে বাষ্পে পরিণত হয়। এই বাষ্প ভূ-গর্ভে আটকা পড়ে যায়। হট স্পটের উপর গর্ত করে পাইপ ঢুকিয়ে উচ্চ চাপে এই বাষ্পকে বের করে আনা যায় যেটি দিয়ে টার্বাইন ঘুরিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব। নিউজিল্যান্ডে এ রকম বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র আছে।
বায়োমাস শক্তি : সৌর শক্তির একটি ক্ষুদ্র ভগ্নাংশ যেটি সবুজ গাছপালা দ্বারা সালোক সংশেল্লেষণ প্রক্রিয়ায় রাসায়নিক শক্তিতেরূপান্তরিত হয়ে বায়োমাসরূপে গাছপালার বিভিন্ন অংশে মজুদ থাকে। বায়োমাস বলতে সেই সব জৈব পদার্থকে বুঝায় যাদেরকে শক্তিতে রূপান্তরিত করা যায়। মানুষসহ অনেক প্রাণী খাদ্য হিসেবে বায়োমাস গ্রহণ করে তাকে শক্তিতে রূপান্তরিত করে জীবনের কর্মকাণ্ড সচল রাখে। বায়োমাসকে শক্তির একটি বহুমুখী উৎস হিসেবে বিবেচনা করা যায়। জৈব পদার্থসমূহ যাদেরকে বায়োমাস শক্তির উৎস হিসেবে ব্যবহার করা যায় সেগুলো হচ্ছে গাছ-গাছালী, জ্বালানি কাঠ,কাঠের বর্জ্য, শস্য, ধানের তুষ ও কুড়া, লতা-পাতা, পশু পাখির মল, পৌর বর্জ্য ইত্যাদি। বায়োমাস প্রধানত কার্বন ও হাইড্রোজেন দ্বারা গঠিত। নবায়নযোগ্য শক্তির অন্যতম উৎস বায়োমাস। বায়োমাস থেকে সহজে উৎপাদন করা যায় বায়োগ্যাস। এ গ্যাস আমরা প্রাকৃতিক গ্যাসের বিকল্প হিসেবে রান্নার কাজেএমনকি বিদ্যুৎ উৎপাদনের কাজেও ব্যবহার করতে পারি। এর উৎপাদন পদ্ধতিও বেশ সহজ। একটি আবদ্ধ পাত্রের মধ্যে গোবর ও পানির মিশ্রণ ১ : ২ অনুপাতে রেখে পঁচানো হলে বায়োগ্যাস উৎপন্ন হয়। যেটি নলের সাহায্যে বেরিয়ে আসে। এ গ্যাস রান্নার কাজে ব্যবহার করা যায়। ৪/৫ জনের একটি পরিবারের রান্না ও বাতি জ্বালানোর গ্যাসের জন্য ২/৩ টি গরুর গোবরই যথেষ্ট।
নিউক্লীয় শক্তি : নিউক্লীয় বিক্রিয়ায় উৎপন্ন শক্তি ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায়। যে নিউক্লীয় বিক্রিয়ায় প্রাপ্ত শক্তিকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহার করা হয় সেই বিক্রিয়াকে বলা হয় নিউক্লীয় ফিশন। এতে ইউরেনিয়ামের সাথে নির্দিষ্ট শক্তির নিউট্রনের বিক্রিয়া ঘটনো হয়। নিউক্লীয় চুল্লীতে এই বিক্রিয়া ঘটনো হয়। নিউক্লীয় বিক্রিয়ায় সাধারণত পদার্থ তথা ভর শক্তিতে রূপান্তরিত হয়। অবশ্য নিউক্লীয় বিক্রিয়ায় মোট ভরের কেবল একটি ক্ষুদ্র ভগড়বাংশ শক্তিতে রূপান্তরিত হয়। পদার্থ শক্তিতে রূপান্তরিত হলে যদি ঊ পরিমাণ শক্তি পাওয়া যায়, তাহলে
E =mc2
এখানে m হচ্ছে শক্তিতে রূপান্তরিত ভর এবং c হচ্ছে আলোর বেগ যেটি 3 x 108 m s-1 এর সমান।
এই লেকচারের পরের পেইজে যেতে নিচের …. তে ক্লিক কর।
পরের পাতাসমুহ >>
0 responses on "বিসিএস প্রিলিমিনারি সাধারণ বিজ্ঞান শক্তির উৎস ও ব্যবহার"