পর্যাবৃত্ত গতি, স্পন্দন বা ছন্দিত গতি
Periodic motion, oscillatory or harmonic motion
পর্যাবৃত্ত গতি : কোনো গতিশীল বস্তুকণার গতি যদি এমন হয় যে, এটি এর গতিপথের কোনো নির্দিষ্ট বিন্দুকে নির্দিষ্ট সময় পরপর একই দিক থেকে অতিক্রম করে তবে সেই গতিকে পর্যাবৃত্ত গতি বলে। ঘড়ির কাঁটা এবং বৈদ্যুতিক পাখার গতি বৃত্তাকার পর্যাবৃত্ত গতি। স্প্রিং এর সংকোচন ও প্রসারণের গতি রৈখিক পর্যাবৃত্ত গতি। পর্যাবৃত্ত গতিসম্পনড়ব কোনো বস্তুর একটি পূর্ণ পর্যায় সম্পনড়ব করতে যে সময় লাগে তাকে পর্যায় কাল বলে।
স্পন্দন গতি : পর্যাবৃত্ত গতিসম্পন্ন কোনো কণা যদি তার পর্যায় কালের অর্ধেক সময় যে দিকে চলে, বাকী অর্ধেক সময় তার বিপরীত দিকে চলে তবে সেই গতিকে স্পন্দন গতি বলে। একটি স্প্রিংকে কোন দৃঢ় অবলম্বন থেকে ঝুলিয়ে দিয়ে তার নিচের প্রান্তে একটি বস্তু আটকানো হলে, এবার যদি বস্তুটিকে একটু খানি ট্রেনে ছেড়ে দেওয়া যায়, তাহলে বস্তুর উপর-নিচ দুলতে থাকবে। বস্তুটির এই গতি হলো স্পন্দন গতি বা দোলন গতি বা কম্পন গতি। সরল দোলকের গতি, সুরশলাকার কম্পনের গতি স্পন্দন গতি।
প্রতিধ্বনি
Echos
নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে শব্দ করলে কিছুক্ষণ পর সেই শব্দের পূনরাবৃত্তি শোনার অভিজ্ঞতা হয়তো আমাদের অনেকেরই আছে। পাহাড় বা দালানের কাছে জোরে শব্দ করলে অনুরূপ ঘটনা ঘটে। বড় খালি ঘরের একপ্রান্তে ধ্বনি করলে কিছুক্ষণ পর ঠিক সেই শব্দ শোনা যায়। এসব ঘটনা শব্দের প্রতিফলনের জন্য ঘটে। যখন কোনো শব্দ মূল শব্দ থেকে আলাদা হয়ে মূল শব্দের পুনরাবৃত্তি করে, তখন ঐ প্রতিফলিত শব্দকে প্রতিধ্বনি বলে। সহজ কথায় প্রতিফলনের জন্য ধ্বনির পুনরাবৃত্তিকে প্রতিধ্বনি বলে।
প্রতিধ্বনির ব্যবহার
Uses of echo
কূপের গভীরতা নির্ণয় : প্রতিধ্বনির সাহায্যে খুব সহজে কূপের মধ্যে পানির উপরিতল কত গভীরে আছে তা নির্ণয় করা যায়। কূপের উপরে কোনো শব্দ উৎপন্ন করলে সেই শব্দ পানি পৃষ্ঠ থেকে প্রতিফলিত হয়ে ফিরে এলে প্রতিধ্বনি শোনা যায়।এখন শব্দ উৎপন্ন করা ও সেই শব্দের প্রতিধ্বিনি শোনার মধ্যবর্তী সময় থামা ঘড়ির সাহায্যে নির্ণয় করা যায়।
বাদুরের পথচলা :
শব্দের প্রতিধ্বনির সাহায্যেই বাদুর পথ চলে। বাদুর চোখে দেখে না। বাদুর শব্দোত্তর কম্পাঙ্কের শব্দ তৈরি করতে পারে আবার শুনতেও পারে।এই শব্দ আমরা শুনতে পাই না। বাদুর শব্দোত্তর কম্পাঙ্কের শব্দ তৈরি করে সামনে ছড়িয়ে দেয়। ঐ শব্দ কোনো প্রতিবন্ধকে বাধা পেয়ে আবার বাদুরের কাছে চলে আসে।ফিরে আসা শব্দ শুনে বুঝতে পারে যে সামনে কোনো বস্তু আছে কিনা। বাদুর এভাবে তার শিকারও ধরে। যদি বাধা পেয়ে শব্দফিরে না আসে তবে বুঝতে পারে যে ফাঁকা জায়গা আছে, সেই পথ বরাবর সে উড়ে চলে। অনেক সময় বৈদ্যুতিক তারের সঠিক অবস্থান নির্ণয় করতে ব্যর্থ হলে সমাšতরাল দুই তারের মধ্য দিয়ে উড়ে চলার সময় যেই মাত্র ধনাত্মক ও ঋণাত্মক তারে (বা সμিয় ও নিরপেক্ষ তারে) বাদুরের শরীরের মাধ্যমে সংযোগ পেয়ে যায় সেই বাদুরের শরীরের মধ্য দিয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হয় আর সে মারা যায়। মাঝেমধ্যে বৈদুতিক তারে ঝুলন্ত বাদুর দেখা যায়। বাদুর প্রায় 1,00000 হার্জ কম্পাংকের শব্দ তৈরি করতে ও শুনতে পারে।
শব্দ তরঙ্গ
Sound Wave
আমরা জানি শব্দ এক প্রকার শক্তি। এই শক্তি সঞ্চালিত হয় শব্দ-তরঙ্গের মাধ্যমে। শব্দ তরঙ্গ হলো একটি অনুদৈর্ঘ্য তরঙ্গ। এই তরঙ্গ সঞ্চালনের সময় মাধ্যমের কণাগুলোর বা তারসমূহের সংকোচন ও প্রসারণের সৃষ্টি হয়।মাধ্যম দিয়ে সঞ্চালিত হয়ে এই শব্দ তরঙ্গ আমাদের কানে এসে শ্রবণের অনুভূতি জাগায়। উল্লেখ্য যে উৎসের কম্পন ছাড়া শব্দের উৎপত্তি হয় না। সুরশলাকা, কাসার বাটি, স্কুলের ঘন্টা যখন বাজে তখন হাত দিয়ে আস্তে আস্তে স্পর্শ করলে বুঝতে পারবে যে ওটা কাঁপছে। যখন তুমি কথা বল তখন যদি তোমার কণ্ঠনালী স্পর্শ কর দেখবে তোমার কণ্ঠনালী কাঁপছে। যতক্ষণ বাটিটি শব্দ সৃষ্টি করছিল ততক্ষণ সেটি কেঁপেছে তাই ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র তরঙ্গের সৃষ্টি হয়েছে। বাটিটির শব্দ থেমে গেলে তার কম্পনও থেমে গেছে আর ঢেউও থেমে গেছে। সুতরাং বোঝা গেল কম্পমান বস্তু শব্দ সৃষ্টি করে। কিন্তু কোনো বস্তু কাঁপলেই যে আমরা সেই শব্দ শুনতে পারবো এমন কোনো কথা নেই। শব্দের উৎস ও শ্রোতার মাঝে একটি জড় মাধ্যম থাকতে হবে এবং উৎসের কম্পাঙ্ক 20Hz থেকে 20,000Hz এর মধ্যে হতে হবে।
শব্দ তরঙ্গের বৈশিষ্ট্য:
কোনো বস্তুর কম্পনের ফলে শব্দ তরঙ্গ সৃষ্টি হয় এবং সঞ্চালনের জন্য স্থিতিস্থাপক জড় মাধ্যমের প্রয়োজন হয়। তাই শব্দকে একটি যান্ত্রিক তরঙ্গ বলা হয়। এই তরঙ্গের প্রবাহের দিক এবং কম্পনের দিক একই বলে এটি একটি অনুদৈর্ঘ্য তরঙ্গ। শব্দ তরঙ্গের বেগ মাধ্যমের প্রকৃতির উপর নির্ভরশীল। বায়বীয় মাধ্যমে এর বেগ কম, তরলে তার চেয়ে বেশি, কঠিন পদার্থে আরো বেশি। শব্দের তীব্রতা তরঙ্গের বিস্তারের বর্গের সমানুপাতিক। অর্থাৎ তরঙ্গের বিস্তার বেশি হলে শব্দের তীব্রতা বেশি হবে। শব্দ তরঙ্গের প্রতিফলন, প্রতিসরণ ও উপরিপাতন সম্ভব। শব্দের বেগ মাধ্যমের তাপমাত্রা ও আর্দ্রতার উপরও নির্ভরশীল।
এই লেকচারের পরের পেইজে যেতে নিচের …. তে ক্লিক কর।