বিসিএস প্রিলিমিনারি সাধারণ বিজ্ঞান শব্দ
তরঙ্গ
Waves
পুকুরের স্থির পানিতে একটি ঢিল ছুড়ে মারা হলো। ঢিলটি যখন পানিতে আঘাত করে তখন ঐ স্থানের পানির কণাগুলো আন্দোলিত হয়। এই আন্দোলিত কণাগুলো পার্শ্ববর্তী স্থির কণাগুলোকে আন্দোলিত করে। এভাবে কণা হতে কণাতে স্থানান্তরিত হয়ে আন্দোলন অবশেষে পুকুরের কিনারায় গিয়ে পৌছায়। পানির কণাগুলো শুধু উপর নিচে ওঠানামা করে কিন্তু সামনের দিকে অগ্রসর হয় না। প্রত্যেক কণার এই ধরনের গতির ফলে যে পর্যাবৃত্ত আন্দোলন পানির উপর দিয়ে চলে যায় তাকেই তরঙ্গ বলে। পানিতে আন্দোলনের কারণে পানির কণাসমূহে যে যান্ত্রিক শক্তির সৃষ্টি হয় তা কম্পনের মাধ্যমে একস্থান হতে অন্যস্থানে সঞ্চালিত হয়। সুতরাং তরঙ্গ দ্বারা শক্তি একস্থান থেকে অন্য স্থানে সঞ্চালিত হয়। যে পর্যাবৃত্ত আন্দোলন কোনো জড় মাধ্যমের একস্থান থেকে অন্যস্থানে শক্তি সঞ্চালিত করে কিন্তু মাধ্যমের কণাগুলোকে স্থায়ীভাবে স্থানান্তরিত করে না তাকে তরঙ্গ বলে। কঠিন, তরল বা গ্যাসীয় মাধ্যমে যে তরঙ্গের উদ্ভব হয় তা যান্ত্রিক তরঙ্গ। পানির তরঙ্গ,শব্দ তরঙ্গ প্রভৃতি যান্ত্রিক তরঙ্গ। যান্ত্রিক তরঙ্গ সঞ্চালনের জন্য স্থিতিস্থাপক মাধ্যমের প্রয়োজন। আর এক ধরনের তরঙ্গ আছে যেটি সঞ্চালনের জন্য কোনো মাধ্যম লাগে না। এরা হলো তাড়িত চৌম্বকীয় তরঙ্গ।
তরঙ্গের বৈশিষ্ট্যসমূহ নিম্নরূপ:
১. মাধ্যমের কণাগুলোর স্পন্দন গতির ফলে তরঙ্গ সৃষ্টি হয় কিন্তু কণাগুলোর স্থায়ী স্থানান্তর হয় না।
২. যান্ত্রিক তরঙ্গ সঞ্চালনের জন্য মাধ্যম প্রয়োজন।
৩. তরঙ্গ একস্থান থেকে অন্যস্থানে শক্তি সঞ্চালন করে।
৪. তরঙ্গের বেগ মাধ্যমের প্রকৃতির উপর নির্ভর করে।
৫. তরঙ্গের প্রতিফলন ও প্রতিসরণ ও উপরিপাতন ঘটে।
তরঙ্গের প্রকারভেদ:
তরঙ্গ দুই প্রকার: ১) অনুপ্রস্থ তরঙ্গ ২) অনুদৈর্ঘ্য তরঙ্গ।
যে তরঙ্গ কম্পনের দিকের সাথে লম্বভাবে অগ্রসর হয় তাকে অনুপ্রস্থ তরঙ্গ বলে। পানির তরঙ্গ অনুপ্রস্থ তরঙ্গের উদাহরণ।
যে তরঙ্গ কম্পনের দিকের সাথে সমান্তরালভাবে অগ্রসর হয় তাকে অনুদৈর্ঘ্য তরঙ্গ বলে। বায়ু মাধ্যমে শব্দের তরঙ্গ অনুদৈর্ঘ্য তরঙ্গের উদাহরণ।
অনুপ্রস্থ তরঙ্গের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন বিন্দুকে তরঙ্গশীর্ষ ও তরঙ্গপাদ বলে। অনুদৈর্ঘ্য তরঙ্গে অনুরূপ রাশি হচ্ছে সংকোচন ও প্রসারণ।
তরঙ্গ সংশ্লিষ্ট রাশি
Wave Related Quantities
পূর্ণ স্পন্দন : তরঙ্গের উপরস্থ কোনো কণা একটি নির্দিষ্ট বিন্দু থেকে যাত্রা শুরু করে আবার একই দিক থেকে সেই বিন্দুতে ফিরে এলে তাকে একটি পূর্ণ স্পন্দন বলা হয়।
পর্যায়কাল : যে সময় পর পর তরঙ্গের পুনরাবৃত্তি ঘটে। অর্থাৎ যে সময়ে তরঙ্গের উপরস্থ কোন কণার একটি পূর্ণ স্পন্দন সম্পনড়ব হয় তাকে পর্যায়কাল বলে। পর্যায়কালকে T দ্বারা প্রকাশ করা হয়। এর একক সেকেন্ড (s) ।
কম্পাঙ্ক : প্রতি সেকেন্ডে যতগুলো পূর্ণ তরঙ্গ সৃষ্টি হয় তাকে তরঙ্গের কম্পাঙ্ক বলে। তরঙ্গ সৃষ্টি হয় কম্পনশীল বস্তু থেকে।তাই কম্পনশীল বস্তুর কম্পাঙ্ক তরঙ্গের কম্পাঙ্কের সমান। কম্পাঙ্কের একক হার্জ (Hz)। স্পন্দনশীল কোনো বস্তুকণা এক সেকেন্ডে একটি পূর্ণ স্পন্দন সম্পন্ন করলে তার কম্পাঙ্ককে 1 Hz বলে। একে f দ্বারা প্রকাশ করা হয়।
বিস্তার : তরঙ্গের সৃষ্টি হতে হলে মাধ্যমের কণাগুলো সাম্যাবস্থানের দুই পাশে কম্পিত হতে হবে। সাম্যাবস্থান থেকে যে কোনো একদিকে তরঙ্গস্থিত কোন কণার সর্বাধিক সরণকে বিস্তার বলে। চিত্রে a হলো বিস্তার।
দশা : কোনো একটি তরঙ্গায়িত কণার যে কোনো মুহুর্তের গতির সামগ্রিক অবস্থা প্রকাশক রাশিকে তার দশা বলে। গতির সামগ্রিক অবস্থা বলতে কণার গতির দিক, সরণ, বেগ,ত্বরণ ইত্যাদি বুঝায়। অনুপ্রস্থ তরঙ্গের উর্ধ্বচূড়াসমূহ বা নিম্নচূড়াসমূহ সর্বদা একই দশায় থাকে।
তরঙ্গ দৈর্ঘ্য : তরঙ্গের উপর একই দশায় আছে এমন পর পর দু’টি কণার মধ্যবর্তী দূরত্বই তরঙ্গ দৈর্ঘ্য। কম্পমান বস্তুর একটি পূর্ণ কম্পনে যে সময় লাগে সেই সময়ে তরঙ্গ যেটুকু দূরত্ব অতিক্রম করে তাকে তরঙ্গ দৈর্ঘ্য বলে। তরঙ্গ র্দৈঘ্যকে &lamdba; দ্বারা চিহ্নিত করা হয়। এর একক মিটার (m)। চিত্রে PP’ বা RR’ বা SS’ দৈর্ঘ্য হলো তরঙ্গদৈর্ঘ্য λ।
তরঙ্গ বেগ : নির্দিষ্ট দিকে তরঙ্গ এক সেকেন্ডে যে দূরত্ব অতিক্রম করে তাকে তরঙ্গ বেগ বলে।
এই লেকচারের পরের পেইজে যেতে নিচের …. তে ক্লিক কর।