বিসিএস প্রিলিমিনারি সাধারণ বিজ্ঞান ইলেকট্রিক্যাল টেকনোলজি
কোনো বস্তু বিশেষ অবস্থায় অন্য বস্তুকে আকর্ষণ করে বা তড়িৎগ্রস্থ বা আহিত হয় অর্থাৎ বস্তুতে তড়িতের উৎপত্তি হয়। এই তড়িৎ যেখানে উৎপন্ন হয় সেখানেই থাকে বলে একে স্থির তড়িৎ বলা হয়।
কোনো পরমাণুতে যতক্ষণ পর্যন্ত ইলেকট্রন ও প্রোটনের সংখ্যা সমান থাকে ততক্ষণ পর্যন্ত তা নিস্তড়িৎ বা তড়িৎ নিরপেক্ষ থাকে। কিন্তু পরমাণুতে এদের সংখ্যা সমান না হলে পরমাণু তড়িৎগ্রস্থ হয় অর্থাৎ আহিত হয়। কোনো পরমাণুতে ইলেকট্রনের সংখ্যা কমে গেলে প্রোটনের আধিক্য দেখা দেয়। এ অবস্থাকে বলা হয় ধনাত্মক আধানে আহিত হওয়া। আবার এই বিচ্ছিন্ন ইলেকট্রন অন্য কোনো পরমাণুর সাথে যুক্ত হলে সে পরমাণুতে প্রোটনের চেয়ে ইলেকট্রনের সংখ্যা বেড়ে যায়, ফলে ঋণাত্মক আধানে আহিত হয়। পরমাণুতে ইলেকট্রনের সংখ্যা স্বাভাবিকের চেয়ে কম বা বেশি হওয়াকে আহিত হওয়া বলে।
যে সকল পদার্থের মধ্য দিয়ে তড়িৎ তথা আধান সহজে চলাচল করতে পারে তাদেরকে পরিবাহক বা পরিবাহী বলে, যেমন ধাতব পদার্থ, মাটি, মানবদেহ প্রভৃতি। সাধারণত ধাতব পদার্থ তড়িৎ সুপরিবাহক হয়। তামা, রূপা, অ্যালুমিনিয়াম ইত্যাদি সুপরিবাহক। অন্য পক্ষে যে সকল পদার্থের মধ্য দিয়ে তড়িৎ তথা আধান চলাচল করতে পারে না তাদেরকে অন্তরক বা অপরিবাহক বলে, যেমন কাঠ, কাগজ, কাচ ইত্যাদি।
তড়িৎ আবেশঃElectric Inductionআমরা দেখেছি যে, দুটি বস্তুর পারস্পরিক ঘর্ষণের ফলে আধানের উদ্ভব হয়। আবার আহিত বস্তুকে অনাহিত বস্তুর সংস্পর্শে আনলে অনাহিত বস্তুটি আহিত হয়। কিন্তু অনাহিত বস্তুকে আহিত বস্তুর সংস্পর্শে না এনে শুধু কাছাকাছি নিয়ে এলেও এটি আহিত হয়। তড়িৎ আবেশের জন্য এরকম হয়।একটি আহিত বস্তুর কাছে এনে স্পর্শ না করে শুধুমাত্র এর উপস্থিতিতে কোনো অনাহিত বস্তুকে আহিত করার পদ্ধতিকে তড়িৎ আবেশ বলে।
তড়িৎ ক্ষেত্রঃএকটি আহিত বস্তুর নিকটে অন্য একটি আহিত বস্তু আনলে সেটি আকর্ষণ বা বিকর্ষণ বল অনুভব করে। আহিত বস্তুর চারদিকে যে অঞ্চল জুড়ে এই প্রভাব বিদ্যমান থাকে সেই অঞ্চলকেই এই বস্তুটির তড়িৎ ক্ষেত্র বলে।
তড়িৎ তীব্রতাঃতড়িৎ ক্ষেত্রের কোনো বিন্দুতে একটি একক ধনাত্মক আধান স্থাপন করলে সেটি যে বল অনুভব করে তাকে ঐ বিন্দুর তড়িৎ তীব্রতা বলে।
তড়িৎ বলরেখা : তড়িৎ ক্ষেত্র সম্পর্কে ধারণা পাওয়ার জন্য মাইকেল ফ্যারাডে তড়িৎ বলরেখার অবতারণা করেন। কোনো তড়িৎ ক্ষেত্রে একটি ধনাত্মক আধান স্থাপন করলে এটি বল লাভ করবে। যদি আধানটি মুক্ত হয় তবে সেটি এই বল লাভের ফলে স্থির না থেকে একটি নির্দিষ্ট পথে চলবে। তড়িৎ ক্ষেত্রে একটি মুক্ত ধনাত্মক আধান স্থাপন করলে এটি যে পথে পরিভ্রমণ করে তাকে তড়িৎ বলরেখা বলে।
কুলম্বের সূত্র : দুটি বিপরীত জাতীয় আধান পরষ্পরকে আকর্ষণ করে, দুটি সমজাতীয় আধান পরস্পরকে বিকর্ষণ করে। দুটি আধানের মধ্যবর্তী এই আকর্ষণ বা বিকর্ষণের বলের মান নির্ভর করে,
১. আধান দুটির পরিমাণের উপর।
২. আধান দুটির মধ্যবর্তী দূরত্বের উপর।
৩. আধান দুটি যে মাধ্যমে অবস্থিত তার প্রকৃতির উপর।
দুটি আধানের মধ্যবর্তী আকর্ষণ বা বিকর্ষণ বল সম্পর্কে বিজ্ঞানী কুলম্ব একটি সূত্র বিবৃত করেন। একে কুলম্বের সূত্র বলে।
সূত্র : নির্দিষ্ট মাধ্যমে দুটি বিন্দু আধানের মধ্যে ক্রিয়াশীল আকর্ষণ বা বিকর্ষণ বলের মান আধানদ্বয়ের গুণফলের সমানুপাতিক, মধ্যবর্তী দূরত্বের বর্গের ব্যস্তানুপাতিক এবং এই বল এদের সংযোজক সরলরেখা বরাবর ক্রিয়া করে।
বিভব হচ্ছে আহিত পরিবাহকের তড়িৎ অবস্থা যেটি নির্ধারণ করে ঐ পরিবাহকটি অন্য কোনো পরিবাহকের সাথে তড়িৎগতভাবে যুক্ত করলে আধান দেবে না নেবে।
পৃথিবী বা ভূমির বিভব শূন্য : পৃথিবী একটি তড়িৎ পরিবাহক। কোনো আহিত বস্তুকে পৃথিবীর সাথে যুক্ত করলে বস্তুটি নিস্তড়িত হয়। ধনাত্মকভাবে আহিত বস্তুকে ভূ-সংযুক্ত করলে পৃথিবী থেকে ইলেকট্রন এসে বস্তুকে নিস্তড়িত করে। আর ঋণাত্মকভাবে আহিত বস্তুকে পৃথিবীর সাথে সংযুক্ত করলে বস্তু থেকে ইলেকট্রন ভূমিতে প্রবাহিত হয়, ফলে বস্তুটি নিস্তড়িত হয়। পৃথিবী এত বিরাট যে, এতে আধান যোগ-বিয়োগ করলে এর বিভবের পরিবর্তন হয় না। যেমন, সমুদ্র থেকে পানি তুলে নিলে বা সমুদ্রে পানি ঢালা হলে এর পানি তলের কোনো পার্থক্য হয় না। পৃথিবী বিভিনড়ব বস্তু থেকে প্রতিনিয়ত আধান গ্রহণ করে আবার সাথে সাথে অন্য বস্তুকে আধান সরবরাহও করে, ফলে পৃথিবীকে আধানহীন মনে করা হয়। কোনো স্থানের উচ্চতা নির্ণয়ের সময় সমুদ্রের উপরিতলের উচ্চতাকে যেমন শূন্য ধরা হয় তেমনি বিভব নির্ণয়ের সময় পৃথিবীর বিভবকেও শূন্য ধরা হয়।
এই লেকচারের পরের পেইজে যেতে নিচের …. তে ক্লিক কর।