রাসায়নিক বিক্রিয়া (ইংরেজী:Chemical reaction)
এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে এক বা একাধিক পদার্থ ভিন্ন পদার্থে রূপান্তরিত হয়। রাসায়নিক বিক্রিয়ায় অংশগ্রহণকারী পদার্থগুলোকে বিকারক বা বিক্রিয়ক পদার্থ বা রিঅ্যাকটেন্ট (Reactants) বলা হয়। অপরদিকে রাসায়নিক বিক্রিয়ার ফলে নতুন ধর্মবিশিষ্ট যেসব পদার্থ উত্পন্ন হয়, তাদের বিক্রিয়াজাত পদার্থ বা উৎপাদ বা প্রোডাক্ট (Products) বলা হয়। রাসায়নিক বিক্রিয়া বিকারক পদার্থগুলোর মধ্যে ইলেকট্রনের আদান-প্রদানের ফলে হয়ে থাকে। পদার্থের নিউক্লিয়াসের পরিবর্তন হলে তাকে সাধারণত রাসায়নিক বিক্রিয়া হিসেবে গণ্য করা হয় না।
রাসায়নিক বিক্রিয়া [Chemical reaction]:- যে প্রক্রিয়ায় একটি পদার্থ বিশ্লিষ্ট হয়ে কিংবা একাধিক পদার্থ পরস্পরের সংস্পর্শে এসে রাসায়নিক সংযোগের মাধ্যমে এক বা একাধিক ভিন্নধর্মী নতুন পদার্থ উত্পন্ন করে, সেই প্রক্রিয়াকে রাসায়নিক বিক্রিয়া বলে ।
যে পদার্থ বা পদার্থগুলি রাসায়নিক বিক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে, তাদের বিকারক বা বিক্রিয়ক পদার্থ [Reactants] বলে ।
রাসায়নিক বিক্রিয়ার ফলে নতুন ধর্মবিশিষ্ট যেসব পদার্থ উত্পন্ন হয়, তাদের বিক্রিয়াজাত পদার্থ [Products] বলে ।
রাসায়নিক সমীকরণ [Chemical equation]:- বিক্রিয়ক এবং বিক্রিয়াজাত পদার্থের পরামাণুগুলির মধ্যে সমতা বজায় রেখে চিহ্ন ও সংকেতের সাহায্যে কোনো রাসায়নিক বিক্রিয়াকে সংক্ষেপে প্রকাশ করার পদ্ধতিকে রাসায়নিক সমীকরণ বলে ।
উদাহরণ : হাইড্রোজেন ও অক্সিজেনের রাসায়নিক বিক্রিয়ায় জল উত্পন্ন হয় । হাইড্রোজেন + অক্সিজেন = জল
এই বিক্রিয়াটিকে চিহ্ন ও সংকেতের সাহায্যে সংক্ষেপে প্রকাশ করা হয় । 2H2 + O2 = 2H2O এটাই বিক্রিয়াটির রাসায়নিক সমীকরণ । এখানে H2 ও O2 বিক্রিয়ক এবং H2O হল বিক্রিয়াজাত পদার্থ ।
বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক বিক্রিয়াঃ
১. সংযোজন বিক্রিয়া (Adition Reaction ) : দুই বা ততোধিক যৌগ বা মৌল যুক্ত হয়ে নতুন যৌগ উৎপন্ন হওয়ার প্রক্রিয়ার নাম সংযোজন বিক্রিয়া। আয়রন (n) ক্লোরাইড ক্লোরিনের সাথে বিক্রিয়া করে আয়রন (In) ক্লোরাইড উৎপন্ন করে (সনাতন পদ্ধতিতে কোনো যৌগের সাথে ক্লোরিনের বা ঋণাত্মক অংশের সংযোগকে জারণ বলা হয়).হাইড্রোজেন গ্যাস ক্লোরিন গ্যাসের সাথে বিক্রিয়া করে হাইড্রোজেনক্লোরাইড গ্যাস উৎপন্ন করে। সংযোজন বিক্রিয়ায় দুই বা ততোধিক মৌলিক পদার্থ যুক্ত হয়ে নতুন যৌগ উৎপনড়ব হলে, একে সংশ্লেষণ (Synthesis)বিক্রিয়া বলে।
যেমনঃ NH3(অ্যামোনিয়া) + HCl(হাইড্রোরিক এসিড) = NH4Cl(অ্যামোনিয়াম ক্লোরাইড)
২. বিযোজন বিক্রিয়া (Decomposition Reaction): কোনো যৌগকে ভেয়ে একাধিক যৌগ বা মৌলে পরিণত
করার প্রক্রিয়ার নাম বিযোজন বিক্রিয়া। ফসফরাস পেন্টাক্লোরাইডকে তাপে উত্তপ্ত করলে ফসফরাস ট্রাইক্লোরাইড ও ক্লোরিন উৎপন্ন হয়। এটি একটি উভমুখী বিক্রিয়া (সনাতন পদ্ধতিতে কোনো যৌগ থেকে ক্লোরিন বা ঋণাত্মক অংশের অপসারণকে বিজারণ বলা হয়)।
পানিতে তড়িৎ চালনা করলে পানি বিযোজিত হয়ে হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন উৎপন্ন করে।
যেমনঃ CaCO3(ক্যালসিয়াম কার্বনেট) =CaO(ক্যালসিয়াম অক্সাইড)+CO2(কার্বন ডাই অক্সাইড)
৩. প্রতিস্থাপন বিক্রিয়া (Substitution or Displacement Reaction): কোনো যৌগের একটি মৌল বা যৌগমূলককে অন্য কোনো মৌল বা যৌগমূলক দ্বারা প্রতিস্থাপন করে নতুন যৌগ উৎপন্ন করার প্রক্রিয়ার নাম প্রতিস্থাপন বিক্রিয়া। সাধারণত অধিক সক্রিয় মৌল বা মূলক দ্বারা কম সক্রিয় মৌল বা মূলক প্রতিস্থাপিত হয়। জিংক সালফিউরিক এসিডের সাথে বিক্রিয়া করে জিংক সালফেট ও হাইড্রোজেন গ্যাস উৎপনড়ব করে। বিক্রিয়ায় অধিক-সিক্রিয় জিংক ধাতু কম-সিক্রিয় হাইড্রোজেনকে প্রতিস্থাপন করে (সক্রিয়তার তুলনার জন্য খনিজসম্পদ (ধাতু-অধাতু) অধ্যায় দেখ, সনাতন পদ্ধতিতে কোনো যৌগ থেকে হাইড্রোজেন বা ধনাত্মক অংশের অপসারণকে জারণ বলা হয়).সোডিয়াম ধাতু কপার সালফেটের সাথে বিক্রিয়া করে সোডিয়াম সালফেট ও ধাতব কপার উৎপন্ন করে। বিক্রিয়ায় সোডিয়াম ধাতু কপার সালফেট থেকে কপার ধাতুকে প্রতিস্থাপন করে।
যেমনঃ Zn(জিঙ্ক)+H2SO4(সালফিউরিক এসিড)=ZnSO4(জিঙ্ক সালফেট)+H2(হাইড্রোজেন)
এই লেকচারের পরের পেইজে যেতে নিচের …. তে ক্লিক কর।
পরের পাতাসমুহ >>
0 responses on "বিসিএস - প্রিলিমিনারি - সাধারণ বিজ্ঞান - রাসায়নিক বিক্রিয়া"