মেরাসমাস রোগের লক্ষণ
– আমিষ ও ক্যালরি উভয়েরই অভাব ঘটে, ফলে দেহের বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে যায়।
– শরীর ক্ষীণ হয়ে অস্থিচর্মসার হয়।
– চামড়া বা ত্বক খসখসে হয়ে ঝুলে পড়ে।
– শরীরের ওজন হ্রাস পায়।
শিশুদের জন্য এরূপ অবস্থা বিপজ্জনক। তাছাড়া প্রোটিনের অভাবে বয়স্কদের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় ওরক্তস্বল্পতা দেখা দেয়।
নতুন শব্দ : সহজপাচ্যতার গুণক, গ্ল্যাকটোজ, অ্যামাইনো এসিড।
স্নেহ পদার্থ
একে শক্তি উৎপাদনকারী উপাদান বলা হয়। স্নেহ পদার্থে কার্বন, হাইড্রোজেন ও অক্সিজেনের পরিমাণ বেশি থাকে।কার্বনের দহন ক্ষমতা বেশি থাকায় স্নেহ পদার্থের অণু থেকে বেশি তাপশক্তি উৎপন্ন হয়। স্নেহ পদার্থ ফ্যাটি এসিড ওগ্লিসারলের সমন্বয়ে গঠিত একটি যৌগ। স্নেহপদার্থ পরিপাক হয়ে ফ্যাটি এসিড ও গ্লিসারলে পরিণত হয়। ফ্যাটি এসিডও গ্লিসারল ক্ষুদ্রান্ত্রের ভিলাইয়ের ভিতরে অবস্থিত লসিকা নালির মাধ্যমে শোষিত হয়। এই খাদ্যে ২০ প্রকার চর্বিজাতীয় এসিড পাওয়া যায়। চর্বি জাতীয় এসিড দুই প্রকার। যথা- ১. অসম্পৃক্ত চর্বি জাতীয় এসিড ও ২. সম্পৃক্ত চর্বিজাতীয় এসিড। দেহে যকৃতের মধ্যে চর্বি জাতীয় এসিড তৈরি হয়। কিন্তু যকৃতের চর্বি জাতীয় এসিড তৈরির ক্ষমতা অত্যন্ত কম। কিন্তুকিছু কিছু চর্বি জাতীয় এসিড আছে যেটি দেহের জন্য অত্যাবশ্যক। এগুলো প্রধানত উদ্ভিজ তেলে পাওয়া যায়। খাদ্যে স্নেহ পদার্থের পরিমাণ দ্বারা এর উপকারিতা যাচাই করা যায় না। যে স্নেহ জাতীয় খাদ্যে অসম্পৃক্ত চর্বি জাতীয় এসিডবেশি থাকে তা বেশি উপকারী। যেমন- সয়াবিন তেল, সূর্যমুখী তেল, সরিষার তেল, তিলের তেল, ভুট্টার তেল ইত্যাদি।
এসব তেল দিয়ে তৈরি খাবার উৎকৃষ্টতর স্নেহ জাতীয় খাদ্যের অন্তর্ভুক্ত। যেমন- মেয়নিজ, সালাদ ড্রেসিং, কাসুন্দি,তেলের আচার ইত্যাদি উৎকৃষ্টতর স্নেহ জাতীয় খাদ্যের অন্তর্ভুক্ত। যে সব খাদ্যে সম্পৃক্ত চর্বি জাতীয় এসিড বেশি থাকেসে সকল খাদ্যগুলোকে স্নেহ বহুল খাদ্য বলা হয়। যেমন- মাংস, মাখন, পনির, ডালডা, চকলেট, বাদাম ইত্যাদি।পুষ্টিবিজ্ঞান মতে দৈনিক মোট শক্তির ২০%-৩০% শক্তি স্নেহ থেকে পাওয়া যায়। দৈনিক আহার্যে এমন স্নেহযুক্ত খাদ্যঅন্তর্ভুক্ত করা উচিত যেটি অত্যাবশ্যকীয় চর্বি জাতীয় এসিড যোগাতে পারে এবং ভিটামিন দ্রবণে সক্ষম হয়।খাদ্যে স্নেহ পদার্থের অভাব ঘটলে দেহে চর্বিতে দ্রবণীয় ভিটামিনের অভাবপরিলক্ষিত হয় ফলে ভিটামিনের অভাবজনিত রোগ দেখা দেয়। যেমন- ত্বক শুষ্ক ও খসখসে হয়ে দেহের সৌন্দর্য নষ্ট করে, অত্যাবশ্যকীয় চর্বিজাতীয় এসিডের অভাবে শিশুদের একজিমা রোগ হয় ও বয়স্কদেরচর্মরোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা কমে যায়।
কাজ : একটি টেস্টটিউবে কয়েক ফোঁটা সয়াবিন তেল নাও। এর ভেতর সামান্য ইথানল মিশাও। এবার
টেস্টটিউবটিকে ভালোভাবে ঝাঁকিয়ে নাও। এবার দ্রবণটিতে সামান্য পানি মিশিয়ে টেস্টটিউবটি আবার ঝাঁকিয়েনাও। কী ঘটে লক্ষ কর। তেলের দ্রবণটি ঘোলাটে বর্ণ ধারণ করবে।
এভাবে সরিষা, নারকেল ও তিলের তেলের সাহায্যে উক্ত পরীক্ষাটি কর এবং কী ঘটে তা বর্ণনা কর।
খাদ্যের ক্যালরি ও কর্মশক্তি
শর্করা, আমিষ ও স্নেহ পদার্থ খাদ্যের এ তিনটি উপাদান থেকেদেহে তাপ উৎপন্ন হয়। পুষ্টি উপাদান ও তার পরিমাণ জানাজন্য শর্করা, আমিষ ও চর্বি ক্যালরি বের করতে হয়। এ ক্ষেত্রেভিটামিন, খনিজ লবণ ও পানির ক্যালরিমূল্য শূন্য ধরে হিসেবকরতে হবে। এ তাপ আমাদের দেহে কাজ করার শক্তি যোগায়।
আমাদের দেহের ভিতর খাদ্য পরিপাক, শ্বসন, রক্তসংবহন ইত্যাদি কার্যক্রম বিপাক ক্রিয়ার অন্তর্গত। বিপাক ক্রিয়া চালানোরজন্য যে শক্তি প্রয়োজন তাকে মৌলবিপাক বলে। আবার শারীরিক পরিশ্রমেও আমাদের শক্তি ব্যয় হয়। আমরা খাবার থেকেশক্তি পাই।
আমাদের দেহে ১ গ্রাম শর্করা থেকে ৪ ক্যালরি ১ গ্রাম আমিষ থেকে ৪ ক্যালরি ১ গ্রাম চর্বি থেকে ৯ ক্যালরি শক্তি উৎপন্ন হয়। খাদ্য থেকে দেহের ভিতর যে তাপ উৎপন্ন হয় তা আমরা ক্যালরিতে প্রকাশ করি। ১০০০ ক্যালরিতে ১ কিলোক্যালরি।খাদ্যে তাপশক্তি মাপের একক হলো কিলোক্যালরি। দেহের শক্তির চাহিদাও কিলোক্যালরিতে নির্ণয় করা হয়। আমার, তোমার, তোমার ছোট ভাই, তোমার বাবার দেহের ক্যালরি চাহিদা এক রকম নয়। আমাদের দেহে দুই ভাবেশক্তি ব্যয় হয় যথা- ১. দেহের অভ্যন্তরীণ কাজে অর্থাৎ মৌলবিপাকে এবং ২. পরিশ্রমের কাজে। প্রতিদিন কার কতক্যালরি বা তাপ শক্তির প্রয়োজন তা নির্ভর করে প্রধানত বয়স, দৈহিক উচ্চতা এবং দৈহিক ওজনের উপর। এছাড়াবিভিন্ন পেশা এবং স্ত্রী-পুরুষ ভেদে দৈনিক ক্যালরি চাহিদা কম বা বেশি হয়ে থাকে।
এই লেকচারের পরের পেইজে যেতে নিচের …. তে ক্লিক কর।