অভিকর্ষজ ত্বরণের পরিবর্তন : পৃথিবীর কেন্দ্র থেকে ভূ-পৃষ্ঠের দূরত্ব অর্থাৎ পৃথিবীর ব্যাসার্ধ R হলে ভূপৃষ্ঠেg=GM/R2যেহেতু পৃথিবী সম্পূর্ণ গোলাকার নয়, মেরু অঞ্চলে একটুখানি চাপা, তাই পৃথিবীর ব্যাসার্ধ R ও ধ্রুবক নয়। সুতরাংভূ-পৃষ্ঠের সর্বত্র g-এর মান সমান নয়। মেরু অঞ্চলে পৃথিবীর ব্যাসার্ধ R সবচেয়ে কম বলে সেখানে g-এর মানসবচেয়ে বেশি।
মেরু অঞ্চলে g-এর মান ৯.৮৩২ মিটার/সেকেন্ড২।
মেরু থেকে বিষুব অঞ্চলের দিকে R এর মানবাড়তে থাকায় g-এর মান কমতে থাকে। বিষুব অঞ্চলে R এর মান সবচেয়ে বেশি বলে g -এর মান সবচেয়ে কম। ৯.৭৮ মিটার/সেকেন্ড২।
ক্রান্তীয় অঞ্চলে g-এর মান ৯.৮০৬৬৫ মিটার/সেকেন্ড২।
হিসাবের সুবিধার জন্য g-এরআদর্শ মান ধরা হয় ৯.৮ মিটার/সেকেন্ড২ বা ৯.৮১ মিটার/সেকেন্ড২।
ভূ-পৃষ্ঠে g- এর মান ৯.৮ মিটার/সেকেন্ড২।এর অর্থ হচ্ছে ভূ-পৃষ্ঠে মুক্তভাবে পড়ন্ত কোনো বস্তুর বেগ প্রতি সেকেন্ডে ৯.৮ মিটার/সেকেন্ড বৃদ্ধি পায়। কোনো বস্তুকে উপর থেকে ছেড়ে দিলে অভিকর্ষ বলের প্রভাবে ভূমিতে পৌঁছায়। একই উচ্চতা থেকে একই সময় একটুকরা পাথর ও এক টুকরা কাগজ ছেড়ে দিলে এগুলো একই সময়ে ভূ-পৃষ্ঠে পৌঁছাবে কি? যেহেতু বস্তুর উপর ক্রিয়াশীল অভিকর্ষজ ত্বরণ বস্তুর ভরের উপর নির্ভর করে না, তাই পাথর ও কাগজের উপর ক্রিয়াশীল অভিকর্ষজ ত্বরণএকই। সুতরাং তাদের একই সময়ে মাটিতে পৌঁছানো উচিত। কিন্তু বাস্তবে পাথরটি কাগজের আগেই মাটিতেপৌঁছায়। বাতাসের বাধার কারণে এরূপ হয়। বাতাসের বাধা না থাকলে এগুলো অবশ্যই একই সময়ে মাটিতে পৌঁছাত।
ভর ও ওজন
যখন আমরা বলি কবিরের ওজন ৯০ কিলোগ্রাম (কেজি) তখন আমরা আসলে বুঝাই যে, কবিরের দেহের ভর ৯০কিলোগ্রাম (কেজি)।আমরা যখন ৫০ কেজি চাউলের বস্তা কিনি তখন আমরা আসলে ঐ বস্তার চাউলের ভর ৫০কেজি বুঝি; কিন্তু বস্তার চাউলের ওজন বুঝাই না। পদার্থবিজ্ঞানে ভর ও ওজন সম্পূর্ণ পৃথক দুটি রাশি। দৈনন্দিন জীবনে আমরা ওজন কথাটাকে অপব্যবহার করি যেটি একেভুল অর্থে বুঝাই। আসলে আমরা কোনো বস্তুর ভরকে ঐ বস্তুর ওজন বলে থাকি।
ভর : প্রত্যেক বস্তু পদার্থ দ্বারা গঠিত। ভর হলো কোনো বস্তুতে পদার্থের পরিমাণ। বস্তুর এই ধর্ম এর অবস্থান,আকৃতি ও গতি পরিবর্তনের জন্য পরিবর্তিত হয় না। যে পরমাণু ও অণু দিয়ে বস্তুটি গঠিত তার সংখ্যা ও সংযুক্তিরউপর বস্তুটির ভর নির্ভর করে। ভরের আন্তর্জাতিক একক হলো কিলোগ্রাম বা কেজি (kg)। বেশি ভরকে (যেমন একট্রাক চাউল) মেট্রিক টনে মাপা হয়। এক টন ১০০০ কিলোগ্রামের সমান। অল্প ভরকে মাপা হয় গ্রামে। যেমন কোনো পেনসিলের ওজন ৫ গ্রাম (g)। ১০০০ গ্রামে ১ কেজি।
ওজন : আমরা জানি যে, কোনো বস্তুকে উপরের দিকে ছুড়ে দিলে ভূমিতে ফিরে আসে। এটা ঘটে বস্তুর ওজনেরজন্য যেটি একে পৃথিবীর দিকে টানে। পৃথিবীর অভিকর্ষ বলের টানেই এটা ফিরে আসে।কোনো বস্তুকে পৃথিবী যে বল দ্বারা তার কেন্দ্রের দিকে আকর্ষণ করে তাকে বস্তুর ওজন বলে। কোনো বস্তুর ভর m
এবং পৃথিবীর কোনো স্থানে অভিকর্ষজ ত্বরণ g হলে ঐ স্থানে বস্তুর ওজন w হবে।
W=mg
যেহেতুওজন একটি বল, সুতরাং এটি একটি ভেক্টর রাশি। এর দিক পৃথিবীর কেন্দ্রের দিকে।
ওজনের একক হলো বলের একক অর্থাৎ নিউটন। পৃথিবী পৃষ্ঠে ১০ কেজি ভরের বস্তুর ওজন হবে,
W =১০x ৯.৮ নিউটন = ৯৮ নিউটন
স্প্রিং নিক্তির সাহায্যে কোনো বস্তুর ওজন পরিমাপ করা হয়।
এই লেকচারের পরের পেইজে যেতে নিচের …. তে ক্লিক কর।