নিম্নে এগুলোর বিস্তারিত বর্ণনা দেওয়া হলো।
১-টারশিয়ারী যুগের পাহাড়সমূহ : বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব, উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের পাহাড়সমূহ এ অঞ্চলের
অন্তর্ভুক্ত। টারশিয়ারী যুগে হিমালয় পর্বত উত্থিত হওয়ার সময় এ সকল পাহাড় সৃষ্টি হয়েছে। এগুলো টারশিয়ারী যুগের পাহাড় নামে খ্যাত। পাহাড়গুলো আসামের লুসাই এবং মায়ানমারের আরাকান পাহাড়ের সমগোত্রীয়। এ পাহাড়গুলো বেলেপাথর, শেল ও কর্দম দ্বারা গঠিত। এ অঞ্চলের পাহাড়গুলোকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে।

যথা- (ক) দক্ষিণপূর্বাঞ্চলের পাহাড়সমূহ ও
(খ) উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের পাহাড়সমূহ।

(ক) দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের পাহাড়সমূহ : রাঙামাটি, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম জেলার পূর্বাংশ এ অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত। দক্ষিণ-পূর্বের এ পাহাড়গুলোর গড় উচ্চতা ৬১০ মিটার। ১,২৩০ মিটার উচ্চতাবিশিষ্ট শৃঙ্গ কিওμাডং এ অঞ্চলের দক্ষিণ-পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত। সাম্প্রতিককালে বান্দরবানে আরও একটি শৃঙ্গ আবিষ্কৃত হয়েছে। এর নাম তাজিনডং (বিজয়) এবং উচ্চতা ১,২৩১ মিটার। এটিই বাংলাদেশের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ।

(খ) উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের পাহাড়সমূহ : ময়মনসিংহ ও নেত্রকোনা জেলার উত্তরাংশ, সিলেট জেলার উত্তর ও উত্তরপূর্বাংশ এবং মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলার দক্ষিণের পাহাড়গুলোর গড় উচ্চতা ২৪৪ মিটারের বেশি নয়। উত্তরের পাহাড়গুলো স্থানীয়ভাবে ঢিলা নামে পরিচিত। এগুলোর উচ্চতা ৩০ থেকে ৯০ মিটার।

২-প্লাইস্টোসিনকালের সোপানসমূহ : আনুমানিক ২৫,০০০ বছর পূর্বের সময়কে প্লাইস্টোসিনকাল বলে। উত্তরপশ্চিমাংশের বরেন্দ্রভূমি, মধ্যভাগের মধুপুর ও ভাওয়ালের গড় এবং কুমিল্লা জেলার লালমাই পাহাড় বা উচ্চভূমি এঅঞ্চলের অন্তর্গত। প্লাইস্টোসিনকালে এসব সোপান গঠিত হয়েছিল বলে ধারণা করা হয়। নিচে এসব উচ্চভূমির বর্ণনা দেওয়া হলো।

(ক) বরেন্দ্রভূমি : দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের প্রায় ৯,৩২০ বর্গকিলোমিটার এলাকায় বরেন্দ্রভূমি বিস্তৃত। প্লাবন সমভূমি হতে এর উচ্চতা ৬ খেকে ১২ মিটার। এ স্থানের মাটি ধূসর ও লাল বর্ণের।

(খ) মধুপুর ও ভাওয়ালের গড় : টাঙ্গাইল ও ময়মনসিংহ জেলায় মধুপুর এবং গাজীপুর জেলায় ভাওয়ালের গড় অবস্থিত। এর আয়তন প্রায় ৪,১০৩ বর্গকিলোমিটার। সমভূমি থেকে এর উচ্চতা প্রায় ৩০ মিটার। মাটির রং লালচে ও ধূসর।

(গ) লালমাই পাহাড় : কুমিল্লা শহর থেকে ৮ কিলোমিটার পশ্চিমে লালমাই থেকে ময়নামতি পর্যন্ত এ পাহাড়টি বিস্তৃত। এর আয়তন প্রায় ৩৪ বর্গকিলোমিটার এবং গড় উচ্চতা ২১ মিটার।

৩-সাম্প্রতিককালের প্লাবন সমভূমি : টারশিয়ারী যুগের পাহাড়সমূহ এবং প্লাইস্টোসিনকালের সোপানসমূহ ছাড়া সমগ্র বাংলাদেশ নদীবিধৌত এক বিস্তীর্ণ সমভূমি। অসংখ্য ছোট-বড় নদী, বাংলাদেশের সর্বত্র জালের মতো ছড়িয়ে রয়েছে। সমতলভূমির উপর দিয়ে এ নদীগুলো প্রবাহিত হওয়ার কারণে বর্ষাকালে বন্যার সৃষ্টি হয়। বছরের পর বছর এভাবে বন্যার সঙ্গে পরিবাহিত মাটি সঞ্চিত হয়ে এ প্লাবন সমভূমি গঠিত হয়েছে। এ প্লাবন সমভূমির আয়তন প্রায় ১,২৪,২৬৬ বর্গকিলোমিটার। এ সমভূমি বাংলাদেশের উত্তর অংশ থেকে উপকূলের দিকে ক্রমনিম্ন। সুন্দরবন অঞ্চল প্রায় সমুদ্র সমতলে অবস্থিত। সমুদ্র সমতল থেকে বাকি অঞ্চলগুলো যেমন- দিনাজপুরের উচ্চতা ৩৭.৫০ মিটার, বগুড়ার উচ্চতা ২০ মিটার, ময়মনসিংহের উচ্চতা ১৮ মিটার এবং নারায়ণগঞ্জ ও যশোরের উচ্চতা ৮ মিটার। এই অঞ্চলে বিক্ষিপ্তভাবে অসংখ্যজলাভূমি ও নিম্নভূমি ছড়িয়ে আছে। এর কিছু সংখ্যক পরিত্যক্ত অশ্বখুরাকৃতি নদীখাত। স্থানীয়ভাবে এগুলোকে বিল, ঝিল ও হাওর বলে। এদের মধ্যে চলনবিল, মাদারিপুর বিল ও সিলেট অঞ্চলের হাওরসমূহ বর্ষার পানিতে পরিপূর্ণ হয়ে হ্রদের আকার ধারণ করে। সমগ্র সমভূমির মাটির স্তর খুব গভীর এবং ভূমি খুবই উর্বর। সাম্প্রতিককালের প্লাবন সমভূমিকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায়।

যেমন-
(ক) রংপুর ও দিনাজপুরের পাদদেশীয় সমভূমি।

(খ) ঢাকা, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, জামালপুর, পাবনা, কুমিল্লা, নোয়াখালি ও সিলেটের অন্তর্গত বন্যা প্লাবন সমভূমি।

(গ) ফরিদপুর, কুষ্টিয়া, যশোর, খুলনা ও ঢাকা অঞ্চলের অংশবিশেষ নিয়ে ব-দ্বীপ সমভূমি।

(ঘ) নোয়াখালি ও ফেনী নদীর নিমড়বভাগ থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত বিস্তৃত চট্টগ্রামের উপকূলীয় সমভূমি।

(ঙ) খুলনা ও পটুয়াখালি অঞ্চল এবং বরগুনা জেলার কিয়দংশ নিয়ে স্রোতজ সমভূমি।
বাংলাদেশের এ অঞ্চলগুলোর মাটি খুব উর্বর বলে কৃষিজাত দ্রব্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে তা উলে−খযোগ্য ভূমিকা পালন করে।

এই লেকচারের পরের পেইজে যেতে নিচের …. তে ক্লিক কর।

মন্তব্য করুন

স্যার, কিভাবে আপনাকে সাহায্য করতে পারি?

Click one of our representatives below

Customer Support
Customer Support

Syeda Nusrat

I am online

I am offline

Technical Support
Technical Support

Ariful Islam Aquib

I am online

I am offline