অনেকেই মাতৃভাষা বলে বাংলাকে হেলাফেলায় নেয়। দুঃখজনক হলেও সত্য, অনেকে অন্যান্য বিষয়ের তুলনায় সিকি ভাগ সময়ও বাংলার পেছনে ব্যয় করতে চান না। অনেককে দেখেছি পরীক্ষার হলে গিয়ে হাঁসফাঁস করতে। মনে রাখা দরকার, একজন ভালো বাংলা জানা পরীক্ষার্থী এই বিষয়ে গড়পড়তা অন্যদের চেয়ে এমনিতেই এগিয়ে থাকবেন।
পরীক্ষার্থীদের বলব, প্রথমেই সিলেবাসে চোখ বুলিয়ে নিন। তারপর নজর দিন বিসিএসে আসা বিগত বছরের প্রশ্নগুলোর দিকে। এতে প্রশ্ন কেমন হতে পারে সে বিষয়ে প্রাথমিক ধারণা পেয়ে যাবেন। বিগত সালের পরীক্ষায় আসা ব্যাকরণ, শুদ্ধিকরণ, প্রবাদ-প্রবচন ও বাগধারা, বিভিন্ন ধরনের পত্র লেখার নিয়ম ভালো করে পড়ুন। আপনি যদি বিভিন্ন দরখাস্ত, মানপত্র বা চিঠি ইত্যাদি লেখার নিয়ম আয়ত্ত করতে পারেন, তাহলে যেকোনো ধরনের পত্র পরীক্ষায় আসুক না কেন, তার উত্তর লিখে আসতে পারবেন। নিজেকে প্রস্তুত করে নিতে বিগত সালে পরীক্ষায় আসা সারমর্ম বা সারাংশ ও ভাবসম্প্রসারণের উত্তর নিজে নিজে বানিয়ে লেখার অভ্যাস কর যত বেশি অনুশীলন করবেন, তত লাভ হবে। এতে পরীক্ষায় পড়ার বাইরে থেকে প্রশ্ন এলেও আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে নিজে থেকে উত্তর করে আসতে পারবেন।
অনেকে বাংলা প্রথমপত্র অর্থাৎ সাহিত্য অংশ নিয়ে খুব টেনশন করেন। আমি বলব, অন্যান্য বিষয়ের তুলনায় এটা তুলনামূলক সহজ। মনোযোগ দিয়ে পড়লে দেখবেন, সবই আপনার জানা এবং এসব বিষয় পড়তে বেশ মজা। বাংলা সাহিত্যের জন্য অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদের ‘লাল নীল দীপাবলি অথবা বাঙলা সাহিত্যের জীবনী’ বইটি পড়েছিলাম। এই বইতে বাংলা সাহিত্যের প্রাচীনকাল থেকে আধুনিককাল পর্যন্ত ইতিহাস খুব সুন্দরভাবে সহজ-সরল ভাষায় লেখা। ফলে এটা লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতিতে বেশ কাজে দিয়েছিল। মাহবুবুল আলমের ‘বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস’ বইটিও দেখতে পারেন। আর ব্যাকরণ অংশের জন্য অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদের ‘কতো নদী সরোবর অথবা বাঙলা ভাষার জীবনী’ বইটি বেশ সহায়ক হবে। এ ছাড়া নবম-দশম শ্রেণির বোর্ডের বাংলা ব্যাকরণ বই তো আছেই। বাংলা বানান, শুদ্ধিকরণ প্রভৃতি নিয়ে মাথাব্যথার কারণ নেই। এগুলোর জন্য বাংলা একাডেমি প্রণীত ব্যবহারিক বাংলা অভিধানের একেবারে শেষে ‘প্রমিত বাংলা বানান’ নামে একটা অধ্যায় আছে। মনোযোগ দিয়ে এই অংশটা দেখলে বানান বিষয়ে ভালো ধারনা পাবেন।
বাংলায় সবচেয়ে বেশি নম্বর বরাদ্দ রচনা লিখনে। এতে থাকবে ৪০ নম্বর। রচনা আসতে পারে সমসাময়িক কোনো ইস্যু, জাতীয় সমস্যা ও সমাধান, মুক্তিযুদ্ধ, ভাষা আন্দোলন, সাহিত্য ও সংস্কৃতি, তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে। বাংলা রচনা কতটুকু লিখবে-এ নিয়ে অনেকের ঘুম হারাম। অনেকে মনে করেন, যত বেশি লেখা যায় নম্বর তত বেশি। এটা মোটেই ঠিক নয়। প্রাসঙ্গিক তথ্য-উপাত্ত ছাড়া যদি অযথাই পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা ভরাট করে যান, তাতে খুব বেশি ফায়দা হবে না। এটা পরীক্ষকের বিরক্তির উদ্রেক ঘটাতে পারে। আমি বলব, রচনা যত বেশি তথ্য-উপাত্ত সমৃদ্ধ করতে পারেন, ততই ভালো। এটা ছোট হলেও কোনো অসুবিধা নেই। রচনায় ভালো করার জন্য দৈনিক পত্রিকাগুলোর সম্পাদকীয় পাতা নিয়মিত পড়লে কাজে দেবে। অনেকে আবার বলেন বাংলায় লিখতে হয় প্রচুর, কিন্তু নম্বর উঠে কম। আমি বলব, এ অভিযোগটিও পুরোপুরি সত্য নয়। আপনার লেখা যদি পরিচ্ছন্ন ও তথ্যবহুল হয়, তাহলে পরীক্ষক অবশ্যই ভালোভাবে আপনার খাতা মূল্যায়ন করবেন।
বাংলা পরীক্ষায় হাতের লেখা ও উপস্থাপনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আপনার হাতের লেখা সুন্দর হলে ভালো। না হলেও খুব একটা অসুবিধা নেই। আসল বিষয় হচ্ছে, আপনি যেটি লিখছেন তা যেন স্পষ্ট হয়। অর্থাৎ পরীক্ষক আপনার খাতা পড়তে পারলেই চলবে। মূল কথা হলো, কোনোমতেই বাংলাকে দায়সারাভাবে নেবেন না। এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে থাকুন। সাফল্য আসবেই।
-পরামর্শ দিয়েছেন ৩১তম বিসিএসে সম্মিলিত প্রথম ফারহানা জাহান উপমা।