
প্রিলিমিনারি পরীক্ষা হবে এমসিকিউ পদ্ধতিতে। পরীক্ষার হলে আপনাকে একটি ছাপানো প্রশ্নপত্র এবং আলাদা একটি বিশেষ উত্তরপত্র দেওয়া হবে। প্রশ্নপত্রে প্রতিটি প্রশ্নের নিচে চারটি বিকল্প উত্তর থাকবে। তার মধ্যে যে উত্তরটি আপনি সঠিক মনে করেন সেটিকে সনাক্ত করে উত্তরপত্র ফর্মে সংশ্লিষ্ট বৃত্তটি পেন্সিল দিয়ে ভরাট করতে হবে। মনে রাখতে হবে, বৃত্ত ভরাট ছাড়া উত্তরদানের জন্য উত্তরপত্রে আর কোনো চিহ্ন দেওয়ার প্রয়োজন নেই। উত্তরপত্র ফর্মটি কম্পিউটারের সাহায্যে একটি বিশেষ যন্ত্র (OMR) দ্বারা পরীক্ষা করা হবে। সুতরাং আপনি যদি উত্তরপত্রে অযাচিত কোনো দাগ দেন বা উত্তরপত্র ভাঁজ করেন বা ছিঁড়ে যায় তাহলে সেটি বাতিল হয়ে যাবে। অর্থাৎ উত্তরপত্রের কোনো প্রকার বিকৃতি তাকে যন্ত্র দ্বারা পরীক্ষার অযোগ্য করে ফেলবে।
অতএব আপনার নিজের স্বার্থেই উত্তরপত্র ফর্মটি সযত্নে ব্যবহার করবেন। এমনকি এতে কোনোরূপ ঘষা-মোছার চিহ্ন রাখা বা পেন্সিলের দাগ লেপ্টানো চলবে না। এ কারণে অতি নরম উন্নত মানের ও পরিস্কার রাবার ব্যবহার করা দরকার। ব্যবহারের ফলে রাবার অপরিস্কার হলে তা আলাদাভাবে ঘষে পরিস্কার করে নেওয়া বাঞ্ছনীয়। মনে রাখবেন, একটির বেশি উত্তরপত্র ফর্ম সরবরাহ করা হবে না। উত্তরপত্র ফর্মে নির্দিষ্ট বৃত্তসমূহ ভরাট করা ছাড়া এবং নির্দেশিত স্থান ব্যতীত অন্য কোনো স্থানে লেখা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। বৃত্তসমূহ ভরাট করার জন্য 2B বা অনুরূপ নরম গ্রেডের কাঠ-পেন্সিল অথবা কালো কালির বল পয়েন্ট কলম ব্যবহার করবেন। ঝর্না কলম ব্যবহার করবেন না। কারণ মেশিন এইসব কালি সনাক্ত করতে পারে না।
কেমন হবে প্রস্তুতি
শুধু পাঠ্যপুস্তকই নয়, বিসিএস পরীক্ষায় ভালো করতে চাইলে বহুমুখী পড়ালেখার বিকল্প নেই। তাই এ পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে হবে গুরুত্ব সহকারে। একাডেমিক পরীক্ষায় যেমন একটু বেছে পড়ার সুযোগ আছে এখানে তা নেই। কারণ বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার কোনো সুনির্দিষ্ট সিলেবাস নেই। ভালোভাবে প্রস্তুতি নিলে আত্মবিশ্বাস বাড়বে। এবং এই আত্মবিশ্বাসটাই এ পরীক্ষায় উতরে যেতে সহায়ক হবে। অল্প সময়ে তাড়াহুড়ো করে প্রস্তুতি নিলে হবে না। একাগ্রচিত্তে সময় নিয়ে রুটিন মাফিক পড়াশোনা করতে হবে। চোখ-কান খোলা রাখতে হবে। তাহলেই নিজেকে আপডেট রাখা যাবে। সিলেবাসের অন্তর্ভুক্ত বিষয়গুলো সম্পর্কে খুব ভালো ধারণা রাখতে হবে। সব বিষয়েরই খুঁটিনাটি জানতে হবে।
যে বিষয়গুলো মনে রাখতে হবে
* বৃত্ত ভরাট করার সময় খেয়াল রাখবেন যেন বৃত্তটির অভ্যন্তরে সম্পূর্ণ অংশ ঘন কালো হয়ে ভরাট হয় এবং বৃত্তের বাইরে দাগ না পড়ে। বৃত্তের ভিতরের কালো বল পয়েন্ট কলম অথবা পেন্সিলের দাগ অন্তত এতটুকু গাঢ় হতে হবে, যাতে সেখানকার ছাপা লেখাটি একেবারেই পড়া না যায়।
* উত্তরপত্রের প্রথম পৃষ্ঠায় নির্ধারিত সীমানার মধ্যে আপনার নাম ও জেলার নাম লিখবেন এবং স্বাক্ষর করবেন। উত্তরপত্র ফর্মের প্রথম পৃষ্ঠার ডান দিকে আপনার রেজিস্ট্রেশন নাম্বারের জন্য নির্ধারিত ঘর আছে। আপনার রেজিস্ট্রেশন নাম্বার প্রবেশপত্রে দেওয়া হয়েছে। রেজিস্ট্রেশন নাম্বারের সংখ্যাগুলি (ডিজিটস) উত্তরপত্র ফর্মের নির্ধারিত স্থানে অক্ষরের ডান পাশের পাঁচটি ছোট ঘরে লিখতে হবে। নাম্বার লেখা অক্ষরের ডান পাশের প্রথম ঘর থেকে শুরু করতে হবে এবং কোনো ঘর বাদ না দিয়ে পরপর লিখতে হবে। কোনো ঘরে একটির বেশি সংখ্যা লেখা যাবে না। রেজিস্ট্রেশন নাম্বার পাঁচ অঙ্কের কম হলে প্রয়োজনমতো ডানদিকের ঘর খালি থাকবে।
* আপনার উত্তরপত্র পরিদর্শক দ্বারা অবশ্যই স্বাক্ষরিত হতে হবে। তিনি আপনার প্রবেশপত্র, নাম, রেজিস্ট্রেশন নাম্বার, প্রশ্নপত্রের সেট নং ইত্যাদি পরীক্ষা করে উত্তর পত্রের নির্ধারিত স্থানে দস্তখত করে দিবেন এবং উপস্থিত তালিকায় আপনার স্বাক্ষর গ্রহণ করবেন।
* পরীক্ষার হলে অবশ্যই 2B বা একই মানের নরম পেন্সিল (সাবধানতার জন্য একাধিক সঙ্গে রাখতে পারেন), একটি নরম উন্নতমানের পেন্সিল ইরেজার এবং একটি পেন্সিল শার্পনার সাথে নিয়ে আসবেন।
* পরীক্ষা শুরু হওয়ার অন্তত ২০ মিনিট আগে পরীক্ষার হলে নিজ আসনে বসতে হবে। প্রশ্নপত্র দেওয়ার আগেই উত্তরপত্র ফর্ম দেওয়া হবে এবং তাতে নির্ধারিত স্থানে সঠিকভাবে নাম ও জেলা লিখতে হবে এবং যথাস্থানে দস্তখত করতে হবে। এসব কাজ পরীক্ষা আরম্ভ হওয়ার পূর্বেই শেষ করতে হবে, যাতে পরীক্ষার জন্য বরাদ্দ সময় নষ্ট না হয়।
* প্রশ্নপত্র পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ‘প্রশ্নপত্রের সেট নং’ উত্তরপত্রের যথাস্থানে লিখতে হবে এবং সংশ্লিষ্ট বৃত্তটি যথাযথভাবে ভরাট করতে হবে।
য় পরীক্ষার জন্য অতিরিক্ত সময় কোনো অবস্থাতেই দেওয়া হবে না। কেউ বিলম্বে এলে তিনি শুধু বাকি সময়ের জন্যই পরীক্ষা দিতে পারবেন এবং নির্ধারিত সময় শেষ হলে উত্তরপত্র ফেরত নেওয়া হবে।
* আধা ঘণ্টার বেশি বিলম্বে এলে তাকে পরীক্ষা দিতে দেওয়া হবে না।
বিষয়ক অন্যান্য নিদের্শনা
১. সব সময় সাথে একটা পকেট নোটবুক রাখা উচিত। যেখানেই কোনো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যাবে, নোটবুকে তুলে রেখে পরে সুবিধা মতো সময়ে মুখস্থ করা যেতে পারে।
২. গত বিসিএসে আসা এবং পিএসসি কর্তৃক গৃহীত অন্যান্য নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নগুলো পূর্বেই পড়ে নিতে হবে। এতে প্রশ্নের ধরন বোঝা সহজ ও মনে রাখার সুবিধা হবে।
৩. অহেতুক কঠিন ও জটিল বিষয়ে সময় ব্যয় না করে আপনার কাছে যে বিষয় প্রিয় ও সহজ মনে হয়, সেটিই বেশি করে আয়ত্তে আনুন। কারণ, প্রিলিমিনারিতে যত বেশি তথ্য আপনার আয়ত্তে আসবে, তত বেশি নম্বর পেতে সুবিধা হবে।
৪. যে কোনো বিষয় একবার না পড়ে একাধিকবার পড়ার অভ্যাস করতে হবে। এতে তথ্য মনে রাখা সহজ হবে।
৫. যারা ইংরেজীতে দুর্বল, তাদের ইংরেজীতে দক্ষতা অর্জনের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া উচিত। এক্ষেত্রে গ্রুপ আলোচনাই করা কিংবা কোচিংয়ে ভর্তি হওয়া যেতে পারে।
৬. সর্বোপরি বিসিএস প্রস্তুতি একা একা নেয়ার চেয়ে গ্রুপভিত্তিক আলোচনা সবচেয়ে ফলপ্রসূ। এতে তথ্যের যেমন প্রবাহ হয়, তেমনি তথ্য মনে রাখাও সহজ হয়। তাই একা একা না পড়ে গ্রুপভিত্তিক পড়াশোনা করাই বাঞ্ছনীয়।
উপর্যুক্ত আলোচনা-পর্যালোচনা থেকে অনুমান করা যায় যে, বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া সহজ বিষয় না হলেও খুব কঠিন নয়। আর তাই ভয় পাওয়া চলবে না। বরং প্রচণ্ড আত্মবিশ্বাস, ইচ্ছাশক্তি, অদম্য স্পৃহা ও ধৈর্যশীলতা দিয়ে এ চ্যালেঞ্জকে মোকাবিলা করতে হবে। কারণ এটি আপনার জন্যই করা হয়েছে এবং এতে সফল হওয়ার যোগ্যতা আপনার আছে বলেই মনে করা উচিত। সরকারি পথম শ্রেণির ক্যাডার হওয়ার Commitment নিয়ে আন্তরিকভাবে অভিযান শুরু কর সাফল্য নিশ্চিতভাবেই ধরা দেবে আপনার হাতের মুঠোয়।