সাধারণ ও প্রফেশনাল উভয় ক্যাডারের প্রার্থীদের গাণিতিক যুক্তি ও মানসিক দক্ষতা বিষয়ে ৫০ করে মোট ১০০ নম্বরের পরীক্ষায় বসতে হবে। গাণিতিক যুক্তি অংশে ১২টি প্রশ্ন দেওয়া থাকবে, উত্তর দিতে হবে ১০টির। অনেকের ধারণা, গণিতের বিজ্ঞানের ছাত্ররাই ভালো করে, এটি মোটেও ঠিক নয়। চর্চা করলে যেকোনো বিভাগের ছাত্ররাই এতে ভালো নম্বর পেতে পারে। ঠিকঠাক প্রস্তুতি নিলে এ অংশে পুরো নম্বর তোলা সম্ভব।
অনেক সহায়ক বই পাওয়া যায় বাজারে। টপিকস অনুসারে প্রস্তুতি নিলেই এ অংশে ভালো করা যাবে। বিগত বছরের প্রশ্ন দেখলে প্রস্তুতি নিতে সহায়ক হবে। প্রস্তুতির জন্য বেশ সহায়ক হতে পারে গাইড বইও।
প্রতিদিন কিছু না কিছু অঙ্ক অনুশীলন কর অনেকেই অঙ্ক করতে গিয়ে শর্টকাট পদ্ধতি অবলম্বন করে, প্রিলিমিনারির বেলায় এ টেকনিক ঠিক থাকলে লিখিত পরীক্ষার বেলায় উল্টো ফল হতে পারে। প্রতিটি স্টেপ দেখাতে হবে বিস্তারিতভাবে। কোনো সাইড নোট, প্রাসঙ্গিক তথ্য যেন বাদ না যায়।
বীজগাণিতিক সমস্যা, পরিমিতি, ত্রিকোণমিতির জন্য নবম-দশম শ্রেণির সাধারণ গণিতের সংশ্লিষ্ট অধ্যায়টি সমাধান করলে কাজে দেবে। ঐকিক নিয়ম, গড়, শতকরা, সুদকষা, লসাগু, গসাগু, অনুপাত ও সমানুপাত, লাভ-ক্ষতি, রেখা, কোণ, ত্রিভুজ, বৃত্তসংক্রান্ত উপপাদ্য, পিথাগোরাসের উপপাদ্য, অনুসিদ্ধান্তগুলোর জন্য পুরনো ও নতুন সিলেবাসের গণিত ও বীজগণিত বইয়ের পাশাপাশি গাইড বই দেখতে হবে। সূচক ও লগারিদম, সমান্তর ও জ্যামিতিক প্রগমন, স্থানাঙ্ক জ্যামিতি, সেটতত্ত্ব, ভেনচিত্র, সংখ্যাতত্ত্বের জন্য চর্চা করতে হবে নবম-দশম শ্রেণির সাধারণ গণিতের সংশ্লিষ্ট অধ্যায় থেকে। বিন্যাস ও সমাবেশের জন্য একাদশ শ্রেণির বীজগণিতের সংশ্লিষ্ট অধ্যায় ও সম্ভাবনার জন্য দ্বাদশ শ্রেণির বিচ্ছিন্ন গণিতের সংশ্লিষ্ট অধ্যায় দেখতে হবে। সরলের সমাধান সবার পরে করাই বুদ্ধিমানের কাজ। একটি অঙ্ক অনেক নিয়মে করা যায়। জটিল কোনো নিয়মে না গিয়ে শুদ্ধ নিয়মে অঙ্ক করা শিখতে হবে।
মানসিক দক্ষতা অংশের প্রশ্নগুলো একটু ট্রিকি হয়। এ অংশে পুরো নম্বর পাওয়া বেশ কঠিন। ভালোভাবে প্রশ্ন পড়ে মাথা ঠাণ্ডা রেখে বুঝেশুনে উত্তর করতে হবে। এ অংশের প্রশ্ন সহজ মনে হলেও তা কঠিনের চেয়েও কঠিন। তাই কোনো প্রশ্নে একবার চোখ বুলিয়েই সিদ্ধান্তে আসা যাবে না। গাইড ও সহায়ক বইয়ের পাশাপাশি কিনে ফেলুন সঙ্গে তিন-চারটা আইকিউ টেস্টের বই।
ভার্বাল রিজনিং বা মৌখিক যুক্তি অংশে কিছু ঘোরানো কথাবার্তা দিয়ে একটা প্রশ্ন থাকবে। বিজ্ঞান, ইতিহাস, সাহিত্য, ভূগোল বা অন্য যেকোনো বিষয়সম্পর্কিত একটা স্টেটমেন্ট দেওয়া থাকতে পারে, যেটা পড়ে বের করতে হবে কোন অংশটা মিসিং। এ ক্ষেত্রে কাজে লাগাতে হবে কমনসেন্স, গ্রামার ও ল্যাংগুয়েজ স্কিল।
অ্যাবস্ট্রাক্ট ও মেকানিক্যাল রিজনিংয়ে কিছু ডায়াগ্রাম দেওয়া থাকবে, যেখানে কোনো অবজেক্ট কিংবা আইডিয়ার বদলে যাওয়ার ধরনটা ভালোভাবে খেয়াল করে ওই অবজেক্ট বা আইডিয়ার পরবর্তী অবস্থানটা দেখাতে বলা হবে। কিছু ছবি কিংবা ডায়াগ্রাম দিয়ে সে সম্পর্কিত কিছু প্রশ্নও হতে পারে। সিম্পল ম্যাথ কিংবা ডায়াগ্রামগুলোর বিভিন্ন অবস্থান কল্পনা করে উত্তর দেওয়া যায়-এ রকম প্রশ্ন হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। স্পেস রিলেশনস অংশে বিভিন্ন অবজেক্ট বা উদাহরণ দিয়ে সেগুলোতে লেটার কিংবা নম্বরের অবস্থানসম্পর্কিত কোয়ালিটেটিভ কিংবা কোয়ানটিটেটিভ প্রশ্ন হতে পারে।
স্পেলিং অ্যান্ড ল্যাংগুয়েজ অংশে ভুল বানানে, ভুল ব্যাকরণে, ভুল যতিচিহ্নে কিছু শব্দ কিংবা বাক্য দেওয়া থাকবে। সেগুলোকে ঠিক করতে হবে। কিছু এলোমেলো বর্ণ বা শব্দ ব্যবহার করে অর্থপূর্ণ শব্দ কিংবা বাক্য গঠন করতেও বলা হতে পারে। ভাষা, বানান, গণিত ও ইংরেজী গ্রামারে বেসিক দক্ষতা থাকলে একটু বুদ্ধি খাটালেই উত্তর করা যাবে।
নিউমারিক্যাল অ্যাবিলিটি গণিত হলেও একটু ভিন্ন ধাঁচের। এতে কোনো সিরিজে, ছকে বা ডায়াগ্রামে মিসিং নম্বর বের করতে হবে। গণিত আর কমনসেন্স কাজে লাগিয়েও খুব সহজে উত্তর করা যাবে।
গাইড বই, আইকিউ টেস্টের বইয়ের পাশাপাশি সহায়ক হতে পারে ইন্টারনেটে নিয়মিত ঢুঁ মারতে পারেন। মানসিক দক্ষতা অংশের সিলেবাস দেখে বিভিন্ন টপিকস লিখে সার্চ দিতে পারেন। ইন্টারনেটে পাওয়া নানা উদাহরণ, আইকিউ টেস্ট, প্রশ্ন সমাধান করলে কাজে দেবে। প্রশ্ন কমন না এলেও চর্চা করলে যেকোনো ধরনের প্রশ্নের উত্তর করা সহজ হবে।
গাণিতিক যুক্তি ও মানসিক দক্ষতা প্রতিদিন চর্চার বিষয়। এক দিন চর্চা করেননি তো ভুগেছেন। হলফ করে বলতে পারি, এক দিন গণিতচর্চায় বিরতি দিলে আপনি গণিতের অনেক কিছুই ভুলে যাবেন। তাই প্রতিদিন গণিত চর্চা কর, দেখবেন কঠিন টপিকসগুলোও হয়ে গেছে পানির মতো সহজ।
– লিখেছেন ৩৩তম বিসিএসে সম্মিলিত মেধাতালিকায় প্রথম রিদওয়ান ইসলাম
0 responses on "বিসিএস প্রস্তুতি : গণিত"