বিসিএস পরীক্ষার লিখিত ও প্রিলিমিনারি প্রস্তুতির জন্য ইশিখন.কম এ প্রতিটি বিষয়ের প্রতিটি অধ্যায়ের উপর রয়েছে শত শত লেকচার। যেটি থেকে প্রায় ৬০% থেকে ৯০% বিভিন্ন পরীক্ষায় কমন আসে।
শক্তির উৎস ও ব্যবহার
শক্তির প্রধান উৎস
Prime sources of energy
সূর্যই প্রায় সকল শক্তির উৎস। এ ছাড়াও পরমাণুর অভ্যন্তরে নিউক্লীয়াসের নিউক্লীয় শক্তি ও পৃথিবীর অভ্যন্তরে অবস্থিত গলিত উত্তপ্ত পদার্থ থেকে প্রাপ্ত শক্তিও শক্তির উৎস হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। পৃথিবীতে যত শক্তি আছে তার প্রায় সবটাই কোনো না কোনোভাবে সূর্য থেকে আসা বা সূর্য কিরণ ব্যবহৃত হয়েই তৈরি হয়েছে।
রাসায়নিক/জ্বালানি শক্তি :
আদিমকালে মানুষ সকল কাজে পুরোপুরি নির্ভর করত তার পেশি শক্তির উপর। এরপর মানুষ পশুকে বশে আনল এবং পশু শক্তিকে বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করতে লাগল। পশু শক্তির সাহায্যে কৃষিকাজ, জিনিসপত্র বহন ইত্যাদি কাজ মানুষ করত। কাঠ ও গাছের পাতা পুড়িয়ে তাপ শক্তি সৃষ্টি, জলস্রোত ও বায়ুপ্রবাহ থেকে যন্ত্রশক্তি উৎপন্ন করা ছিল সভ্যতার প্রাথমিক স্তর। যন্ত্রশক্তি ব্যবহারের ফলে মানুষের অর্থনৈতিক উন্নতি শুরু হলো। শিল্প বিপ্লব ও বাষ্পীয় ইঞ্জিনের আবিষ্কার মানুষের ও পশুদের পেশি শক্তির উপর নির্ভরতা কমিয়ে দিল। বাষ্প শক্তির সাহায্যে মানুষ বিভিন্ন যান্ত্রপাতি চালাতে থাকল। এ বাষ্প শক্তি উৎপন্ন করার জন্য জ্বালানি প্রয়োজন। বিভিন্ন প্রকার জ্বালানিকেই তাই আমরা শক্তির উৎস হিসেবে বিবেচনা করি।শক্তির অতি পরিচিত উৎস হলো কয়লা, খনিজ তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস। ভূঅভ্যন্তরে কয়লা, তেল বা প্রাকৃতিক গ্যাস পাওয়া যায় যেটি সরাসরি বা সামান্য পরিশোধিত করে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা যায়।
কয়লা : শক্তির উৎসগুলোর মধ্যে কয়লার পরিচিতি সবচেয়ে বেশি। কয়লা একটি জৈব পদার্থ। পৃথিবীতে এক সময় অনেক গাছপালা ছিল। বিভিন্ন প্রাকৃতিক বিপর্যয় ও স্বাভাবিকভাবে গাছের পাতা বা কাণ্ড মাটির নিচে চাপা পড়ে এবং জমতে থাকে। গাছের পাতা ও কাণ্ড রাসায়নিক পরিবর্তনের ফলে কয়লায় রূপান্তরিত হয়। কয়লা পুড়িয়ে সরাসরি তাপ পাওয়া যায়। এটি একটি অতি পরিচিত জ্বালানি। তবে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার ছাড়াও কয়লা থেকে বহু প্রয়োজনীয় পদার্থ উৎপাদিত হয়। এদের মধ্যে রয়েছে কোল গ্যাস, আলকাতরা, বেঞ্জিন, অ্যামোনিয়া, টলুয়িন প্রভৃতি। রান্না করতেও বাষ্পীয় ইঞ্জিন চালাতে কয়লা ব্যবহৃত হয়। আধুনিক কালে কয়লার প্রধান ব্যবহার বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রে। তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রধান উপাদান কয়লা। কয়লা চালিত বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের প্রধান সমস্যা হচ্ছে এটি সালফারের ধোঁয়া নির্গমণ করে। এই ধোঁয়া এসিড বৃষ্টির সৃষ্টি করে। এই এসিড যদিও খুব দুর্বল, কিন্তু তা পুকুর, হ্রদ ও খালে বিলে মাছ মেরে ফেলে, বন ধ্বংস করে এবং প্রাচীন পাথুরে খোদাই করা কাজ নষ্ট করে ফেলে।
খনিজ তেল : শক্তির অন্যতম প্রধান উৎস খনিজ তেল বা পেট্রোলিয়াম। বর্তমান সভ্যতায় পেট্রোলিয়ামের ব্যবহার অত্যন্ত ব্যাপক। গ্রামের কুঁড়েঘর থেকে শুরু করে আধুনিকতম পরিবহন ব্যবস্থা সর্বত্রই এর ব্যবহার রয়েছে। পেট্রোলিয়াম থেকে নিষ্কাশিত তেল পেট্রোল, পাকা রাস্তার উপর দেওয়া পিচ, কেরোসিন ও চাষাবাদের জন্য ব্যবহৃত রাসায়নিক সার পাওয়া যায়। পরিবহনের জ্বালানি হিসেবে পেট্রোলের জুড়ি নেই। পেট্রোলিয়াম থেকে আরো পাওয়া যায় নানান রকম কৃত্রিম বস্ত্র। এগুলো হলো টেরিলিন, পলিয়েস্টার, ক্যাশমিলন ইত্যাদি। তাছাড়া পেট্রোলিয়াম থেকে তৈরি হয় নানা রকম প্রসাধনী। এতসব ব্যবহার থাকা সত্ত্বেও এর মূল ব্যবহার জ্বালানি হিসিবে। পেট্রোলিয়ামজাত সামগ্রীর প্রধান ব্যবহার হলো তড়িৎ ও যান্ত্রিক শক্তি উৎপাদন। পেট্রোলিয়াম একটি ল্যাটিন শব্দ। এটি তৈরি হয়েছে পেট্রো ও অলিয়াম মিলে। ল্যাটিন ভাষায় পেট্রো শব্দের অর্থ পাথর এবং অলিয়াম শব্দের অর্থ তেল। সুতরাং পেট্রোলিয়াম হলো পাথরের তেল অর্থাৎ পাথরের মধ্যে সঞ্চিত তেল। টারশিয়ারি যুগে অর্থাৎ আজ থেকে পাঁচ ছয় কোটি বছর আগে সমুদ্রের তলদেশে পাললিক শিলার স্তরে স্তরে গাছপালা ও সামুদ্রিক প্রাণী চাপা পড়ে যায়। বিভিন্ন রাসায়নিক পরিবর্তনের ফলে এরা রূপান্তরিত হয় খনিজ তেলে।আজকের স্থলভাগের অনেকাংশ প্রাগৈতিহাসিক যুগে সমুদ্রের তলদেশে ছিল।
প্রাকৃতিক গ্যাস : প্রাকৃতিক গ্যাস শক্তির একটি পরিচিত উৎস। বিশেষ করে বাংলাদেশে প্রাকৃতিক গ্যাসের ব্যবহার ব্যাপক। উন্নত দেশগুলোতেও প্রাকৃতিক গ্যাসের ব্যবহার খুব বেশি। বিভিন্ন শিল্প কারখানায় এর ব্যবহার রয়েছে। এর ব্যবহার প্রধানত জ্বালানি হিসেবে। বাংলাদেশে রান্নাবার কাজে এর ব্যাপক ব্যবহার রয়েছে। এছাড়াও ব্যবহার রয়েছে অনেক সার কারখানায়। গ্যাসের সাহায্যে তাপশক্তি উৎপাদিত হয় এবং তা থেকে তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে উৎপাদিত হয় বিদ্যুৎ। প্রাকৃতিক গ্যাস পাওয়া যায় ভূগর্ভ থেকে। সুগভীর কূপ খনন করে ভূগর্ভ থেকে এ গ্যাস উত্তোলন করা হয়। পৃথিবীরঅভ্যন্তরে প্রচণ্ড তাপ ও চাপ এ ধরণের গ্যাস সৃষ্টির মূল কারণ। পেট্রোলিয়াম কূপ থেকেও প্রাকৃতিক গ্যাস পাওয়া যায়। প্রাকৃতিক গ্যাসের প্রধান উপাদান মিথেন গ্যাস। এই সকল শক্তিকে জীবাশ্ম শক্তিও বলা হয়। উপরে শক্তির যে তিনটি উৎস সম্পর্কে আলোচনা করা হলো মানুষের শক্তির চাহিদা বৃদ্ধির ফলে এগুলো খুব দ্রুত ফুরিয়ে আসছে। পৃথিবীর বর্তমান ভৌত অবস্থা যেটি তাতে করে এ সকল উৎস যেমন কয়লা, খনিজ তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস আর নতুন করে সৃষ্টি হওয়ার নয় এদেরকে অনবায়নযোগ্য শক্তি বলা হয়। ফলে শক্তির বিকল্প উৎসের দিকে ঝুঁকছে মানুষ। এ সকল শক্তির বিপরীতে বিকল্প যে সকল উৎস ব্যবহারের দিকে মানুষ আকৃষ্ট হচ্ছে তার মধ্যে সৌরশক্তি,পানি প্রবাহ থেকে প্রাপ্ত শক্তি, জোয়ার-ভাটা শক্তি, ভূ-তাপীয় শক্তি, বায়ু শক্তি, বায়োমাস ইত্যাদি উৎসগুলো প্রধান। এ উৎসগুলো প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সূর্যের উপর নির্ভরশীল। যতদিন পৃথিবী সূর্যের আলো পেতে থাকবে ততদিন পর্যন্ত এ সকল উৎস থেকে শক্তির সরবরাহ পাওয়া সম্ভব হবে। তাই এই সকল উৎসকে নবায়নযোগ্য শক্তির উৎস বলা হয়।
সৌরশক্তি : সূর্য থেকে যে শক্তি পাওয়া যায় তাকে বলে সৌরশক্তি। আমরা জানি সূর্য সকল শক্তির উৎস। পৃথিবীতে যত শক্তি আছে তার প্রায় সবই কোনো না কোনোভাবে সূর্য থেকে আসা বা সূর্য কিরণ ব্যবহৃত হয়েই তৈরি হয়েছে। যেমন, আধুনিক সভ্যতার ধারক জীবাশ্ম জ্বালানি (কয়লা, খনিজ তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস) আসলে বহু দিনের সঞ্চিত সৌরশক্তি। প্রাচীনকাল থেকে মানুষ সূর্য কিরণকে সরাসরি ব্যবহার করছে কোনো কিছু শুকানোর কাজে। বর্তমানে সূর্যের শক্তিকে সবসময় ব্যবহারের জন্য মানুষ নানান রকম উপায় অবলম্বন করছে। লেন্স বা দর্পণের সাহায্যে সূর্য রশ্মিকে অভিসারী করে আগুন জ্বালানো যায়। সূর্য কিরণকে ধাতব প্রতিফলকের সাহায্যে প্রতিফলিত করে তৈরি হয় সৌরচুল্লি। এ চুল্লিতে রান্না করা যায়।
এই লেকচারের পরের পেইজে যেতে নিচের …. তে ক্লিক কর।
পরের পাতাসমুহ >>
0 responses on "বিসিএস ক্র্যাশ - শক্তির উৎস ও ব্যবহার - 1"