বিনামূল্যে ইন্টারনেট সেবা পাবে ৪৩৭টি সরকারি কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়।
ফ্রি ইন্টারনেট সেবার আওতায় আসছে দেশের ৪৩৭টি সরকারি কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়। অপটিক্যাল ফাইবার কেবল নেটওয়ার্ক স্থাপনের মাধ্যমে এসব প্রতিষ্ঠানকে ইন্টারনেট ব্রডব্যান্ড সেবার আওতায় আনার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এই ইন্টারনেট সেবার ব্যয় বহন করবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো। এতে সরকারের ব্যয় হবে প্রায় ৩৭৫ কোটি ২ লাখ টাকা।
এই লক্ষ্যে ‘৪৩৭টি সরকারি কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে অপটিক্যাল ফাইবার কেবল নেটওর্য়াক স্থাপন’ শীর্ষক একটি প্রকল্পের খসড়া তৈরি করেছে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ। এই প্রকল্পের অধীনে ওইসব সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট ব্রডব্যান্ড সুবিধা নিশ্চিত করার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের তথ্যপ্রযুক্তিতে দক্ষতা অর্জনের সুবিধা প্রদান করা হবে।
এই প্রকল্পের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা-পর্যালোচনার লক্ষ্যে আজ বিকেলে পরিকল্পনা কমিশনে ‘প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি’র (পিইসি-আন্তঃমন্ত্রণালয়) এক সভা আহ্বান করা হয়েছে। দেশে বর্তমানে ৩৭টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। আর সদ্য জাতীয়করণভুক্তসহ মোট সরকারি কলেজ রয়েছে ৪০০টি। ওইসব উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সবকটিকেই ইন্টারনেট সেবার আওতায় আনা হচ্ছে। ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার গত ২৯ মার্চ ময়মনসিংহে এক অনুষ্ঠানে বলেন, ‘আগামী ছয় মাসের মধ্যে দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিনামূল্যে ইন্টারনেট সংযোগ দেয়া হবে।’ তিনি বলেন, ‘রাজধানীর বাইরে ইন্টারনেট ব্যবস্থা নাজুক। এ থেকে উত্তরণের জন্য তার মন্ত্রণালয় কাজ করে যাচ্ছে।’
ডাক বিভাগের প্রকল্পের ব্যাপারে জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘খসড়া ডিপিপিতে প্রকল্প ব্যয় জিওবি (বাংলাদেশ সরকার) হতে প্রস্তাব করে ইক্যুইটি হিসেবে প্রদর্শন করা হয়েছে অর্থাৎ প্রকল্পটি সরকারের আয়ধর্মী প্রকল্প হিসেবে প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে প্রকল্পের আর্থিক ও অর্থনৈতিক আয়-ব্যয় বিশ্লেষণের ফলাফল লাভজনক দেখানো হয়েছে। কিন্তু প্রকল্পটি বাস্তবায়নের পর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে বছরে কি পরিমাণ অর্থ ব্যয় করতে হবে এবং এ অর্থের উৎস কি সে সম্পর্কে বিস্তারিত কোন তথ্য নেই। তাছাড়া শিক্ষা প্রশাসনের জন্য আদৌ এই প্রকল্পের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে কিনা সেটাও ভেবে দেখা প্রয়োজন। কারণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য কোন প্রকল্পের প্রয়োজন হলে সেটা দেখার দায়িত্ব শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের। অন্য বিভাগ বা মন্ত্রণালয় তা চাপিয়ে দিতে পারে না।’
ডাক বিভাগের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সরকার দেশে নিরবচ্ছিন্ন আধুনিক ও উচ্চ গতির ব্রডব্যান্ড সেবা নিশ্চিতকল্পে উপজেলা এবং ইউনিয়ন পরিষদ পর্যন্ত অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করে। ইতোমধ্যে বিটিসিএল কর্তৃক জিওবি ও বিটিসিএলের নিজস্ব অর্থায়নে দেশের সকল জেলা ও উপজেলা সদরসহ প্রায় ১ হাজার ৫০০ ইউনিয়ন পরিষদে অপটিক্যাল ফাইবার কেবল স্থাপনের কাজ সমাপ্ত হয়েছে।
অন্যদিকে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ কর্তৃক দেশের অবশিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদগুলো অপটিক্যাল ফাইবার কেবল নেটওয়ার্কের আওতায় আনা হচ্ছে। সরকারের ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়ার লক্ষ্য অর্জনে এই অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল স্থাপন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিশেষ করে সরকারি কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অপটিক্যাল ফাইবার কেবল নেটওয়ার্কের আওতাভুক্ত না হওয়ায় শিক্ষার্থী তথা ভবিষ্যৎ প্রজন্ম সরকারের ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়ার এ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বলে ডাক বিভাগ মনে করছে।
ডাক বিভাগ বলছে, দেশের উন্নয়নের অগ্রগতির ধারা টেকসই রাখতে হলে আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন শিক্ষিত জনগোষ্ঠী তৈরি অপরিহার্য। এ জন্য প্রয়োজন উচ্চগতির ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগ সুবিধার যথাযথ ব্যবহার। দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তিতে শিক্ষিত করার জন্য উপযুক্ত স্থান হচ্ছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এ প্রেক্ষিতে আধুনিক বিশ্বের মানোপযোগী শিক্ষা অর্থাৎ ই-লার্নিং, ভিডিও কনফারেন্স ইত্যাদি সুবিধা প্রদানের লক্ষ্যে এই প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়েছে।
ডাক বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, প্রকল্পের আওতাভুক্ত ১০৪১ কিলোমিটার অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল স্থাপনের প্রস্তাব করা হলেও বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজভিত্তিক বিভাজন দেয়া হয়নি। ফলে অপটিক্যাল ফাইবারের পরিমাণ বাস্তবতার নিরিখে নির্ধারণ করা হয়েছে কিনা তা নিয়ে পর্যালোচনা হওয়া প্রয়োজন।
আরো পড়ুন:
0 responses on "বিনামূল্যে ইন্টারনেট সেবা পাবে ৪৩৭টি সরকারি কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়"