📣চলছে প্রো-অফার!!! ইশিখন.কম দিচ্ছে সকল অনলাইন-অফলাইন কোর্সে সর্বোচ্চ ৬০% পর্যন্ত ছাড়! বিস্তারিত

Pay with:

বাড়ি ভাড়া আইন

বাড়ি ভাড়া আইন

জীবিকার খোঁজে, উজ্জ্বল ভবিষ্যতের সন্ধানে, প্রয়োজনের তাগিদে অনেককেই নিজ বাড়ি-ঘর, পরিবার-পরিজন ছেড়ে অন্যত্র বসবাস করতে হয়। তখন প্রয়োজন হয় মাথা গোজার জন্য এক চিলতে ছাদ। তখন ভাড়া বাড়িই একমাত্র ভরসা। রাজধানী ঢাকার পাশাপাশি দেশের সকল জেলা শহর, পৌরসভায় বাসা ভাড়া দেওয়ার প্রচলন রয়েছে। দেশের সিংহভাগ মানুষ ভাড়া বাসার উপর নির্ভরশীল। প্রায়শই ভাড়াটিয়ারা বাড়িওয়ালা কর্তৃক নানা ধরনের অনিয়ম ও হয়রানির শিকার হন। যেমন – যখন তখন ভাড়া বৃদ্ধি করা, বিনা নোটিশে উচ্ছেদ করা সহ বিভিন্ন ধরনের অনিয়ম। বর্তমান সময়ে এ সমস্যা আরও প্রকট হয়ে দাড়িয়েছে। এ ধরনের অনিয়ম ও হয়রানি প্রতিরোধে বাংলাদেশে প্রচলিত রয়েছে ১৯৯১ সালের বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইন। ভাড়াটে হিসেবে আপনার অধিকার এই আইনে লেখা আছে। এই অধিকার কোনো বাড়িওয়ালা লঙ্ঘন করলে তাঁকে পেতে হবে শাস্তি। আইন অনুযায়ী বাড়িভাড়া-সংক্রান্ত সমস্যা নিষ্পত্তির জন্য ভাড়ানিয়ন্ত্রক রয়েছেন। সাধারণত জ্যেষ্ঠ সহকারী জজ আদালতগুলো এ দায়িত্ব পালন করে থাকেন। এ আইনের কিছুটা হলেও যদি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হতো তাহলে ভাড়াটিয়াদের জিম্মি অবস্থা অনেকটা লাঘব হতো। আসুন দেখে নিই আইনে কী বলা হয়েছে।

 

আইন অনুযায়ী ভাড়া কেমন হবে:

আইনে বাড়ির ভাড়া মানসম্মতভাবে নির্ধারণ করতে বলা হয়েছে।মানসম্মত ভাড়া সম্পর্কে এই আইনের ১৫ (১) ধারায় বলা হয়েছে, ভাড়ার বার্ষিক পরিমাণ সংশ্লিষ্ট বাড়ির বাজার মূল্যের শতকরা ১৫ ভাগের বেশি হবে না। বাড়ির বাজার মূল্য নির্ধারণ করার পদ্ধতিও বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা, ১৯৬৪ তে স্পষ্ট করে উল্লেখ আছে। এ ভাড়া বাড়ির মালিক ও ভাড়াটের মধ্যে আপসে নির্ধারিত হতে পারে। আবার ভাড়ানিয়ন্ত্রকও নির্ধারণ করতে পারেন। এটাকে সর্বস্তরে গ্রহণযোগ্য করতে ঢাকা সিটি করপোরেশান ঢাকা মহানগরীকে দশটি রাজস্ব অঞ্চলে ভাগ করে ক্যাটাগরি ভিত্তিক সম্ভাব্য বাড়ি ভাড়া নির্ধারণ করে দিয়েছে।

 

ভাড়া বৃদ্ধি:

দুই বছরের আগে বাড়ির ভাড়া বাড়ানো যাবে না। কোনো বিরোধ দেখা দিলে বাড়ির মালিক বা ভাড়াটের দরখাস্তের ভিত্তিতে দুই বছর পর পর নিয়ন্ত্রক মানসম্মত ভাড়া পুনর্নির্ধারণ করতে পারবেন। বাড়িওয়ালা যদি মানসম্মত ভাড়ার অতিরিক্ত ভাড়া ভাড়াটের কাছ থেকে আদায় করেন, তাহলে প্রথমবার অপরাধের জন্য মানসম্মত ভাড়ার অতিরিক্ত আদায়কৃত টাকার দ্বিগুণ পর্যন্ত অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন এবং পরবর্তী প্রতিবার অপরাধের জন্য ওই অতিরিক্ত টাকার তিন গুণ পর্যন্ত অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

 

বাড়ি থেকে উচ্ছেদ:

এই আইনের ১৮নং ধারায় উল্লেখ রয়েছে যে, ১৮৮২ সনের সম্পত্তি হস্তান্তর আইন বা ১৮৭২ সালের চুক্তি আইনের বিধানে যাই থাকুক না কেন, ভাড়াটিয়া যদি নিয়মিতভাবে ভাড়া পরিশোধ করতে থাকেন এবং বাড়ি ভাড়ার শর্তসমূহ মেনে চলেন তাহলে যতদিন ভাড়াটিয়া এভাবে করতে থাকবেন ততদিন পর্যন্ত উক্ত ভাড়াটিয়াকে উচ্ছেদ করা যাবে না। এমনকি ১৮(২) ধারা মতে বাড়ির মালিক পরিবর্তিত হলেও ভাড়াটিয়া যদি আইনসম্মত ভাড়া প্রদানে রাজি থাকেন তবে তাকে বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করা যাবে না। চুক্তিপত্র না থাকলে যদি কোনো ভাড়াটে প্রতি মাসের ভাড়া পরবর্তী মাসের ১৫ তারিখের মধ্যে পরিশোধ করেন, তাহলেও ভাড়াটেকে উচ্ছেদ করা যাবে না। যুক্তিসংগত কারণে ভাড়াটেকে উচ্ছেদ করতে চাইলে যদি মাসিক ভাড়ায় কেউ থাকে, সে ক্ষেত্রে ১৫ দিন আগে নোটিশ দিতে হবে। চুক্তি যদি বার্ষিক ইজারা হয় বা শিল্পকারখানা হয়, তবে ছয় মাস আগে নোটিশ দিতে হবে।

 

অগ্রিম জামানত গ্রহণ:

কোনো ব্যক্তি ভাড়ার অতিরিক্ত প্রিমিয়াম, সালামি বা জামানত ভাড়াটেয়াকে দেওয়ার জন্য বলতে পারবেন না। ১৯৯১-এর ১০ ও ২৩ ধারা মোতাবেক বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রকের লিখিত আদেশ ছাড়া অন্য কোনোভাবেই বাড়ি মালিক তার ভাড়াটিয়ার কাছ থেকে অগ্রিম বাবদ এক মাসের বাড়ি ভাড়ার অধিক কোনো প্রকার ভাড়া, জামানত, প্রিমিয়াম বা সেলামি গ্রহণ করতে পারবেন না। তা হলে দণ্ডবিধি ২৩ ধারা মোতাবেক তিনি দণ্ডিত হবেন।

 

ভাড়ার রসিদ প্রদান:

এই আইনে বাড়ির মালিককে ভাড়ার রসিদ প্রদানের কথা বলা হয়েছে। এ রসিদ সম্পন্ন করার দায়দায়িত্ব বাড়িওয়ালার। রসিদ প্রদানে ব্যর্থ হলে ভাড়াটের অভিযোগের ভিত্তিতে বাড়িওয়ালা আদায়কৃত টাকার দ্বিগুণ অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

 

লিখিত চুক্তি:

বাড়িভাড়ার চুক্তি ৩০০ টাকার নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে করা যেতে পারে এবং প্রয়োজনে নিবন্ধন করে নেওয়া যেতে পারে। এর ফলে অনাকাঙ্ক্ষিত ঝামেলা এড়ানো সম্ভব। চুক্তিপত্রে ভাড়া, ভাড়া বৃদ্ধি, বাড়ি ছাড়ার নোটিশ সহ বিভিন্ন বিষয় স্পষ্ট করে উল্লেখ করতে হবে।

 

বাড়ি মেরামত:

কোনো কারণে ভাড়াটিয়ার ভাড়া নেওয়া অংশ মেরামত করার প্রয়োজন হলে বাড়িওয়ালাকে তা মেরামতের নির্দেশ দিতে পারেন এবং মেরামতের খরচ বাড়িওয়ালাকেই বহন করতে হবে। জরুরি মেরামতের ক্ষেত্রে নোটিশ পরবর্তী ৭২ ঘন্টার মধ্যে মেরামতের ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে ভাড়াটিয়া তার নিজ উদ্যোগে মেরামত করতে পারবেন এবং যাবতীয় খরচ ভাড়া থেকে কেটে রাখতে পারবেন।

 

বাসযোগ্য বাসস্থান:

বাড়ি ভাড়া আইন অনুযায়ী বাড়ির মালিক তার বাড়িটি বসবাসের উপযোগী করে রাখতে আইনত বাধ্য। বাড়ির মালিক ইচ্ছা করলেই ভাড়াটিয়াকে বসবাসের অনুপযোগী বা অযোগ্য অবস্থায় রাখতে পারেন না। স্বাস্থ্যসম্মতভাবে বসবাসের উপযোগী করে বাড়িটি প্রস্তুত রাখতে বাড়ির মালিকের উপর এই বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইনের ২১নং ধারায় বাধ্যবাধকতা আরোপ করেছে। অর্থাৎ ভাড়াটিয়াকে পানি সরবরাহ, বিদ্যুৎ সরবরাহ, পয়ঃপ্রণালী নিষ্কাশন ইত্যাদি সুবিধা প্রদান করতে হবে। এমনকি প্রয়োজনবোধে লিফটের সুবিধাও দিতে হবে। কিন্তু উক্তরূপ সুবিধা প্রদানে বাড়ি মালিক অনীহা প্রকাশ করলে কিংবা বাড়িটি মেরামতের প্রয়োজন হলেও ভাড়াটিয়া নিয়ন্ত্রকের কাছে দরখাস্ত করতে পারবেন।

 

আদালতে ভাড়া জমা দেওয়া:

বাড়ির মালিক ন্যায়সংগত কারণ ছাড়াই ভাড়াটিয়াকে বাড়ি ছেড়ে দিতে বলতে পারবেন না। অনেক ক্ষেত্রে বাড়ির মালিক ভাড়া নিতে চান না। এক্ষেত্রে চুক্তি অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বা যদি চুক্তি না থাকে সেক্ষেত্রে মাসের ১৫ তারিখের মধ্যে মানি অর্ডার এর মাধ্যমে বাড়ির মালিকের ঠিকানায় ভাড়া পাঠাতে হবে। বাড়ির মালিক যদি ভাড়ার টাকা গ্রহণ না করে সেক্ষেত্রে টাকা ফেরত আসার পরবর্তী ১৫ দিনের মধ্যে ভাড়াটেকে ভাড়ানিয়ন্ত্রক, অর্থাৎ সহকারী জজের কাছে আইনজীবীর মাধমে দরখাস্ত দিতে হবে। আদালত অনুমোদন দিলে প্রতি মাসে ভাড়া আদালতে জমা দেওয়া যাবে।

 

   
   

0 responses on "বাড়ি ভাড়া আইন"

Leave a Message

Address

151/7, level-4, Goodluck Center, (Opposite SIBL Foundation Hospital), Panthapath Signal, Green Road, Dhanmondi, Dhaka-1205.

Phone: 09639399399 / 01948858258


DMCA.com Protection Status

Certificate Code

সবশেষ ৫টি রিভিউ

eShikhon Community
top
© eShikhon.com 2015-2024. All Right Reserved