৩৭তম বিসিএস লিখিত_প্রস্তুতি
বাংলাদেশ ভারত সম্পর্কঃ
————-
প্রেক্ষাপটঃস্থলসীমান্ত চুক্তি (পর্ব ২)
–
এ টপিকটা বিসিএস সহ আগামী যেকোন সরকারি নিয়োগ পরীক্ষার লিখিত অংশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ন। আপনারা যারা নিয়মিত আমার লেখা পড়ছেন,তারা হয়তো খেয়াল করেছেন আমি সাধারনত পরীক্ষায় আসার খুব বেশি সম্ভাবনা যেগুলো, শুধু সেগুলো নিয়েই আমার আলোচনা থাকে। যেহেতু গুরুত্বপুর্ন টপিক, তাই এটিকে ৩ পর্বে ভাগ করেছি যেন সব তথ্য দেয়া যায়। ইন্টারনেট, পত্রিকা,বিভিন্ন বই ও বাংলা একাডেমির বাংলাদেশ ভারত সম্পর্ক বই থেকে তথ্যগুলো নিয়ে ধারাবাহিকভাবে সাজিয়েছি।আশা করছি লিখিত পরীক্ষায় বাজিমাৎ করতে পারবেন এ লেখা দিয়ে। যারা ১ম পর্ব পড়েননি তারা এই পর্ব পড়ে অনেক কিছুই হয়তো বুঝবেন না। ১ম পর্বটি অবশ্যই সংগ্রহ করে নিবেন যদি না পড়ে থাকেন। সুন্দর একটা নোটের জন্য ৩পর্বই গুরুত্বপূর্ণ। আজ থাকছে ২য় পর্ব।
জিয়ার শাসনামলে এর পরিস্থিতিঃ ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের নানা টানাপোড়েন দেখা দিলেও সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কূটনৈতিক তৎপরতা অব্যাহত থাকে। জিয়াউর রহমানের শাসনামলে ১৯৭৮ সালে তাঁর নয়াদিল্লী সফর ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোরারজি দেশাইয়ের ঢাকা সফরকালে সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নের এটি উত্থাপিত হয়। বাংলাদেশ তিনবিঘা করিডোর হস্থান্তরের উপর জোর দেয়।
১৯৭৭ সালে পশ্চিমঙ্গের বামফ্রন্ট সরকার গঠিত হলে সীমান্ত চুক্তি নিয়ে কেন্দ্রের সাথে তাদের বিরোধ লক্ষ করা যায়। বামফ্রন্টের অন্যতম শরিক ফরোয়ার্ড ব্লক প্রবলভাবে তিনবিঘা করিডোর হস্থান্তরের বিরোধিতা করে। তারা গঠন করে তিনবিঘা আন্দোলন কমিটি।
এরশাদ শাসনামলে এর পরিস্থিতিঃ ১৯৮১ সালের ৩০মমে জিয়াউর রহমান নিহত হওয়ার কয়েক মাসের মাথায় ক্ষমতায় আসেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। ১৯৮২ সালের ৬-৭অক্টোবর তিনি দিল্লী সফর করেন এবং ৩বিঘা করিডোর নিয়ে ভারতের সাথে সমঝোতায় আসেন। সীমান্ত চুক্তির ১ নং অনুচ্ছেদের ১৪নং ধারা অনুযায়ী ৩বিঘা করিডোর বাংলাদেশের অনুকুলে স্থায়ী বন্দোবস্ত দেয়ার উদ্দ্যেশ্য দুই দেশের সরকার এক সমঝোতা স্মারক সই করেন। ঐ সময় ভারত এই নিশ্চয়তা দেয় যে ১৯৭৮ সাকের স্থলসীমান্ত চুক্তি পার্লামেন্টে অনুস্বাক্ষর না হলেও যথাসম্ভব তিনবিঘা করিডোর বন্দোবস্তের শর্তাবলী পূরণ করবে। এব্যাপারে ১৯৮২ সালের ৭ অক্টোবর দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মধ্যে পত্র বিনিময় হয়,যা পরবর্তীকালে চুক্তির অংশ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
এই করিডোর হস্থান্তরের আহির্ত অনুযায়ী বাংলাদেশ জেলার পাটগ্রাম ও আঙ্গরপোতা ছিটমহল যুক্ত করার জন্য ভারত আওরকার স্থায়ীভাবে তিন বিঘা পরিমান জমি বাংকাদেশকে ইজারা দেবে,এর বিনিময়ে বাংলাদেশ সরকার বছরে এক টাকা হারে খাজনা দেবে ভারতকে। এতে আরো বলা হয় যে,খাজনা দিতে হবে না এ কারনে যে ভারত সরকার তার দাবী পরত্যাগ করেছে। এ চুক্তি অনুযায়ী পুলিশ,বিডি আর (বর্তমান বিজিবি), সামরিক বাহিনীসহ বাংলাদেশের যেকোন নাগরিক করিডোর ব্যবহারের পূর্ণ স্বাধীনতা পাবে।
কিন্তু ফরোয়ার্ড ব্লকের বিরোধীতার কারণে তিনবিঘা ইজারা প্রক্রিয়া থেমে যায়। ভারতের কুচলিবাড়ি এলাকার বাসিন্দারা হাইকোর্টে এর বিরুদ্ধে মামলা করেন।
খালেদা জিয়ার শাসনামলে এর পরিস্থিতিঃ ১৯৯২ সালের ২৬ মার্চ ভারতের পররাষ্ট্র সচিব জে এন দীক্ষিত বাংলাদেশের তৎকালীন অতিরিক্ত পররাষ্ট্র সচিব এ এইচ মাহমুদ আলীকে একটি চিঠি দেন,যিনি বর্তমানে পররাষ্ট্র মন্ত্রী। এর জবাবে মাহমুদ আলী ফিরতি চিঠিতে তিনবিঘা করিডোর হস্থান্তরের শর্তাবলী নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে ১১ দফা সমঝোতার কথা জানান। এরপর ২৬-২৮মে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দিল্লি সফরের সময় তিনবিঘা করিডর হস্থান্তরের ব্যাপারে আরেকটি সমঝোতা হয়। এ প্রেক্ষিতে ১৯৯২ সালের ২৬ জুন থেকে বাংকাদেশের কাছে তিনবিঘা করিডরের হস্থান্তর কার্যকর হয়। যদিও সেই বন্দোবস্ত ছিল শর্তসাপেক্ষ এবং সন্ধ্যা ৬টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত গেট খোলার ব্যবস্থা করা হয়।