প্রাকৃতিক দুর্যোগ —— বিশ্ব ও বাংলাদেশ।ভূমিকম্প।বন্যা।

বিসিএস ও ব্যাংক লিখিত প্রস্তুতি

প্রাকৃতিক দুর্যোগ —— বিশ্ব ও বাংলাদেশ।ভূমিকম্প।বন্যা।

::প্রাকৃতিক দুর্যোগে গত ১১৬ বছরে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে ক্ষতি হয়েছে ৭ ট্রিলিয়ন ডলার। আর এসব দুর্যোগে মৃত্যু হয়েছে ৮০ লাখ মানুষের। সে হিসাবে গড়ে প্রতিবছর প্রায় ৬৯ হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছে প্রাকৃতিক দুর্যোগে। ক্ষয়ক্ষতির এ হিসাব বের করতে ১৯০০ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত প্রায় ৩৫ হাজার প্রাকৃতিক দুর্যোগের তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়েছে।১৯০০ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত বৈশ্বিক অর্থনীতি ক্ষতিতে বিভিন্ন দুর্যোগের শতকরা হার নিচে দেখানো হলঃ
দুর্যোগ

———-হার(%)
বন্যা

————–৪০
ভূমিকম্প

——-২৫
ঝড়ঝঞ্ঝা

——–২০
খরা

—————১২
দাবানল

———২
আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতে—————১
উৎসঃ কার্লস্রুহে ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির প্রতিবেদন, জার্মানি।

::একেক দেশের ক্ষেত্রে সিংহভাগ ক্ষতির কারণ একেক দুর্যোগ। যেমন, গত ১১৬ বছরে যুক্তরাজ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে বন্যার কারণে। চিলি আর নিউজিল্যান্ডে ভূমিকম্প এবং মধ্য আফ্রিকা ও দক্ষিণ আমেরিকায় খরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতির কারণ বলে জানানো হয়েছে প্রতিবেদনে। চলতি শতকের চেয়ে গত শতকে বিশ্ব প্রাকৃতিক দুর্যোগে বেশি ক্ষতির শিকার হয়েছে। আর ক্রমেই বন্যার চেয়ে ঝড়ঝঞ্ঝা ও ভূমিকম্প বেশি ক্ষতির কারণ হয়ে উঠছে বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। কার্লস্রুহে ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির প্রকৌশলবিদ ও ভূপদার্থবিজ্ঞানী জেমস ড্যানিয়েল বলেছেন, ১৯৬০ সালের পর থেকে তথ্য বিশ্লেষণ করলে ঝড়ঝঞ্ঝাকেই ক্ষতির সবচেয়ে বড় কারণ হিসেবে দেখা যাবে। প্রায় ৩০% অর্থনৈতিক ক্ষতিসাধিত হয়েছে এসব ঝড়ের কারণে। আর ভূমিকম্প প্রায় ২৬% ক্ষতি করেছে। শুধু চলতি এপ্রিল, ২০১৬ মাসে দুটি ভূমিকম্পেই জাপান ১২০০ কোটি ডলারের ক্ষতির মুখে পড়তে চলেছে বলেও জানিয়েছেন জেমস ড্যানিয়েল।
উৎসঃ কার্লস্রুহে ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির প্রতিবেদন, জার্মানি।

::প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষয়ক্ষতির মধ্যে ৬০% ই বন্যা ও ঝড়ের কারণে। ভিয়েনায় ইউরোপীয়ান জিওসায়েন্সেসের এক বৈঠকে জানানো হয়, ভূমিকম্প, আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত, খরা, তাপপ্রবাহ ও দাবানলে সবচেয়ে বেশি মানুষের প্রাণহানি হয়েছে। অস্ট্রেলিয়ান রিস্ক ইঞ্জিনিয়ার জেমস ডেনিয়েল বলেন, আর্থিক ক্ষয়ক্ষতির এক-তৃতীয়াংশের বেশি (৩৮.৫%) হয়েছে বন্যার কারণে। গত ১১৫ বছরে আর্থিক ক্ষতি ও প্রাণহানির পেছনে মূল ভূমিকা রেখেছে বন্যা। তাছাড়া গত ১১৫ বছরে ২৩ লাখ (২.৩ মিলিয়ন) মানুষের প্রাণহানির কারণ ভূমিকম্প। এসব ঘটনায় ভবন ধসে মারা গেছেন ৬০% মানুষ, ২৮% মারা গেছেন সুনামি ও ভূমিধসে। সার্বিকভাবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে প্রাকৃতিক দুর্যোগে বার্ষিক আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ বাড়ছে।
উৎসঃ বাংলা নিউজ ২৪.কম।১৯ এপ্রিল, ২০১৬।

::বাংলাদেশের কিছু উল্লেখযোগ্য দুর্যোগঃ

১।ঝড়ঃ বায়ুমন্ডলের একটি ভয়াবহ দুর্যোগ। তীব্র বাতাস সংঘটিত, প্রায়শই ভারি বৃষ্টিপাত আর বজ্র বিদ্যুৎ, সমুদ্রে ফুসে উঠা উঁচু ঢেউসৃষ্ট উত্তাল একটা অবস্থা, সবমিলে এই হলো ঝড় নামক প্রাকৃতিক দুর্যোগের চিত্র। গ্রীষ্মমন্ডলীয় ঘূর্ণিঝড়, টর্নেডো, বজ্র বিদ্যুৎপূর্ণ ঝড়বৃষ্টি, গ্রীষ্মমন্ডলীয় নিম্নচাপ এগুলোই বাংলাদেশে সংঘটিত ঝড়ের সাধারণ ধরনসমূহ।

২।ঘূর্ণিঝড়ঃ প্রায় প্রতি বৎসরই বাংলাদেশের সমুদ্র উপকূল অঞ্চলসমূহে তীব্র গতির বাতাস সহ ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে, মাঝে মাঝে এসময়ে বাতাসের গতিবেগ ২৫০ কিমি/ঘণ্টা অথবা তার উপরে পৌঁছায় এবং সমুদ্রে ৩-১০ মিটার উঁচু ঢেউয়ের সৃষ্টি হয়। মানুষের জীবন, সম্পদ ও পশুসম্পদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি সাধিত হয়।নিচে কিছু উদাহরণ দেযা হলোঃ

♦মেঘনা মোহনায়, ১৯৭০ সালের (নভেম্বর ১২-১৩) প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ে জলোচ্ছ্বাস দেখা দিয়েছিল, ঝড়ের সাথে প্রচন্ড জলোচ্ছ্বাসের উচ্চতা ছিল ৩.০৫-১০.৬ মিটার, সাথে সাথে বাতাসের গতিবেগ ছিল ২২২ কিমি/ঘণ্টা। সমুদ্রে জোয়ারকালীন এই সর্বাপেক্ষা আতঙ্কজনক প্রাকৃতিক দুর্যোগে ৩ লক্ষ মানুষ মৃত্যুবরণ করেছিল।

♦১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিল চট্টগ্রাম, কক্সবাজার বরিশাল, নোয়াখালী, পটুয়াখালী, বরগুনা এবং খুলনায় আরও একটি ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে। এ সময়ে ৫-৮ মিটার উচ্চ জোয়ার জলোচ্ছ্বাস দেখা দেয়, এই ঝড়ে বাতাসের গতিবেগ ছিল ২৪০ কিমি/ঘণ্টা, ১৫০০০০ মানুষের মৃত্যু হয়েছিল, ৭০,০০০ গবাদিপশু ধ্বংস হয়েছিল এবং সর্বমোট আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ছিল ৬০০০ কোটি টাকা।

৩।টর্নেডোঃ বাংলাদেশে প্রাকবর্ষা উষ্ণ মৌসুমে আকস্মিকভাবে ঘটে, বিশেষত এপ্রিল মাসে যখন তাপমাত্রা সর্বোচ্চ পর্যায়ে থাকে। একটি টর্নেডোর ব্যাস কয়েক মিটার থেকে প্রায় দুই কিলোমিটারের মত হতে পারে। বাতাসের ঘূর্ণনের বেগমাত্রা ৩০০-৪৮০ কিমি/ঘণ্টা, এবং টর্নেডোর কেন্দ্রে আপড্রাফট ৩২০ কিমি/ঘণ্টা এ পৌঁছাতে পারে।

৪।বজ্র বিদ্যুৎসহ ঝড়বৃষ্টিঃ বাংলাদেশের সর্বত্রই প্রাকবর্ষা উষ্ণ মৌসুম (মার্চ-মে) এবং বর্ষা পরবর্তী (অক্টোবর-নভেম্বর) মৌসুমে সাধারণত সন্ধ্যাকালে প্রচন্ডতাসহ সংঘটিত হয়। বাংলাদেশে এই ঝড়ের বহুল পরিচিত নাম কাল বৈশাখী যখন তা গ্রীষ্মকালের শুরুতে ঘটে এবং বর্ষাপরবর্তী সময়ের ঝড় বলা হয় ‘আশ্বিনের ঝড়’। প্রচুর বৃষ্টিপাত সহ প্রচন্ড শক্তিসম্পন্ন দমকা হাওয়া, বজ্র এবং বিদ্যুৎচমক এই ঝড়ের সাধারণ বৈশিষ্ট্য।

৫।কালবৈশাখীঃ সাধারণত এপ্রিল-মে মৌসুমে বাংলাদেশের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া উত্তর-পশ্চিমাভিমুখী প্রচন্ড ঝড়, স্থানীয়ভাবে যেটি ‘কালবৈশাখী’ নামে পরিচিত। সাধারণ ঝড়বৃষ্টির সাথে এই ঝড়টির পার্থক্য হলো এ ঝড় সব সময়ই বজ্র ও বিদ্যুৎসহ সংঘটিত হয়। কালবৈশাখীর সাথে সাধারণভাবে শিলাবৃষ্টি দেখা যায়। মধ্য মার্চ থেকে এপ্রিল পর্যন্ত বাংলাদেশে তাপমাত্রা পরবর্তী মাসসমূহের অপেক্ষা (শীত মৌসুমের মাসসমূহ) তীব্রভাবে বৃদ্ধি পায়।

৬।উপকূলীয় ভাঙনঃ দুইটি মূল ভূপ্রাকৃতিক অঞ্চলের সংযুক্তির মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের বদ্বীপ সদৃশ উপকূলীয় রেখা গড়ে উঠেছে: নিষ্ক্রিয় বা পরিত্যক্ত গঙ্গা জোয়ারভাটা প্লাবনভূমি এবং সক্রিয় মেঘনা বদ্বীপ সমভূমি। বাংলাদেশের সর্বমোট প্লাবনভূমির প্রায় ৫% ভূমি প্রত্যক্ষভাবে নদীভাঙনের কবলে পড়ছে। দেশের ৪৯৬টি উপজেলা বা থানার মধ্যে ৯৪টি উপজেলায় নদীভাঙনের ঘটনা ঘটেছে। ১৯৯৩ সালের জুন মাসে দেশের ১৬টি জেলার নদীভাঙনের ফলে ২৫.০০০ এর বেশি পরিবার গৃহহীন হয়।

৭।ভূমিধ্বসঃ বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের পার্বত্য এলাকায় একটি সাধারণ ঘটনা, বিশেষত বান্দরবান এবং রাঙ্গামাটি জেলায়। প্রতি বৎসর বিশেষত বর্ষা মৌসুমে প্রাকৃতিক এবং মানব সৃষ্ট উভয় ভাবে ভূমিধ্বসের ঘটনা ঘটে। বান্দরবান শহরের সাথে দেশের অন্যান্য অংশের সাথে সংযোগরক্ষাকারী সড়কসমূহ প্রায় প্রতি বৎসরই ভূমিধ্বসের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং শহরের সাথে সংলগ্ন এলাকার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়।

৮। গত ২০০ বৎসরের হিসাবে দেখা যায় সন্দ্বীপ দ্বীপের আকার হ্রাস পেয়েছে। সন্দ্বীপ প্রণালী নদীগুলির প্রধান ধারার নিকট থেকে ১৭৬৪-১৭৯৩ সালের দিকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল। এসময়ে হাতিয়া দ্বীপ দক্ষিণ দিকে সম্প্রসারিত এবং লক্ষণীয়ভাবে স্থানান্তরিত হয়। ভোলা দ্বীপও উত্তর-দক্ষিণে সম্প্রসারিত হয়। দ্বীপসমূহ সাধারণভাবে ৫০ কিমি এর মত দক্ষিণ অভিমুখে সরে গিয়েছে।
উৎসঃ বাংলাপিডিয়া।

৯।বন্যা

::বিগত পঞ্চাশ বছরে সংঘটিত বন্যাগুলির মধ্যে পাঁচটি বন্যা ছিল ব্যাপক বিস্তৃত এবং ধ্বংসাত্মক। এগুলি হচ্ছে ১৯৫৫, ১৯৭৪, ১৯৮৭, ১৯৮৮ এবং ১৯৯৮ সালের বন্যা। হিসাবে দেখা যায়।
উৎসঃ বাংলাপিডিয়া।

::প্রতিবছর বাংলাদেশের প্রায় ২৬,০০০ বর্গ কিমি অঞ্চল অর্থাৎ ১৮% ভূখন্ড বন্যা কবলিত হয়। ব্যাপকভাবে বন্যা হলে সমগ্র দেশের ৫৫% এর অধিক ভূখন্ড বন্যার প্রকোপে পড়ে। প্রতিবছর গড়ে বাংলাদেশে তিনটি প্রধান নদীপথে মে থেকে অক্টোবর পর্যন্ত আর্দ্র মৌসুমে ৮৪৪,০০০ মিলিয়ন কিউবিক মিটার পানি প্রবাহিত হয়। বাৎসরিক মোট প্রবাহের এটি ৯৫%। তুলনায় একই সময় দেশের অভ্যন্তরে ১৮৭,০০০ মিলিয়ন কিউবিক মিটার নদী প্রবাহ সৃষ্টি হয় বৃষ্টিজনিত কারণে।
উৎসঃ বাংলাপিডিয়া।

::বিভিন্ন সালে বাংলাদেশে সংঘঠিত কিছু ভয়াবহ বন্যা সম্পর্কে নিচে আলোকপাত করা হলঃ

১) ১৯৮৮: আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসে বন্যায় ভয়ংকর বিপর্যয়। প্রায় ৮২,০০০ বর্গ কিমি এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত (সমগ্র দেশের ৬০% এরও অধিক এলাকা)। এ ধরনের বন্যা ৫০-১০০ বছরে একবার ঘটে। বৃষ্টিপাত এবং একই সময়ে (তিন দিনের মধ্যে) দেশের তিনটি প্রধান নদীর প্রবাহ একই সময় ঘটার (synchronize) ফলে বন্যার আরও ব্যাপ্তি ঘটে। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা শহরও প্লাবিত হয়। বন্যা স্থায়িত্ব ছিল ১৫ থেকে ২০ দিন।

২) ১৯৮৯: সিলেট, সিরাজগঞ্জ ও মৌলভীবাজার এলাকায় বন্যায় ৬ লক্ষ লোক পানিবন্দী।

৩) ১৯৯৩: সারা দেশে প্রচন্ড বৃষ্টিতে হাজার হাজার হেক্টর জমির শস্য পানিতে তলিয়ে যায়। মোট ২৮ জেলা বন্যা কবলিত হয়।

৪) ১৯৯৮: সমগ্র দেশের দুই-তৃতীয়াংশের বেশি এলাকা দুই মাসের অধিক সময় বন্যা কবলিত হয়। বন্যার ব্যাপ্তি অনুযায়ী এটি ১৯৮৮ সালের বন্যার সাথে তুলনীয়। ব্যাপক বৃষ্টিপাত, একই সময়ে দেশের তিনটি প্রধান নদীর প্রবাহ ঘটার ফলে ও ব্যাক ওয়াটার এ্যাফেক্টের কারণে এই বন্যা ঘটে।

৫) ২০০০: ভারতের সীমান্তবর্তী বাংলাদেশের ৫টি দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলীয় জেলা বন্যায় বিধ্বস্ত। প্রায় ৩০ লক্ষ লোক গৃহহীন। বন্যাটি ভারতের পশ্চিমবঙ্গে মাটির বাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ার কারণে ঘটে।
উৎসঃ বাংলাপিডিয়া।

===১০।ভূমিকম্প

=
::সাম্প্রতিক সময়ে সংঘঠিত কিছু ভূমিকম্পঃ

১।২৫ এপ্রিল, ২০১৫: শক্তিশালী ভূমিকম্পে নেপালে হাজারো মানুষ নিহত হয়েছে, রাজধানী কাঠমান্ডুসহ বিভিন্ন স্থানে ধ্বংসস্তূপে আটকা পড়েছিল অনেকে। ৭.৯ মাত্রার এই ভূমিকম্পে বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের বিস্তীর্ণ এলাকাও কেঁপে উঠে। ভারতে অন্তত ৫২ জন, তিব্বতে ১২ জন এবং বাংলাদেশে ৩ জনের মৃত্যু হয়েছিল।

২।১৩ এপ্রিলে, ২০১৬: ভূমিকম্পের উৎসস্থল ছিল ঢাকা থেকে ৪৬০ কি মি দূরে মিয়ানমারের মাউলাইক শহরের ৭৪ কি মি দক্ষিণ পূর্বে। এর মাত্রা ছিল ৬.৯। সাম্প্রতিক অতীতে এত বড় মাত্রার ভূমিকম্প আর হয়নি। উল্লেখ্য, শুধু বাংলাদেশ নয়- ভারত , নেপাল ও পাকিস্তানেও এ ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে।

৩।৪ জানুয়ারি,২০১৬: ভোর রাতের ভূমিকম্প কাঁপিয়ে দিয়েছিল বাংলাদেশসহ আশপাশের কয়েকটি দেশ। মাত্রা ছিল ৬.৭। তার উৎপত্তি স্থল ছিল ভারতের মনিপুর রাজ্যে, মিয়ানমার সীমান্তের কাছে।
উৎসঃ বিডি২৪লাইভ।

::১৬ এপ্রিল, ২০১৬ একটি দৈনিকে বিশেষজ্ঞদের বরাত দিয়ে বলা হয়, ‘বড় ধরনের ভূমিকম্প আঘাত হানলে এর পরবর্তী উদ্ধার তৎপরতা ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার জন্য বাংলাদেশের তেমন প্রস্তুতি নেই। গত ২০১৫ সালের এপ্রিলে নেপালে বা গত ১৩ এপ্রিল, ২০১৬ মিয়ানমারে আঘাত হানা ভূমিকম্পের সমান মাত্রার ভূমিকম্প বাংলাদেশের ভেতরে বা কাছাকাছি আঘাত হানলে ঢাকা বা বড় শহরগুলো যেমন মৃত্যুপুরীতে পরিণত হবে তেমনি উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনাও কঠিন হবে।’
উৎসঃ দৈনিক সংগ্রাম।১৮ এপ্রিল, ২০১৬।

::ভূমিকম্পে ঘনবসতিপূর্ণ বাংলাদেশে ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা হবে অনেক বেশি। বিশেষ করে ঢাকা শহর মৃত্যুপুরীতে পরিণত হবে। রিখটার স্কেলে ৭ বা তার বেশি তীব্রতার ভূমিকম্প হলে ঢাকা শহরের ৭২ হাজার ভবন ভেঙ্গে পড়বে। যদি বিল্ডিং কোড মেনে ভবন বানানো হয় এবং ভূমি ব্যবহার পরিকল্পনা অনুসরণ করা হয় তাহলে ক্ষয়ক্ষতি অনেক কমানো সম্ভব।——- অধ্যাপক ড. মাকসুদ কামাল। চেয়ারম্যান, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

::ভূমিকম্পে জানমালের ক্ষয়ক্ষতি থেকে বাঁচতে যেসব কাজ করতে হবে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ইমারত নির্মাণ বিধিমালা মেনে ভবন নির্মাণ করা। এ ছাড়া নতুন ভবন ভূমিকম্প সহনশীল করে নির্মাণ এবং পুরনো ভবনকে রেক্টোফিট (মজবুতি)।——- অধ্যাপক ড. মেহেদী আহমদ আনসারী। ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ, বুয়েট।

::শক্তিশালী ভূমিকম্পে রাজধানীতে ধসে যেতে পারে ১০% ভবন। এতে কমপক্ষে ২ লাখ মানুষের প্রাণহানি হতে পারে। অন্যদিকে ধসে পড়া ভবনে অবরুদ্ধ হতে পারে ৫ থেকে ১০ লাখ মানুষ। উদ্ধার কাজে যথাযথ প্রস্তুতি না থাকায় গ্যাস লাইন ফেটে, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ও অনাহারে মৃত্যুর সংখ্যা আরো বাড়তে পারে।—– অধ্যাপক সৈয়দ হুমায়ুন আকতার। ভূতত্ত্ব বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

::ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে এবং সিডিএমপি-র সহায়তায় ৬২,০০০ নগর স্বেচ্ছাসেবককে প্রশিক্ষণ দেয়ার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এই স্বেচ্ছাসেবকদের দুর্যোগ পরবর্তী উদ্ধারকার্য ও প্রাথমিক চিকিৎসায় অংশগ্রহণের লক্ষ্যে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে প্রায় ২৬ হাজার জনকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে।
উৎসঃ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়।

:: গত ১৫০ বছরে বাংলাদেশে ৭টি বড় আকারের ভূমিকম্প হয়েছে। এর মধ্যে দুটির কেন্দ্র ছিল বাংলাদেশের অভ্যন্তরে। এর একটি হয় ১৯১৮ সালের ৮ জুলাই। ৭.৬ মাত্রার সেই ভূমিকম্পের কেন্দ্র ছিল সিলেটের শ্রীমঙ্গলে। আর ১৮৮৫ সালের ১৪ জুলাই একই মাত্রার ভূমিকম্প হয়, যার কেন্দ্র ছিল মানিকগঞ্জে। আরও কয়েকটি ভূমিকম্প বাংলাদেশের কেন্দ্রে না হলেও রেখে গেছে ধ্বংসের চিহ্ন।
উৎসঃ দৈনিক সংগ্রাম।১৯ এপ্রিল, ২০১৬।

::ইতিপূর্বে পঞ্চাশ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ মাত্রার ভূমিকম্পে ২০১১ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা ৬টা ৪০ মিনিটে কেঁপে উঠেছিল গোটা বাংলাদেশ। ভূপৃষ্ঠের মাত্র ২০ কিলোমিটার অভ্যন্তরে এবং ঢাকার ৬৯৫ মাইল দূরে উত্তর-পূর্ব ভারতের সিকিম রাজ্যে সৃষ্ট ৬.৮ তীব্রতার প্রায় দু’মিনিট স্থায়ী হয়। পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, বাংলাদেশে অনুভূত বেশির ভাগ ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল সিকিমে অথবা ভারত-মায়ানমার সীমান্তে।
উৎসঃ দৈনিক সংবাদ।০৭ জানুয়ারি, ২০১৬।

::২০০৬ সাল থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে ৪ মাত্রার ১১৫টি এবং ৫ মাত্রার ১০টি ভূমিকম্প অনুভূত হয়। ভূমিকম্পের মাত্রা নিরূপণে রিখটার স্কেলে ৫ থেকে ৫.৯৯ মাত্রাকে মাঝারি, ৬ থেকে ৬.৯৯ মাত্রাকে তীব্র, ৭ থেকে ৭.৯৯ মাত্রাকে ভয়াবহ এবং এর বেশি হলে তাকে অতি ভয়াবহ ভূমিকম্প হিসাবে বিবেচনা করা হয়। উৎসঃ বাংলাদেশ আর্থকোয়েক সোসাইটি।

::পৃথিবীতে সাইক্লোন, ভূমিকম্প ও সুনামিসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঝুঁকির তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ষষ্ঠ।
উৎসঃ জাতিসংঘের গবেষণা।

::পৃথিবীর সর্বোচ্চ ভূমিকম্প-ঝুঁকিপূর্ণ ২০টি দেশের মধ্যে ঢাকার অবস্থান প্রথম। এখানে ৭.৫ মাত্রার ভূমিকম্প ঢাকার ৭২ হাজার ভবন গুঁড়িয়ে দিতে পারে এবং তাতে ৩ কোটি টনের ধ্বংসস্তূপ তৈরি হবে।
উৎসঃ আর্থকোয়েক ডিজেস্টার ইনডেক্স, জাতিসংঘ।

::বিশ্বের শীর্ষ ১০ ভূমিকম্পের একটি তালিকা নিচে দেওয়া হলোঃ

১। চিলি, ২২ মে ১৯৬০ : মাত্রা—৯.৫।এখন পর্যন্ত বলা হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় মাত্রার ভূমিকম্প।এই ভূমিকম্পে চিলিতে মারা গিয়েছিল ৪৪৮৫ মানুষ। আহত হয়েছিল ২০ লাখের বেশি।

২।প্রিন্স উইলিয়াম সাউন্ড, আলাস্কা, ২৪ মার্চ ১৯৬৪ : মাত্রা—৯.২।এই ভূমিকম্পের ফলে আলাস্কায় ভয়ংকর ভূমিধসের সৃষ্টি হয়েছিল। এতে সাগরে সুনামিরও সৃষ্টি হয়। মৃতের সংখ্যা ছিল ১২৮ জন আর ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ছিল ৩১ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলার।

৩।উত্তর সুমাত্রার পশ্চিম উপকূল, ২৬ ডিসেম্বর ২০০৪ : মাত্রা—৯.১। ভূমিকম্পের সঙ্গে সমুদ্রপৃষ্ঠের পানির উচ্চতা বেড়ে যাওয়ার একটা সম্পর্ক রয়েছে, এটাই সুনামি নামে পরিচিত। পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে প্রাণঘাতী সুনামি বলা হয় ২০০৪ সালে, একটি ৯.১ মাত্রার ভূমিকম্পের পর। এশিয়া ও পূর্ব আফ্রিকার ১৪টি দেশে অনুভূত হয়েছিল এই ভূমিকম্প ও সুনামি। এই সুনামিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল ইন্দোনেশিয়া; এক লাখ ৭০ হাজার মানুষ এতে প্রাণ হারায়। অনেক মৃতদেহই উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। মৃতের সংখ্যা নিরূপণ করতে কয়েক মাস সময় লেগে যায়। ইন্দোনেশিয়ার মৎস্য শিল্প ও কারখানার প্রায় ৬০% পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যায় এই সুনামিতে।

৪। কামচাটকা, ৪ নভেম্বর ১৯৫২ : মাত্রা—৯। রাশিয়ার দূরপ্রাচ্যে আঘাত হেনেছিল শক্তিশালী এই ভূমিকম্প। এর ফলে প্রশান্ত মহাসাগরে সৃষ্টি হয়েছিল সুনামি। কামচাটকা উপদ্বীপ ছিল এই ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল। তিন হাজার মাইলজুড়ে অনুভূত হয়েছিল এই ভূকম্পন, যেটি রাশিয়ার দূরপ্রাচ্য ও হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জে অনুভূত হয়েছিল। তবে এই ভূমিকম্পে হতাহতের কোনো ঘটনা ঘটেনি। পেরু ও চিলিতেও আঘাত হেনেছিল এই ভূমিকম্প।

৫।আরিকা, পেরু (বর্তমান চিলি), ১৩ আগস্ট ১৮৬৮ : মাত্রা—৯। প্রশান্ত মহাসাগরে সৃষ্ট এই ভূকম্পন হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জ পর্যন্ত অনুভূত হয়েছিল। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল দক্ষিণ আমেরিকার আরেকুইপা শহর। সেখানে মারা যায় ২৫ হাজার মানুষ। বলিভিয়ার লা পাজ শহরেও অনুভূত হয়েছিল ভূকম্পন। প্রথম আঘাত হানার চার ঘণ্টা পর ভূমিকম্পটির আফটার শক আঘাত হানে সমুদ্রে। এতে ১৬ মিটার উঁচু ঢেউ আছড়ে পড়েছিল সৈকতে।

৬। যুক্তরাষ্ট্রের উত্তর প্রশান্ত মহাসাগরীয় উপকূল, ২৬ জানুয়ারি ১৭০০ : মাত্রা—৯ (আনুমানিক)। অনেক আগের এই ভূমিকম্পের কোনো দালিলিক প্রমাণ না থাকলেও উত্তর আমেরিকার বাসিন্দারা মুখে মুখে শুনেছেন এই ভূমিকম্প এবং তার ক্ষয়ক্ষতির কথা। উত্তর আমেরিকা মহাদেশের অন্যতম ভয়াবহ ভূমিকম্প মনে করা হয় এটিকে। ভ্যাঙ্কুভার দ্বীপের পাচেনা উপকূলে বসবাস করা জনগোষ্ঠী সুনামিতে সৃষ্ট ঢেউয়ের কারণে তলিয়ে গিয়েছিল।

৭। চিলি, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১০ : মাত্রা—৮.৮।সপ্তদশ শতক থেকেই চিলিতে ছোট-বড় ভূমিকম্প অনুভূত হয়ে আসছে। ২০১০ সালের এই ভূমিকম্পে প্রাণ হারান ৫২১ জন মানুষ। আহত হন অন্তত ১২ হাজার। আট লাখ মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েন।

৮।ইকুয়েডরের উপকূল, ১৩ জানুয়ারি ১৯০৬ : মাত্রা—৮.৮।ইকুয়েডর ও কলম্বিয়ার সমুদ্র উপকূলে সৃষ্ট এই সুনামিতে মারা যায় পাঁচ শতাধিক মানুষ। আহত হয় আরো দেড় হাজার। মধ্য আমেরিকা ও সানফ্রান্সিসকোতেও অনুভূত হয় এই ভূমিকম্প। ভূমিকম্পের প্রভাবে হাওয়াইয়ের নদীগুলো প্লাবিত হয়ে বন্যার সৃষ্টি হয়েছিল।

৯।লিসবন, ১ নভেম্বর ১৭৫৫ : মাত্রা—৮.৭।পর্তুগালের রাজধানী লিসবনে আঘাত হানা শক্তিশালী এই ভূমিকম্পে শহরের প্রায় অর্ধেক মানুষ প্রাণ হারিয়েছিল। ভূকম্পনের ফলে সৃষ্ট সুনামি এবং অগ্নিকাণ্ড পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ করে তোলে। উত্তর আমেরিকা, ফ্রান্স ও উত্তর ইতালিতে অনুভূত হয়েছিল এই ভূমিকম্প।

১০।আসাম-তিব্বত, ১৫ আগস্ট ১৯৫০ : মাত্রা—৮.৬।ভয়াবহ এই ভূমিকম্পে আসাম-তিব্বতের ৭০টি গ্রাম নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ভারতের আসাম প্রদেশ। এতে মারা যায় ১৫২৬ জন মানুষ। ভূমিকম্পের পরে ভয়াবহ বন্যা দেখা দেয়।
উৎসঃ দ্য গার্ডিয়ান, ব্রিটিশ পত্রিকা।

::ভূমিকম্প সম্পর্কে ভয়াবহ কিছু তথ্য নিচে দেয়া হলোঃ

১। প্রতি ৩০ সেকেন্ডে দুনিয়ার কোথাও না কোথাও ভূমিকম্প হচ্ছে। এটা আলাদা কথা কী মানুষ সেগুলোর সব টের পাচ্ছে না।
২। ভূমিকম্পের ফলে আগ্নেয়গিরি জেগে উঠে অগ্ন্যুত্‍পাত হতে পারে।
৩।দুই মাত্রার কম ভূমিকম্প আমরা টের পাই না। রিখটার স্কেলে ৩ মাত্রার থেকে বেশি মাত্রার ভূমিকম্পে মাটি কেঁপে ওঠে।
৪। সাত বা তার থেকে বেশি মাত্রার ভূমিকম্পে গোটা একটা শহর ধ্বংস হয়ে যেতে পারে।
৫। বিশ্বের সবচেয়ে বেশি মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছিল চিলিতে ১৯৬০ সালে। রিখটার স্কেলে চিলির সেই ভূমিকম্পের মাত্র ছিল ৯.৫।
৬।দুনিয়ার সবচেয়ে ভয়াবহ ভূমিকম্প হয়েছিল চীনে। ১৫৫৬ সালে। ৮ লক্ষ ৩০ হাজারেরও বেশি মানুষ মারা গিয়েছিল এই ভূমিকম্পে।
৭।১৯৮৫ সালে মেক্সিকো সিটিতে ৮ মাত্রার ভয়ানক ভূমিকম্প হয়। সেই ভূমিকম্পে মেক্সিকোর এক হাসপাতাল ভেঙে পড়ে। এক সপ্তাহ সেই হাসপাতালের ভিতর কেউ ঢুকতে পারেননি। দিন আটেক পর উদ্ধারকারী দল গিয়ে বেশ কয়েকজন সদ্যোজাতকে উদ্ধার করে। এক সপ্তাহ ধরে সেইসব সদ্যোজাত শিশুদের কোনো পানি বা খাবার, বা কোনো মানুষের সান্নিধ্য পায়নি। এরপরেও কীভাবে শিশুরা বেঁচে ছিল সেটাই আশ্চর্যের।
৮। ১৮৮১ সালে ১৬ ডিসেম্বর এক ভয়াবহ ভূমিকম্পে মিসিসিপি নদীর একটা অংশ পিছন দিকে বইতে শুরু করে।
৯।বিশ্বে প্রতি বছর ৫ লক্ষ ভূমিকম্প রিখটার স্কেলে ধরা পড়ে। তাদের মধ্যে মাত্র এক লক্ষ আমরা অনুভব করতে পারি। তাদের মধ্যে ১০০টা ভূমিকম্প ক্ষয়ক্ষতির জন্য দায়ি থাকে। ১০। কিছু কিছু প্রাণী নাকি ভূমিকম্প আগেই টের পায়। তবে সম্প্রতি গবেষণায় জানা যায়, মানুষও আগে থেকে ভূমিকম্প টের পেতে পারে। এর টের পাওয়ার কারণ হচ্ছে মাটির তলার কিছু গ্যাস পুকুর বা জলাশয়ের পানির মাধ্যমে বেরিয়ে আসে। মানুষ সে অস্বাভাবিক গন্ধ থেকেই ভূমিকম্পের এটি টের পায়।
১১। আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়ার পার্কফিল্ডকে বলা হয় পৃথিবীর ভূমিকম্পের রাজধানী। এখানে একটি ব্রিজ আছে, যেটি দুটি টেকটনিক প্লেটের ওপর অবস্থিত।
১২। ভূমিকম্প নিরূপক যন্ত্র আবিষ্কৃত হয়েছিল দুই হাজার বছর আগে। তৈরি করেছিলেন চিনের বিজ্ঞানী ঝ্যাং হ্যাং।
১৩।প্রতিবছর ভূমিকম্পে প্রায় আট হাজার মানুষ মারা যায়। গত চার হাজার বছরে এক কোটি ৩০ লাখ মানুষ মারা গেছে ভূমিকম্পে।
১৪।প্রতি বছর জাপানে দেড় হাজার বার ভূমিকম্প হয়।
উৎসঃ দৈনিক নয়াদিগন্ত। ০৫ জানুয়ারি ২০১৬।

=দুর্যোগ প্রশমন

==

::রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, বাংলাদেশ প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় বহির্বিশ্বে রোল মডেল হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।তিনি বলেন, এ বছর ‘জাতীয় দুর্যোগ প্রস্তুতি দিবস-২০১৬’ উদ্যাপন উপলক্ষে প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে, ‘দুর্যোগে পাবো না ভয়, দুর্যোগকে আমরা করবো জয়’ যেটি খুবই বাস্তবধর্মী ও সময়োপযোগী।’ তিনি বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব না হলেও জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং পূর্ব প্রস্তুতির মাধ্যমে যে কোন দুর্যোগে জীবন, জীবিকা ও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি সহনীয় পর্যায়ে রাখা সম্ভব হবে। রাষ্ট্রপতি বলেন, ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে বাংলাদেশ দুর্যোগপ্রবণ অঞ্চলে অবস্থিত। বন্যা, ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসসহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ বাংলাদেশকে প্রতিনিয়ত মোকাবিলা করতে হয়।
উৎসঃ দৈনিক কালের কন্ঠ।৯ মার্চ, ২০১৬।

::১৯৬০ সাল থেকে প্রবল দুর্যোগের সংখ্যাগত বৃদ্ধি হলেও প্রতিবৎসর দুর্যোগের ফলে মানুষের মৃত্যুর হার প্রায় ৬% হারে কমে এসেছে, একই সাথে সম্পদ হানির পরিমাণও ক্রমান্বয়ে কমে এসেছে। অবশ্য কার্যকর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এবং এ সম্পর্কে মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধি সত্ত্বেও প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঘটনা প্রায়শই ঘটছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের সংখ্যা বৃদ্ধির পিছনে যেসব বিষয় ক্রিয়াশীল, তার মধ্যে উন্নততর বিশ্ব সংবাদ প্রচার ব্যবস্থা, বৃদ্ধিপ্রাপ্ত জনসংখ্যা, দ্রুত শহরায়ন এবং প্রাকৃতিক ভারসাম্যহীনতার বৃদ্ধি। প্রাকৃতিক দুর্যোগসমূহকে বর্তমান বিশ্বে যথেষ্ট গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হচ্ছে এবং এর প্রশমনের জন্য বিশ্বব্যাপী ঐক্যবদ্ধ প্রয়াসও গড়ে উঠেছে।
উৎসঃ বাংলাপিডিয়া।

::ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহারঃ

১।দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে এমন জনগোষ্ঠীকে সতর্ক করার জন্য মোবাইল-ফোন” target=”_blank”>মোবাইল ফোন ভিত্তিক ৩(তিন) ধরনের প্রযুক্তি যথা: CBS, SMS ও IVR নির্ভর দুর্যোগ সতর্কীকরণ পদ্ধতি প্রচলন করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে:

♦IVR: মোবাইল-ফোন” target=”_blank”>মোবাইল ফোনের মাধ্যমে দুর্যোগের আগাম বার্তা জনগণের চাহিদা মোতাবেক অবহিতকরনের জন্য Interactive Voice Response (IVR) নামক উদ্যোগটি গ্রহন করা হয়েছে। এখন যে কেউ সিটিসেল ব্যতীত যে কোনে মোবাইল অপারেটরে ১০৯৪১ ডায়াল করে আবহাওয়ার সর্বশেষ তথ্য জানতে পারবেন।

♦CBS: নির্দিষ্ট এলাকার জনগনের নিকট দুর্যোগের সতর্কবার্তা দ্রুত পৌঁছানোর জন্য মোবাইল-ফোন” target=”_blank”>মোবাইল ফোনের Cell Broadcasting (CB) প্রযুক্তি ব্যবহারের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় প্রবণ কক্সবাজার এবং বন্যা প্রবণ সিরাজগঞ্জ জেলায় মোবাইল-ফোন” target=”_blank”>মোবাইল ফোনের CB প্রযুক্তি ব্যবহার করে দুর্যোগের আগামবার্তা প্রেরণের পরীক্ষামূলক পাইলট অপারেশন শুরু করা হয়।

♦SMS Alert: দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার কাজে নিয়োজিত নির্দিষ্ট ব্যক্তির নিকট দুর্যোগের আগাম সর্তক বার্তা পৌছানোর জন্য SMS Alter ব্যবহারের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে । ইতিমধ্যে ৫৪টি জেলা এবং সংশ্লিষ্ট উপজেলা ও ইউনিয়ন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও সদস্য সচিবদের মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে ডাটাবেইজ তৈরী করা হয়েছে।

২।Social Protection Management Information System (SPMIS): সামাজিক নিরাপত্তা বেস্টনী কর্মসূচীর সুষ্ঠু তদারকী ও নীতি নির্ধারনে সহায়তার জন্য বিভিন্ন খাতে বরাদ্দ/বিতরণ কার্যক্রমের বিস্তারিত তথ্যাদি ডাটাবেইজ এ সংরক্ষন করার জন্য ওয়েবসাইট ভিত্তিক SPMIS প্রবর্তন করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্হাপনা অধিদপ্তরের জেলা ভিত্তিক কার্যক্রম ওয়েব পোর্টালে প্রকাশ করা হচ্ছে এবং এ পোর্টালটির লিংক ইউনিয়ন তথ্য সেবা কেন্দ্রের পোর্টালের সাথে যুক্ত করার উদ্যোগ গ্রহন করা হয়েছে।

৩।Microzonation Map: আইসিটি নির্ভর Microzonation Map ভুমিকম্পের ঝুকি মুক্ত নগরায়নের কাজে ব্যবহার করা হয়ে থাকে, যেটি শহরের ভৌত পরিকল্পনা, উপযুক্ত ভূমি ব্যবহার, নতুন নগরায়নের উপযুক্ত স্থান চিহ্নিতকরণ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, বিল্ডিং কোড হালনাগাদকরণ, পুরানো অবকাঠামো মেরামত/পূন: নির্মাণ/রেট্রোফিটিং কাজে ব্যবহার করা হয়। ভূমিকম্প জনিত বিপদাপন্ন এবং ঝুঁকি বিবেচনা করে দেশের ৩ (তিন) বড় শহর যথা: ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেট Microzonation Map তৈরী করা হয়েছে। দেশের ঝুঁকিপূর্ণ আরো ৬(ছয়)টি শহর যথা: টাংগাইল, ময়মনসিংহ, বগুড়া, রংপুর, দিনাজপুর এবং রাজশাহীর Microzonation Map তৈরীর কাজ ২০১৪ সালের মধ্যে সম্পন্ন হয়েছে।

৪। Cyclone Shelter Database: উপকূলীয় অঞ্চলে নির্মিত ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্যাদি ওয়েবসাইট ভিত্তিক ডাটাবেইজে সংরক্ষন করা হয়েছে। এ ডাটাবেইজটিতে আশ্রয়কেন্দ্রগুলির কাঠামোগত এবং আনুষাঙ্গিক তথ্য যেমন: ভৌগলিক অবস্থান (অক্ষাংশ/দ্রাঘিমাংশ), ব্যবহার উপযোগিতা, ধারনক্ষমতা, ইত্যাদি সংরক্ষন করা হয়েছে। এ ডাটাবেইজটির তথ্য ব্যবহার করে নতুন ঘূর্নিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র নির্মানের সঠিক স্থান নির্ধারণ করা, ঘূর্ণিঝড়ের সময় লোকজনকে আশ্রয়কেন্দ্রে আনার জন্য উপযুক্ত পথ নির্ধারন করা এবং আশ্রয়কেন্দ্রের ব্যবস্থাপনা ও মেরামতের প্রয়োজনীয়তা নিরুপণ করা যাবে।

৫।Inundation Map/Risk Map for Storm Surge: বাংলাদেশের দক্ষিন উপকূলীয় অঞ্চল প্রায় প্রতি বছর ঘূর্নিঝড় জনিত জলোচ্ছাসে প্লাবিত হয়, ফলে জীবন-জীবিকা এবং অবকাঠামোর ব্যপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। এই সমস্যা সমাধানের জন্য দেশের দক্ষিন উপকূলীয় অঞ্চলের জলোচ্ছাস জনিত বন্যার স্থান ভিত্তিক গভীরতার তথ্য নির্ভর Inundation Map/Risk Map for Storm Surge তৈরী করা হয়েছে, এ মানচিত্র হতে এ সকল এলাকার ঘর বাড়ীর ভিটা কতটুকু উঁচু করতে হবে, আশ্রয়কেন্দ্র, রাস্তা বা অন্যান্য অবকাঠামো কতটুকু উঁচু তে করতে হবে, তার ধারনা পাওয়া যাবে।
উৎসঃদুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়।””

আরো পড়ুন: 

কতটা ভয়াবহ ঘুর্ণিঝড় ফণী?

ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় ‘ফনি’, সুরক্ষিত থাকতে যা করবেন, যা করবেন না?

ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ কিভাবে হচ্ছে

ঘুর্ণিঝড় জলোচ্ছ্বাস ও দুর্যোগের কোন সংকেতের কি অর্থ

বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশে আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড়

ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয় যেভাবে

প্রাকৃতিক দুর্যোগ – বিশ্ব ও বাংলাদেশ।ভূমিকম্প।বন্যা।

বাংলাদেশে আঘাত হানা ভয়ঙ্কর সব ঘূর্ণিঝড়

Leave a Reply

স্যার, কিভাবে আপনাকে সাহায্য করতে পারি?

Click one of our representatives below

Customer Support
Customer Support

Syeda Nusrat

I am online

I am offline

Technical Support
Technical Support

Ariful Islam Aquib

I am online

I am offline