প্রশাসন ক্যাডারের হাতে অবৈধ এমপিওভুক্তির অভিযোগ নিষ্পত্তির ক্ষমতা যাচ্ছে

প্রশাসন ক্যাডারের হাতে অবৈধ এমপিওভুক্তির অভিযোগ নিষ্পত্তির ক্ষমতা যাচ্ছে

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে কর্মরত প্রশাসন ক্যাডারের হাতে অবৈধ এমপিওভুক্তির অভিযোগ নিষ্পত্তির ক্ষমতা যাচ্ছে।

অবৈধভাবে এমপিওভুক্তি, ভুয়া সনদ দিয়ে চাকরিতে প্রবেশসহ বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ নিষ্পত্তির ক্ষমতা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে কর্মরত প্রশাসন ক্যাডার কর্মকর্তাদের হাতে যাচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে শিক্ষামন্ত্রীর সাবেক পিএস ও প্রশাসন ক্যাডার থেকে যুগ্মসচিব পদে উন্নীত শামীম আল রাজিকে প্রধান করে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন ও নিরীক্ষা প্রতিবেদন পর্যালোচনা ও বাস্তবায়ন নামের চার সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। গত ১৩ মার্চ গঠন করা কমিটির অপর তিন সদস্যও প্রশাসন ক্যাডারভুক্ত।

জানা যায়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রশাসনিক, আর্থিকসহ সব অভিযোগ তদন্ত, অনুসন্ধান ও পরিদর্শনের দায়িত্ব শিক্ষা মন্ত্রণালয়াধীন পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ)। ১৯৮0 খ্রিস্টাব্দে যাত্রা শুরু হওয়া এই সংস্থাটির পরিচালক থেকে শুরু করে সহকারী পরিদর্শকদের অধিকাংশ পদেই বি সি এস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তারা রয়েছেন। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এই কর্মকর্তারাই তদন্ত ও পরিদর্শন করে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দিতেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে। তাদের সুপারিশে শিক্ষক-কর্মচারীদের সাময়িক বরখাস্ত, এমপিও স্থগিত ও বাতিল এবং এমপিও বাবদ নেয়া অর্থ কোষাগারে ফেরত দিতে হতো। যদিও সুপারিশ বাস্তবায়নের হার ছিলো নামমাত্র। কিন্তু ২০১০ খ্রিস্টাব্দে শিক্ষা মন্ত্রণালয় একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে ডিআইএ কর্মকর্তাদের তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলে কিছু কড়াকড়ি আরোপ করে। এতে প্রতিবেদনের ওপর মন্ত্রণালয়ের কিছুটা খবরদারি প্রতিষ্ঠিত হয়। ক্ষমতা কেড়ে নেয়ার মহড়া হিসেবে গত বছর ডিআইএর একজন সহকারী শিক্ষা পরিদর্শককে দুদকের মাধ্যমে গ্রেফতার করানো হয় বলে শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তারা মনে করেন।

শিক্ষা প্রশাসন বিশ্লেষকদের মতে, এর সঙ্গে আরো যুক্ত হচ্ছে গত ১৩ মার্চ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে কর্মরত প্রশাসন ক্যাডার কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে গঠিত চার সদস্যের কমিটির মাতব্বরি। প্রশাসন ক্যাডার কর্মকর্তারা সাংবাদিকদের বলছেন, বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে (স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা) অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ বছরের পর বছর ধরে আর ঝুলে থাকবে না। এখন থেকে তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার এক মাসের মধ্যে সিদ্ধান্ত নিয়ে অভিযোগ নিষ্পত্তি করা হবে।

মন্ত্রণালয়ে কর্মরত প্রশাসন ক্যাডারের একজন কর্মকর্তা সাংবাদিকদের আরও বলেন, ডিআইএর প্রতিবেদন নিষ্পত্তি নিয়ে দীর্ঘসূত্রতা আছে। তদন্ত প্রতিবেদনের আলোকে অনেক প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষকের এমপিও স্থগিত করা হয়। অভিযোগ প্রমাণিত না হলেও কোনো কোনো শিক্ষক শাস্তি পেয়েছেন। এসব বিষয় মাথায় রেখে প্রতিবেদন দ্রুত বাস্তবায়ন করতে চার সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, চার সদস্যের নতুন কমিটির কাজ হলো প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে এক মাসের মধ্যে বাস্তবায়ন করা। এতে শিক্ষকরা হয়রানি থেকে রেহাই ও দোষী হলে দ্রুত শাস্তি পাবেন। ফলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জবাবদিহি নিশ্চিত হবে।

শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আরও যেসব অভিযোগ তুলেছেন প্রশাসন ক্যাডার কর্মকর্তারা সেগুলো হলো মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা ডিআইএর তদন্ত প্রতিবেদন যাচাই-বাছাই না করেই প্রতিষ্ঠানের জবাবের সঙ্গে একমত হয়ে মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন পাঠান। ফলে দুর্নীতিবাজ শিক্ষকরা ছাড় পেয়ে যান। অবৈধভাবে সরকারের কোটি কোটি টাকা ভোগ করেন শিক্ষক-কর্মচারীরা। প্রশাসন ক্যাডার কর্মকর্তাদের ভাষায়, এটা বন্ধ করতে মাউশির কর্মকর্তাদের কাছে বিধি অনুযায়ী জবাব চাইবে কমিটি। এরপর এক মাসের মধ্যে তা নিষ্পত্তি করবে মন্ত্রণালয়।

শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তাদের হাত থেকে ক্ষমতা কেড়ে নেয়া হচ্ছে, এমন আশঙ্কা করা হচ্ছে কেন, জানতে চাওয়া হলে সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার সমিতির একজন কেন্দ্র্রীয় নেতা নাম না প্রকাশের শর্তে দৈনিকশিক্ষাকে বলেন, কয়েকমাস আগেই মন্ত্রণালয়ের অডিট ও আইন শাখার যুগ্ম-সচিব শামীম আল রাজী স্বাক্ষরিত এক আদেশে সরকারি কলেজে আয়-ব্যয় সম্পর্কিত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়, যা মূলত সরকারি কলেজগুলোতে কর্মরত শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তাদের ক্ষমতা কমানোরই নামান্তর।

তিনি বলেন, নবগঠিত মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ সব গুরুত্বপূর্ণ পদে প্রশাসন ক্যাডার কর্মকর্তাদের বসানো হয়েছে। কারিগরি অধিদপ্তরের প্রধান পদেও প্রশাসন ক্যাডার। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের প্রধান পদেও প্রশাসন ক্যাডার। এসব অধিদপ্তরের অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধে তো কোনও কমিটি গঠন করা হচ্ছে না। এ প্রতিষ্ঠানগুলো কী ভালোভাবে চলছে?

ডিআইএর সাবেক একজন কর্মকর্তা বলেন, এডিসি শিক্ষা পদটির কী দরকার? যেখানে মাঠে জেলা ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা রয়েছেন। আঞ্চলিক পরিচালক ও উপ-পরিচালক রয়েছেন।

এর আগে জেলা প্রশাসকরা এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের ক্ষমতা চেয়েছেন একাধিকবার। পরিচালনা পর্ষদের পুরো ক্ষমতাও চাচ্ছেন তারা।শিক্ষা প্রশাসনের সবকিছুতে যদি প্রশাসন ক্যাডার কর্মকর্তাদের মাতবরি প্রতিষ্ঠিত হয় তবে, শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তারা কী কাজ করবেন?

 

 

আরো পড়ুন:

ঘুষের বিনিময়ে অবৈধভাবে এমপিওভুক্ত হচ্ছেন ৯ শিক্ষক

মন্তব্য করুন

স্যার, কিভাবে আপনাকে সাহায্য করতে পারি?

Click one of our representatives below

Customer Support
Customer Support

Syeda Nusrat

I am online

I am offline

Technical Support
Technical Support

Ariful Islam Aquib

I am online

I am offline