পুলিশ ব্লাড ব্যাংক
বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর ১ লাখ ৩৭ হাজার সদস্যসহ আপামর জনসাধারণের পাশে দাঁড়ানোর লক্ষ্যে রাজারবাগের কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে পুলিশ ব্লাড ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। “রক্তে মোরা বাঁধন গড়ি, রক্ত দেবো জীবন ভরি” এই স্লোগানকে সামনে রেখে ২০১০ সালের ১২ ডিসেম্বর পুলিশ ব্লাড ব্যাংকের যাত্রা শুরু হয়। অপরাধ দমন, তদন্ত ও তথ্য উদঘাটনের মূল কাজের পাশাপাশি রক্ত আদান প্রদানের মাধ্যমে সর্বস্তরের জনগণের সাথে সৌহার্দ্য বৃদ্ধিও এই ব্লাড ব্যাংকের একটি উদ্দেশ্য। পুলিশ বাহিনীর সদস্যসহ ছাড়াও যেকোন ব্যক্তি এই ব্লাড ব্যাংক থেকে রক্ত নিতে পারেন।
ঠিকানা:
কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতাল, রাজারবাগ, ঢাকা।
ফোন: ৯৩৬২৫৭৩,
মোবাইল-ফোন” target=”_blank”>মোবাইল ফোন: ০১৭১৩-৩৯৮৩৮৬,
ই-মেইল: [email protected],
ওয়েব সাইট: www.policebloodbank.gov.bd
বর্তমান কার্যক্রমঃ
ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকাসহ দেশের প্রতিটি জেলায় পুলিশ ব্লাড ব্যাংক থেকে রক্ত সরবরাহ করা হয়। তাছাড়া বিভিন্ন শিক্ষালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে যারা রক্তদানে উৎসাহী তাদের তথ্য নিয়ে একটি ডাটাবেজ তৈরির কাজ চলছে এখন। এই ব্লাড ব্যাংক থেকে পুলিশসহ সমাজের সকল স্তরের মানুষকে রক্তদানে উৎসাহিত করার জন্য প্রচারণাও চালানো হয়। এখানে রক্তের যথাযথ সংরক্ষণ এবং সঞ্চালনকে গুরুত্ব দেয়া হয়। গরীব রোগীদের বিনামূল্যে রক্ত দেবার ব্যবস্থাও আছে এখানে।
পরিচালনা কমিটিঃ
ঢাকা মেট্রোলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (সদর দপ্তর) এর সভাপতি। তত্ত্বাবধায়ক, কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতাল, এডিসি (সদর দপ্তর), এডিসি (প্ররক্ষা) এসি (ফোর্স) এবং আরএমও, রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতাল পুলিশ ব্লাড ব্যাংকের কার্যকরী কমিটির সদস্য। আর ডিএমপি’র এসি (কল্যাণ) এই কমিটির সদস্য সচিব হিসেবে কাজ করছেন।
যারা রক্তদান করতে পারেনঃ
১৮ থেকে ৬০ বছর বয়সীদের যাদের ওজন ন্যূনতম ৪৫ কেজি বা ১০০ পাউন্ড তারা রক্তদান করতে পারেন। রক্তদানের সময় রক্তদাতার তাপমাত্রা ৯৯.৫ ফারেনহাইটের নিচে এবং নাড়ির গতি ৬০ থেকে ১০০ বার এর মধ্যে হতে হয়। ওষুধ ছাড়া সিস্টোলিক রক্তচাপ ১০০ এবং ১৪০ থেকে পারদ চাপ এবং ডায়স্টোলিক রক্তচাপ ৬০ থেকে ১০০ পারদ চাপের মধ্যে হওয়া প্রয়োজন। পুরুষের ক্ষেত্রে রক্তের হিমোগ্লোবিন ১২.৫ গ্রাম/এমএল এবং মহিলাদের ক্ষেত্রে ১১.৫/১০০ গ্রাম/এমএল হওয়া দরকার। রক্তদাতাকে শ্বাসযন্ত্রের রোগ এবং চর্মরোগ মুক্ত থাকতে হয়। রক্তদাতার রক্ত পরিসঞ্চালন জনিত কোন রোগ আছে কিনা সেটাও দেখতে হয়। সিরিঞ্জের মাধ্যমে রক্ত গ্রহণকারীদের বাহুতে যে ধরনের স্কার মার্ক থাকে, তা আছে কিনা সেটা পরীক্ষা করা হয়।
পুলিশ ব্লাড ব্যাংকের রক্ত সংগ্রহ পদ্ধতিঃ
এখানে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে রক্ত সংরক্ষণ করা হয়। একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের উপস্থিতিতে রক্ত সঞ্চালন সম্পন্ন করা হয়। আর বাইরের কারো রক্ত প্রয়োজন হলে ব্লাড ব্যাংক থেকে রক্ত সরবরাহ করা হয় অথবা তালিকভুক্ত ডোনারের সাথে যোগাযোগ করা হয়।
প্রতিবার রক্ত দেবার পর সময় হেপাটাইটিস বি, হেপাটাইটিস সি, সিফিলিস, এইডস এবং ম্যালেরিয়া এই পাঁচটি রোগের জীবাণু আছে কিনা সেটা পরীক্ষা করা হয়। কাজেই কোন সংক্রামণ থাকলে রক্তদাতাও সেটা বিনামূল্যে জেনে নিতে পারেন। নিজের প্রয়োজন হলে রক্তদাতা জমাকৃত প্রতিব্যাগ রক্ত কোন প্রকার প্রসেসিং ফি ছাড়া ফেরত পান। কোন পুলিশ সদস্য রক্তদানের পর তিন দিনের জন্য বিশ্রামের সুযোগ পান। রক্তদাতাকে পুলিশ ব্লাড ব্যাংকের একটি ডোনার কার্ড এবং পুলিশ ব্লাড ব্যাংকের লগো সম্বলিত একটি কোর্ট পিন প্রদান করা হয়। কেউ আজীবন রক্তদাতা হলে তাকে পুলিশ ব্লাড ব্যাংক পদক এবং সনদ দেয়া হয়। আজীবন রক্তদাতারা নিজের প্রয়োজনে যেকোন সময়ে কোন প্রসেসিং ফি ছাড়া রক্ত পেয়ে থাকেন এখান থেকে।
যারা রক্ত নিতে পারেনঃ
যেকোন ব্যক্তিই প্রয়োজনে এখান থেকে রক্ত সংগ্রহ করতে পারেন। রক্তের জন্য কোন মূল্য রাখা হয় না। তবে ব্লাড ব্যাগের মূল্য, রক্ত নেবার সময় যে পাঁচটি রোগের পরীক্ষা করা হয় তার খরচ, ক্রস ম্যাচিং টেস্ট এবং প্রসেসিং ফি মিলিয়ে ৪০০ টাকা রাখা হয়।
একটি নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া অনুসরণ করে রক্ত সরবরাহ করা হয়। পুলিশ সদস্য হলে আইডি কার্ডের ফটোকপি এবং চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্রসহ আবেদন করতে হয়। পুলিশ সদস্য না হলে হাসপাতাল বা ক্লিনিকের প্যাডে অথবা নির্ধারিত ফর্মে মেডিকেল অফিসারের সাক্ষরযুক্ত ব্লাড রিকুইজিশন আনতে হয়। এক্ষেত্রে রক্তের গ্রুপ এবং রেসাস ফ্যাক্টর উল্লেখ করতে হয়। ক্রস ম্যাচিং এর প্রয়োজন হলে রক্তের নমুনাও দিতে হয়। আর রক্ত বা রক্ত উপাদানের জন্য নির্ধারিত প্রসেসিং ফিও দিতে হয়।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাঃ
পুলিশ ব্লাড ব্যাংককে ডিজিটাল ব্লাড ব্যাংক হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে। এখানকার কম্পিউটারাইজড ডাটাবেসে রক্তদাতার রক্তের গ্রুপ এবং যোগাযোগের ঠিকানাসহ প্রয়োজনীয় তথ্য যুক্ত করা হচ্ছে। দেশব্যাপী একটি কার্যকারী ব্লাড ডোনার পুল গড়ে তোলার চেষ্টা করছে পুলিশ ব্লাড ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। পর্যায়ক্রমে সকল বিভাগীয় সদরে স্থায়ী শাখা প্রতিষ্ঠা করা হবে। তাছাড়া কমিউনিটি পুলিশের মাধ্যমে ওয়ার্ড, স্কুল ও কলেজভিত্তিক কমিটি গঠন করে রক্ত সংগ্রহের জন্য প্রচারণা চালানোর পরিকল্পনাও রয়েছে পুলিশ ব্লাড ব্যাংক কর্তৃপক্ষের।