নিখোঁজ হওয়া সোমালিয়ান সেই ৬ শিক্ষার্থী থানায় ধরা দিয়েছেন এবং দুঃখপ্রকাশও করেছেন।
নিখোঁজ ছয় সোমালিয়ান শিক্ষার্থী অবশেষে থানায় এসে ধরা দিয়েছেন। ত্মগোপনে থাকার বিষয়ে পুলিশের কাছে মুচলেকা দিয়ে দুঃখপ্রকাশও করেছেন। পুলিশ তাদের সতর্ক করে দিয়েছে, ভবিষ্যতে যেন এ ধরনের ঘটনা না ঘটে। বিদেশি শিক্ষার্থী হিসেবে সব নিয়ম কানুন মেনে চলতে হবে তাদের। শিক্ষার্থীরা বলছেন, তারা যে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিলেন তার খরচ জোগাতে না পেরেই কম খরচের অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন।
এর আগে, ‘ঢাকায় ৬ সোমালিয়ান শিক্ষার্থী এক বছর ধরে নিখোঁজ’ শিরোনামে গত শনিবার (২৪ মার্চ) একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরপর নড়েচড়ে বসে প্রশাসন ও সংশ্লিষ্টরা। প্রতিবেদনটি সোমালিয়ান ওই ছয় শিক্ষার্থী ও তাদের স্বজনদের নজরেও আসে। প্রতিবেদনের মাধ্যমে তারা জানতে পারেন, উত্তরা পশ্চিম থানায় তাদের বিরুদ্ধে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে। পরে ওই ছয় শিক্ষার্থীর মধ্যে পাঁচ জন সোমবার (২৬ মার্চ) সকালে উত্তরা পশ্চিম থানায় এসে যোগাযোগ করেন। বাকি আরেকজন থানায় যোগাযোগ করলেও সশরীরে হাজির হননি।
এক বছরেরও বেশি সময় ধরে আত্মগোপনে থাকা ছয় সোমালিয়ান শিক্ষার্থীর পাঁচজন নিজে থেকেই প্রথমে নিজেদের বিশ্ববিদ্যালয়ে(ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এগ্রিকালচারার অ্যান্ড টেকনোলজি-আইইউবিএটি) এবং পরে থানায় এসে ধরা দেন। এরা হলেন সাকিদ হাসান বুয়ে, আবদি রহমান আব্দুল্লাহি হাসান, মোহাম্মদ আবুকার দাহির, আলী সালাদ ও আব্দির রহমান আব্দুল্লাহি হাসান। তবে সাকির ওমর শেইখ আব্দুল কাদির নামের আরেক শিক্ষার্থী যোগাযোগ করলেও  থানায় যাননি।
২০১৬ সালের শেষের দিকে পড়ালেখার উদ্দেশ্যে ঢাকায় আসেন সাত সোমালিয়ান শিক্ষার্থী। সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে তারা ভর্তি হন ঢাকার আইইউবিএটিতে। তিন মাস পরই তারা নিখোঁজ হন। এ ঘটনায় ওই বিশ্ববিদ্যালয় উদ্বেগ জানিয়ে ২০১৭ সালের ২৪ জুলাই উত্তরার পশ্চিম থানায় নিখোঁজ সংক্রান্ত একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে। এরপর গত আট মাসেও তাদের সন্ধান পাওয়া যায়নি। তবে নিখোঁজের তিন মাস পর সিরাজি মোহাম্মদ আলী নামের এক শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। তিনি ২০১৭ সালের জুন মাসের বকেয়া টাকা পরিশোধ করে তার পাসপোর্ট নিয়ে যান। তিনি বর্তমানে শান্ত-মারিয়াম ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজিতে বিবিএতে পড়ছেন বলে জানিয়েছে আইইউবিএটি।
এদিকে, আত্নগোপনে থাকা ছয় সোমালিয়ান শিক্ষার্থীর সন্ধান পাওয়ার পর আইইউবিএটি কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়। পরে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নিখোঁজ সোমালিয়ান শিক্ষার্থীদের সন্ধান পাওয়া গেছে মর্মে একটি লিখিত দরখাস্ত দেন থানায়।
উত্তরা পশ্চিম থানা সূত্রে জানা গেছে, এই সোমালিয়ান শিক্ষার্থীদের মধ্যে মোহাম্মদ আবুকার দাহির ও সাকিদ হাসান বুয়ে রাজধানীর সিটি ইউনিভার্সিটিতে পড়ালেখা করছেন এবং আলী সালাদ, সাকির ওমর শেইখ আব্দুল কাদির ও আবদি রহমান আব্দুল্লাহি হাসান পড়ছেন ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে। তাদের ইউনিভার্সিটির আইডি কার্ডের কপি রেখে দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে জিডির তদন্ত কর্মকর্তা ও উত্তরা পশ্চিম থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মাহমুদুল হাসান  বলেন, ‘ছয় সোমালিয়ান শিক্ষার্থীর সন্ধান পাওয়া গেছে। তারা আইইউবিএটিতে ভর্তি হয়েছিলেন। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে কিছু না জানিয়ে তারা নিখোঁজ হন।’
এই তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, ‘সোমালিয়ান এই শিক্ষার্থীরা ফিরে এসে জানান, তারা রাজধানীর অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে পড়ালেখা করছেন। তাদের বিষয়ে সব তথ্য আমরা সংগ্রহ করে রেখেছি।’
পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে এই সোমালিয়ান শিক্ষার্থীরা বলেন, আইইউবিএটি বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ালেখার খরচ বেশি হওয়ায় তারা এখানে পড়ালেখা চালিয়ে যেতে পারেননি। খরচ কমানোর জন্য তারা অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে অবহিত করলে ছাড়পত্র পাওয়া যাবে কিনা— এমন আশঙ্কা থেকেই তারা এ বিষয়ে আইইউবিএটি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সব ধরনের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করেন। ওই শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, যে এজেন্সির মাধ্যমে তারা বাংলাদেশে পড়তে এসেছিলেন, ওই এজেন্সি আইইউবিএটিতে পড়াশোনার খরচ সম্পর্কে সঠিক তথ্য তাদের জানায়নি।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, নিখোঁজ থাকা এই ছয় শিক্ষার্থীর কারও ভিসার মেয়াদও নেই। ২০১৭ সালের আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যেই তাদের সবার ভিসার মেয়ার শেষ হয়ে যায়। তাদের পাসপোর্টও আইইউবিএটি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে জমা রয়েছে। তারা বিদেশি শিক্ষার্থী হওয়ায় সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়কে অবহিত না করে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ নেই তাদের। এ ক্ষেত্রে তাদের নিজেদের গাফিলতির পাশাপাশি যে এজেন্সির মাধ্যমে তারা বাংলাদেশে এসেছেন, তাদের গাফিলতিও রয়েছে।
আইইউবিএটি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করলে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়টিতে সোমালিয়া, নেপাল ও মালদ্বীপের শিক্ষার্থীরা পড়ালেখা করছেন। ২০১৬ সালের ফল সেমিস্টারে সাত সোমালিয়ান শিক্ষার্থী ভর্তি হন। তারা একটি সেমিস্টার শেষ হওয়ার আগেই অনুপস্থিত হয়ে যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে তাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও কোনও সাড়া মেলেনি, সন্ধান করেও পাওয়া যায়নি।
আইইউবিএটির ইন্টারন্যাশনাল প্রোগ্রাম অফিসার এম এ মাজেদুর রহমান  বলেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে একটি অফার লেটার দেওয়া হয়েছিল, তার ভিত্তিতে সোমালিয়ান শিক্ষার্থীরা এজেন্সির মাধ্যমে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আসে। তাদের যেকোনও সমস্যা হলে তারা বিষয়টি আমাদের জানাতে পারত। কিন্তু তারা সেটা করেনি।’
মাজেদুর রহমান বলেন, ‘নিখোঁজ এই শিক্ষার্থীদের ভাষ্য, আমাদের এখানকার পড়ালেখার খরচ সম্পর্কে এজেন্সি তাদের সঠিক তথ্য বুঝিয়ে বলতে পারেনি। তবে তাদের উচিত ছিল বিষয়টি আমাদের অবহিত করা।’

নিখোঁজ হওয়া সোমালিয়ান সেই ৬ শিক্ষার্থী থানায় ধরা দিলেন

মন্তব্য করুন

স্যার, কিভাবে আপনাকে সাহায্য করতে পারি?

Click one of our representatives below

Customer Support
Customer Support

Syeda Nusrat

I am online

I am offline

Technical Support
Technical Support

Ariful Islam Aquib

I am online

I am offline