বর্তমানে তরুণদের আরেকটি স্মার্ট পেশা হলো ফ্রিল্যান্সিং , দিন যত যায় ততই আমরা আধুনিকার ছোয়া পাচ্ছি এবং সুযোগ সুবিধাগুলো কাজে লাগিয়ে জীবনকে আরো সহজতর করছি, এখন যেকেউ ঘরে বসে কোন পণ্য অর্ডার করলেই পন্য পৌছে যায়, আবার মোবাইলে মুহুর্তের মধ্যেই পৃথিবীর যেকোন প্রান্ত থেকে টাকা চলে আসে, ঠিক তেমনি আপনার একটা ইন্টারনেট সংযুক্ত পিসি থাকলেই আপনি ঘরে বসেই নিজের ক্যারিয়ার নিজের ইচ্ছে মত গড়তে পারেন। এখানে আপনি সম্পূর্ণ স্বাধীন বন্ধুর মাঝে আড্ডায়, কোথাও বেড়াতে গেলেন অথার্ৎ যেকোথাও বসে আপনি কাজ করতে পারেন। মনে আছে ২০১১ সালে চিটাগাং এডমিশন টেস্ট দিতে যাচ্ছি, ঔই সময় একটা পুরাতন বায়ারের জরুরী একটা কাজ করে ঔইদিন করে দেওয়ার জন্য অনেক রিকুয়েস্ট করছিল, গিফ্টও দিবে বলেছে, তাই ঔই সময় ট্রেনে বসেই ৮৫ ডলারে কাজটা শেষ করলাম ৪ ঘন্টায়, কাজ শেষে বায়ার খুশি হয়ে ১৫ ডলার বোনাসও দিলো।
আমরা যা শিখি:
“ ফ্রিল্যান্সিং ” নাম কাজে লাগিয়ে অনেকেই এটাকে বিভিন্ন অসৎ পথে পরিচালনা করার চেষ্টা করেছেন যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, ডোল্যান্সার, স্পিকএশিয়া, সাইটটক, ইউনিপেটুইউ, আবার দেখা যায় দেশের বিভিন্ন জেলায় আউটসোর্সিং/ ফ্রিল্যান্সিং নাম কাজে লাগিয়ে কোন রেফারেল লিংক কিংবা পিটিসি সাইটগুলোতে ভিজিট/ক্লিক করতে বলেন, অনেকে আবার ঠিকই সত্যিকার ফ্রিল্যানিসিং মার্কেট প্লেস যেমন ওডেস্ক, ইল্যান্স, ফ্রিল্যান্সার ইত্যাদিতে একটা একাউন্ট খুলে দিয়েই নিজের দায়িত্ব শেষ করেন। অথচ তারা নিজেরাও এখানে কাজের অভিজ্ঞতা রাখেন না। কিন্তু বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে, সত্যিকার ফ্রিল্যান্সিং এ আগ্রহী যুবদের প্ররোচিত করে।
এই শেখার ফলাফল:
এইভাবে দেশের অধিকাংশ জেলায় ফ্রিল্যান্সিং এ আগ্রহী যুবকদেরকে অদক্ষ এবং অনভিজ্ঞতা সম্পন্ন লোকেরা কাজ না শিখিয়ে দু-চারটা ধারণা দিয়ে কিংবা একটা একাউন্ট খুলে দু-চার ক্লাস নিয়ে বড় অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়, এভাবে ঐসকল প্রতিষ্ঠানের শেখানো প্রক্রিয়ায় এক দুই মাস কাজে এপলাই করে কিংবা পিটিসি সাইটে এক দুই মাস ক্লিক করে এক সময় তারা হতাশা এবং একগেয়েমি অনুভব করে, যার ফলে তারা ধীরে ধীরে ফ্রিল্যান্সিং এর প্রতি আস্থা হারিয়ে হতাশ হয়ে পড়ে এবং পরবতীতে ফ্রিল্যান্সিং য়ের কথা শুনলে তাদের মাঝে একটা নেতিবাচক ধারণার সৃষ্টি হয় কিংবা যারা কাজ করেন নি, তারাও ডোল্যান্সার, স্পিকএশিয়া, সাইটটক, ইউনিপেটুইউ এগুলোর জন্য এটাকে এক ধরণের ধান্দা মনে করেন। এসবের জন্য অনেকে আবার ইচ্ছে থাকলেও পরবর্তীতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন।আমার জানা এ রকম অসংখ্য প্রতিষ্ঠান রয়েছে এবং আমাদের অনেক স্টুডেন্ট এ ধরণের প্রতারণার শিকার হয়েছেন। এইসবের জন্য অনেকে ফ্রিল্যান্সিং র উপর বিশ্বাস হারিয়ে ফেলছেন কিংবা এটাকে মুল পেশা হিসেবে অথাব পার্টটাইম হিসেবে নিতে পারছেন না।
ফ্রিল্যান্সিং ” width=”700″ height=”699″ />
যা করণীয়:
আমাকে অনেকে প্রশ্ন করে, “ভাই একাউন্ট করতে কত টাকা লাগে?”, প্রশ্নটা যারা সত্যিকার ফ্রিল্যান্সিং করেন তাদের জন্য হাস্যকর কিন্তু যারা সত্যিকার ফ্রিল্যান্সিং এর ছোঁয়া পাননি তাদের জন্য উদ্বেগের। ভাই, সত্যিকার ফ্রিল্যান্সিং কোন টাকা লাগে না, একটা পয়সাও না, এখানে কোন প্রকার বিনিয়োগ করতে হবে না। ফ্রিল্যান্সিং এর প্রথম শর্ত হলো আপনাকে কোন একটা কাজ খুব ভালো জানতে হবে যেমন ওযেব ডিজাইন, গ্রাফিক্স ডিজাইন, ওয়ার্ডপ্রেস, জুমলা, এসইও, ইমেইল মার্কেটিং, আর্টিকেল রাইটিং ইত্যাদি। এগুলোর যেকোন একটি কাজ আপনি জানলে এবং বায়ারের সাথে যোগাযোগের মত ইংরেজী জানা থাকলে আপনি নিজেকে একটি নতুন জগতে আবিষ্কার করতে পারবেন। সকল হতাশা দুর হয়ে আপনি নিজেকে মুল্যায়ন করতে শিখবেন। তবে এতেও কাজ পাওয়ার কিছু কৌশন আছে।
ফ্রিল্যান্সিং ” width=”650″ height=”800″ />
যেভাবে নিজেকে সফল করতে পারেন:
প্রথমেই ফ্রিল্যান্সিং কি তা না জেনে জানুন ফ্রিল্যান্সিং এ কি কি কাজ করতে হয়। বাংলাদেশিদের বেশিরভাগ ফ্রিল্যান্সার সাধারণত এসইও, মার্কেটিং, ওয়েব ডিজাইন, গ্রাফিক্স ডিজাইন কাজগুলো বেশি করে থাকে। এই কাজগুলোর চাহিদাও মার্কেটপ্লেসে ভালো। তবে বর্তমানে সিএমএস ওয়ার্ডপ্রেস এর প্রচুর কাজ আছে। আপনি ফ্রিল্যান্সিং এ আশার আগে তাই অন্তত ৬ মাস সময় নিন, এই সময়ের মধ্যে আপনি যেকোন একটি কাজ ভালোভাবে শিখুন। আপনি যে কাজটি শিখছেন উক্ত কাজের উপর ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসে কি কি ধরণের কাজ পোস্ট করা হয়, সেগুলোর উপর নজর রাখুন। সাথে সাথে আপনি যে কাজ শিখেছেন উক্ত কাজের উপর বিভিন্ন সাইটে এক্সপার্টদের দেওয়া ডিজাইন কিংবা ব্লগ ফলো কর এক্ষেত্রে বাংলায় টেকটিউন্সই সেরা। এখানে প্রচুর রিসোর্স পাবেন। আর এখানে আপনাকে প্রতিযোগীতা করতে হয় পুরো বিশ্বের সকল দক্ষদের সাথে। তাই যেনতেন কিছু একটা জেনে শুরু করবেন? ফলে বিপরিত হবে। কারণ কোনভাবে একটা কাজ পেলেও কাজটি সময়মত এবং সঠিকভাবে করতে না পারলে এটা শুধু আপনার ব্যর্থতা নয়, ক্লায়েন্ট, কোন দেশের কন্ট্রাক্টর সেটাও মনে রাখে।
যেভাবে কাজ শিখবেন:
কাজ শেখার জন্য যদি আশেপাশে ভালো কোন প্রতিষ্ঠান না থাকে তবে সবচেয়ে ভালো হয়, নিজে নিজে শিখুন। এক্ষেত্রে টেকটিউন্স দক্ষ এবং অভিজ্ঞদের প্রচুর চেইন টিউন রয়েছে । আপনি যদি দেখে শিখতে চান, তবে টেকটিউন্স এ প্রচুর ভিডিও টিউন পাবেন। ঔই ভিডিওগুলো দেখতে পারেন। তবে নিজে নিজে শেখা একটু সময় সাপেক্ষ বিষয় তাছাড়া অনেক সময় ধারাবাহিক এবং পরিপুর্ণ কোর্স এর টিউটোরিয়াল থাকে না। সেক্ষেত্রে আপনি ঢাকায় হলে কিছু ভালো প্রতিষ্ঠান থেকে শিখতে পারেন। যেমন: ক্রিয়েটিভ আইটি, প্রাইম আইটি ইত্যাদি। যাদের ইন্টারনেট কানেকশন স্লো উনারা চাইলে বাজারের ভিডিও টিউটোরিয়ালগুলো সংগ্রহ করতে পারেন, যেমন: ইনফোনেট, প্রযুক্তি টিম । এছাড়াও উন্নত বিশ্বের মত বাংলাদেশেও বর্তমানে প্রায় প্রতিটি জেলায় থ্রি জি পৌঁছে গেছে এর সাথে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন অনলাইন প্রশিক্ষণ সংগঠন, যেমন: ইশিখন.কম / ইনফোনেট। আপনি চাইলে উক্ত প্রতিষ্ঠানগুলো থেকেও ঘরে বসেই শিখতে পারেন।
আশা করি নতুনরা দিক নির্দেশনা পাবেন এই টিউন থেকে। এছাড়াও অভিজ্ঞ ফ্রিল্যান্সারদের আর কোন নিদের্শনা থাকলে দয়া করে মন্তব্য করে জানাবেন।
আরো পড়ুন:
বেস্ট সেলার ১০টি ফ্রিল্যান্সিং কোর্স ডিভিডি