
বাংলাদেশের মোট জনগোষ্ঠীর প্রায় অর্ধেক নারী। আর এই গোষ্ঠীকে আধুনিক প্রযুক্তির সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় পরিচালনা করছে ‘তথ্য আপা’ প্রকল্প। মন্ত্রণালয়ের অধীনে জাতীয় মহিলা সংগঠন এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। ১২ কোটি টাকারও বেশি ব্যয়ের এই প্রকল্পটির মেয়াদ ২০১১ সালের জুলাই থেকে ২০১৪ সালের জুন পর্যন্ত ছিল। এ প্রেক্ষাপটে ‘তথ্য আপা’ প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর সুপারিশ করেছে সংসদীয় কমিটি। মঙ্গলবার জাতীয় সংসদের মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি’র ১৮তম বৈঠক জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত হয়। কমিটির সভাপতি রেবেকা মমিনের সভাপতিত্বে কমিটির সদস্য মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ, মো. মোজাম্মেল হোসেন, মোছা. মাহাবুব আরা বেগম গিনি, মনোয়ারা বেগম ও রিফাত আমিন বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন।
সংসদ সচিবালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বৈঠকে নারী নির্যাতন প্রতিরোধকল্পে মাল্টিসেক্টরাল প্রোগ্রাম (৩য় পর্যায়) এর বাস্তবায়ন, অগ্রগতি এবং ‘তথ্য আপা’ প্রকল্পের বাস্তবায়ন, অগ্রগতি ও সার্বিক কার্যক্রম সম্পর্কে আলোচনা হয়। বৈঠকে ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টারের সার্বিক কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের তা পরিদর্শনের নির্দেশ দেওয়া হয়। কমিটি সূত্রে জানা যায়, বৈঠকে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে মহিলাদের তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহারের সুবিধা সম্পর্কে সচেতনতা ও উদ্ধুদ্ধকরণের লক্ষ্যে ‘তথ্য আপা’ প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর সুপারিশ করে। এছাড়াও পর্যায়ক্রমে সারাদেশের সকল উপজেলায় ‘তথ্য আপা’ প্রকল্পের কার্যক্রম সম্প্রসারিত করার পরামর্শ প্রদান করে। বৈঠক শেষে কমিটির সদস্য রিফাত আমিন প্রিয়.কমকে বলেন, মন্ত্রণালয় তথ্য আপা’র যাবতীয় কর্মকান্ড আমাদের প্রেজেন্টেশন করেছে। কমিটি এতে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে, তবে আমাদের আরো বিস্তারিতভাবে
এই প্রকল্পের কার্যক্রম পরিদর্শনে যাওয়া ও সার্বিক অগ্রগতি পর্যালোচনা করারও সিদ্ধান্ত হয়েছে।
তিনি বলেন, প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি করার সুপারিশ করেছে কমিটি। তবে মেয়াদ বৃদ্ধির এটি যাচাই-বাছাই করা হবে বলেও জানান রিফাত আমিন।
জানা যায়, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তির মাধ্যমে মহিলাদের ক্ষমতায়ন প্রকল্পের ওয়েবপোর্টাল হলো ‘তথ্য আপা’ ৷ মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে জাতীয় মহিলা সংগঠন কর্তৃক এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হচ্ছে ৷ বাংলাদেশের মহিলাদের আধুনিক প্রযুক্তির সাথে পরিচয় করিয়ে, প্রযুক্তিকে তাদের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের হাতিয়ার রূপে ব্যবহার করে তাদের জীবনমান আরো সহজ, সুন্দর এবং উন্নত করাই এই পোর্টাল নির্মানের অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য ৷ এ প্রকল্পের আওতায় নির্মিত এ ওয়েবপোর্টালটি সম্পূর্নভাবে সরকারি অর্থায়নে নির্মাণ করা হয়েছে৷
এই ওয়েবপোর্টালের সাথে যুক্ত রয়েছে তথ্য ভান্ডার ও উইমেন টিভি ৷ তথ্য ভান্ডারে রয়েছে মহিলাদের জন্য বিশাল তথ্যের সমাহার ৷ কৃষি,স্বাস্থ্য, শিক্ষা, জেন্ডার, আইনী সহায়তা এবং ব্যবসা বিষয়ক ছয়টি বিভাগে মহিলাদের প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে এ তথ্য ভাণ্ডার। তথ্যের জগতে মহিলাদের সহজ প্রবেশাধিকার এখানে নিশ্চিত করা হয়েছে ৷ ফলে তারা অতি দ্রুত তাদের প্রয়োজনীয় তথ্য পেতে পারেন এবং তথ্যের সাহায্যে তাদের সমস্যা সমাধানে নিজেরাই দক্ষ হয়ে গড়ে উঠতে পারেন। আরো রয়েছে উইমেন টিভি ৷ এ টিভির মাধ্যমে মহিলা বিষয়ক বিভিন্ন অনুপ্রেরণামূলক সংবাদ, ভিডিও চিত্র, বিশেষ অনুষ্ঠান ইত্যাদি দেখা যাবে ৷ এখানে অনলাইন ও অফলাইন উভয় উপায়ে চিত্র প্রদর্শন করা হয়। শুধুমাত্র মহিলা জনগোষ্ঠী নয়, দেশে বিদেশে সকল মানুষেরও জন্য এই পোর্টাল ৷
এছাড়া ‘তথ্য আপা’র মূল দায়িত্ব হলো, উপশহর ও গ্রামাঞ্চলের ইন্টারনেট সুবিধাবঞ্চিত নারীরা যেসব তথ্য চান, তা জানানো। ‘তথ্য আপা’ কার্যক্রম শুধুমাত্র ওয়েবসাইটেই নয়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক, টুইটার, জি-প্লাস, লিংকডইন এবং ই-মেইলের মাধ্যমেও পরিচালিত হচ্ছে। যেটি নারীদের মাঝে সহজে তথ্য পৌঁছে দিতে কাজ করছে। প্রকল্পের আওতায় বাংলাদেশের ৭টি বিভাগের অন্তর্গত ১৩টি জেলার ১৩টি উপজেলায় রয়েছে ১৩টি তথ্য কেন্দ্র। এ সকল তথ্যকেন্দ্র থেকে তথ্য সহকারী ও জুনিয়র তথ্য সহকারীরা গ্রামীন মহিলাদের তথ্য সেবা প্রদান করেন।একেকটি কেন্দ্রে তিনজন ‘তথ্য আপা’ কাজ করেন। একজন ‘তথ্য আপা’ কেন্দ্রে বসেন। সেখানে বসেই নারীদের বিভিন্ন তথ্য দেন। বাকি দুজন ‘তথ্য আপা’ ল্যাপটপ নিয়ে বাড়ি বাড়ি যান। ১০ উপজেলার গ্রামীণ জনপদের ১ লাখ নারীকে এই সচেতনতা বৃদ্ধি কার্যক্রমের আওতায় আনা হয়েছে ৷
জানা গেছে, কলেজের মেয়েরা বেশি আসে চাকরির তথ্য জানতে। তাছাড়া কৃষি, স্বাস্থ্যসহ ও পরিবার পরিকল্পনা বিষয়ে তথ্য চান অনেকে।
তথ্য-কেন্দ্রের মাধ্যমে তথ্য সেবা প্রদানের পাশাপাশি প্রশিক্ষণ প্রদানের কর্মসূচীও প্রকল্পের অন্যতম লক্ষ্য ৷ জীবিকা অর্জনে উত্কর্ষতা সাধনের প্রশিক্ষনের পাশাপাশি মৌলিক তথ্য-প্রযুক্তি বিষয়ক প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে৷ এ সকল প্রশিক্ষণের জন্য প্রশিক্ষণার্থী হিসাবে নির্বাচন করা হয়েছে গ্রামীণ এলাকার ৬ হাজার মহিলাকে ৷ সংসদী কমিটির বৈঠকে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব নাছিমা বেগম, জাতীয় মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যানসহ মন্ত্রণালয় এবং জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুনঃ
সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য নতুন বেতনকাঠামোতে সর্বনিম্ন বেতন কত সুপারিশ করা হয়েছে?
সিনিয়র শিক্ষকদের নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠানোর সুপারিশ করেছে ইউজিসি
বাংলাদেশে নতুন বেতন কাঠামোতে কত শতাংশ বেতন বৃদ্ধির সুপারিশ করা হয়েছে-